মাওলানা আযাদের ফাঁসি? হাসবুনাল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন অভিযাত্রিক ২২ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৩৬:২৮ দুপুর
মাওলানা আবুল কালাম আযাদ তাঁর জীবনে অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু সব ছাপিয়ে বড় পরিচয় হয়ে দাড়িয়েছিলো টিভিতে ইসলামী আলোচক হওয়াটা। এনটিভির অনুষ্ঠান ‘'আপনার জিজ্ঞাসা’'র মাধ্যমে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন দেশে ও বিদেশে। সৌদি আরবে দেখেছি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে তাঁর অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। ঐসময় চ্যানেল আইয়ে একজন ইসলামী আলোচক ছিলেন নুরুল ইসলাম ফারুকী নামে। সেই ফারুকী সাহেব তাঁর অনুষ্ঠানে মাজারপুজো মিলাদ এসবের পক্ষে যখন আবেগনির্ভর দলীলবিহীন কথাবার্তা বলতেন তখন প্রবাস থেকে অসংখ্য ফোন গিয়ে এসব আয়োজনকে এলোমেলো করে দিতো। আমার পর্যবেক্ষণে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের দলীলনির্ভর বক্তব্যের টিভি প্রোগ্রাম ছিলো এই প্রাণশক্তির পেছনে বড় একটা অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশী মুসলিমদের মাঝে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সংস্কারের ইতিহাসে মাওলানা আযাদ নিঃসন্দেহে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবেন।
সেই মাওলানা আযাদের ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়েছে গতকাল। এটা নতুন কিছু না। প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বাসীরা অপমানিত নির্যাতিত হয়েছে, আবার কখনো বিজয়ী হয়েছে। পৃথিবীতে এ উত্থান পতন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার চলমান পরীক্ষায় ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকলে পাওয়া যায় চিরস্থায়ী সম্মান। সুরা বুরুজে আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন আসহাবুল উখদুদ অর্থ্যাৎ গর্তওয়ালাদের ঘটনা। যারা বড় বড় গর্ত খুঁড়ে করে বিশ্বাসীদেরকে এসব গর্তের মাঝে ফেলে আগুন ধরিয়ে দিতো। এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস আনার অপরাধে তাদেরকে এভাবে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গর্তওয়ালারা কিনারায় বসে বসে তা দেখতো। গতকাল রায় ঘোষণার পরও অনেক মানুষ আনন্দ উল্লাস করছে। তাদের কারও কাছে এ আনন্দের কারণ পরিস্কার, যেহেতু তাদের সব প্রচেষ্টা ইসলামের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করানোর জন্যই এরা কাজ করছে। আবার অনেকের কাছেই এ আনন্দের কারণটা অন্যান্য কৃত্রিম ও বানানো কারণের আবরণে লুকানো। মিডিয়া ও ইতিহাসের ক্রমাগত মিথ্যাচার সাময়িকভাবে অনেককে ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছে।
আদর্শবাদীদের জন্য এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার উদাহরণ অজস্র। রাসুল সাঃ এর ঘনিষ্ঠ বদরী সাহাবী খুবাইব বিন আদী রাঃ কে মক্কায় ফাঁসীতে ঝুলানো হয়েছিলো। ইতিহাসের একই পথ ধরে কয়েক দশক আগেও লিবিয়ায় সাইরেনিকার সিংহ ওমর বিন মুখতার অথবা মিশরে সাইয়েদ কুতুবকেও ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। সুতরাং অনাগত ভবিষ্যতে পৃথিবীর শেষ প্রহর পর্যন্ত যুগে যুগে এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যে বিষয়টাতে আশ্চর্য হতে হয় তা হলো, আদর্শবাদী দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে মূলত পুঁজিবাদী বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার পরও জামায়াত যখন এ নির্যাতনের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পায়না, তখন বুঝতে হয় কেবল ইসলাম শব্দটাই বাতিল ও তাগুতপন্থীদের জন্য কতটা আতংক ও আশংকার বিষয় হতে পারে!
বাংলাদেশে এই বাতিলপন্থীদের বড় একটা ফ্রন্ট হলো মিডিয়া। আজকের বাংলানিউজ২৪ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গন প্রভু জগদ্বন্ধু ব্রহ্মচারী আশ্রমের সেবায়েত হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারী বলেছেন "প্রভুই পাপের শাস্তি দেন, তাড়াতাড়ি যেন ফাঁসি হয়"। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী বাহিনী জনাব হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারীর আশ্রমে হামলা করে এবং আটজন ব্রহ্মচারী সন্যাসীকে হত্যা করে। ঐ অমানবিক ঘটনার মর্মান্তিক, দীর্ঘ, বিস্তারিত বর্ণনার পর মাওলানা আযাদ বা মুজাহিদ ওখানে ছিলেন কি না এ প্রসঙ্গে ছোট করে কেবল উল্লেখ করা হয়- এ প্রশ্নের জবাবে অনেকক্ষণ মৌন থেকে ফের মুখ খুললেন সম্প্রদায়ের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সম্পাদক হরিপ্রিয়, "নারে বাবা, কাউকে চিনতাম না। তবে যে বাঙালী-বিহারিরা এসেছিলো তাদের মেলেটারীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। উর্দু বুঝি না, তবে মনে হলো, হিন্দু, জয় বাংলার লোক বলে মেরে ফেলার কথা বলছে। অনেক পরে শুনতে পেরেছি, ওরা নাকি মেলেটারীদের সহযোগী ছিলো, শান্তি কমিটি ছিলো রাজাকার ছিলো। আর মানুষ বলেরে ভাই, ওদের মধ্যে নাকি ও দুজন মানুষও ছিলো"।
হত্যাযজ্ঞের সময় একপাশে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য এটি। এরকম 'বুঝি না' '‘মনে হলো' 'শুনতে পেরেছি' 'মানুষ বলেরে' ধরণের প্রমাণ ও উপাত্তের উপর ভিত্তি করে এখন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের ইতিহাস গড়ে উঠছে। এ ইতিহাসের কাঠামো কতটা ভঙ্গুর এবং অন্যায়, তার বিচার মহাকাল করবে। কিন্তু বর্তমানে যে প্রহসন চলছে তার উত্তরে বিশ্বাসীরা শুধুমাত্র এ প্রার্থনাই করতে পারেঃ
"হে আল্লাহ, আমাদেরকে এ জনপদ থেকে বের করে নিয়ে যান, এখানকার মানুষেরা তো জালিম হয়ে গিয়েছে। আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে বন্ধু এবং সাহায্যকারী পাঠান"। সুরা নিসাঃ ৭৫।
বর্তমানে যারা কারাগারে রায়ের অপেক্ষায় আছেন, তাদের মাঝে সমগোত্রীয় এক বা দুইজন ছাড়া বাকীদের জন্য দল হিসেবে জামায়াত যা করেছে, প্রয়োজনীয় কৌশলগত সাহায্য সম্ভবত এরচেয়ে বেশি আর দেবে না। স্কাইপি সংলাপ ফাঁস হওয়ার পরও ট্রাইবুনালে অংশগ্রহণ চালিয়ে যাওয়া থেকে এটা ধারণা করা যায়। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানো, বর্তমান স্বার্থরক্ষা এবং অন্য নেতাদের প্রয়োজন পূরণে যা করা দরকার তা করছে ও করবে। সুতরাং এখন যারা ফাঁসির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন, এমন নিরুপায় অবস্থায় পৃথিবীতে তাদের আর কোন বন্ধু থাকতে পারেনা, একমাত্র ঐশী শক্তিই এদের শেষ আশ্রয়স্থল।
হাসবুনাল্লাহু ও নি'মাল ওয়াকীল। 'আমাদের আশ্রয়স্থল একমাত্র আল্লাহ এবং তিনিই বন্ধু হিসেবে যথেষ্ট'। হে আল্লাহ, ওরা আমাদের উপর তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে, আপনি ওদের উপর আপনার ক্ষমতা আমাদেরকে দেখিয়ে দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন