মহান মুক্তিযোদ্ধের প্রশিক্ষন নেয়া কাদের মোল্লা রাজাকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পেলেন যাবজ্জীবন সাজার রায়... ( কাদের মোল্লা-৩)

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৩০:৪৪ দুপুর

এই প্রবন্ধের ৪র্থ প্যারার শেষ লাইনগুলো দেখুন।

http://dnewsbd.com/single.php?id=18010

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুন্নবী যিনি কিনা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনিও তার সহযোদ্ধা হিসেবে একসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন।

http://www.bd-pratidin.com/index.php?view=details&type=gold&data=Hotel&pub_no=997&cat_id=2&menu_id=8&news_type_id=1&news_id=154747&archiev=yes&arch_date=09-02-2013

ট্রাইবুনালে কাদের মোল্লার দেয়া বক্তব্য:

আমার নাম আব্দুল কাদের মোল্লা, পিতার নাম সানাউল্লাহ মোল্লা। জন্মতারিখ ০২/১২/৪৮ সালে। জন্মস্থান গ্রাম জরিপের ডাঙ্গী ইউনিয়ন চরবিষ্ণুপুর উপজেলা সদয়পুর, ফরিদপুর। স্থায়ী ঠিকানা- আমিরাবাদ, ইউপি ভাষানচর, সদয়পুর, ফরিদপুর। বর্তমান ঠিকানা- ফ্ল্যাট-৮/এ, গ্রীণভ্যালী এপার্টম্যান্ট, প্লট নং- ৪৯৩, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। আমার প্রাথমিক শিক্ষা হয় ১৯৫৮ সালে জরিপের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্টিটিউশনে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ঐ স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে আমি এসএসসি প্রথম বিভাগে পাস কর। পরে আমি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ১৯৬৬ সালে ঐ কলেজ থেকে আইএসসি ও ৬৮ সালে বিএসসি পাস করি। বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমীতে আমি একবছর ৪ মাস শিক্ষকতা করি। ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম পর্বে ভর্তি হই। আমি থাকার জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সিট পাই। তখন ঐ হলের নাম ছিল ঢাকা হল। ঐ সময়ে গোটা বছরেই ক্লাস হয়েছে তবে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক কারণে ক্লাস বন্ধ ছিল। তাই ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে পরীক্ষার তারিখ ছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসার কারণে আমাদের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। তখন আমরা আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ইন্নাস আলীর কাছে ৮ মার্চ গিয়ে জানালাম এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি আমাদের হলে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন আমার সিদ্ধান্ত পরে জানাবো। আমরা যারা হলে ছিলাম তারা উদ্বিগ্ন হয়ে আবারো চেয়ারম্যান স্যারের সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাদের পরামর্শ দেন যাদের ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ঢাকায় যাদের থাকার ব্যবস্থা নেই তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বললেন। তবে ডাক ও টেলিগ্রাম ঠিকানা দিয়ে যেতে বললেন।

আমি ১১ বা ১২ মার্চ ফরিদপুরের আমিরাবাদে নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। গ্রামের অন্যান্য ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রতিদিন আমরা স্কুল মাঠে বসে রেডিওতে খবর শুনতাম। ইতোমধ্যে আমাদের সাথে মিলিটারির জেসিও (অবসরপ্রাপ্ত) অফিসার আমাদের সাথে বসতেন ও খবরাখবর শুনতেন। এভাবে এক সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় পার হয়ে যায়। এর মধ্যে ২৩ মার্চ আমাদের এলাকায় তখনো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা যায়নি। অধিকাংশ বাড়িঘরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শুধুমাত্র থানা হেডকোয়ার্টারে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

ঐ দিনই জেসিও সম্ভবত তার নাম ছিল মফিজুর রহমান, তার ডাকে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা একত্রিত হই। তিনি আমাদেরকে বিকেল থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া শুরু করলেন। এজন্য তিনি বেশ কিছু কাঠের রাইফেল জোগাড় করলেন। তিনি আমাদের বললেন রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। ঐ দিন বিকেল থেকে আমরা তার নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জন একত্রিত হই। তিনি আমাদের প্রাথমিক পরীক্ষা নেয়ার পরে দু'একজনকে বাদে প্রায় সকলকেই প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নিলেন। প্রথম তিন দিন তিনি আমাদের কাঠের ঐ ড্যামি রাইফেল দেননি। পরে ২১/২২ জনকে তিনি ড্যামি রাইফেল হাতে দেন। আমরা ঐ কাঠের রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং চালিয়ে যাই। পাক আর্মিরা ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত সম্ভবত তারিখ হবে এপ্রিলের ৩০ অথবা ১ মে তখন আমাদের ট্রেনিং বন্ধ রাখেন। কয়েকদিন পর আবার ট্রেনিং চালু করা হয়। পরে একদিন যেদিন সেনাবাহিনী ফরিদপুর থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল সেদিনও আমাদের স্কুল থেকে পাকসেনাদের কামানের গোলার শব্দ শুনতে পাই। আমরা ভয়ে স্কুলের ভিতরে ঢুকে যাই। এর মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ বিমান স্কুলের উপর দিয়ে চলে গেল। তখন আমাদের ট্রেনিং স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়। আমরা পাকিস্তান রেডিওতে শুনতে পাই অবসরপ্রাপ্ত বা এলপিআর বা ছুটিতে থাকা সকল সামরিক কর্মকর্তাদেরকে কাজে যোগদান করতে বলা হয়। আমরা পরে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষক মফিজুর রহমানের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। আমি এরপরে বাড়িতেই অবস্থান করি। আমি আকাশবাণী, কলকাতা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও পাকিস্তান রেডিওর খবর নিয়মিত শুনতাম।

গ্রামে অবস্থানের ঐ সময়ে মৌলবী ইসহাক ওরফে ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে প্রায় সময় যেতাম। তার দু'মেয়েকে আমি পড়াতাম। পীর সাহেবের এক জামাতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল বলে আমি পরে জেনেছি। পীর সাহেবের ছেলেরা সবাই স্বাধীন বাংলার সমর্থক ছিলেন। পীর সাহেব আমাকে কিছু টাকা দেন বাজারের একটি ঘরে ব্যবসা করার জন্য চালু করতে। ঐ বাজারের নাম চৌদ্দরশি বলে পরিচিত হলেও কাগজে কলমে এর নাম ছিল সাড়ে সাত রশি। সেখানে প্রতিদিন বাজার বসলেও সেখানে হাট বসতো শনি ও মঙ্গলবার। হাটবারে আমি সেখানে বসতাম। পুরো ১৯৭১ সালেই আমি ঐ বাজারে বসতাম। ৭২ সালের প্রায় পুরো সময় আমি সেখানে বসতাম। পীর সাহেবের মেঝোছেলে আমার সাথে সেখানে বসতো। পাট, মশুরী বেচাকেনা করতাম। ৭১/৭২ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এডভোকেট মোশারফ হোসেনের সাথে এবং থানা আওয়ামী লীগের নেতা শাজাহানের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমাদের এলাকা মুক্ত হওয়ার পরে সদরপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এর লুৎফুল কবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল আমার।

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=101463

বিষয়: বিবিধ

৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File