হে সুপ্তি বিশ্বাস , হে শাহবাগের দেশপ্রেমিক তরুন >কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমান না হওয়ার গল্প শুনো (কাদের মোল্লা -২)
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৪৭:৩১ সকাল
(আমি শনিবার রাত থেকে অসুস্থ। কাদের মোল্লার উপর জঘন্যতম অন্যায় হয়েছে দেখে সহ্য করতে না পেরে দুর্বল শরীর নিয়ে লিখছি। আমার আগের লেখাগুলোতে সাইদী সাহেব ও কামরুজ্জামানের পক্ষে শুধু লেখা ছিল কারন স্টাডি করে তাদের নির্দোষ মনে হয়েছে।আমি যা জানি না তা লিখিনা। যুদ্ধাপরাধ মামলায় বন্দী অনেকের পক্ষে এখনো লিখি নাই কারন আমি তাদের সম্পর্কে জানিনা। )
কাদেরমোল্লার মামলার বাদীর সংক্ষিপ্ত জীবনী বর্ননা:
রাষ্ট্রপক্ষের-৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা মিরপুর এলাকার ‘লাট ভাই’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ ইং তারিখে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ১৫/০৫/২০১২ ইং তারিখে হাইকোর্ট বিভাগের বর্তমান একজন বিচারপতি মহোদয়ের জায়গা দখলের অভিযোগে সম্প্রতি কারাভোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদখল এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে শতাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। তিনি ২৫/০১/২০০৯ ইং তারিখে পল্লবী থানায় কাদের মোল্লার বিপক্ষে একটি মামলা দায়ের করেন।
কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্টপক্ষের প্রথম অভিযোগ:
মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পল্লবকে হত্যা করা। এই চার্জে রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী সৈয়দ শহিদুল হক মামা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তিনি বলেন যে, তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নির্দেশে আক্তার গুন্ডা পল্লবকে ঠাটারি বাজার থেকে ধরে এনে মিরপুরে হত্যা করে।
কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষী:
কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্যদেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শহীদ পল্লবের ভাবী শাহেরা। তিনি বলেন যে তিনি কখনও শহীদ পল্লবের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কাদের মোল্লার নাম শুনেননি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কোনোপ্রকার জবানবন্দি গ্রহণ না করে নিজের মত করে কাদের মোল্লার নাম জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি জমা দেন।
এই চার্জের অন্যতম সাক্ষী শহিদুল হক মামা ২০/০৪/২০১২ ইং তারিখে বিটিভি’তে প্রচারিত ‘রণাঙ্গনের দিনগুলি’ নামক এক অনুষ্ঠানে উক্ত চার্জের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন। কিন্তু সে বর্ণনায় আসামী কাদের মোল্লার নাম জড়িয়ে কোন ঘটনার উল্লেখ করেন নি।
উল্লেখ্য যে আব্দুল কাদের মোল্লা গ্রেফতার হন ২০১০ সালে ।
কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্টপক্ষের ২য় অভিযোগ:
দ্বিতীয় চার্জে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই চার্জে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী-২: সৈয়দ শহিদুল হক মামা,
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী-৪: কবি কাজী রোজী,
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী-১০: সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম।
উক্ত সাক্ষীদের কেউই জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার এই ঘটনাটি দেখেন নি এবং তারা কার কাছ থেকে শুনেছেন তাও ট্রাইব্যুনালে বলতে পারেন নি।
রাষ্ট্রপক্ষের-২ নং সাক্ষী বলেন, তিনি শুনেছেন কবি মেহেরুন্নেসাকে কাদের মোল্লার নির্দেশে হত্যা করা হয় কিন্তু তিনি কার মাধ্যমে শুনেছেন কিভাবে শুনেছেন তা আসামী পক্ষের প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিতে পারেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের-৪ নং সাক্ষী কবি কাজী রোজী বলেন, তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারীরা শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেন। কিন্তু কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছেন কি না তিনি তা শুনেননি। অপরদিকে তার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ নামক বইয়ে তিনি শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার মৃত্যুর ব্যাপারে বিষদভাবে লিখেন। কিন্তু তিনি তার বইয়ে কাদের মোল্লার নাম কোথাও উল্লেখ করেননি।
উল্লেখ্য যে আব্দুল কাদের মোল্লা গ্রেফতার হন ২০১০ সালে ।
রাষ্ট্রপক্ষের-১০ নং সাক্ষী সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম বলেন শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছে বিহারী এবং এই হত্যার ব্যাপারে তিনি কোনোভাবেই কাদের মোল্লাকে জড়িত করেননি।
এই চার্জে প্রসিকিউশন তাদের মামলা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যার্থ হয়েছে ।
কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্টপক্ষের ৩য় অভিযোগ:
তৃতীয় চার্জে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার্জে সাক্ষ্য দিয়েছেন
রাষ্ট্রপক্ষের-৫ নং সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান এবং
রাষ্ট্রপক্ষের-১০ নং সাক্ষী সৈয়দ আব্দুল কাউয়ুম।
তারা উভয়ে শোনা সাক্ষী এবং তারা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে মিরপুরের জল্লাদখানায় সংরক্ষিত শহীদদের জীবনী এবং শহীদ পরিবারের বিভিন্ন জনের জবানবন্দী সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা আসামী পক্ষ সংগ্রহ করে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। উক্ত জবানবন্দীতে দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষের-৪ নং সাক্ষী কাজী রোজী তার লেখা বই ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেছা’তে খন্দকার আবু তালেব হত্যার জন্য বিহারী হালিমকে দায়ী করেন। সেখানে তিনি কেন আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “কাদের মোল্লার ভয়ে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।” আইনজীবীগণ প্রশ্ন করেন, “আপনার বই প্রকাশ হয়েছে ২০১১ সালে আর আব্দুল কাদের মোল্লা গ্রেফতার হন ২০১০ সালে তাহলে তিনি কিভাবে আপনাকে ভীতি প্রদর্শন করলেন?” রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষী কাজী রোজি এর কোন জবাব দিতে পারেননি।
কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্টপক্ষের ৫ম অভিযোগ:
পঞ্চম চার্জে পল্লবীর আলোবদি গ্রামে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে।
এই চার্জে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের-৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা এবং
রাষ্ট্রপক্ষের-৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা।
রাষ্ট্রপক্ষের-৬ নং সাক্ষী তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার আগে তার পুরো পরিবার প্রাণভয়ে সাভারস্থ সারুলিয়া গ্রামে চলে যায়। তিনি না গিয়ে ঘটনার দিন পার্শ্ববর্তী ঝোপ থেকে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলি করতে দেখেছেন।
কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষী:
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের-৬ নং সাক্ষীর আপন ছোট ভাই (আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষের-৫ নং সাক্ষী) আলতাফ উদ্দিন মোল্লা বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন যে, ঘটনার পূর্বে তাদের পুরো পরিবার পালিয়ে গিয়েছিল সাভারস্থ সারুলিয়া গ্রামে এবং তার বড় ভাই শফিউদ্দিন মোল্লাও তাদের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সুতরাং আমার বড়ভাইয়ের ঘটনা দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না এবং তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের-৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা মিরপুর এলাকার ‘লাট ভাই’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ ইং তারিখে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি ২৫/০১/২০০৮ ইং তারিখে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন নিজামী, মুজাহিদ এবং কাদের মোল্লা আলোবদি গ্রাম আক্রমণ করে এবং ঘটনার সময় সে দুয়ারীপাড়াস্থ এক ডোবায় আশ্রয় নেয় যা আলোবদি গ্রাম থেকে ৪ মাইল দূরে অবস্থিত। অথচ ২৬/০৮/২০১২ ইং তারিখে তিনি মাননীয় ট্রাইব্যুনালে এসে বলেন ঘটনার সময় তিনি আলোবদি গ্রামে ছিলেন এবং ঘটনার সময় তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলি করতে দেখেছেন।
কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্টপক্ষের ৬ষ্ট অভিযোগ:
ষষ্ঠ চার্জে প্রসিকিউশন জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হযরত আলী লসকর এবং তার পরিবারকে হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ আনেন।
যার একমাত্র সাক্ষী হলো মোমেনা বেগম রাষ্ট্রপক্ষের-৩ নং সাক্ষী। তিনি বলেন যে, তিনি কাদের মোল্লাকে দেখেননি। জনৈক কামাল ও আক্কাস মোল্লার কাছ থেকে শুনেছেন যে, তার বাবাকে কাদের মোল্লা হত্যা করেছে।
একই সাক্ষী মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বিষয়ে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, ঘটনার দুই দিন আগে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। কোর্টে বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শ্বশুর বাড়ি চলে যান।
শুনা সাক্ষী ও মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে রায় হল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা । মানবতা গুমরে মরে। অন্যায়ের বিপক্ষে লড়াই করে যে কোন ক্ষতি বরন করে নেয়ার মত সৎসাহস প্রত্যেকের থাকা উচিত।
http://dnewsbd.com/single.php?id=18010
বিষয়: বিবিধ
১২৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন