এলোমেলো শেষ দিন

লিখেছেন লিখেছেন অভিযাত্রিক ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:০৯:০০ রাত

- কত যে সাগর নদী পেরিয়ে এলাম আমি

কত পথ হলাম যে পার

তোমার মতন এতো অপরুপ সুন্দর

কাউকে তো দেখিনিগো আর’ -

-কিরে, কেমন আছিস?

- এইতো ভালো।

- মন খারাপ না কি?

- নাহ

- তাইলে, চুপ ক্যান?

- শক্তি নাই বকর বকর করার।

- ভালো, চুপ করে বসে থাক।

- তোর সমস্যা কি, এতো গুতাস ক্যান?

- আমার কোন সমস্যা নাই, তোর মতো অতশত আমি ভাবি না, আমি ভালো আছি, ভালো থাকি সবসময়।

- বেশ, ভালো থাক। বসে থাক।

- পুরনো দু:খবিলাস চেগিয়ে উঠলো না কি আবার?

- হাহাহাহা, পুরনো সেই দিনের কথা। এতো দিনের প্রিয় প্রিয়তম অভ্যাস আর আনন্দ যদি একটু চর্চা করি তাতে তোর এতো মাথাব্যাথা ক্যান?

- ধরাতো খেয়ে গেলি। যাইহোক, গানটা গেয়ে ফেল। কোন প্রসঙ্গে?

- মহৎ অনুভূতিতে ভরে আছে মন। ঝামেলা করিস না।

- কি উপলক্ষে এ মহৎ অনুভূতি?

- বয়স হয়ে যাচ্ছে। সমাজ সময় চারপাশ কিছুই তো পাল্টাচ্ছে না। তাই হতাশ লাগে।

- তো এখন এই সিআরবির পাহাড় চুড়ায় বসে হঠাৎ এই কথা মনে হলো ক্যান?

- আসার সময় খেয়াল করেছিস কাজীর দেউড়ী মোড়ে? কয়েকশ মানুষ দাড়ানো। টেম্পু বাস এসবে ধাক্কাধাক্কি করে উঠার জন্য। আমরা পাজেরোর কালো গ্লাসের ভেতর থেকে দেখতে দেখতে আসি, তেমন গায়ে লাগে না। সিঙ্গারাটা ভালো লাগলো না বলে ডাষ্টবিনে ফেললাম, দেখলি একটা বাচ্চা মেয়ে তুলে নিয়ে কত আনন্দ নিয়ে খেতে লাগলো? মনে হয়, যদি আমি জন্মের গুণে ডাষ্টবিন থেকে খাবার তুলে খেতাম তাহলে কেমন হতো? প্রায় মনে হয়, আমি আজীবনের জন্য ঐ টেম্পুর জন্য অপেক্ষমান দলের মানুষ। ঐ দলে থেকেই আমি অভ্যাসের আনন্দ পাই।

- তো?

- তো আবার কি! - দেখি কত সুখী দম্পতি হাসিমুখে বাস করে শহরের ম্যানসনগুলোয়। আর হাসিমাখা এ সমাজই আমাকে ছাড়িয়ে ঘর নামিয়েছে পথের ধুলোয় -

- তোর বয়স কতো হলো?

- একত্রিশ

- হুম। এখন এগুলো ভাবিস না। তাইলে ভবিষ্যত অন্ধকার। চল্লিশ বছরে গিয়া সমাজ সংস্কারে নামবি। নবীর সুন্নাত। তারআগে কাফের হয়া জীবন গুছায়া নে।

- হারামজাদে, তুই মাদ্রাসা জগতের কলঙ্ক।

- আর তুই সুলঙ্ক। তবে এইটা ঠিক দোস্ত, আমরা মনে হয় বুড়া হৈ যাচ্ছি।

- তোর কেন এই কথা মনে হলো?

- মনে আছে আমরা যখন সেই পনের বছর আগে আড্ডা দিতাম কি নিয়ে কথা বলতাম?

- তাহের হুজুরের নিষ্ঠুর ধোলাই আর রফিক স্যারের সুন্দর মেয়ে সম্পর্কে।

- তার তিন চার বছর পর?

- সালমান শাহ, মৌসুমী, কক্সবাজার বেড়ানো, গাড়ি চালানো শেখা

- তার তিন চার বছর পর?

- বায়োলজি, অর্থনীতি

- তার তিন চার বছর পর?

- বিয়ে, বাচ্চা

- তার কিছুদিন পর?

- বাচ্চার অসুখ, বউ এর যন্ত্রণা

- আর এখন?

- রাজনীতি, বুদ্ধিজীবি, টক শো, ব্যাবসা খারাপ, বসটার জন্ম হইসিলো ইংলিশ রোডে

- তো, ব্যাপারটা ভেবে দেখতো এখন।

- হ, তাইলে বুড়া তো হয়েই গেলাম। আচ্ছা, এখন যদি আমরা মরে যাই তাহলে কি সত্যিই কোন আফসোস করার আছে?

- বাচ্চাগুলো শুধু নাদান বয়সে এতিম হয়ে যাবে। এছাড়া সমস্যা আর কি?

- তোর মনে আছে মাহফুজ ভাই এর কথা। একবার তোকে বলেছিলো, তুমি বড় শয়তান। তোমার অনেক চেহারা। কিন্তু আসলে তুই একটা বোকা। বাঁচার আনন্দটাই পাস না তুই।

- চুপ থাক, ব্যাক্তিত্ববান হো একটু।

- হাহাহাহাহা। মনে আছে এইটে না নাইনে তুই একদম চুপ হয়ে গেসিলি কয়েকদিনের জন্য। আমরা সবাই ভাবতে লাগলাম, ব্যাপারটা কি। হয়তো গোপনে প্রেম করে ছ্যাকা। তারও কিছুদিন পরে তুই ব্যাক্তিত্বের থিউরী ব্যাখ্যা করেছিলি।

- হোহোহোহো। হঠাৎ কৈরা মনে হৈলো একটু ব্যাক্তিত্ববান হওয়া দরকার। তখন কি আর বুঝতাম এগুলো সব মানুষের বানানো সুবিধাবাদী সামাজিক আচরণের কাঠামো।

- কিতাবের ভাষা বাদ দে। ঐ গাম্ভীর্যপূর্ণ, হাহাহাহাহাহাহা, সময়ে যে প্রেমপত্র পাইসিলি তার প্রেরিকা এখন কোথায়?

- হৃদয় খুড়িস না দোস্ত। প্রেরিকা যে কে ছিলো তাই তো জানলাম না এই জীবনে।

- শালার দুনিয়ায় কত দুর্ভাগা মেয়ে ঘুরে বেড়ায়। অথচ আমরা যে এতো এতো স্বর্গীয় ভালোবাসা নিয়ে বছরের পর বছর অন্তরটা এক্সপায়ার করে ফেললাম তার খোঁজ কেউ নিলো না। দুনিয়াতে দোস্ত সুষম বন্টনব্যাবস্থার বড়ই অভাব।

- তোর ভাবভঙ্গি তো সুবিধার না। মনে হচ্ছে আবার বায়োলজির আড্ডা দিবি। বাদ দে। মনটা খারাপ। নতুন বছর। সবাই কত লাফাচ্ছে। কিন্তু জীবনে নতুন কিছুই আসলো না।

- তোর কি মনে হয় সবাই আনন্দে লাফাচ্ছে?

- কেন, তোর থিউরীটা কি?

- সবাই আসলে বেদনা লুকাতে লাফায়।

- হুম, পছন্দ হইসে। চল আমরাও লাফাই, রীমা সেন্টারে মেজবান আছে। গাড়ি হাকায়া ঢুকবো, সবাই গম্ভীর মুখে থাকবি। আর মাথা নাড়ায়া বলবি 'নলার ঝোলে মাল টাল না থাইলে ইব্যা হোনডিল্লা মেজ্জান অইলদে বদ্দা!'

পুরো একটা বছর শেষ।

- হৃদয় আমার যায় যায়

যায় যে ভেসে

আজি হৃদয় আমার

যার পায়নি দেখা

তার উদ্দেশে ভেসে ভেসে -



বিষয়: বিবিধ

১৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File