জার্নি ও এক গ্রাম্য কিশোরের জীবন যুদ্ধ..
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:০৪:০৩ সকাল
এক গ্রাম্য কিশোরের জীবন যুদ্ধ..
জার্নি করতে করতে শরীরের অবস্থা করুন। তিন এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল টানা জার্নি করেছি। এটাই জীবনের বৃহৎ জার্নি। এর ভিতরে একটা সেমিনারের কাজে সহযোগিতাও করেছি। ১১ তারিখ রাত আটটার দিকে সেমিনার এর কাজ শেষ হওয়ার পর বাসায় গিয়ে ঘুম দিয়েছি। ১২ এপ্রিল চলে গিয়েছিলাম অজপাড়া গায়ের একটি সরকারী জুনিয়র হাই স্কুলে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সবাই ইয়াং। কথা বলে মজা পাচ্ছিলাম। স্কুল অফিসের ওয়ালে হরেক রকম ছবি। আইনস্টাইন, নিউটন , রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দ, লালন, প্রীতিলতা, ভাষা শহীদদের ছবি, মহাত্মা গান্ধীর ছবি।
গল্পচ্ছলে বললাম প্রীতিলতার ছবি আছে সৃর্যসেন কাজেম আলী মাষ্টারের ছবি কই? ক্ষুদিরামের ছবি কই? হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীরের ছবি কই? গান্ধীজীর ছবি আছে কিন্তু আবুল কালাম আযাদ এবং কায়েদে আজম আলী জিন্নাহর ছবি নেই। নজরুলের পাশাপাশি কবি ফররুখ ও আলমাহমুদের ছবি থাকলে ভাল হত।
স্কুলের পক্ষ থেকে বুট পেয়াজু চা খেলাম। সবাইকে আইসক্রিম খাওয়ালাম। চা'টা এখনো মুখের সাথে লেগে আছে। আমি চাখোর মানুষ। সুদখোর ঘুষখোর কিছুই হতেই পারিনি। চাখোর হয়েছি ... শখের চা খোর। অবশ্যই দিনে পাচঁ ছয় থেকে বেশী খাইনা।
স্কুল থেকে চলে আসার সময় একজন শিক্ষক আমাকে সিএনজি গাড়ীতে তুলে দেয়ার জন্যে সাথে একজন ছাত্র দিল। হাটতে হাটতে ছাত্রটির কাধেঁর উপর হাত দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কোন ক্লাসে পড়?
রোল কত?
উত্তর এল ক্লাশ সেভেন রোল এক। উত্তর শুনে উৎসাহী হয়ে পড়লাম। পরিবারের খোজ নিলাম। বললাম কি হবে?কতদুর পড়বে?
উত্তর এল কি হব জানিনা। মামারা যতদুর পড়ায় পড়ব। ছাত্রটির আব্বার গ্রাম্য চৌকিদার। মাতব্বরদের ফুটফরমায়েশ খাটে। আমি বললাম কেন? তুমি ছেলেনা! আরেকটু বড় হয়ে টিউশনী করবে লজিং থাকবে। এতে তেমার পড়ালেখার খরচ জোগাড় হয়ে যাবে। ধনীদের ছেলে মেয়েরা আলসে। তাদের দ্ধারা জগতে সৃষ্টিশীল খুব কম কিছু হয়েছে। পৃথিবীটা পরিশ্রমী মানুষদের জন্যে। সুতরাং পরিশ্রম কর ছোট ভাই।
সে বলল সে এখনো ৫ টি টিউশনী করে ১২০০ টাকা পায়। তা দিয়ে তাদের দুই ভাই এক বোন আর মা এই চার জনের ঘর সংসারের খরচ চলে। আব্বা টাকা পয়সা তেমন দেয়না।
তার পকেটে কিছু টাকা গুজে দিয়ে সামনে আগালাম। ততক্ষনে আমার চোখে পানি চলে আসল। আকাশের মালিক কিশোরটিকে রহম কর।
একজন ৭ম শ্রেনীর কিশোরের জীবনযুদ্ধের কষ্টের কথা চিন্তা করলে ব্যয়বহুল দাওয়াতী কাজে আয়ের ৫% বায়তুল মালে এয়ানত দেয়া নির্মমই বটে।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন