একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের সাথে আমার চার ঘন্টা।
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:৩০:২২ দুপুর
আমার প্রশ্ন ছিল....
আপনি একটি ইসলামী দল করছেন। জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি অবস্থান তৈরী করলেও এখনো ইসলামের পক্ষে জনমত আনতে পারেনি। ইসলামের পক্ষে জনমত তৈরীতে আপনাদের কি সমস্যা?ইসলামের পক্ষে জনমত তৈরীর জন্যে সকল ইসলামী দলের বর্তমান কর্মসূচী কর্মকৌশল কি যথেষ্ট? কি এমন কাজ আছে যা আপনারা পারেননি কিন্তু হলে ভাল হত কামনা করেন?
----------
উত্তর....
প্রথমে মুচকি হাসলেন..তারপর বলা শুরু করলেন। বললেন আমাদের ক্রমধারা অবলম্বন গ্রহনে অগ্রাধিকার বিবেচনায় পরেরটা আগে নিয়ে এসেছিলাম আর আগেরটা আগে করার চিন্তা আসেনি।
যেমন আমাদের যাওয়া দরকার ছিল একটা আধুনিক কল্যান রাষ্ট গঠনের দিকে তারপর মানুষ গ্রহন করলে ইসলামী রাষ্ট গঠনের চেষ্টার দিকে যাওয়া দরকার ছিল। অথচ আমরা শুরু করেছি আগে ইসলামী রাষ্ট গঠনের কাজ।
তিনি বললেন
বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে থাকা দলগুলো কেউ ঘোষিত সেকুলার আর কেহ চরিত্রে সেকুলার। বেশিরভাগই করাপটেড। আওয়ামীলীগের বিপরীত ভোটগুলো চায় সরকার দুর্নীতি করবেনা। সেই হিসেবে আওয়ামী বিরোধী ভোটারের মনের আকাংখা পূর্ন হয়নি। আওয়ামী বিরোধী ভোটার চায় আধুনিক কল্যান রাষ্ট। এই চাহিদা পুরনের জন্যে নতুন কিছু করা দরকার। আওয়ামীদের দুটি ধারা । ১. বাম প্রভাবিত যারা ইসলামী দলগুলোকে ভবিষৎ এর জন্যে থ্রেড মনে করে ২. আর একটি গ্রুপ আছে যারা শুধু ক্ষমতায় যেতে চায় তারা বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে পথের কাটাঁ মনে করে।
জিয়াউর রহমানকে যে কারনে দেশের মানুষ সমর্থন দিয়েছিল সে একই কারন এখনো বিদ্যামান। বিএনপি সে আশা পুরুন করতে না পারলে বিএনপির বিকল্প তৈরী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই বিএনপিকে বিষয়টা গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার। স্বপ্ন প্রিয় তরুনদের উচিত আধুনিক কল্যান রাষ্ট গঠনের কথা চিন্তা করা।
তিনি বললেন দলমত ধর্ম বর্ন আদর্শ নির্বিশেষে সবাইকে মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক ইসলামী দল অন্য কোন ইসলামী দলের বিপক্ষে কথা না বলা উচিত। এমন কি দরবারীদের সাথেও কথা বলা দরকার। ডায়ালগ হওয়া দরকার।
এমন একটি দল থাকা উচিত যারা রাজনীতি না করে শুধু মাত্র সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনের কাজ করবে। সমাজ গঠনের কাজ করবে। পরোপকারী ও স্বচালিত দেশের কর্মী তৈরী করবে। দেশ থেকে পাওয়া নয় নিজেই দেশকে দিবে এম মানুষ ও সমাজ গঠন জরুরী। এমন একটি দল থাকা উচিত যারা রাজনৈতিক সংঘাতে না জড়িয়ে শুধু জাতির চরিত্র গঠন করবে। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যে কাজ করবে,পরিকল্পনা ও কৌশল নিবে।
তিনি বললেন ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন পরিচালনা করতে হবে গার্মেন্টস সিস্টেমে ।ঐইখানে যেমন একটি পোষাক একজনে বানায়না। একেকজন একেকটি অংশ বানায়। গার্মেন্টস কর্মীরা পোষাকের একটি অংশের এক্সপার্ট । এভাবে জনশক্তিদেরকে ছোটকাল থেকে এক্সপার্ট বানিয়ে বেষ্ট ইউটিলাইজেশন করতে হবে।জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ আউটপুটটা বের করে আনতে হবে। একজন অনেক জায়গায় স্পেশালাইজড হওয়া অস্বাভাবিক। আমি বললাম সংগঠন পরিচালনা হওয়া উচিত মোবাইল কোম্পনীগুলো যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভেন্ডর ব্যবহার করে সেই পদ্ধতিতে। উনি ব্যাখ্যা চাইলেন আর ব্যাখ্যা শুনে একমত হলেন।
মনে রাখতে হবে কোন দেশের পলিসি রিপিট করে ইসলামের রাষ্টীয় অবস্থান ঠিক হবেনা। তুরস্ক, মিসর, তিউনিসিয়া, ইরান কোন কৌশলই রিপিট করে সফলতা আসবেনা। কৌশল তৈরী করতে হবে ইউনিক।
অমুসলিমদেরকে কাছে টানতে হবে। নারীদেরকে সাথে নিয়েই কাজ করতে হবে। মেয়েরা পারে এটা এই শতাব্দীতে এইটা তারা প্রমান করেছে। প্রসঙ্গ ক্রমে ড. ইউনুসের কথা আসল । বললেন ফেমিনিজম মোকাবেলার জন্যে এখনই উদ্যোগ দরকার।
আধুনিক কল্যান রাষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন শুধু জুমার সালাত আদায় করে কত পারসেন্ট মানুষ দেখতে হবে। আর পানজেগানা সালাত আদায় করে কত পারসেন্ট মানুষ তা বিবেচনায় নিতে হবে।
নতুন চিন্তাভাবনা এই জন্যে অধিক কার্যকরী যে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম দলগুলো এখন আর তরুনদের আকৃষ্ট করতে পারছেনা। ভ্যাকুয়ামটা পুরুনের জন্যে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় বিরোধীরা ভ্যাকুয়াম পূরনে এগিয়ে এসে আমাদের জন্যে থ্রেড তৈরী করবে।
শহীদ জিয়া হাসিনাকে দেশে এনে ভুল করেছেন বলে মত প্রকাশ করলেন। ৯৬ ছিল লীগের পুনরুজ্জীবন। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামটি আল্লামা সাঈদী সাহেবের দেয়া বলে মন্তব্য করলেন। আল্লামা সাঈদী এই শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকলে দেশের ইতিহাস ভিন্ন হত বলে তার অভিমত।
তিনি বলেন আজ ইসলামী দলগুলো রাজনৈতিক সংঘাত সহ বিভিন্ন কারনে একটি ক্ষুদ্র সেগমেন্টের ভিতরে কাজ করছে। এটাকে কিভাবে ব্যপকতর করা যায় ভাবতে হবে।আমি বললাম প্রয়োজনে অসংখ্য গ্রুপ বা ব্যক্তি উদ্যোগে নৈতিকতার সমর্থক তৈরী করা দরকার। উনি একমত হলেন।
তিনি বললেন ইসলামিক দলগুলো জনগনের ভিতরে ক্রেজ তৈরী করতে পারছেনা এইটা বিবেচনায় নিতে হবে।
ফেইথ ইনসফায়ার্ড কিছু দরকার।
সকল ইসলামী খেদমতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। তাবলিগ সম্পর্কে বললেন ইজতেমা একটি বিশাল ইসলামী ডেমোনেস্ট্রেশান। এইটা না থাকলে বর্তমান সময়ে ইসলামী প্রদর্শনের কি বাকী থাকত! কাউকে কাউকে রাজনীতির উর্ধ্বে থাকতে হবে। সবাই সবাইকে সম্মান করতে হবে। এভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
এদেশের আলেম সমাজের উচিত হাসান তুরাবী আর ইউসুফ আলকারদাভীর পর্দা বিষয়ক অভিমত গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখা।
মিডিয়া, নারী, শিশু, সংস্কৃতি, অমুসলিম সেক্টরকে গুরুত্বপূর্ন কাজের সেক্টর হিসেবে উল্লেখ করলেন।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাহসী জনশক্তিকে উনি সালাম দিয়েছেন। অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে দোয়া দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীকে উনি বর্ম মনে করেন। আর শিবিরকে তিনি বিরল সম্ভাবনা মনে করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
----ভাল লাগল
ভাল লাগলো। কঠিন যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ। রাসূল (সা) যখন মদিনাতে সদ্য ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন তাতে বিভিন্ন গোত্র ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজনকে নিয়েই কল্যাণমূখী একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে সমস্ত গোত্রকে কেন্দ্রীভূত করে পূর্নাঙ্গ ইসলামিক কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিনত করতে যথেষ্ট সময় নিয়েছিলেন। তিনি রাতারাতি ইসলাম কায়েক করে ছাড়েন নি। আজকের দুনিয়ার বাস্তবতায় এবং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত দায়িত্বশীলের উপলব্ধীকে আমি স্যলিউট করছি।
কাজ করবে কে? কিছু বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ আছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার ওপর রাগ করার মত মানুষ আপনি নয়। বরং আমার নিজের ওপর রাগ আছে। সময় এবং সুযোগ আমাকে আপনার আসামী করেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই আগ্রহী। আমার ইমেইলটা আপনার কাছে আছে। মেহেরবানী করে আমাকে একটু ব্রিপ করুন। আমি পড়ি আপনার সব কিছু। আশা থাকবো।
আমার মেইল -
মন্তব্য করতে লগইন করুন