"স্বামী-স্ত্রীর অধিকার-সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রঃ" বইটির প্রশংসা ও ঈষৎ সমালোচনা।

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০২:০০:৩৯ দুপুর

"স্বামী-স্ত্রীর অধিকার-আবুল আলা " বইটির প্রশংসা ও ঈষৎ সমালোচনা।

বইটি অনেক আগে পড়েছি । গত কয়েক দিনে আবার পড়লাম। যে কথাগুলো আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে

১. কিন্তু দ্বীনের আলেমগন যদি তাকওয়া ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে মুসলমানদের প্রয়োজন ও অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে এটা করতে যান তাহলে এর দ্বারা দ্বীনি অথবা পার্থিব কোন ক্ষতির আশংকা নাই। বরং কোন মাসআলার ক্ষেত্রে যদি তারা অজ্ঞাতসারে কোন ভূলও করে বসেন তাহলে ইসলামী শরীয়াতের উৎসদ্বয় (নস) পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে আল্লাহ তায়ালা এজন্যে তাদের ক্ষমা করে দেবেন। এবং তাদের সৎউদ্দেশ্যের পুরুষ্কার দান করবেন।

২. কিয়ামতের দিন এসব গুনাহগারদের সাথে তাদের ধর্মীয় নেতারাও গ্রেফতার হয়ে আল্লাহর আদালতে হাজির হবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের জিজ্ঞাস করবেন

ক. আমি আমার দ্বীন সহজ বানিয়েছিলাম , তাকে কঠিন করে তোলার তোমাদের কি অধিকার ছিল?

খ.আমি তোমাদেরকে কুরআন ও মুহাম্মদ সাঃ এর আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছিলাম। এ দুজনকে অতিক্রম করে তোমাদের পুর্ববর্তীদের অনুসরন করা তোমাদের উপর কে ফরজ করেছিল?

গ.আমি প্রতিটি কাঠিন্যের প্রতিষেধক কুরআনে রেখে দিয়েছিলাম , এটাকে স্পর্শ করতে তোমাদের কে নিষেধ করেছে। ?

ঘ. মানুষের লেখা কিতাব গুলোকে নিজেদের জন্যে যথেষ্ট মনে করার নির্দেশই বা তোমাদের কে দিয়েছে?

এ জিজ্ঞাসার জবাবে কোন আলেমেরই কানযুদ-দাকায়েক, হিদায়া ও আলমগীরীর রচয়িতাদের কোলে আশ্রয় পাওয়ার আশা নাই।

৩. ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহের ছাত্রগন হাজারো মাসআলায় নিজেদের ইমামের সাথে মতভেদ করেছেন। এ সত্ত্বেও তারা হানাফী মাযহাব থেকে বহিষ্কুত হননি।

৪. ৪র্থ হিজরী থেকে শুরু করে ৮মথেকে ৯ম হিজরী শতকের হানাফী আলেমগন ইমাম আযম সহ পূর্ববতীদের ইজতিহাদী মাসআলার ক্ষেত্রে যুগের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিবর্তন ও সংশোধন করতে থাকেন। প্রয়োজন অনুযায়ী অপরাপর মুজতাহিদ ইমামদের মাযহাবের মত গ্রহন করে তদনুযায়ী ফতোয়া দিতে থাকেন।

৫. আবুল লাইস সমরকান্দী ,শামসুল আয়িম্মা সারাখসী, হিদায়ার সংকলক , কাযীখান , কানযুল উম্মালের রচয়িতা , আল্লাম শামী > উনারা হানাফী মাযহাবের মাসআলায় নিজ নিজ যুগের অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে নমনীয়তা সৃষ্টি করেছেন। এবং যে সব ব্যাপারে এ মাজহাবের কোন নির্দেশকে ক্ষতিকর বা সাধারন অবস্থা বিবেচনা করে কার্যকর করার অনুপযোগী পেয়েছেন সে সব ক্ষেত্রে অন্যান্য মাযহাবের মাসআলা অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। তারা এটাকে হানাফী মাযহাবের মূলনীতির অর্ন্তভূক্ত করেছেন।

৬ষ্ট সংস্করন ৭৯- ৮১ পৃষ্ঠা।

৬. এই উপমহাদেশে বৃটিশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করার পরও ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত মুসলমানদের শরয়ী ব্যাপার গুলোর ফায়সালা মুসলমান বিচারকরাই করতেন। আলেম সমাজের মধ্যে থেকে তাদের বেচে নেয়া হত।

কিন্তু এরপর এ বিচার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। সাধারন দেওয়ানী ব্যাপারগুলোর মত শরঈ বিষয়াদিও ইংরেজ আদালতের র্কতৃত্বাধীনে নিয়ে আসা হয়।

৬ষ্ট সংস্করন ৭১ পৃষ্ঠা।

ঈষৎ সমালোচনাঃ

----------------

১. কামিনের টাকা কে নির্ধারন করবে? স্বামী নাকি কনে পক্ষ। নাকি লৌকিকতা দিয়ে কামিনের টাকা নির্ধারিত হবে? ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষ ছাড়া ৩য় কোন পক্ষ ছেলের সামর্থ ইভেলুয়েট করে কামিনের টাকা নির্ধারন করতে পারে কিনা?

এর উত্তর পাইনি।

২. ক.স্ত্রী অন্যায় করলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রহার করা (নিসা-৩৪)>[আর যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে বুঝাও, শয়নগৃহে তাদের থেকে আলাদা থাকো এবং তাদেরকে মারধোর করো।]

খ.এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তিক্ততা তৈরী হওয়ার আশংকা কর তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস পাঠাও। তারা যদি সংশোধনের ইচ্ছা করে তাহলে আল্লাহ তাদের উভয়ের মধ্যে আনুকুল্য সৃষ্টি করে দেবেন। নিসা-৩৫

গ. "ফা ইন খিফতুম আললা ইয়ুকিমা হুদুদাল্লাহ..ফালা জুনাহা আলাইহিমা ফিমাফতাদাত বিহি। (সুরা বাকারাহ)

বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্যে আদালত বা কাজীর কাছে যাওয়া।

এই তিনটি আয়াতের মধ্যে থেকে সিদ্বান্ত বের করে আনা জরুরী।

এখানে স্ত্রী অন্যায় করলে তাকে মারা ফরজ কিনা। মারামারি না করে নিসা-৩৫ অনুযায়ী সালিশে যাবে নাকি আগে মারামারি করবে। এখনকার সময়ে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা সমাজ পছন্দ করছেনা।

স্বামীর মারার শরয়ী অধিকার স্ত্রীর অভিভাবককে পারিবারিক সালিসের পরে বা মাধ্যমে দিলে কেমন হয়।

সর্বশেষ সমাধান হচ্ছে ইসলামী আদালতের শরনাপন্ন হওয়া।

আজ এই পর্যন্তই। ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ।

বিষয়: বিবিধ

১৩১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File