প্রসঙ্গঃ বাহ্যিকতার দাম! সঠিকমূল্যয়নের প্যারামিটার সমাজ ও দেশ পতিরা না জানলে সমাজ ও দেশ পিছিয়ে যায়।

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৩:১৬:৫৭ দুপুর

বাহ্যিকতার অনেক দাম। অনেক সমাজবিদ সমাজসংস্কারক , রাষ্টচিন্তক দার্শনিকদের জীবনী পড়ে দেখেছি তাদের সমসাময়িক মানুষ সমাজ রাস্ট থেকে কষ্ট পেতে। আপনিও পেতে পারেন। তবে আপনার উদ্দেশ্য ভাল হলে কোন একসময় মূল্যয়ন পেতেও পারেন। মূল্যয়ন না পেলেও সমস্যা নেই পরকালে যাদের বিশ্বাস আছে তারা তো পরকালে জাযাহ পাবেনই।

১. ২০১০ এর নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের মে এর কোন এক সময় আমি একটি বেসরকারী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট এর লেকচারার। একটি আইটি ফার্মের চাকরী ছেড়ে দিয়ে বেপইতে (বেসরকারী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট) জয়েন করলাম। আইটি ফার্মের সেই চাকরীতে সার্ভার ডাউন থাকলে সাপোর্ট থেকে ওভার ফোনে ক্লায়েন্টদের মিথ্যা বলতে হত । আমার খুব বাজে লাগত ব্যপারটা। জব করে ট্রায়ার্ড হয়ে যেতাম তাই পড়ার কোন টাইম থাকতনা।

আমি বেপইতে জয়েন করলাম। ক্লাশ নিতাম দুপুর একটা পর্যন্ত। তারপর জুহর সালাত আদায় ও লাঞ্চ সেরে কোন এক খালি ক্লাশরুমে ঢুকে জবের পড়া শুরু করতাম। প্রিন্সিপ্যালকে বলতাম আমি কোন এক ক্লাশরুমে আছি প্রয়োজন হলে মোবাইলে কল দিয়েন । চলে আসব। ভাল জবের প্রস্তুতিটা এভাবে শেষ করি।

প্রতিদিন ক্লাশ নিতাম দুপুর একটা পর্যন্ত আর ব্যক্তিগত স্টাডিটা সেরে বাসায় ফিরতাম আসর বা মাগরিবের পর। বাসায় গিয়ে টিভির রিমোর্ট এবং আউট বই নিয়ে বসতাম বা আড্ডা দিতাম কোন আত্বীয় স্বজন , বন্ধুবান্ধব , এলাকার পরিচিত কোন জায়গায় গিয়ে বা জনশক্তিদের সাথে।

বাসার লোকজন বুঝত আমি কোন পড়ালেখা করিনা।

২. ২০০৭-২০০৮ তখন আমি আইআইইউসি সভাপতি বা চ.ম.উয়ের কোন দায়িত্ব পালন করছি। আমার অভ্যাস ছিল রাত ১১ টা ১২ টায় সাংগঠনিক কাজ সেরে যতক্ষনই বাসায় ফিরিনা কেন পাঠ্যবই নিয়ে বসতাম। বাসার অনেকেই হয়ত ঘুমিয়ে যেত। রাত একটা দুইটা পর্যন্ত পড়ে ফজরের জামাতে যোগদানের পর আবার সাংগঠনিক কাজের জন্যে বাসা থেকে গায়েব বনে যেতাম। বাসার লোকজন মনে করত ছেলেটা গোল্লায় গেছে।

৩. বডির উপর ওভার লোডেড কাজ আসলে দেখবেন ঘুম কম হচ্ছে । চেহারার ঘুমঘুম মলিনভাব। অন্তত চনমনে চেহারা তো দেখাবেনা। সারাদিন ক্লাশ ও ক্যাম্পাস রাজনীতি, ফজরের পরে আর মাগরিবের পরে সাংগঠনিক কাজ , রাতে ব্যক্তিগত পড়া । ফাকেঁ ফাকেঁ সামাজিক ক্লাব পরিচালনা ও সামাজিক কাজ । আপনি চাইলে আপনার উর্ধ্বতন কাউকে ম্যানেজ করে ফাকিঁ দিতে পারেন আবার অনেক কাজ করে হক্ব আদায় করতে পারেন। কিন্তু অনেক কাজ করতে গেলেই আপনি গ্লামার্স হারাতে পারেন। বিপ্লবীদের গ্লামার্স কম থাকে বলেই আমার ধারনা। কাজের একটা প্রভাব চেহারায় থাকাটা স্বাভাবিক। চেহারার সৌন্দর্য সমস্যায় আপনি সংগঠন সমাজের মূল্যয়ন হারাতে পারেন অন্তত যারা চেহারার সৌন্দর্য দেখে মূল্যয়ন করে তাদের নিকট। বেশিরভাগ লোকজন বাহ্যিকতায় বিশ্বাস করে। সঠিক মূল্যয়নের প্যারামিটার গুলো অনেকেই জানেনা।

৪. এখন এসে গেছে ফেইসবুকের ছবি দেখে মূল্যয়ন। দেখবেন আপনার ফেবুতে ইনডিয়ান মডেল স্টাইলে ফটোশপের কারসাজি করা ভাল ছবি নেই তখন দেখবেন অনেকের কাছে আপনি মুখস্থ মূল্যয়নের শিকার হয়েছেন।

৫. একটা ছাত্রসংগঠনকে দেখলাম "হাইট ভাল ,ওয়েট বেশি এবং চেহারা একটু ডেশিং ডেশিং তাদের মূল্যয়ন করতে " । ভাই দেশ মূল্যয়ন করে মাথাকে। ঘিলুর যদি দাম না ই থাকত তবে জগতে হাতির বা তিমির বেশি দাম হত।

৬. সংগঠনের বা অফিসের বসের সামনে সামনে ঘুরবেন । ন্যায় করুক অন্যায় করুক জ্বী হুজুর জ্বী হুজুর বলবেন। বসের মনের অজান্তে ঠাই করে নিতে পারবেন বসের মনের মনি কোঠায় । দেখবেন প্রমোশনের কোন ঝামেলা নেই। খুব কম লোকেই কাজ দেখে মানুষকে মূল্যয়ন করে।

৭. মহাখালী বাসস্ট্যান্ড। পথের ধারের হোটেল গুলোতে অনেকেই খাচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম রোযা রাখেনি। পরে ভাবলাম কোরআনে আছে সফরে থাকলে রোযা ভাঙ্গা যায় (২-১৮৪) । হয়ত তারা তাই করছে। মানুষের প্রতি ভাল ধারনা করতে দোষ কোথায়?

৮. গত কয়েকদিন আগে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম। পথে দেখলাম এক হিন্দু পুরুষ তার বাপ মরে গেছে তাই কিসের জন্যে টাকা চাদাঁ তুলছে। অমুসলিমকে অর্থ সাহায্য দিলে ক্ষতি কি? জয় হোক না মানবতার!

৯. আমাদের আগে আগে গায়ে গোল গলা গেঞ্জি আর হাটু পর্যন্ত ত্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে ২ টা ছেলে হাটছে। চুল স্পাইক করা। মুখে হাল আমলের দাড়িও অল্প আছে। আমার আশে পাশে থাকা দুই হুজুর বললেন এই ছেলে গুলো বরবাদ হইয়া গেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এই ছেলেগুলা কি সতর ভঙ্গ করেছে? চুল স্পাইক করে কি কোন হারাম কাজ করেছে? দাড়ি ফ্যাশনেবল রেখে কি ইসলামের বিরোধিতা করেছে? তার এই ডেসআপ গেটআপ কি অন্য কোন ধর্মের অনুকরন হয়েছে? সে কি বিদাত করেছে?

সবগুলো প্রশ্নের উত্তর যদি হয় 'না' তবে এই যুবক গুলোকে ভালবেসে কাছে আসতে দিতে হুজুরদের সমস্যা কোথায়?

১০. শহরের একঘেয়ে পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে অনেক নবদম্পতি মার্কেটে পার্কে হাত ধরাধরি করে বসে থাকে। কত উঠতি ইসলামিস্ট তাদের বলে নরকে কীট । অথচ তারা কি গুনাহ করছেন না সওয়াব?

একদিন আমার এলাকার একজন স্বনামধন্য লোক আমাকে বললেন লোকমান এত নির্বাচন আসে যায় কিন্তু আমার প্রভাব থাকা স্বত্ত্বেও কেউ আমারে কিনতে আসেনা। পাশের একজন বলে উঠল "আগে আপনি সমাজকে বুঝতে দেন আপনি টাকা খান এবং আপনারে কিনা যায় দেখবেন আপনাকে কিনার লাইন পড়বে"। এখন তো লোকজন জানে আপনি ম্যানেজ হননা। তাই কেনার সাহসও কেউ করেনা।

সুতরাং বলাই যায় বাহ্যিকতার অনেক দাম। সঠিকমূল্যয়নের প্যারামিটার সমাজ ও দেশ পতিরা না জানলে সমাজ ও দেশ পিছিয়ে যায়।

মনে রাখবেন

রুপে চোখ জুড়ায় হয়ত কিন্তু গুনে মন জুড়ায়।

বিষয়: বিবিধ

১৫২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File