মিউজিকঃ কোয়েশ্চেন অফ ফেইথ অর দাওয়াহ? -- ইউসুফ ইসলাম [পর্ব দুই]
লিখেছেন লিখেছেন অনুরণন ২৩ জুন, ২০১৪, ০৬:১২:১৯ সন্ধ্যা
[পর্ব এক]
দুঃখজনক হচ্ছে যে, অসংখ্য মুসলিম আছেন যারা কুরআনের অর্থ গভীর ভাবে অধ্যয়ন করেন নি। অধিকাংশই ইসলামকে জন্মসুত্রে একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় হিসেবে পেয়েছেন, পড়াশোনা করে বুঝে গ্রহন করেন নি। বিরাট সংখ্যক মুসলিম পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভ পালন করেন না, এমনকি কেউ কেউ নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তাও জানেন না।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জন্মসুত্রে মুসলিম এমন অনেকে আছেন যারা বর্জনকর (exclusive) এমনকি বর্নবাদী মনোভাব পোষন করেন। খুব কম সংখ্যকই এমন আছেন যারা অন্যদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চিন্তা করেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটা সুপরিচিত ব্যাপার যে আহলে কিতাব অর্থাৎ খ্রিষ্টান বা ইহুদী কেউ ইসলাম সম্পর্কে জেনে যদি আল্লাহর অনুগ্রহে মুসলিম হয় তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াবের অধিকারী হয়। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেনঃ
আর যখন তাদেরকে এটা শুনানো হয়, তারা বলো, “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এটি যথার্থই সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তো আগে থেকেই মুসলিম।” তারা এমন লোক যাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক দেয়া হবে এমন অবিচলতার প্রতিদানে যা তারা দেখিয়েছে। তারা ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করেছে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক দিয়েছি তা ব্যয় করে। আর যখন তারা বাজে কথা শুনেছে, একথা বলে তা থেকে আলাদা হয়ে গেছে যে, “আমাদের কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মকাণ্ড তোমাদের জন্য, তোমাদের প্রতি সালাম, আমরা মূর্খদের মতো পথ অবলম্বন করতে চাই না [৩]।” (২৮:৫৩-৫৫)
যখন আমি ইসলাম শিখতে লাগলাম, এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহুর্ত, কারন এই আয়াতটি আমাকে তাওহীদের বার্তা দিয়েছিল। এক আল্লাহর বানী আমার আত্নায় অণুরনিত হয়েছিল। হটাৎ করে আমি বিশ্বজগতের প্রতিটি নিয়ম নীতি এবং অণু পরমাণুতে তাঁর চিহ্ন উপলব্ধি করতে পারলাম। সুবহানাল্লাহ।
প্রায় সময়েই আহলে কিতাবদের মধ্যে থেকে, তারা খ্রিষ্টান বা ইহুদী যাই হোন না কেন, যারা ইসলামের পথ পেয়েছেন, তারা তত্ক্ষণাৎ নিজের বাড়ির মতো স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন এবং ইতিমধ্যে নিজেদেরকে মুসলিম মনে করে থাকেন (আমরা তো আগে থেকেই মুসলিম...)। এটা ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও ধারাবহিকতার দিকেই ইঙ্গিত করে এবং পুর্ববর্তী নবী ও আসমানী কিতাবগুলোর প্রকৃত শিক্ষার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হে নবী! বলোঃ “আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও ইয়াকূব সন্তানদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার উপরও ঈমান রাখি। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)।[৪]” (৩:৮৪)
এখন মুল বিষয়, গানের দিকে ফিরে যাই। মিউজিক যতক্ষন পর্যন্ত নিদ্রিষ্ট নৈতিক সীমার মধ্যে থাকে এবং একজন মানুষকে ইবাদত থেকে বিমুখ না করে, স্পষ্টতই ততক্ষন পর্যন্ত এটা কাউকে কাফিরে পরিনত করে না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ক্যাট স্টিভেন্সের রেকর্ড যারা ক্রয় করেন, তাদের অধিকাংশই অমুসলিম। যারা এগুলো শুনেন, তাদের অনেকেই এটা উপলব্ধি করেন যে গানের কথাগুলোতে ফুটে উঠেছে একজন পথ অন্বেষকের অনুভুতির কাব্যিক দ্যোতনা, যিনি শান্তির জন্য তৃষ্ণার্ত আর চেষ্টা করছেন জীবনের ব্যক্ষাতীত রহস্য বোঝার জন্য। সেগুলো ‘রক এন্ড রোল’ না, বরং প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী নৈতিক বার্তা বহন করে, যেমনঃ ‘peace train’, ‘On the road to find out’ এবং ‘The wind’।
I listen to the wind, to the wind of my soul,
Where I end up? Well I think only God really knows. [৫]
এটা সত্য যে বিগত বছরগুলোতে আমি ক্রমান্বয়ে গান ও মিউজিকের ব্যাবহারে আমার আপত্তির ব্যাপারে অনেক নমনীয় হয়েছি, কিন্তু এর কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। বসনিয়ার গনহত্যার পর থেকে আমি শিখেছি উতসাহব্যঞ্জক এবং উদ্দীপক গানগুলো চরম দুর্যোগের সময়ে মানুষকে প্রানবন্ত রাখার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। যে জিনিষগুলো আমাকে অনেক পরিবর্তিত করে দিয়েছে তার মধ্যে ঐ সময়ে বলকান অঞ্চল থেকে আসা গানগুলো অন্যতম। ওগুলো ছিল সমৃদ্ধ এবং ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী নাশিদ, যা বসনিয়ানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের চেতনা আর ত্যাগের আকাঙ্ক্ষাকে শানিত করেছিল[৬]।
[৩] Al Qasas (28) : 53-55
[৪] Al ‘Imran (3) : 84
[৫] The Wind, Cat Music Ltd
[৬] See my article, ‘I Have No Cannons That Roar’ at http://www.mountainofl ight.com
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটাও পড়লাম-
জাযাকাল্লাহ...
(কেউ মন্দ অর্থে নেবেননা, প্লীজ) ফতোযার চাপে দাওয়াতের ক্ষেত্রগুলো সংকোচনশীল,
তবে আল্লাহতায়ালা যাকে চান তার জন্য পথও করে দেন- সে যেখানেই থাকুক
চালিয়ে যান!
সালাফদের সবাই এবং আধৃুনিক ওলামাদের প্রায় সবাই মিউজিকের বিপক্ষে। আর আমাকে মূলত সালাফদের মাধ্যমেই শরীয়াহর ব্যাখ্যাগুলি নিতে হবে। কারণ মিউজিক এখনও আছে তখনও ছিল। আমার যুক্তি বলছে, এটার যদি সত্যিই কোনভাবে গ্রহণযোগ্যতা থাকত তবে সালাফরা এর পক্ষে অবশ্যই কিছু লিখত।
=================
আমাদের তরুণদের মধ্যে একটি ব্যাধী মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা মুজতাহিদ না হয়েও ইজতেহাদ করি, কোরআন না বুঝেও এর ব্যাখ্যা করি। ফলে অতীত সালাফাদের ব্যাপারে আমরা মারাত্মক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।
====
মহান আল্লাহই ভালো জানেন। মহান আল্লাহর কাছে সত্য জানা, বুঝা এবং মানার তাওফিক কামনা করছি।
লেখক নিজেও বলেছেন বিষয়টি নিয়ে ইখতিলাফ আছে। যে বিষয়গুলোতে ইখতিলাফ থাকে সেগুলিতে আলাদা প্র্যাকটিসে সমস্যা নেই, সমস্যা হয় তখনই যখন একপক্ষ আরেকপক্ষের উপর নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়।
আপনার প্রার্থনায় আমীন।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ইসলামের সাথে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারকে কিভাবে ব্যালেন্স করলেন জানার অপেক্ষায় থাকলাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন