মিউজিকঃ কোয়েশ্চেন অফ ফেইথ অর দাওয়াহ? -- ইউসুফ ইসলাম [পর্বঃ তিন]
লিখেছেন লিখেছেন অনুরণন ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৫:০০:৩৯ সকাল
পর্বঃ১ পর্বঃ২
এছাড়াও বিগতঃ বছরগুলোতে আমাদের অফিসে আমরা যে সব চিঠিপত্র পেয়েছি, সেগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে আমার গানগুলো প্রকৃতপক্ষে অনেক মানুষকে সাহায্য করেছে। তাদের কেউ কেউ আত্নহত্যা করার মত অবস্থায় ছিল, কিন্তু আমার গানগুলো তাদেরকে জীবনকে ইতিবাচক ভাবে দেখতে শিখিয়েছে। আল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো” [৭]। অধিকন্তু, যদি গান শোনার কারণে কারো ইসলামে বিশ্বাস প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে আল্লাহ রক্ষা করুন, আব্বাসীয় খিলাফাহ এবং স্পেইনের স্বর্ণযুগের অধিকাংশ মুসলিমকেই অমুসলিম সাব্যাস্ত করতে হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যে গানগুলো ক্যাট স্টিভেন্স হিসেবে গেয়েছিলাম সেগুলোকে সম্প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আলিমরা তরুণদের জন্য মিউজিক এবং আর্টের ইতিবাচক দিকের ভালো উদাহরণ হিসেবে গ্রহন করেছেন [৮]। অন্যান্য দেশের আলিমদেরও উচিৎ তাদের তরুণদের কি হচ্ছে সে ব্যাপারে আরো গভীর পর্যবেক্ষন করা যেন তাদের সাথে অপূরনীয় ও সেতুবন্ধন তৈরীর অযোগ্য দুরত্ব তৈরী হওয়ার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। আমাদেরকে অবশ্যই তাদের জন্য ইসলাম সম্মত বিকল্প দিতে হবে।
আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে আমাদের সমাধানের জন্য ইসলামের সীমার বাইরে যেতে হবে না। আমরা যদি আমাদের মনোযোগ নবী মুহাম্মদের সুন্নাহ’র দিকে ফিরাই তাহলে আমরা এমন নজির পাব যেখানে অমুসলিমদের ক্ষতিকর নয় এমন গান এবং কথা শোনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। হ্যা, এটা সত্য! নবী একদিন একজন অমুসলিম, উমাইয়াহ বিন সালত’র লেখা কবিতা শুনছিলেন। প্রায় একশ’র মত শ্লোক শোনার পরে তিনি বললেন, সে ইসলাম গ্রহনের নিকটবর্তী [৯]।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমরা বুখারী’র বিখ্যাত হাদিসটির কথা জানি, যেখানে জাহিলী যুগের গান তার সামনে গাওয়া হয়েছিল এবং তিনি এতে কোন বাধা দেননি। আয়িশা (আল্লাহ তার উপর পরিতুষ্ট হোন) এই ঘটনাটির কথা বলেন যখন তাঁর পিতা দেখা করতে এসেছিলেন এবং সেসময় নবী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেখানে দুটি ছোট্ট আনসারি বালিকা ইয়াসরিবে ইসলাম আসার আগে আওস ও খাজরাজের গোত্রের মধ্যে সংঘটিত বিখ্যাত বুয়াথ যুদ্ধের সঙ্গীত গেয়ে শুনাচ্ছিল। তাঁর পিতা এটা শুনে রাগন্বিত হয়ে বললেন, 'আল্লাহর রাসুলের ঘরে শয়তানের সংগীত!' কিন্তু রাসুল (সঃ) বললেন, ও আবুবাকর, প্রত্যেক জাতির জন্যই ঈদ রয়েছে আর আজ আমাদের ঈদ।[১০]
মিউজিকের বিষয়টি ইসলামিক স্কলারদের কাছে একটি চলমান বিতর্কের বিষয়। কেউ কেউ এটিকে সম্পূর্ণ হারাম বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন ইসলামের মুল্যবোধ এবং প্রথার সাথে মিউজিকটি কতটুকু সংগতিপূর্ণ তাঁর উপর নির্ভর করবে এর হারাম বা হালাল হওয়া। কিছু সংগীত এবং তার প্রভাব যে হারাম তার সাথে আমি একমত পোষন করি, কিন্তু ঢালাও ভাবে প্রত্যেক নোট/স্বরলিপিই হারাম তা আমি মনে করি না।
আমাদেরকে অবশ্যই গানের বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করতে হবে। যেমন: এই গানের মুল কথা/বানী কি? যে অনুষ্ঠানে গানটি গাওয়া হচ্ছে সেটি কি উপলক্ষ্যে? সেখানে নৈতিক পরিবেশ কেমন? কোন সময়ে এটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে? কে গাচ্ছে? কিভাবে গাচ্ছে? এছাড়াও সবচেয়ে গুরত্ত্বপূর্ণ হচ্ছে, কি উদ্দ্যেশ্য নিয়ে গানটি গাওয়া হচ্ছে? কিছু স্কলারদের মতে যতক্ষন এটা নৈতিকতার সীমা অতিক্রম না করছে এবং যিনি শুনছেন তার মনকে প্রাত্যাহিক ইবাদাহ হতে বিক্ষিপ্ত করে না রাখে ততক্ষন ইসলামী সংস্কৃতিতে এর সুযোগ রয়েছে।
মিউজিকের বিষয়ে ইখতিলাফ ইঙ্গিত দেয় যে এটা আকিদার প্রশ্ন না বরং ফিকহী প্রশ্ন। এটা নিয়ে ২৫ বছর পড়াশোনা করার পরে নিশ্চিৎ করে বলতে পারি যে এটা সোজাসাপ্টা সাদা-কালো বিষয় না যেমনটি অনেকে আমাদেরকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন। গানের ব্যাপারে আমি একসময় সন্দেহ পোষন করতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম যে হাদীসগুলো গান নিষিদ্ধের ব্যাপারে বলা হয় সেগুলো প্রায়ই দুর্বল, অস্পষ্ট এবং গানের অনুমতি দেয়া হয়েছে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট হাদীসের সাথে অসামন্জস্যপূর্ণ। প্রকৃত পক্ষে 'মিউজিক' শব্দটি রাসুল (সা এর কোন হাদীসে বা কুরআনের মূল আরবীতে সরাসরি নাই- আল্লাহই ভালো জানেন।
সুত্রঃ
[৭] Al Ma’idah (5) : 32
[৮] Associated French Press, 1 September 2004
[৯] Shama’il Tirmidhee, Hadith no. 238
[১০] Sahih al Bukhari 2:72
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন