স্বাধীনতা অর্জনকারী দল সবসময় স্বাধীনতার রক্ষক থাকেনা...
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৪৮:০৬ বিকাল
স্বাধীনতা অর্জনকারী দল আওয়ামীলীগ (বেশিরভাগই শরনার্থী মুক্তিযোদ্ধা) সবসময় স্বাধীনতার রক্ষকের ভৃমিকা পালন করে কিনা নীচের উদাহরনগুলোর উপর চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম:
পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত জনপদের নাম । সেখানের অস্থিরতাটা একটু ব্যতিক্রম । উপজাতীয়রা বাঙ্গালীদের কম সহ্য করতে পারেন। তারা বাংলাদেশের র্সবত্র জমি খরিদ করতে পারবেন আর বাঙ্গালীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জায়গা কিনুক তারা চায় না। ৫২ ভাগ বাঙ্গালী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীদের অপহরন, খুন, নির্যাতন, কিডন্যাপ ,চাদাঁবাজি সব করা হয। সন্তুলারমার পিতার মতামত ছিল তারা বাঙ্গালী না । আমরা ও তাই মনে করি। সন্তুলারমার পিতারা মতামত ব্যক্ত করে বসে থাকেননি গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী সংগঠন জনসংহতি সমিতি।
দৈনিক নয়াদিগন্তের ১২.০১.২০১২ মনিরুজ্জামান মনির এর পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষার উপায় কী? লেখার অংশ বিশেষ দেখুন>>
বাঙালি হত্যা : পার্বত্য চট্টগ্রাম রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসীদের (শান্তিবাহিনী) হাতে এ যাবৎ প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশীকে জীবন দিতে হয়েছে। সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে বাঙালিদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ‘তোরা সমতলে চলে যা, বাঙালি আর আর্মি হিলটেকে ন’ থাকিব।’ বাঘাইছড়ির শতাধিক বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যাকাণ্ড (১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর) তাদের বর্বরতম হামলাগুলোর অন্যতম। শুধু শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়কে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার না দেয়ার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লংগদু থানার সুযোগে শতাধিক বাঙালি শ্রমিককে চাঁদা নির্ধারণের জন্য আলোচনার ফাঁদে ফেলে সে দিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের চোখ বেঁধে, দুই হাত পিছমোড়া করে পাকুয়াখালীর গহিন জঙ্গলে পাঁচজন করে এনে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছিল সন' লারমা বাহিনী। পাহাড়ের নিচে বিশাল খাদে ফেলে দেয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত হাত-পা, চোখ, কান, ছেঁড়া মরদেহ সেলাই করে লংগদু থানা পরিষদ মাঠে নামাজে জানাজা করা হয়েছিল। ৩৪টি লাশ ৩৪টি কবরে শায়িত করে লংগদু মাঠে গণকবর দেয়া হয়, যার আলামত আজো সেখানে রক্ষিত আছে। এ ছাড়া আরো বহু বাঙালি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার লোমহর্ষক বর্ণনা আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
ধীরে ধীরে সন্তুলারমারা স্বাধীন জুমল্যান্ড গড়ার প্রত্যযে এগিয়ে যাচ্ছেন । ভারত ও খ্রিষ্টান মিশনারীদের সহায়তায পূর্বতিমুর , দক্ষিন সুদান এর আদলে স্বাধীন জুমল্যান্ড গড়তে চাইলে আওয়ামীলীগ এর ভূমিকা কি হবে আন্দাজ করা যায় কি? কারন আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তি বাহিনীর সাথে শান্তি চুক্তি করেছে । যে শান্তি বাহিনীর হাতে বাঙ্গালীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি সে বাহিনীর সাথে সহযোগিতা কেমন জানি দৃষ্টিকটু লাগে। আওয়ামীলীগ বাঙ্গালী হত্যায় পাকিস্তানীদের কথিত সহযোগীদের বিচার করতে চায় কিন্তু বাঙ্গালী হত্যার দাযে অভিযুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিবাহিনীর সাথে কেন জানি একটু বেশী পিরিতি গড়তে চায় ব্যাপারটি ভাববার বিষয় নয় কি ? আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে অনেক মূল্যে কিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে তো??
তাজউদ্দিনের গোলামী চুক্তি:
স্বাধীনতা অর্জনের আগে তাজউদ্দিন সাহেবের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সাথে ভারতের একটি চুক্তি হয়েছিল । তাতে শর্ত ছিল
১. বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবেনা ।
২. অন্য কোন দেশের সাথে সর্ম্পক গড়ার আগে ভারতের অনুমতি লাগবে।
৩. যুদ্বোত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনের বিভিন্ন শূন্যস্থানে ভারতীয় প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। এভাবে
৪.৫.৬.৭.টি ধারা ছিল হবু বাংলাদেশ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক।
জানা যায় তাজউদ্দিন সাহেব চুক্তিটি করে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলেন । কারন তার হুশে ছিল চুক্তিটি অনেক ভয়াবহ । কিন্ত সেই তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে আওয়ামীলীগ যে বেহুশ হয়েছিল এখনো হুশ ফিরেনি । আওয়ামীলীগ বুঝতে চাচ্ছেনা যে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সহযোগী ছিল সে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সহযোগী নয় । যে ভারত বাংলাদেশ ভূমিষ্ট লগ্নে এমন ঘৃণ্য শর্ত দিতে পারে সে ভারত আমাদের পুরো শুভাকাঙ্খী নয় । জনগনের উপর নির্ভর না করে সে ভারতের সাথে আওযামীলীগের বেশী প্রেম দেশপ্রেমিক জনগনকে ভাবিয়ে তোলে।
স্বাধীনতা অর্জনকারী আওয়ামীলীগ দল হিসেবে সবসময় স্বাধীনতার রক্ষক থাকতে আদৌ পারবে কি??
তাদের বুঝতে হবে অনেক দুরের পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে কোন বাধা নয় । একটি ঐতিহাসিক ভূলে ১৯৪৭ সালে শেরেবাংলা বা সোহরাওয়ার্দী সাহেবরা স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন না করে পাকিস্তান সৃষ্টিতে প্রয়াসী ছিলেন । বাংগালী জাতীয়তা বাদের মুল স্পিরিট বংগদেশ গঠন করতে ভারত ১৯৪৭ সালেও আগ্রহী ছিল না।
বাকশাল:
স্বাধীনতা অর্জনের পরপর আওয়ামীলীগ কথিত স্বাধীনতার চেতনা ১. গনতন্ত্র ২.জাতীয়তাবাদ ৩.সমাজতন্ত্র ৪. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (৩ ও ৪ বাংলার জনগন পছন্দ করে না) এর প্রথমটি গনতন্ত্রকে ২৫ জানুয়ারী ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করার মধ্য দিযে স্বাধীনতার চেতনা মানে স্বাধীনতাকে কি হত্য করে নি ? কি দরকার ছিল বাকশালের ? তাহলে স্বাধীনতা অর্জনকারী আওয়ামীলীগ সবসময় স্বাধীনতার রক্ষক থাকে কি??
ফেলানী:
আসাদের শার্ট এর পর গনতন্ত্রের জীবন্ত পোষ্টার নুরহোসেনের নাম জনগনের হৃদয়ে অংকিত হয়ে আছে । সম্প্রতি যোগ হয়েছে ফেলানী ।আমাদের বোন ফেলাণীর কাটাঁতারে ঝুলন্ত মৃতদেহ বাংলাদেশকে কাদাঁবে অনেক দিন।ফেলানীর সেই ছবিটি ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে থাকবে। ফেলানীকে নিয়ে বাংলাদেশ কাদঁছে অথচ আওয়ামীলীগ কাঁদেনা । আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা এই শোক সহ্য করে হয়ে গেলেন আইরন লেডি বা লৌহ মানবী। ফেলানীর ব্যাপারে আওয়ামীলীগের ভূমিকা স্বাধীনতা অর্জনকারী দল আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার রক্ষাকারী কিনা সে ব্যাপারে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে নি:সন্দেহে!!
তিতাস ,ফারাক্কা:
ফারাক্কার বিপক্ষে রোডমার্চ করেন জীবনের অন্তিমে মাওলানা ভাসানী । ভারতের তৈরী ফারাক্কা বাধঁ বাংলাদেশের কি কি ক্ষতি করেছে তা আজ স্পষ্ট । শফিক রেহমান রাজনীতিতে নতুন কালচার রোড মার্চ নামক লেখায় লিখেছেন
বাংলাদেশে সবচেয়ে বিখ্যাত লং মার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। ১৬ মে ১৯৭৬-এ এই লং মার্চ শুরু হয় রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে এবং শেষ হয় ১৭ মেতে রাজশাহীর কানসাট সীমান্তে। এই লং মার্চে কোনো সামরিক ব্যক্তি নয়, এতে অংশ নিয়েছিল দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষ। তাদের গন্তব্যস'ল ছিল শুকিয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর চরাঞ্চল। তাদের লক্ষ্য ছিল দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া ফারাক্কায় বাধ নির্মাণের সময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইনডিয়া কিভাবে বাংলাদেশকে মরুদেশে রূপান্তরের সূচনা করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে মার্চের সেই ছিল শুরু।
আওয়ামী বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্যাতিত মাহমুদুর রহমান সাহেবের টিপাইমুখ অভিমুখে লংমার্চ দেশপ্রেমিক জনতার প্রশংসা কুড়িয়েছে যদিও ভারতপন্থী সুরন্জিত বাবুরা মনে করেন লংমার্চ দিয়ে কিছু হবেনা।
আর্ন্তজাতিক রীতিনীতি উপেক্ষা করে টিপাইমুখ বাধঁ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের কি করতে চায় তা গওহর রিজভী সাহেবরা না বুঝলেও বাংলাদেশের আপামর জনসাধারন বুঝেন। ভারতের একগুয়েমীর কারনে ৪০ বছরেও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়নি। আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতায় আলীগকে বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতার রক্ষক মনে করার কোন কারন দেখছেনা ।
ভারতীয় ছবি ও হিন্দি ভাষা:
বাংলাকে রাষ্টভাষা না রাখার চেষ্টায় ১৯৪৭ সালে কায়েদে আজম আলী জিন্নাহর পাকিস্তান যেটা পারেনি ২০১১ এ মহাত্ত্বা গান্ধীর ভারত সেটি করছে ধীরে ধীরে । ভারতীয় ছবি ও টিভি চ্যানেলগুলোর প্রভাব বাংলাদেশে কেমন তা জানার জন্য এটুকু যথেষ্ট যে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয পড়ুযা ছাত্রীদের অকপটে হিন্দি বলতে পারা । ভারতীয় নাযক নায়িকাদের পোষাক আশাক যেভাবে তরুন তরুনীদের পরিবর্তন করছে তাতে আর দুই এক প্রজন্মের পরের প্রজন্মরা যদি বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে গ্রহন না করে মনে প্রানে ভারতীয় হয়ে যায় অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা । অবশ্যই ভারতকে তার পূর্বে বাংলাদেশকে র্ব্যথ রাষ্টে পরিনত করার ষড়যন্ত্রে সফল হতে হবে। এন্টি আলীগাররা এ ব্যাপারে সচেতন থাকলেও স্বাধীনতা অর্জনকারী দল আওয়ামীলীগ কতটুকু সচেতন?? অনেকে মনে করেন আওয়ামীলীগ ভারতের উদ্দেশ্য সফলের জন্য সহায়ক শক্তি। কারন মূখ্যমন্ত্রীর খেতাব আওয়ামীলীগ প্রধান শেখহাসিনাই ভারত থেকে উপহার এনেছিলেন । তাই ভবিষৎ এ আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে পাওয়া কঠিন মনে করে দেশপ্রেমিক জনগন।
করিডর ট্রানজিট ও ভারতীয় বিড়ম্বনা:
যথাযথ অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরী না করে ইতিমধ্যে ভারতকে চুপিসারে আলীগ বাংলাদেশকে সিংগাপুর বানানোর প্রত্যয় নিয়ে ট্রানজিট ও করিডোর দিয়ে দিয়েছে। আবার সরকারের কেহ কেহ বলছেন করিডর ট্রানজিট এর বিনিময়ে ভারত থেকে কিছু নিলে ছোট লোকের ব্যাপার হয়ে যাবে। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বাংলাদেশীরা মনে করে বাংলাদেশকে বাংলাদেশ বানাতে হবে সিংগাপুর নয়। বাংলাদেশের মানুষ আত্বপরিচযে বিশ্বদরবারে পরিচিত হতে চায়। মাথা উচু করে দাড়াতে চায় । ভারতসহ সবার সাথে সম্মানজনক সহাবস্থানে থাকতে চায়। বাংলাদেশী সীমান্তে ভারতের বাঙ্গালী হত্যা ভারতকে শত্রু হিসেবে গন্য করতে বাংলাদেশের মানুষকে ভারতই বাধ্য করছে। ভারতীয় মাদক ফেনসিডিল , অবৈধ অস্ত্র আসছে সীমান্ত দিয়ে । ভারত বিডিআর বিদ্রোহের পর এটি করতে আরও পারছে নির্বিঘ্নে। বাংলাদেশি টিভিগুলো ভারতে চালানোর অনুমতি দেয়া হযনা । ভারতের উপর দিয়ে নেপালে যেতে বাংলাদেশকে করিডোর দেয়া হয়না । ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি । তার উপর মইন ইউ আহমেদকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে তার সাথে ঘোড়া উপহার দিয়ে বিডিআরের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নীলনকশা তখন চুড়ান্ত হয়েছিল কিনা ভবিষৎ ই বলে দেবে। তাই ভারতের উপর দেশপ্রেমিক জনগন নির্ভর করতে পারেনা । আর যারা ভারতের উপর নির্ভর করে তাদের উপরও জনগন নির্ভর করতে পারেনা । ভারতীয় ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা যে বিড়ম্বনার শিকার হন তা তো বলাই বাহুল্য।
পুশইন পুশব্যাক ও ভারতের প্রভূগিরি:
পত্রিকার ভাষ্যমতে জানা যায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার বাংলা ভাষী ভারতীয় নাগরিক আসাম হতে বাংলাদেশে পুশইন করার লক্ষ্য নিয়ে আসামের প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার রিপোর্টে এর আলামত স্পস্ট হয়েছে । দেশপ্রেমিক জনগন উদ্বিগ্ন । আওযামীলীগ ও সরকার কি করছে জানতে পারা যায না ।
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় "স্বাধীনতা অর্জনকারী দল সবসময় স্বাধীনতার রক্ষক থাকেনা"।
বিষয়: বিবিধ
১১০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন