থটস্ ফিল্টারিং-২ ও ৩ (Thoughts Filtering)

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১০ আগস্ট, ২০১৫, ১২:১১:০৯ দুপুর

থটস্ ফিল্টারিং-২ (Thoughts Filtering)

বিদ্যমান চিন্তার নিরীক্ষনের বিভিন্ন পর্যায় থাকতে পারে। সমাজ ও সময় অনুসারে এই নিরীক্ষন পদ্ধতিও বদলাতে পারে। বদলাতে হবেই। বর্তমান ইসলামপন্থীদের মাঝে রাজনীতি জনপ্রিয়তা লাভ করলেও তারা মাকাসিদ আশ শারিয়াহ/অবজেক্টিভ অব শারিয়াহ/স্পিরিট অব শারিয়াহ নিয়ে জ্ঞানের গভীরতায় ঢুকতে পারেননি। কথা বলার অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরী করতে পারেননি।বর্তমান এই জ্ঞান বিজ্ঞান কলা ও বানিজ্যের চরম বস্তুগত উন্নতির যুগে কাজের ময়দান নির্দিষ্টকরন না করে সব ময়দানেই কাজ করতে চাওয়ার প্রবনতা ছিল। তাই ওয়ার্ক ফিল্ড স্পেসিফিকেশন হয়নি স্পেশালাইজড লোকও তৈরী হয়নি। মানুষের সমস্যা সমাধান করতে না পারলে দুনিয়াতে যেকোন মতবাদের আবেদনই কমে যেতে বাধ্য।

আরেকটি সমস্যা দেখা যায় সেটা হল নিজের বিশ্বাস ও মতবাদকে সমাজ ও রাষ্ট পরিচালনার দৃষ্টিকোণে না দেখে কথা বলা। আমার বক্তব্য সমাজের জন্যে হবে। ব্যক্তির জন্যে দৃষ্টিভঙ্গী ব্যক্তি নিজে কঠিন করলে সমস্যা নেই। সমাজের জন্যে আইন থাকতে হয় দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে হয় ফ্লাক্সিবল। বস্তুত হারামের ওয়েটেজ সবচেয়ে বেশী। তারপর ফরজের ওয়েটেজ। কোন বিষয়ের শাস্তি দেয়ার জন্যে আইন না থাকলে সমাজ পরিচালনায় সেটার ওয়েটেজ কম। বাধ্যতামুলক আর মোটিভেশান এক করে সমাজে উপস্থাপন করার দুর্বলতায় আমাদের আদর্শিক মূল্যবোধ মানুষের মনে আবেদন তৈরী করতে পারছেনা। সমাজ কঠিন কোন বিষয়কে ভয় পায়। অথচ ইসলাম খুবই সহজ বিষয়। ইসলামপন্থীদের নূন্যতম বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনা ব্যবস্থা নিয়ে একটি ভাল রেফারেন্স বই পড়া থাকা দরকার। মদীনার শাসন ব্যবস্থা ও বর্তমান সময়ে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। তাই মদীনা ও খোলাফায়ে রাশিদার শাসব্যবস্থা জানার পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সমাজ পরিচালনা জানতে হবে এবং আধুনিক আইন প্রনয়ন ও তার বাস্তবায়ন পদ্ধতি জানতে হবে। ল' মেকিং ও জুডিশিয়ারি জানার কথা বলছি।

সুতরাং ইসলাম সম্পর্কে নীতি নির্ধারনী কথা বলার আগে দেখতে হবে

১. কুরআনে উল্লেখিত মহান "আল্লাহ" সংক্রান্ত সব আয়াত। আল্লাহর উপর ঈমান ঠিক করতে হবে।

২. কুরআনে উল্লেখিত কুরআন সম্পর্কিত সব আয়াত একসাথে এক জায়গায় করে পড়ে কিতাবল্লাহর প্রতি ঈমান ঠিক করতে হবে।

৩. কুরআনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা: ও অন্যান্য নবী রাসুল সা: সম্পর্কিত আয়াত ব্যাখ্যাসহ, শানেনুজুলসহ এবং আগের পরের আয়াত সহ মিলিয়ে পড়ে ঈমান ঠিক করতে হবে।

প্রথমটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

২য়টি ২য় অবস্থানে।

৩য়টি ৩য় অবস্থানে।

কোনটিই তার অবস্থান পরিবর্তন করবেনা। পরেরটি আগের থেকে অগ্রাধিকার পাবেনা।

৪.কুরআন জ্ঞানীদের কথাকে গুরুত্ব দিয়েছে।জ্ঞানীদের কথা বিবেচনায় নিতে হবে।

এই ৪র্থটি ৪র্থ অবস্থানে।

এমনকি বিরোধী মতের জ্ঞানীদের কথাও বিবেচনায় নিতে হবে।

------------------

থটস্ ফিল্টারিং-৩

বিদ্যামান চিন্তার নিরীক্ষনের এই পর্যায়ে আমাদের তাকাতে হবে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অবস্থার দিকে। অপরিকল্পিত আরোপিত সংস্কৃতির দিকে।ছাত্রসমাজকে প্রবলভাবে শুধু রাজনৈতিকায়িত করা যেমন ঠিক নয় ঠিক তেমনি বিরাজনীতিকরন করাও ঠিক নয়। রাজনীতির পাশাপাশি একটি বিশাল গ্রুপকে রাজনীতিকে এড়িয়ে সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সংগঠক হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনার ব্যবহারিক ক্লাস করে নিজেকে আপগ্রেড করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে একজন ব্যক্তি হল বংশগতি ও পরিবেশের প্রোডাক্ট। একজন শিক্ষার্থীকে জৈবিকতার বিষয়ে শিক্ষা পাওয়া উচিত।পরিবেশ থেকে যৌনতা শিখার সক্ষমতা সবার সমান নয়। বিপরীত লিঙ্গের ভাল লাগা ও খারাপ লাগা জানা থাকা দরকার। সাংসারিক জীবন সম্পর্কে, ভাল মা বাবা হয়ে উঠা সম্পর্কে, পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানা দরকার। নৈতিক গুনাবলী অর্জনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদে নিজেকে পরিনত করে জীবনের একটি সময়ে উদ্যোক্তা হওয়ার গুনাবলী অর্জন করতে হবে। উদ্যোক্তাকে হতে হবে উৎপাদনমূখী ও সেবাধর্মী।

আমাদের চোখের সৌন্দর্য ক্ষুধা, কানের শ্রুতি মধুরতা, মনের ভোগ প্রিয়তা সম্পর্কে জানতে হবে। এইগুলিকে মানের কোন সূচকে রাখবেন জানতে হবে। সমাজ পরিবর্তনকামীদের যে বিষয়ে টুলস হিসেবে এক নম্বর অগ্রাধিকারের জায়গায় মনোনিবেশ করতে হবে তা হল সংস্কৃতি। এই ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদদেরকে অবশ্যই মনোবিজ্ঞান ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। শিশুকিশোরদের উপর প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি তরুন যুবক ও প্রবীনদের উপর প্রভাববিস্তারের মত পৌরুষ হতে হবে।

রাজনীতি করার জন্যে অনেকেই আছেন। কিন্তু ব্যক্তির নৈতিকমান ও বৈষয়িক কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, পরিবার, সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, মিডিয়া, প্রফেশানলিজম নিয়ে ভাবার লোক খুবই কম।

তাই সামাজিক আন্দোলনকারীরা সঙ্গতকারনে

১. রাজনৈতিক দলের সদস্য হবেনা।

২. রাজনৈতিক দলের অফিসে যাবেনা।

৩. রাজনৈতিক এজেন্ডায় রাজপথে যাবেনা।

৪. রাজনৈতিক মিছিলে যাবেনা।

৫. ক্ষমতাকেন্দ্রীক চিন্তিত হবেনা। সকল ধরনের ক্ষমতাসীনদের সাথে সহযোগিতামূলক মানসিকতার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনকারী হবেন।

৬. সিদ্ধান্তকারীর সাথে থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে কনভিন্স করে সমাজ পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে।

রাজনীতি বিষয়ে আরো পরামর্শ বিবেচনাযোগ্য। তবে মনে রাখতে হবে সামাজিক আন্দোলন রাজনীতির আওতাধীন কোন সামাজিক কর্মসূচী নয়। আমাদের যত্বের সাথে মনে রাখতে হবে খিলাফাত পরিভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়।

ও নারী পুরুষ সহ সকল ধর্মের সম্মানজনক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সকল ধর্মের লোকজনদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও ভালবাসা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নিশ্চিত করনে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। রাজনৈতিক অনৈক্য ও অস্থিতিশীলতার মোকাবেলায় জাতির সবাইকে ঐক্য প্রক্রিয়ার একই স্কুল অব থটের

(সমচিন্তা তৈরীর বিদ্যালয়) শিক্ষার্থী বানাতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

334908
১০ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:৩৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অসাধারণ চিন্তা ও লেখনি। মোবারকবাদ আপনাকে..লিখাকে এগিয়ে নিন, সাথে আছি।
337612
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৪৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশা'আল্লাহ লেখাটি খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে ।নেক অনেক ধন্যবাদ
361515
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৫৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ব্লগে আসার অনুরোধ থাকল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File