মহান রাব্বুল আলামীন সাম্প্রদায়িক নন...
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৪:০৯:২৬ বিকাল
নোয়াখালীতে হিন্দু মন্দির ভাংচুর হওয়ার পর প্রচন্ড মর্মব্যদনায় ভোগছি। তীব্র ক্ষোভ দু:খ হতাশা আর প্রতিবাদ হিসেবে আজকের লেখার অবতারনা।
কে ভেঙ্গেছে মন্দির?
এর উত্তরে
আলীগের পক্ষের উত্তর: বিএনপি জামাত ভেঙ্গেছে।
বিএনপির উত্তর: আলীগ ভেঙ্গেছে।
জামাতের উত্তর : আমরা ভাঙ্গিনি।
প্রকৃতপক্ষে মন্দির যেহেতু ভাংচুর হয়েছে তা অবশ্যই কেহ না কেহ ভেঙ্গেছে। তা হলে কে? হিন্দুরা ভেঙ্গেছে নিজেদের মন্দির? উত্তর হল অবশ্যই না ।তদন্ত না করে কারো ঘাড়ে দোষ চাপানোর মানে হল মুল অপরাধীদের আড়াল করে দেয়া।
তাইলে কে ভেঙ্গেছে মন্দির ?
জামাত যে এই কাজ করেনি তা জামাত সম্পর্কে যাদের ন্যুন্যতম আইডিয়া আছে তারা জানেন।
যদি উত্তর হয় "উত্তেজিত জনতা ভেঙ্গেছে" তবে এই উত্তেজিত জনতাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘমেয়াদী মোটিভেশনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য এই কারনে যে যাতে কালে ভাদ্রে ভূল ঈমানের এশকে পড়ে মন্দির ভাংচুরের মত শাস্তিযোগ্য অপরাধ না করে বেড়ায় । অথচ সে কাজ ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচীতে দৃশ্যমান নয়। ইনার প্রোগ্রামে কি বলা হয় সে আলোচনা পাবলিকের জানার কথা নয়।
মাঝে মধ্যে বিরোধী দলকে চাপে ফেলানোর জন্য আলীগ মন্দির ভেঙ্গে অন্যদের কাধেঁ দোষ চাপায়। সেটা সচেতন মহল , হিন্দু সমাজ জানেন।
তবুও প্রশ্ন জাগে আলীগের এমন অন্যায় সহ্য করে হিন্দুরা আলীগকে ভোট দেয় কেন? নিশ্চয় এমনে এমনে দেয়না। তাইলে কি কারন? আওয়ামীলীগ যে ভালবাসা হিন্দুদের দিতে পেরেছে ইসলামী দলগুলো সে ভালবাসা হিন্দুদের দিতে পারেনি। বিএনপি আরো আন্তরিক হলেও পারত।
কথায় কথায় ভারতের দালাল , ব্রাম্মন্যবাদী , মালাউন , ডান্ডির মত মানহানিকর শব্দ ব্যবহার করবেন আর ভোটের সময় ভোট চাইবেন এমন অবিচারমূলক চিন্তা আপনি করতে পারেননা।
ইসলামী নেতা ও মাদরাসার আলিমগন মুসলিম কমিউনিটিকে মাদরাসায় পড়তে বলেন কিন্তু আপনি হিন্দুদের জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেননা কেন? হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের জন্য কিছু না করে ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখবেন তা কি করে হয়! স্কুল মাদরাসা ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানে সবজায়গায় সংখ্যালঘুদের থাকার অধিকার আছে। সে পরিবেশ ও অধিকার তাদের দেয়ার মত ইসলামী নেতা ও আলেম মাওলানা ও আল্লামা বড়ই প্রয়োজন।
সুখরঞ্জন বালী আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিয়ে বাংলাদেশের সমগ্র হিন্দু কমিউনিটির প্রতি ইসলামী দলগুলোকে চিরঋণী করে ফেলেছেন। আমি শ্রদ্ধার সাথে সুখরঞ্জনবালীকে স্মরন করছি। বস্তুত কোন মানুষ,কমি্উনিটি, দল, গোত্র,দেশকে আমি শত্রু মনে করিনা। ব্যতিক্রম বাদে মায়া পেলে সবাই অবশ্যই বন্ধু হওয়ার কথা। আমি ইসলামী দলগুলোর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে বলছি আপনারা এদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি কি দায়িত্বটা পালন করেছেন ? আপনারা নিজের কমিউনিটির মতাদর্শের সংস্কার , উজ্জীবিত করার জন্য কাজ করছেন ভাল কথা কিন্তু সংখ্যালঘুদের প্রতি কোন দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিবা স্বপ্ন দেখেন কেমন করে? আপনার দলের কর্মসূচীতে হিন্দু কমিউনিটির জন্য কিছু করা হোক এমন স্ট্রেটেজি আছে?ধর্মান্তরিত করার ধান্দা দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রে ইসলামী পলিটিকস হবে কিনা এমন বিষয ইসলামী থিংকারদের চিন্তার টেবিলে দিলাম।কোন গোত্র যদি আপনার থেকে ক্ষতির আশংকা করে সে আশংকা দুরীকরনের দায়িত্ব নিশ্চয় আমাদের হিন্দু ভাইদের নয়। মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্ব ব্রম্মান্ডের পাওয়ারে আছেন অথচ তিনি সবাইকে জীবিকা দান করেন। সুর্যের আলো , বাতাস , পানি সবাই ভোগ করছে। কি মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ ! ভেবেছেন কি কখনো? তাই মহান রাব্বুল আলামীনকে আমার সাম্প্রদায়িক মনে হয়নি। তার লেটেস্ট দ্বীন ইসলাম হলেও সব ধর্মের লোকদের প্রতি তিনি সমবিচার করছেন , সবাইক সৃষ্টি করেছেন।
আমি যখন অন্য ধর্মের লোকজনের সাথে মিশি তখন খুবই আশ্চর্য হই কারন আমার মত তাদের আবেগ ভালবাসা রাগ অনুরাগ । যদিও এটা আশবচর্য হওয়ার মত কিছুই নয়। সংখ্যালঘুদের মনের কোনের ভালবাসাগুলো সুন্দর করে আমার মতই সাজানো। কোন হিন্দু বৌদ্ধ তরুন তরুনী যখন আমাকে ভালবাসার রং মাখিয়ে "ভাইয়া" , এই লোকমান বলে ডাক দেয় তখন আমি বিমোহিত হই , আনন্দিত হই। আমার পক্ষ থেকেও সে এমন ডাক পাওয়ার অধিকার রাখে।
কই এমন কথা শুনা কি গিয়েছে যে কখনো কোন মাওলানার বাড়িতে কোন হিন্দু ভাই ঈদুল ফিতরের সেমাই খেতে এলে উনি দুরে ঠেলে দিয়েছেন বা খেতে দেননি? আপনি যেভাবে তার অতিথি হওয়াতে আনন্দিত ঠিক তেমনি আপনাকে অতিথি করে তারও আনন্দিত হওয়ার ইচ্ছা ও অধিকার আছে । বাংলাদেশের আল্লামা ও মাওলানাদের চরিত্রে এমন নজির খুব কম। মুসলিম সমাজের বিয়েতে হিন্দুর জন্য গরুরগোশত বাদে অন্য ব্যবস্থা রাখা হয় ঠিক তেমনি হিন্দুর বিয়েতেও মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নামে জবাই করা প্রানীর গোশতের ব্যবস্থা রাখতে তো কোন দোষ দেখিনা। বরবটি আর কাঠাঁল - আনারস হিন্দুর বাড়িতে ধরলে সেটা হারাম হয়ে যায়না। উদার সামাজিক মেলামেশার সুত্রপাত ইসলামী দলগুলো ও মাদরাসা শিক্ষিতরা করতে পারেননি।
বিশ্বের কথা জানিনা এমন ঘটনা বাংলাদেশে হয়না বললেই চলে । সুতরাং হিন্দু বাড়িতে ও কমিউনিটিতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন আতিথেয়তা গ্রহন করতে ইসলাম নিষেধ করেছে কি ? কিন্তু ইসলামী দলগুলো এমন উদার হতে পারেনি এখনো । মাদরাসার সম্মানীয় অনেক আলেম আছেন যারা তাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে আলিমের (এইচএসসি) পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য উদার মনে টিসি দিতেও অভ্যস্ত নয়। একটি ইউনি এনভায়রন্টমেন্টে থেকে আপনি মানবতাবাদী হতে পারবেননা এবং গনমানুষের নেতাও হতে পারবেন না। ইউনি পরিবেশ সঠিক সামাজিকীকরনের জন্য সহায়ক নয়।
ইসলাম অনেক উদার । সঠিক ইসলাম কোন সমস্যা নয় সমস্যা প্রভাবশালী ইসলামী নেতাদের ও আল্লামা মাওলানাদের দৃষ্টিভঙ্গীর। যে কোন বিপ্লবকে সফলতার মুখ দেখতে হলে বিপ্লবের থিউরী ও বিপ্লবের কর্মীদেরকে চলমান সমাজের সকল যোগ্যতাকে ধারন করতে হবে সাথে সাথে রিস্কফ্যাক্টরগুলো এনালাইসিস করে সমাধানে ব্রতী হতে হবে। বিপ্লবের অপজিশন থেকে উদ্রেক হওয়া প্রশ্নের সুন্দর সমাধানও দিতে হবে। সবাই ভাল থাকবেন।
বিষয়: রাজনীতি
১১৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন