ব্লগার তারাঁচাদের নারী লেখক বিষয়ক কমেন্টটি কপিপেস্ট না করে পারলাম না।
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০১:০২:১৭ দুপুর
(ব্লগার তারাঁচাদ ভাই আমার একজন ফেভারিট মানুষ। কোনদিন দেখিনাই। ভারচুয়াল রিলেশান।আলাপচারিতায় জেনেছি তিনি একজন ডাক্তার। ভারচুয়ালি যাদের আমি গাইড পেয়েছি তাদের মধ্যে ব্লগার তারাঁচাদ অন্যতম। একটি ব্লগে তার করা মন্তব্য কোড করছি। আমি নিশ্চিত আপনি পড়ে শিহরিত হবেন। তার অনুমতি না নিয়ে গুরুত্বপূর্ন মনে করে পাঠকদের গোচরীভূত করলাম।তারাচাদঁ ভাই আপনার ফেইসবুক আইডি জানিনা তাই অনুমতি না নিয়েই পোস্ট করলাম। দুঃখিত )
---------------------------------------
আমার উপর নারীলেখদের প্রভাব যে কত বেশি তারই একটি নাতিদীর্ঘ ফিরিস্তি দিচ্ছি । পত্র পত্রিকায় নারীদের ইসলাম বিরোধী লেখা-মন্তব্য পড়তে পড়তে মনে হত নারীদের বেশির ভাগ সম্ভবত ইসলাম বিদ্বেষী ।
আমার এ ধারণার ভিত্তিমূল ভেঙ্গে ফেললেন 'জয়নাব আল গাজালী' । তার 'কারাগারের রাতদিন' পড়ে বুঝলাম, বিংশ শতাব্দীতেও এমন নারী আছেন যারা সুমাইয়া-বিলাল-খাব্বাবদের মতই সত্যের পক্ষে জীবন বাজী রাখতে পারেন । তারপর পেলাম মরিয়ম জামিলার দেখা । ( দেখা নয়, লেখা )। তার জীবনসংগ্রাম, তার লেখা পড়ে আমি অনেক বেশী উজ্জীবিত হয়েছি ।
একদিন এক লেখকের মুখে শুনলাম এনম্যারী শিমেল নামে পণ্ডিত-মনীষি আছেন, যিনি ইসলাম-ইহুদী-খৃস্টান তিন ধর্মেরই বিশেষজ্ঞ । তিনি হার্ভার্ড, এবং আংকারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বের প্রফেসর ছিলেন । তিনি যখন মহানবীকে (স.) নিয়ে নিরপেক্ষ আলোচনা করেন, তখন তাকে অসাধারণ পণ্ডিত ছাড়া আর কিছু মনে হয় না । জার্মান বংশোদ্ভুত এই বিদূষীর মত দ্বিতীয় একজন এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না ।
তারপর পড়লাম, ক্যারল এনওয়ে-র 'ডটার অব অ্যানাদার পাথ' বইটি । তিনি দেখিয়েছেন, আমেরিকার ইহুদী-খৃস্টান পরিবারে জন্ম নেয়া মেয়ে গুলো যখন ইসলাম নামক আলোর সন্ধান পায়, তখন জীবনের সবকিছুকে তুচ্ছ করে (পতঙ্গের মত ) সেই আলোতে আত্মহুতি দেয় । তখন থেকেই নারীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেড়ে গেল ।
পরে একদিন হাতে এল 'Why the Women are Accepting Islam' । বইটিপড়ে আমি আনন্দিত এবং স্তম্ভিত । মেয়েদের অনুভব এত গভীর ! আমি জন্মগতভাবে মুসলিম হয়েও এবং কোরআন-হাদীস পড়েও যে রত্নের সন্ধান পাইনি, ইহুদী-খৃস্টান পরিবারে জন্ম নেয়া, অমুসলিম পবিবারে বেড়ে উঠা তরুণীরা সে মণিমাণিক্যের সন্ধান পেল কেমন করে ?
একদিন কিনলাম আমীরা আইয়াদের ''Healing of Body, Mind and Sole'' বইটি আমার এত ভাল লেগেছে যে বইটি সবসময় আমার সাথে রাখতাম । এবং সুযোগ পেলেই পঠিত অংশ আবার পড়তাম । এর কিছুদিন পর চোখে পড়ল এই লেখিকার The True Secret বইটি । এবার আমি পড়ে গেলাম গোলক ধাঁধায় । দুটিই অসাধারণ । কোনটির চেয়ে কোনটিকে বেশি ভাল বলব ? ইন্টারনেট বাদ দিয়ে, ফেসমুখ থেকে বিমুখ হয়ে, ব্লগকে ব্লক করে The true Secret পড়লাম । যতবার পড়তাম, ততবার এই বইয়ে ডুবে যেতাম । পরে বুঝলাম, আল্লাহ এই লেখিকার হাতে বরকত দিয়েছেন ।
তারপর একদিন বইয়ের দোকানে বই ঘাটতে ঘাটতে নজরে পড়ল ড. আয়শা হামাদানের Nurturing Of Eeman in Children বইটি । লেখিকা জন্মগতভাবে খৃস্টান । ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি এবং বিহেভিয়ারেল সাইন্সের উপর পিএইচডি করা । ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আবার ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী করেছেন । বাচ্চাদের গড়ে তোলা যে একটা আলাদা বিষয়, এবং এটা যে এত বৃহৎ ও মহৎ একটা সাবজেক্ট, এই বই পড়ার আগে আমি তা জানতাম না । তারপর পড়লাম তাঁর Islam and Psychology বইটি । এক্সিলেন্ট ।
তারপর চোখে পড়ল Sakina Hirschfelder-এর লেখা The Path to Self-Fulfilment based upon the Quran and the Sunnah of Prophet Muhammad । বইটি যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হই । Sakina Hirschfelder গণিতের উপর মাস্টার্স করেন মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে। ইসলাম গ্রহণের পর আরবী এবং ইসলামিক স্টাডিজ-এ অনার্স-মাস্টার্স করেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার The Path to Self-Fulfilment based upon the Quran and the Sunnah of Prophet Muhammad বইটি পড়েছি, হলুদ-লাল ফ্লুরেসেন্ট মার্কার কলম দিয়ে দাগিয়েছি, আত্মস্থ করেছি । এ বইটি আমার এতপ্রিয় যে, সময় পেলেই বারবার বইটি খুলে দেখি ।
তারপর নারী লেখকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকল । এরই পরিক্রমায় আমার নজর পড়ল Lena Winfrey Seder-এর লেখা
[/b]The Metamorphosis of a Muslim: autobiography of my Conversion বইটি ।[/b] নিজের জীবনী এবং ইসলামের মধ্য দিয়ে তার পাখনা মেলার কথা লিখতে গিয়ে তিনি সবরের উপর এক অসাধারণ লেখা লিখেছেন ।
সত্যি বলতে আমি এখন নারী লেখকদের এক মুগ্ধ পাঠক । আল্লাহ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ''তুই কাদের জন্য সুপারিশ করতে চাস হে ?'' আমি বলব, হে আল্লাহ যে নারী লেখকগণ আমার চিন্তা চেতনাকে শাণিত করেছেন, তাদের জন্য সুপারিশ করতে চাই, দয়াময় ।
বাংলা ভাষায় সেলিনা হোসেন টাইপ লেখকদের লেখা পড়ে মনে হত, বাঙ্গালী নারীরা সম্ভবত ইসলামের সত্যিকার খোঁজ পায় নি ।
একদিন এ ধারণাও ভেঙ্গে গেল । চেমন আরার গল্প, আর রাজিয়া মজিদের উপন্যাসের আমি পাঁড় পাঠক আমি । রাজিয়া মজিদের লেখা গল্প-উপন্যাস-বই যেখানেই পাই, তা আমার পড়া চাই-ই ।
কবি-গল্পকার-ঔপন্যাসিক জাহানারা আরজু আমার খুবই প্রিয় । দৈনিক'সংগ্রামে'র সাহিত্য পাতায় তার লেখা কবিতা, মাসিক 'কলমে' তার লেখা কবিতা বা গল্প আমি মনযোগ দিয়ে পড়ি ।
সবশেষে ব্লগের কথা । এই ব্লগে বেশ কয়েকজন নারী ব্লগার আছেন, যাদের লেখা আমি পড়ি মন্তব্য করি । এদের কয়েকজন আবার চাটগাঁয়ের । কবি নজরুল একবার চিটাগং গিয়েছিলেন । সেখানে সাগরের তীরে বসে তিনি লিখেছিলেন 'বাতায়ন পাশের গুবাক তরুর সারি' কবিতাটি । শামসুন্নাহার মাহমুদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, 'তোমাদের নদী-সাগর-পাহাড় আমাকে গান গাইয়েছিল'। তাই মনে হয় চাটগাঁয়ের নারী ব্লগারদের উপর নজরুলের আসর পড়েছে ।
সত্যি সত্যিই বলছি, নারী লেখক-ব্লগারদের আমি একজন মুগ্ধ পাঠক---শুধুমাত্রযে নারীদের হৃদয় ইসলাম সূর্যের মত আলোকিত করে রেখেছে ।
(http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/3283/Vishu/19440#.UfC4PaxzaXU)
বিষয়: বিবিধ
২১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন