খোয়াবনামা'য় ভ্রমণ
লিখেছেন লিখেছেন অভিযাত্রিক ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৪৬:৪৬ বিকাল
প্রায় আড়াই মাস আগে একটা ইমেইল পেয়েছিলাম, রিসার্চ ষ্টুডেন্টদের জন্য স্কুলের আয়োজনে তিনদিনের একটা রাইটিং রিট্রিট হবে, নভেম্বরের পঁচিশ তারিখ থেকে শুরু। সিডনী থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে ক্যাঙ্গারু ভ্যালী নামে কোন এক জায়গায় গিয়ে থাকবে। এসব ক্ষেত্রে আমার অভ্যাস খারাপ। নিজের বিছানা আর বাথরুম ছেড়ে কোন ক্যাম্প, টিসি বা কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। আবার একবার গেলে ফিরতে ইচ্ছা করে না। ঐ পুরনো আলস্যজনিত অভ্যাসে ভেবেছিলাম যাবো না। ঠিক এ বদঅভ্যাসের কারণেই দুই বছর হয়ে যাওয়ার পরও অষ্ট্রেলিয়ায় বেড়ানোর জায়গাগুলো তেমন দেখা হয়নি। হয়তো ফিরে যাওয়ার আগে দেখা হবেও না। মেইলটা পড়ার পর ডিলিট করে দিয়েছিলাম।
অক্টোবরের পঁচিশ তারিখ ছাত্রদের রুমে বসে দেশের পত্রিকা পড়ছি আর মাথার চুল ছিড়ছি এমন সময় ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু পাশের টেবিল থেকে জিজ্ঞাসা করলো রিট্টিটের ভেন্যুতে কিভাবে যাবো, গাড়িতে না ট্রেনে। যখন শুনলো আমি যাচ্ছি না, সে হায় হায় করে উঠলো। তার আশংকা হলো, ওখানে সবাই থাকবে অষ্ট্রেলিয়ান। সে ‘এলিয়েনেটেড’ ফিল করবে। সুতরাং ঐ মেইলটা সে আমার কাছে ফরোয়ার্ড করলো আবার। তার চেহারা দেখে একটু মায়া হলো। তাছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুই বা তিন দিন দুপুরে তার খাবারের ভাগ পাই, তাকে বিগড়ানো ঠিক হবে না। ভাবলাম তাহলে যাই তিনদিনের জন্য ঘুরে আসি। এমনিতেই গত তিন চার মাস ধরে কোন পড়া বা লেখা, কিছু হয়নি। পড়ালেখার অবস্থা খুবই আশংকাজনক, ডিগ্রি হবে কি না অনিশ্চিত। তো রাইটিং রিট্রিটে গিয়ে কিছু রাইটিং যদি হয়, খারাপ কি। ইমেইল প্রেরণকারীণী কোঅর্ডিনেটরকে মেইল করলাম, আমি যেতে আগ্রহী। ভাগ্য ভালো, ঐদিন পঁচিশ তারিখই ছিলো আরএসভিপি দেয়ার শেষ দিন। পরের সপ্তাহে ফিরতি ইমেইল পেলাম, যাওয়ার জন্য যাদের ছাত্রত্ব মোটামুটি শেষ পর্যায়ে, এমন আটজনকে বাছাই করেছে তারা। ভাগ্যের ফেরে আমার নাম আছে। বন্ধু ফিরদাউসের নামও আছে।
সোমবার ভোর সাড়ে চারটায় অন্ধকার থাকতে থাকতে বের হলাম, হিম হাওয়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর চমৎকার কুয়াশা। প্রথমে এম ফাইভ মটরওয়েতে একশ দশ স্পিডে গাড়ি চালানো যায়। যদিও তেমন বেশি না তবু মন্দের ভালো। গাড়ি চালানো হলো আমার প্রিয় কাজ, আক্ষরিক অর্থে ফকিরের ঘোড়া রোগের মতো। জানালা খুলে দিয়ে গান শুনছিলাম, তোমাদের কাছে এসেছি আমি দূরের কণ্ঠস্বর/ আমি ছুয়ে যেতে চাই মাটি ও মানুষের সুনিবিড় অন্তর/ আমি খানজাহানের পূণ্যতীর্থে প্রাণের প্রতিধ্বনি/ শহর থেকে গ্রামে গঞ্জে শুভেচ্ছা বয়ে আনি/ আমি বাংলাদেশের আত্মার বাণী/ সুললিত নির্ঝর। হঠাৎ যখন শুরু হলো, প্রতিদিন সূর্য ফিরে/ ফিরে সোনালী জোছনা/ শুধু ওরা ফিরেনা। সদ্য শহীদ আমিনুল ইসলাম ভাই এর কথা মনে হলো। স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে থেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ মেরে ফেললো। সুন্দর সকালটা বিষাদময় মনে হলো।
প্রায় আড়াই ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে ক্যাঙ্গারু ভ্যালিতে বুশ রিট্রিট নামের একটা রিসর্টে পৌছলাম। শেষের প্রায় বিশ কিলোমিটার রাস্তা পাহাড়ি। রাঙ্গামাটি যাওয়ার রাস্তার মতোই বিপদজনক, ত্রিশ চল্লিশের বেশি চালালে খাড়া বাঁকে নিশ্চিত নিয়ন্ত্রণ হারাতে হবে। পাহাড়ের উপর কয়েক একর জায়গার উপর ছড়ানো রিসর্ট। গিয়ে জানলাম প্রতিদিন বিকালে দেড়ঘন্টার একটা লেকচার বনাম ওয়ার্কশপ ছাড়া সারাদিন নিজের লেখালেখির জন্য বরাদ্দ, নিজের স্বাধীনতা। এর মাঝে সকাল সাতটা থেকে আটটা নাস্তার জন্য, দুপুর একটা থেকে দুইটা দুপুরের খাবার আর বিকেল ছয়টা থেকে সাতটা রাতের খাবার দেয়া হবে। সুর্য ডুবতে ডুবতে প্রায় আটটা।
থাকার জন্য একটা রুম পেলাম, কাঠের বাড়ি। কাঠের মেঝে, কাঠের ছাদ, বিশাল বিশাল কাঠের আসবাবপত্র, ফায়ারপ্লেস। প্রাচীন অনুভব। রিসর্টের মাঝখানে মোটামোটি বড় একটা আলাদা বাড়িতে কনফারেন্স রুম, ডাইনিং রুম আর কিচেন একসাথে। পুরো রিসর্ট তিনদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছে ভার্সিটি। লোকজন সারাদিন কনফারেন্স রুমে বসে পড়ালেখা করে, লেখালেখি করে। এক ছাত্র ছিলো যে একটানা তিনদিনই বাইরে গাছের সাথে টাঙ্গানো একটা হ্যামকে শুয়ে ছিলো। গাছের পাতার দিকে অথবা ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো, না কি ঘুমাতো, বুঝা যায়নি কড়া কালো সানগ্লাস চড়িয়ে রাখায়। তবে কখনো যখন একটু পরপর যখন হুইস্কির চ্যাপ্টা একটা বোতলে চুমুক দিতো, তখন বুঝা যেতো জেগে আছে। কানে আইফোনের ইয়ারপিস, পুরোই দেবদাস। আরেকজন লেকচারারকে শুধু দেখা যেতো খাবারের সময়, অন্য সময় কোথায় থাকতো জানি না। এমনকি বিকেলের লেকচারেও আসতো না। আর তিনজন লেকচারার পুরো তিনটা দিন পাহাড়ের কিনারে ডেকে বসে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছে। সবচেয়ে সিরিয়াস ছিলো চারজনের মতো, সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখে উনাদের থেকে শ্রদ্ধামিশ্রিত দুরত্বে অবস্থান করেছি। আমার অনুমান হলো উনারা প্রত্যেকেই তিনদিনে অন্তত ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ ষাট হাজার শব্দ লিখে শেষ করেছেন। উনারা যন্ত্রমানবী।
সবমিলে ছিলো পনেরজন। আট জন ষ্টুডেন্ট আর সাত জন লেকচারার। মুসলিম ছিলাম কেবলমাত্র আমি আর ফিরদাউস। জোহর ও আসর কসর করে একসাথে, আবার মাগরিব এবং এশার কসর একসাথে। বারবার মনে হয়েছে সারাজীবন মুসাফির থাকতে পারলে মন্দ হতো না। আগে থেকে ডায়েটারি রিকয়ারমেন্ট জানিয়ে রাখাতে খাবারে হালাল মুরগী আর গোশত দিয়েছে, রান্নায় ওয়াইন ব্যাবহার করেনি। আর সবসময় ভেজিটেরিয়ান খাবার তো ছিলোই। ক্যাটারিনা নামের মধ্যবয়সী এক মহিলা আঠারো বছর যাবত এ রিসর্টে রান্না ও ক্যাটারিং করছেন। এদিক সেদিক ফ্রি খেতে খেতে সাধারণত গ্রাজুয়েট স্কুলের ছাত্রদের জিহবা লম্বা হয়ে যায়, এবং খাবারের দোষ ধরা অভ্যাস হয়ে যায়। তবে ফাঁকেফোকড়ে আবার খুব ভালো জায়গার খাবারও সুযোগ হয়, সুতরাং তারা ভালো খাবার চিনতে পারে। ক্যাটারিনার রান্না মোটামুটি ফাইভ ষ্টার হোটেলের কিচেনের সাথে টেক্কা দিতে পারবে, সবাই একমত।
একসাথে ডিনার করে মোটামুটি সবাই বিশাল এক ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে বসে তিন চার ঘন্টা হাউকাউ করতো, রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত। আর আমরা দুজন ছাড়া বাকি সবাই দেদারসে ওয়াইন পান করতো। চা, কফি সহ সকল পানীয় ছিলো অফুরন্ত। এদের মদ্যপান সারাদিন দেখা যায়না। বিকেল ছয়টার সময় ডিনারের সাথে সাথে শুরু হয়, চলে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। গন্ধটায় অভ্যস্ত না হওয়াতে সদ্য খাওয়া খাবারগুলো পেটের ভেতর থেকে আবার উপর দিকে উঠার চেষ্টা করতো। তাছাড়া আমি চিরকাল আসর জমাতে বা কথা বলতে প্রমাণিত আনাড়ি। সুতরাং দশ পনেরো মিনিট ওদের অবস্থা দেখে শুনে তারপর চুপিসারে কেটে পড়তাম।
একটা সুইমিং পুল ছিলো, আর কেউ নামেনি। শুধু আমি প্রতিদিন সকাল এগারোটায় আর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আধাঘন্টার জন্য নামতাম। সাতারের সময় শুণ্যমাথায় চিন্তাভাবনা করা যায়, আবার সাতার কেটে ক্ষিদেটাও জমে। কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, ইন্টারনেটও নেই। অভ্যাসের ঠিক বিপরীতে ঘুমিয়েছি রাত দশটার দিকে আর উঠেছি সাড়ে চারটা, পাঁচটায়। মাঝে মাঝে বউ, বাচ্চা আর বাবা-মাকে মিস করেছি। কয়েকবার মনে হয়েছে, আম্মা যদি এরকম নিস্তব্ধ ও গাছপালা ভর্তি জায়গায় কয়েকদিন থাকতেন তাহলে কতো কিছুই না লিখতেন। অথবা আনন্দে হয়তো বাকরুদ্ধ ও লেখারুদ্ধও হয়ে যেতেন।
ইন্টারনেট না থাকাতে বাংলাদেশের খবর পড়ে আর অরাজকতা দেখে মাথা গরম করে দু:খিত হয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেবার সুযোগ নাই। পড়ালেখা খুব যে আহামরি হয়েছে এমন না, তবে একটা চ্যাপ্টারের কিয়দংশ লেখা হয়েছে। এবং তিন দিন শেষে এ মুহুর্তে মনে হচ্ছে মোবাইল আর ইন্টারনেট আগামী কয়েকমাসের জন্য বাদ দিলে হয়তো ডিগ্রি শেষ করা সম্ভবও হতে পারে। সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে নাস্তা আর পরে আধাঘন্টা সাতার কাটা ছাড়া দুপুর একটা পর্যন্ত নিয়মিত লেখার চেষ্টা করেছি। দুপুরের খাবারের সময় একটা থেকে শুরু করে আড়াইটা তিনটা পর্যন্ত আড্ডা হতো। আমাদের চারজনের একটা গ্রুপের মতো হয়ে গিয়েছিলো। ফিরদাউস আমি রাসেল আর ব্রিজিট। রাসেল আর ব্রিজিট দুজনেই প্রৌঢ় একাডেমিশিয়ান, পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছে। বইও লিখেছে। ইসলাম, অষ্ট্রেলিয়ান আদিবাসী, এলকোহল, হালাল হারাম, মাইগ্রেন্ট জেনারেশন, রাজনীতি, সুফিবাদ, ইসরায়েল, পোপ, পরিবার, সামাজিক সম্পর্ক, সাহিত্য, ক্যাথলিসিজম, পাশ্চাত্যের আধ্যাত্বিক শুণ্যতা, ইয়োগা, ইউথেনেশিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে তারা সিরিয়াস কথাবার্তা বলতো। আমি তাদের জ্ঞানের কথা শুনতাম, একটু একটু সম্ভবত বুঝতাম বলে আবছা বিভ্রমের মতো হতো। পুরোটা সময় অবশ্য জোরেশোরে মাথা নাড়তাম। এবং মাঝে মাঝে ঠেকার কাজ চালানোর জন্য দুই একটা বাক্য বলার চেষ্টাও করতে হয়েছে।
সাথে করে একটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা। দুপুরের খাওয়ার পর পড়তে শুরু করতাম, মাঝখানে সাঁতার কাটা ছাড়া ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। অনেকদিন পর বই পড়লাম, এবং তিনদিনে প্রায় সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার বইটা শেষ করে ফেললাম। একটা ভালো বই, ভালো লেখার শক্তি দেখে আবার বাকহারা হলাম। বইটা পড়ার সময় একটা অনুভূতি বারবার হয়েছে আমার। মনে হয়েছে মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত ছোঁয়া বিশাল এক ক্যানভাসে আঁকা এক ছবি, বর্ণিল। ছবির মাঝে অনেক অনেক বার্তা, কিছু বুঝা যায়, বুঝে অবাক হতে হয়। আবার কিছুটা যেন ধরা যায়না, অতৃপ্তির একটা হাহাকার জাগায়। ঐ ক্যানভাসের সামনে দাড়ানো একটা শিশুর মতো মনে হয়েছে নিজেকে। সাহিত্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় যে জনরা, রম্যের এমন অদ্ভুত চাবুকের আঘাত দেখে কতবার একা একা হেসেছি হিসাব নেই। আমার বিয়ের আগে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ভবিষ্যত শাশুড়বাড়িতে রিপোর্ট দিয়েছিলো, ছেলে একটু বোকাসোকা। এরকম একা একা হাসি দেখলে নিশ্চিতভাবে সে হাবাগোবাই সাব্যস্ত হতে হতো আমাকে।
অনেক আগে পড়েছিলাম চিলেকোঠার সেপাই, ঊনসত্তরের আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা। আর খোয়াবনামার প্রেক্ষাপট হলো সাতচল্লিশের দেশভাগ। পৃথিবীতে যখন বড় বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তখন অত্যন্ত তুচ্ছ ও অনুল্লেখযোগ্য উত্তরাঞ্চলের কোন গ্রামের জীবনযাত্রার ভেতর ডুবে গিয়ে নাক জাগিয়ে আশপাশ একটু একটু করে দেখার এ ভঙ্গিমাটা অতুলনীয়। বড় বড় ঘটনার ঢেউ মাঝে মাঝে আছড়ে পড়ে গ্রামের ভাঙ্গা ঘরে কিংবা হাটের আসরে। আবার কখনো তেমন বুঝা যায় না কিন্তু দূর থেকে আবছা দেখা যায়। বর্গা-কৃষক, গ্রামের মোড়ল, ইমাম সাহেব, অথবা দোকানদার কিংবা মাঝি, কখনো নুলা ফকির বা বাউল লোক-গায়ক অথবা কৃষককন্যার ঠিক মনের কথা ও ভাবনাগুলো ঠিক তাদের মতো করে দেখার জাদুকরি ক্ষমতা অবাক করে, লেখকের প্রতি কিছুটা ভক্তি জাগায়। প্রতিটি ঘটনায় ঠিক যে কথাটা ঐ মানুষের মুখে বলার কথা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস যেন ঐ কথাটাই বলেছেন। যেভাবে ঐ মানুষটা চিন্তা করবে, ইলিয়াস ঠিক যেন ঐ চিন্তাটার কথা লিখেছেন। মানুষের চিরায়ত অভ্যাস, প্রকৃতি, বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাস ও সংস্কার, ধর্মের অবস্থান ও প্রায়োগিকতা এসবকিছুই ঘটনার পরতে পরতে তেমন কোন বাহুল্য ছাড়া যুক্ত হয়েছে। লেখা অবশ্য যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্কসুলভ সীমালংঘনকারী, শ্লীলতা-অশ্লীলতার বিচারে অনেককে আহত করতে পারে।
ঐসময়কার এক অনুল্লেখ্য গ্রামে, হাজার হাজার গ্রামের একটা প্রতিরুপ এমন একটা গ্রাম, মুসলিম হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চিন্তাভাবনা, এমনকি মুসলিমদের ভেতরেও জাতপাতের হিসাব, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মের ব্যাবহার, মুহাম্মদী-হানাফি সংঘাত এসবকিছুর বর্ণনা-পাঠ ইসলামিক ষ্টাডিজের ঠেকেঠুকে চলা ছাত্র হওয়ার পরও আমার মনযোগ টেনেছে, এবং একটু বেশিই আনন্দ দিয়েছে। মানুষগুলোর জীবনটা কেটে গেছে সুখে দুঃখে সংঘাতে, স্বপ্নের ভেতর দিয়ে, কখনো উল্লেখ্য আর বেশিরভাগ সময় নিতান্ত গুরুত্বহীন অনুল্লেখ্য ঘটনায় ঘটনায়। বাস্তবতা আর অতিবাস্তবতাকে মিলিয়ে নিলে এমন খেতে না পাওয়া চুড়ান্ত অভাবী কষ্টকর জীবনের কষ্টগুলো হয়তো কিছুটা এড়ানো যায়। এভাবেই বেঁচে থাকে আমাদের দেশের মানুষেরা। খোয়াবনামা পড়তে গিয়ে তাদের খাব ও খাবের তা’বীর দেখে বারবার অভিভূত হয়েছি কিভাবে শব্দের পর শব্দ বসিয়ে নতুন নতুন পৃথিবী বানানো যায়, নিরেট স্রষ্টাপ্রদত্ত এ ক্ষমতা দেখে। এই দু’হাজার দশ/বিশ সালে আমরা যে জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি তার খোয়াবনামা কি কোনদিন লেখা হবে? অসংখ্য মানুষের স্বার্থপরতা, ত্যাগ, ক্ষমতার টানাটানি, কখনো খাবারটুকু জোগাড় করার জন্য সম্মানত্যাগ, সম্পর্ক ভাঙ্গাগড়া এসব কিছু টুকরা টুকরা স্বপ্নের মতো মিলিয়ে দেখলে কতটা দরকারী মনে হবে তখন কে জানে!
----------------------------------
ব্যাক্তিগত ব্লগে
বিষয়: বিবিধ
২২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন