শাহবাগ আন্দোলনঃ বাতাসের বিপরীত স্রোতে দাড়িয়ে
লিখেছেন লিখেছেন অভিযাত্রিক ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩৭:১৮ বিকাল
বৃহস্পতিবার মিরপুর দশ নাম্বার থেকে স্বকল্প বাসে উঠেছি সন্ধ্যা ছয়টায়, যাবো কমলাপুর। বন্ধু আজিজ ওখানে আসবে মতিঝিল থেকে, তার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাতের ট্রেন ধরবো। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে (এখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর ইসলামী প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধের দাবিও যোগ হয়েছে) শাহবাগ যেহেতু বন্ধ, বাকি সব রাস্তায় তুমুল যানজট। খামারবাড়ী থেকে বাস ঢিমেতেতালে এগুচ্ছে, এক ঘন্টা লাগলো কাওরান বাজার পৌছতে। এসময় আজিজকে ফোন করলাম কতদূর এসেছে জানার জন্য।
তার সাথে কথা হচ্ছিলো রাতের ট্রেন ধরার আগে শাহবাগ গিয়ে এ প্রোগ্রামটা কিছুক্ষণ দেখে আসা যায় কি না তা নিয়ে। পিএইচডি শেষ করতে পারবো কি না এখনো জানিনা। কিন্তু শুরু করার পর শিখেছি, যে কোন কিছু সম্পর্কে জানতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজ চোখে দেখা আর নিজ কানে শোনা। শাহবাগ মোড়ের গণজমায়েত নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা আছে আমার। এ গণজমায়েত নিয়ে টিভি আর পত্রিকাগুলো গত দুদিনে তোলপাড় করছে। বাংলাদেশের মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা আর সততা নিয়ে যেহেতু পরিস্কার ধারণা আছে আমার, তাই খুব ইচ্ছে করছিলো গিয়ে নিজ চোখে দেখে আসার।
কিন্তু হিসেব করে দেখলাম এই সাড়ে সাতটার সময় শাহবাগ গেলে এরপর যানজট ঠেলে কমলাপুর গিয়ে ট্রেন ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। এর উপরে আমি তখনো টিকেট করিনি। দুইদিন আগে গিয়ে টিকেট পাইনি, তাই ষ্টেশনে গিয়ে যারা ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রি করে অথবা শেষ মুহুর্তে টিকেট ফেরত দেয় তাদের কাছ থেকে টিকেট করার ইচ্ছা। এবং বাসে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই। সুতরাং সময় কোনভাবেই কুলোবে না। এটা বুঝে শেষপর্যন্ত বাংলামোটরে না নামারই সিদ্ধান্ত নিলাম। টিকেট কমলাপুর পর্যন্ত, ওখানেই চলে যাবো।
এসব নিয়ে আজিজের সাথে যখন ফোনে কথা হচ্ছিলো সে জিজ্ঞাসা করলো শাহবাগ মোড়কে তো বাংলাদেশের তাহরীর স্কয়ার বলা হচ্ছে, তোর কি মনে হয়? আমি বললাম, যেহেতু নিজ চোখে দেখিনি তাই বিষয়টা কেমন তা বলতে পারছি না। কিন্তু আর যাই হোক এটাকে তাহরীর স্কয়ার বললেই তা হয়ে যায়না। তাহরীর স্কয়ার ইতিহাসের অংশ হয়েছে সরকার আর এষ্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ত্যাগ তীতিক্ষার কারণে। আর ফ্যাসিষ্ট, পুলিশনির্ভর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে যা হচ্ছে তা বড়জোর একটা সুপারফিশিয়াল কপিক্যাট। মৌলিক বৈশিষ্ট্যটাই তো নাই এখানে।
রাস্তায় নামলেই শিবিরকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ, চোখ উপড়ে তুলে নিয়ে লাশ ফেরত দেয়। আর ওদেরকে এসকর্ট দিয়ে মন্ত্রী মিনিষ্টাররা গিয়ে মদদ দেয়। এমন ডাবল ষ্ট্যান্ডার্ড দিয়ে কোন দিন ভালো কোন কিছু হয় না, হবেও না।
পাবলিক স্পেসে আমি ফোনে নিচু গলায় কথা বলি। তবু আশেপাশের দুয়েকজন শুনেছে মনে হলো। তাকাচ্ছে, তবে কেউ কিছু বলছে না। একটু পর অবধারিতভাবে বাসের মানুষজন এই বিচার, একাত্তর, দুর্নীতি, চোরদের রাজনীতি এসব নিয়ে অনেক কথা বলতে লাগলো। এসব পুরনো কথায় কেবল কথাই হয়, কোন কাজ হয়না। এর মাঝেও দেখলাম দুয়েকজন বলছে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকা। এসব কথা শুনতে ইচ্ছা করছিলো না। একটা গানের কথাই বারবার মনে পড়ছিলো, আমার আম্মা এ গানের ক্যাসেটটা প্রায়শ বাজাতেন, যখন ছোট ছিলাম। মতিউর রহমান মল্লিক (আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন) কত চমৎকার অর্থবহভাবেই না বলেছেনঃ
আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে/ কেন বেছে নিলে এই পথ? কেন বেছে নিলে এ বিপদ?
জবাবে তখন বলি/ মৃদু হেসে যাই চলি/ বুকে মোর আছে হিম্মত।
বাতাসের সাথে স্রোত/ বিরোধিতা করে বলে/ বুকে আছে ঢেউ সাগরের,
সাগরের বুকে ঢেউ/ আছে বলে বন্ধু/ বেঁচে আছে পৃথিবী মোদের।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন