জামায়াতে ইসলামী নামটাই বাংলাদেশ প্রেম আবেগের বিপরীতে।

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:২৬:৫৭ রাত

জামায়াতে ইসলামী নামটাই বাংলাদেশ প্রেম আবেগের বিপরীতে।

-----------------------------------------------------

সাড়ে সাতকোটি কম্বল আসল আমারটা কই?

শেখ মুজিবুর রহমান।

সেই সাড়ে সাতকোটি জনতা থেকে এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত? নিশ্চয় একমত হবেন এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি বলে। ১০ কোটিই হল বাংলাদেশের প্রজন্ম। ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি জনসংখ্যা ছিল অবুঝ শিশু। তাহলে মোট হয় ১২ কোটি। খোলা চোখে এই বারকোটি মানুষ বাংলাদেশ প্রেমে পাগল ও অন্ধ। আমিও এই শ্রেনীরই অর্ন্তভূক্ত। এই ১২ কোটি মানুষের পাকিস্তানের প্রতি কোন আবেগ নেই ভালবাসা নেই। তার সুত্র ধরে ১৯৭১ সালের নিষ্পাপ অখন্ড পাকিস্তানের সমর্থক ও তার সমর্থনে বিবৃতিদাতাদের প্রতি কোন আগ্রহ ও আকর্ষন এদেশীয় প্রোডাক্টের নেই। এই ১২ কোটি থেকে যাদের আপনি রিক্রুট করতে পেরেছেন তাদের সার্ভেও নিশ্চয় আপনি করে দেখেননি? সেই সৎসাহস আছে কি? পুরনো জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের মাজলিসিয় শুরা দিয়ে তো এই প্রজন্মের আবেগ বুঝা যাবেনা।

হতে পারে আপনি ১৯৭১ সালে মন্ত্রীত্ব নিয়েছিলেন শান্তি আনতে পারেন কিনা তার চেষ্টার জন্যে। কিন্তু সেই মন্ত্রীত্ব ছিল পাকিস্তান বর্বর সেনাদের দয়ার দান। আমি হলে সেই মন্ত্রীত্ব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতাম। ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতের কথা ইতিহাসের অবিতর্কিত অধ্যায় । আমার দেশের সাধারন জনতা ছাত্র যুবকদের উপর কাপুরুষের মত পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের আধারে যেভাবে গুলি চালিয়েছে এককথায় নিন্দনীয়। এদেশের মানুষ ১৯৭১ এ আলীগকে ব্রুট মেজরিটি দিয়ে পাকিস্তান শাসনের অধিকার দিয়েছিল কিন্তু তৎকালীন সাম্যাজ্যবাদের প্রেতাত্বারা আলীগকে ক্ষমতা থেকে দেশ শাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অন্যায় করেছিল এবং পূর্বপাকিস্তানের সাথে বৈষম্যর কথাও ইতিহাসের অবিতর্কিত অংশ।

এখন কথা আসতে পারে ৩০ লাখ শহীদ নাকি ৩ লাখ শহীদ। আমি বলব ৫০ হাজার মানুষও যদি পাকিস্তানীদের হাতে মারা যায় সেটিও বিশাল অন্যায়। এদেশের মানুষের উপর যুদ্ধটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল এই মতটিও অবিতর্কিত।

এই প্রজন্মের ১২ কোটি মানুষ যেহেতু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতি জন্মগতভাবেই দুর্বল সেহেতু তারা বুঝতে চাইবেনা যে অখন্ড পাকিস্তানের সমর্থকরা কি ভারতের আধিপত্যের ভয়ে অখন্ডপাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ছিল নাকি সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের ভয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল !!! তাদের আবেগ সিম্পল । বাংলাদেশের জন্ম বিরুধিতার সাথে কোন নাম ও দল এদেশে দরকার নাই।

এই বিশাল অংশের আবেগকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে মুক্তিযুদ্ব , স্বাধীনতা , বাংলাদেশের জন্ম বিরোধিতার সাথে কোন নামের অস্তিত্ব এদেশে জরুরী নয় অনুভব করে জামায়াতে ইসলামী নামটা রিনেইম করা কোটি কোটি জনতা ও তরুনের আবেগকে সম্মান করা মাত্র।

বাংলাদেশের প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশ কি জাতীয়তাবাদ এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও অবান্তর। কারন জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল।

মায়ের ভালবাসা যতটুকু থাকে সন্তানের মনপ্রান জুড়ে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ , মুক্তিযুদ্ব , স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের গান গুলো কোটি কোটি তরুন তরুনীর মনে দোলা দেয়। দেশাত্ববোধক গান যখন শুরু হয় তখন আমি আবেগে ফুটতে দেখেছি বাংলাদেশের প্রজন্মকে।

এই আবেগের সাথে ইসলামকে মুখোমুখি করে দেয়া অন্যায় এবং খুব অন্যায়।

মুক্তিযুদ্বের প্রকৃত চেতনা ইসলামের সাথে সাংর্ঘষিক নয়।কারন মুক্তিযুদ্বে মানুষ অংশ গ্রহন করেছিল পাকিস্তানের অন্যায় আচরনের প্রতিবাদ করতে । এই প্রতিবাদ ইসলামের সাথে ইসলামের স্পিরিটের সাথে একাত্বতা পোষন করে। যেখানে অন্যায় সেখানেই ইসলামের ভ্রুকুটি । মুক্তিযুদ্বের বর্নচোরা চেতনা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। কারন মুক্তিযুদ্বের কিছু অর্গানাইজার পাকিস্তানকে ভাগ করতে আগ্রহ করেছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে। ভারতপন্থীরা চেয়েছিল পাকিস্তান ভাগ হলে তাদেরই লাভ। লোভী রাজনীতিকরা চেয়েছিল জনগন যুদ্ব করে স্বাধীন করলে বিহারীদের সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে। বহু জনের বহু কারনে বাংলাদেশ হোক চেয়েছিল কিন্তু জনগন চেয়েছিল পাকিস্তানের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে । এইটাই মুক্তিযুদ্বে অংশগ্রহনকারী জনগনের চেতনা। আমি এই চেতনার বিপরীতে দাড়াতে ইচ্ছুক নই। তাই এই চেতনার বিপরীতে কোন নামকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনা বাংলাদেশী প্রজন্মের লক্ষ কোটি তরুনের মত।

৭১ পরবর্তী বাংলাদেশী প্রজন্ম যেভাবে মুক্তিযুদ্ব , স্বাধীনতা ও বাংলাদেশকে ভালবাসে একই ভাবে ও তারচেয়েও বেশী ইসলামকে ভালবাসে। কিন্তু তারা কোনটারই বিরোধী হতে চায়না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম বিরোধিদের এই সত্যটা বুঝে আমাদেরকে অখন্ডপাকিস্তানের সমর্থনের ঐতিহাসিক বিতর্ক থেকে মুক্তি দিতে হবে। কোটি বাংলাদেশী তরুনের আবেগকে আহত করা তাদেরকে টেবিল টকে পরাজিতদের দলে ঠেলে দিয়ে ব্যদনায় ছটফট করতে দেয়া ভারী অন্যায় । কিশোর যুবাদের সুন্দর মনগুলোকে দেশপ্রেম এর বিপরীত দলে নিজের সিদ্ধান্তকে জায়েজ করার জন্যে শতাব্দী ব্যাপী এক শেষ না হওয়া তর্কযুদ্বে লিপ্ত করে দেয়া অনেক বেশী কর্মঘন্টা নষ্টকারী।

আমি এই কর্মঘন্টা নষ্ট করা থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিরাপদ করতে আগ্রহী।

সংগঠনের নাম ধরে রাখার চেয়ে আদর্শের মার্কেটিং বেশী জরুরীঃ

---------------------------------------------------------------

সংগঠনের নাম ধরে রাখার চেয়ে আদর্শের মার্কেটিং বেশী জরুরী। উল্লেখযোগ্য জনমনে যদি এমন মেসেজ যায় যে আমরা দলের নাম বেশী ভালবাসি ইসলাম নয়। সেটি ইসলামী আন্দোলনের জন্যে সুখকর হবেনা। লিভার ব্রাদারস থেকে ইউনিলিভার হয়েছে , ওয়ারিদ টেলিকম থেকে এয়ারটেল হয়েছে , একটেল থেকে রবি হয়েছে কোন সমস্যা হয়নি। পুর্নউদ্যোমে চলছে সেই নাম পরিবর্তনকারী কোম্পানীগুলো যা দেশের অনেক মানুষের সাথে সম্পর্কিত। এবি ব্যংক নাম পরিবর্তিত হয়ে ব্রান্ডে রুপ নিয়েছে । এই প্রতিষ্ঠান গুলোর নাম পরিবর্তনে সমস্যা হয়নি। গ্রামীন ফোন লোগো পরিবর্তন করেছে কিন্তু সমস্যা হয়নি। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের বেলায় উন্নতি হয়েছে। অবনতি কারোই হয়নি।

কারো কারো যুক্তি নাম পরিবর্তনেও সমস্যা থেকে যাবেঃ

----------------------------------------------------

দীর্ঘদিন একটি নাম নিয়ে কাজ করলে নামের প্রতি ভালবাসা জন্মে। খেয়াল করে দেখুন আপনার নিজের নামের প্রতি আপনার ভালবাসা আছে। আছে আপনার গ্রাম, আপনার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ যে বাসায় বেশীদিন ছিলেন , যে ম্যাসে বেশিদিন ছিলেন সব গুলোর নামের প্রতি আপনার দুর্বলতা আছে। কিন্তু এই নাম ধরে রাখাই একমাত্র সমাধান নয় যখন নাম বিতর্ক উঠে। আর সে বিতর্কটা যদি ১২ কোটি মানুষের দেশপ্রেম আবেগের সাথে জড়িয়ে যায় তখন নাম পরিবর্তন না করাটা ভয়ংকর হয়ে যায়। নাম পরিবর্তনে সমস্যা থেকে যাবে সেটা হয়ত সত্যি কিন্তু সেটা প্রকট হবেনা। ফিল্ডকর্মীরা টেবিল টকে জয়ী থাকবে। এক দশকের কাজে ইসলামী সংগঠন ও ইসলামী আন্দোলন নিয়ে প্রাপাগান্ডাকারীরা খুবই দুর্বল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

যেখানে অন্যদেশে অনেকবার দলের নাম পরিবর্তনের উদাহরন আছে সেখানে অন্তত একবার নাম পরিবর্তন করুন এবং এনজয় করুন ম্যাজিক!

জনগনের মনে করাটা অনেক বড় বিষয়ঃ

--------------------------------------

জীবনের শুরুতে রাসুল সাঃ আল আমীন নামে ব্রান্ড হয়ে গিয়েছিলেন। জনগনের মনে করাটা একটা বড় ও গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আদর্শের মার্কেটিং এর আগে জনমনে একটা পজিটিভ ইমপ্রেশান তৈরী করাটা জরুরী। এই পজেটিভ ইমপ্রেশানে নেচারাল সমর্থক তৈরী হয়। নেগেটিভ ইমপ্রেসান সমস্যায় ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলনের নেচারাল বিরোধী তৈরী হচ্ছে ইসলামের দাওয়াত পৌছার আগেই। এই কথা ডকুমেন্টধারী সত্য যে জামায়াতে ইসলামী যুদ্বাপরাধী না হলেও এদেশের জন্মের বিরুধিতা করেছিল।

স্কুল বিভাগ , শিশু কল্যান ভিন্ন নামে কাজ করে সফলতা পেয়েছে:

------------------------------------------------------------

কে না জানে স্কুল বিভাগ , শিশু কল্যান ভিন্ন নামে কাজ করে সফলতা পেয়েছে। স্কুল বিভাগ ও শিশু কল্যান রিক্রুটমেন্টের কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীল ও কর্মীরা অনেক কমর্ফোটেবলী ইনপুট লাইনে কাচাঁমাল দিতে পারেন। ইসলামী ছাত্রশিবির নাম পরিবর্তন করে দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম মডেল সংগঠনে রুপান্তরিত হয়েছে।

৭১এর বাংলাদেশ বিরোধিতা কারী সংগঠনের নামটা পরিবর্তন করবেননা যেহেতু তবে কেন ছাত্রসংঘ নামটি ফিরিয়ে আনবেননা?

------------------------------------------------------------

আপনি বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী নামটা রাখতে চান কিন্তু ছাত্রসংঘ নামটি রাখলেননা কেন? আমার মনে হয় জামায়াতে ইসলামী নামটা রাখবেন যেহেতু ছাত্রসংঘ নামটিও পুনরায় নিয়ে এসে ষোলকলা পূর্ন করা উচিত! চাষী কল্যান পরিষদের নাম পরিবর্তন করে চাষী জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন নাম পরিবর্তন করে শ্রমিক জামায়াতে ইসলামী রাখা হোক। ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম পরিবর্তন করে ডক্টরস জামায়াতে ইসলামী নামকরন করা হোক। সাইড সংগঠনের নাম পরিবর্তন করেন কিন্তু মুল সংগঠনের বেলায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড গ্রহন করার মত আপনার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন এমন কোন সাইকোলজিকেল পলিসি আপনাকে প্ররোচিত করেছে জামায়াতে ইসলামী নামটা রেখে দিতে? প্রজ্ঞাবানরা একটু বিশ্লেষন করলেই ধরে ফেলতে পারবে নেপথ্য উদ্দেশ্যটা।

কৌশল পরিবর্তনের নাম মানে হীনমন্যতাবোধ নয়:

-----------------------------------------------

কৌশলের কারনে নাম পরিবর্তনে আগ্রহী হওয়াটাকে হীনমন্যতাবোধ বলার সুযোগ নেই। বরং যুদ্বে হেরে যাওয়ার জিদের কারনে নামটা রেখেই রাজনীতি করব এই দেশে এই দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহনটাই বড় গোড়ামী। আপনি ইসলামী আন্দোলনের সম্মানীয় লিডার। তাই বলে আপনি নিষ্পাপ নন । অতীত পর্যালোচনা করে বলা যায় আপনি বড় কোন দার্শনিক ও বিজেতাও নন। আপনি কোন সময় ক্রাইসিস মোমেন্টে বিজয়ী হয়েছেন এমন উদাহরনও নেই। আপনি নবীও নন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গী ওহীর মত গ্রহন করার কোন সুযোগও নেই। কোটি তরুনের কোমল আবেগে ক্রুঢ় পদাঘাত করার কারো অধিকারও নেই। ৭১ এর অখন্ড পাকিস্তানের সমর্থনকে ভূল বললে বা ৭১ এর সিদ্বান্তকে সমর্থন না করলে ঈমানও চলে যাবেনা। সুতরাং বাংলাদেশের জন্মবিরোধিতা কারী কোন নাম এর প্রতি জাতির আকর্ষন না থাকাটাই স্বাভাবিক।

এই মূহুর্তে আন্দোলনের যেমন বিকল্প নেই ঠিক আন্দোলনের সুসময়ে জামায়াতে ইসলামী নামটাই রেখে দেব এই জিদ পোষন করাটা জাতির জন্যে মহা ভয়ংকর । শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে জামায়াতে ইসলামী নামটা প্রতিদিনই ইসলামের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেবে ।

বিষয়: বিবিধ

২০৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File