আল মুজাতামা'’ ম্যাগাজিনে কভার ষ্টোরিঃ "বাংলাদেশে মুসলিমদের অগ্নিপরীক্ষা"
লিখেছেন লিখেছেন অভিযাত্রিক ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৪২:০৬ সন্ধ্যা
ইংলিশ ভাষাভাষীদের কাছে পুরো পৃথিবী জুড়ে টাইমস অথবা নিউজউইক যেমনভাবে আদৃত ম্যাগাজিন, আরবী-ভাষীদের কাছে আল মুজতামা'’র অবস্থান তেমনই। কুয়েত থেকে প্রকাশিত এ সাপ্তাহিক সাময়িকীটি আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন। একাত্তর সালে শায়খ আবদুল্লাহ আল মুতাওয়া’ এটি প্রকাশ শুরু করেন, এরপর থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে এর জনপ্রিয়তা শুধুই বেড়ে চলেছে। আল মানার, আল বায়ান, শারক্ব আল আওসাত্ব, আরবী রিডার্স ডাইজেষ্ট সহ আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক আরবী ম্যাগাজিন আছে, কিন্তু আল মুজতামা'’র জনপ্রিয়তা ও সার্কুলেশন সবচেয়ে বেশি। আমি যখন রিয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন অফ টাইমে না গেলে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে এ ম্যাগাজিনটা কয়েক কপি থাকার পরও হাতে পাওয়া যেতো না। ঘানার মুসা সালেহ এবং ফ্রান্সের সিবাসতিয়ান; দুই ক্লাশমেট আমাকে বলেছিলো যখন তারা আরবী ভাষা শেখার চিন্তা শুরু করেছিলো তখন থেকে আল মুজতামা'’ তারা পড়ার চেষ্টা করতো নিজ নিজ দেশে।
মুজতামা’' শব্দটিতে মীম বা ম অক্ষরের পরে একটা কমা দিয়ে আরবী 'আইন' অক্ষর বুঝানো হচ্ছে। এ নামের অর্থ হলো '‘সমাজ'’।
সেই আল মুজতামা'’ ম্যাগাজিনে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উপর সরকারী ফ্যাসিবাদী নির্যাতন নিপীড়নের খবর এখন কভার ষ্টোরি হিসেবে এসেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের দেশের এ পরিচয় দেখে একদিকে যেমন দু:খ হয়, তেমনি দেশে যে পরিমাণ অন্যায় নির্যাতন চলছে তার সিকিভাগও তো প্রকাশ হচ্ছে না, এটাও বাস্তবতা। কয়েকদিন আগে কাশ্মীরী এক ক্লাশমেট ফেসবুকে প্রশ্ন করেছিলো, তাঁর দেশে দখলদার ভারতীয় বাহিনী মুসলিম নারীদের নির্যাতন করে। আর বাংলাদেশেও পর্দা করার অপরাধে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মেয়েদেরকে। পার্থক্য কি? তাকে বলেছিলাম, এখনো পুলিশ আমাদের দেশে প্রকাশ্যে নির্যাতন করতে সাহস পায়না ভারতের মত। তবে এভাবে চলতে থাকলে আর কয় বছর পরে কোন পার্থক্য থাকবেনা, এবং তারই ক্ষেত্র এখন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আল-মুজতামা’' ম্যাগাজিনের ‘'বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েমের প্রক্রিয়া' প্রবন্ধটিতে একই চিন্তার অনুরণন দেখছি। ম্যাগাজিনটির বিগত সপ্তাহের সংস্করণ ২৯ ডিসেম্বরের ২০৩৩তম ইস্যু এবং বর্তমান সংস্করণ ৫ জানুয়ারীর ২০৩৪তম ইস্যুতে ‘'বাংলাদেশে মুসলিমদের অগ্নিপরীক্ষা'’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
২০৩৩তম সংস্করণে কভার ষ্টোরির শিরোনাম হলো 'বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াঃ বিরোধীমত নির্মুল এবং নির্বাচনী কারচুপি’'। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের ছবি এবং রক্তাক্ত রাজনৈতিক কর্মী। আরেকটা ছবিতে দেখা যায় দু’হাত তুলে আর্তনাদ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন বয়স্ক মানুষেরা। ম্যাগাজিনটির ত্রিশ ও একত্রিশতম পৃষ্ঠায় এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন আহমাদ আল শালক্বামী।
[পৃষ্ঠাঃ ৩০] আহমাদ আল শালক্বামীর লেখা
------------------------------------------------------------
[পৃষ্ঠাঃ ৩১] আহমাদ আল শালক্বামীর লেখা
------------------------------------------------------------
এর সাথেই বত্রিশ, তেত্রিশ এবং চৌত্রিশতম পৃষ্ঠায় আরেকটি প্রতিবেদন লিখেছেন ঢাকা থেকে মুহাম্মদ সালিম মানসিরি, শিরোনাম ‘'রাষ্ট্রব্যাবস্থা থেকে কি দ্বীনকে পৃথক করা হচ্ছে?'’। বিস্তারিত ও তথ্যভিত্তিক এ প্রতিবেদনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধর্মনিরপেক্ষতা থিসিসের বর্ণনা আছে। এ ম্যাগাজিনটি বাংলাদেশেও প্রতি সপ্তাহে প্রচুর পরিমাণে আসে। দ্য ইকনমিষ্ট এর মতো এখন মুজাতামা'কেও সরকার বন্ধ করার চেষ্টা করবে কি না তাই দেখার বিষয়।
[পৃষ্ঠাঃ ৩২] সালিম মানসিরির লেখা
------------------------------------------------------------
[পৃষ্ঠাঃ ৩৩] সালিম মানসিরির লেখা
------------------------------------------------------------
[পৃষ্ঠাঃ ৩৪] সালিম মানসিরির লেখা
------------------------------------------------------------
চলতি ২০৩৪তম সংস্করণে মুহাম্মদ সালিম মানসিরির আরেকটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, শিরোনাম 'শ্রেণীগত খতমের কৌশল.. এবং বিচ্ছিন্নতা'’। ঐতিহাসিক তথ্যনির্ভর এ প্রতিবেদনের ভূমিকায় প্রতিবেদক লিখেছেনঃ "বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন থেকে ইসলাম নির্মূলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও তার শরীক দলগুলো উগ্র ও চরমপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছে। তারা এ উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের তথাকথিত ‘যুদ্ধাপরাধী’দের বিচারের পরিকল্পনা করেছে। এজন্য তারা নতুন দাবী তৈরী করেছে যার মূল টার্গেট হলো কেবলমাত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ”।"
[চলতি সংস্করণঃ পৃষ্ঠা ৩৪]
------------------------------------------------------------
[চলতি সংস্করণঃ পৃষ্ঠা ৩৫]
------------------------------------------------------------
[চলতি সংস্করণঃ পৃষ্ঠা ৩৬]
------------------------------------------------------------
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশর সরকারী দল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে তাদের পাশে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ সফরে আসা সৌদি পার্লামেন্টের স্পিকার ড. আবদুল্লাহ ইবরাহীম আল শায়খের সাথে দীপুমণির আজ সকালের বৈঠকে আর্তনাদ ও ফরিয়াদ। বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৌদি আরবের কাছ থেকে ইসলামী স্বার্থরক্ষায় কোন অবদান আশা করা একটু কঠিন, বিশেষ করে বাংলাদেশে তাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূত বুসাইরী যেখানে আওয়ামী মন্ত্রীদের গ্লাসবন্ধু, এক আড্ডায় পান করতে বিশেষ পছন্দ করেন। বরং তুরস্কের অবদান এখনো অনেক ইতিবাচক ও শক্তিশালী।
তবে, সৌদি আরবের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক ইসলামী চেতনা সম্পন্ন মানুষ আছেন। স্পিকার ড. আবদুল্লাহ একজন বড় আলেম ও তাদের পার্লামেন্টের সেক্রেটারী জেনারেল ড. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আমেরও একজন সচেতন ব্যাক্তি। আল মুজতামা'’ ম্যাগাজিনে এতো বিস্তারিত প্রতিবেন প্রকাশের পর আরব বিশ্বে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচন্ড আকারে ছড়িয়ে পড়বে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ যিনি স্ক্যান করে আল মুজাতামা'র পৃষ্ঠাগুলো পাঠিয়েছেন
বিষয়: বিবিধ
২৮৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন