ইসলামী আন্দোলনের পদের প্রতি লোভহীনতা কনসেপ্ট ও সমাজের বাস্তবতাঃ একটি দর্শনগত দ্বন্দ...

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৪ জুন, ২০১৩, ০১:১৬:২৮ দুপুর

ছাত্রশিবিরের সংবিধানের ৩৪ নং ধারা অনুযায়ী ইসলামী সংগঠনের নির্বাচনকালীন যে গুন গুলো দেখা হয় তার অন্যতম পদের প্রতি লোভহীনতা। ছাত্রসংগঠনের মানউন্নয়নকালীন সময়ে যতটুকু মনে পড়ে সাথী মানে উন্নয়ন আর উপশাখার দায়িত্বপালনের পদ এই দুটি প্রসেজে দায়িত্বশীলের নিকট আমার প্রশ্ন ছিল এই রকম যে "সাথী সদস্য পদে নিজেকে মানোন্নয়ন চেষ্টা করে আমি কি পদের প্রতি লোভ করছিনা? " অথবা প্রচেষ্টাকে দায়িত্বশীলের গোচরীভূত করে প্রদর্শনেচ্ছা করছি কিনা!

বিভিন্নজনের উত্তরের সারমর্ম হলঃ

সাথী সদস্য পদে মানউন্নয়ন মানে জ্ঞানগত ও আমলে মানউন্নয়ন। এটা পদ নয়।

আর উপশাখা , থানা , হল বা ওয়ার্ডে দায়িত্বপালনের জন্যে দায়িত্ব ঘোষনা করা হয় সিদ্ধান্তকারী বডির দৃষ্টিভঙ্গীর ভিত্তিতে। এখানে দায়িত্ব কেহ চায়না এই জন্যে যে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব নবী রাসুলের (সাঃ) এর ছিল। কোন যুক্তিতে এবং সাহসে নিষ্পাপ ও আল্লাহর স্পেশাল সৃষ্টি নবীদের দায়িত্ব আপনি চেয়ে নেবেন!!! লোকমান আঃ কে আল্লাহ তায়ালা হেকমত আর রিসালাত এর মধ্যে একটি বেচে নিতে বলেছিলেন। লোকমান আঃ হেকমত বেছে নিয়েছিলেন।

আর দায়িত্ব আসলে রিফিউজও করা যাবেনা কারন আপনি কোন কাজ রিফিউজ করছেন! ইসলামী আন্দোলনের কাজ , আল্লাহ ও তার রাসুলের কাজ , কুরআন হাদীসের কাজ , ইসলামের কাজ করার দায়িত্ব আপনি রিফিউজ করবেন কোন দুঃসাহসে! কারন সে কাজ তো সর্বশক্তিমান আল্লাহর। আল্লাহকে রিফিউজ করবেন কোন সাহসে!

তাই দায়িত্ব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ঘোষনা দেয় উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল মাত্র। তাই দায়িত্ব চাওয়া যাবেনা আর রিফিউজও করা যাবেনা। এই কনসেপ্টটিই প্র্যাকটিস হয়ে আসছে।

কারো মনে যদি দায়িত্বের প্রতি লোভ থাকে আর এই লোভ থেকে সাথী সদস্য মানে নিজেকে মানোন্নয়ন করলে দায়িত্বশীলদের আল্লাহমুখী করার মোটিভেশন ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। কারন মানুষের মনের মালিক তো আল্লাহ।

কিন্তু যখন অলিখিত কর্মপদ্ধতি সংবিধান ও দৃষ্টিভঙ্গী থাকে এই ভাবে যে সাথী সদস্য থেকেই উপশাখা , থানা , হল বা ওয়ার্ডে দায়িত্বশীল করা হবে তখন সাথী সদস্য হওয়ার জন্যে জনশক্তির প্রদর্শনেচ্ছা উৎসাহিত হওয়া স্বাভাবিক আর অন্তরে পদেরপ্রতি লোভ পোষন করে মানোন্নয়ন চেষ্টা রোধ করা পসিবল না।

আর এখানে পদের প্রতি লোভহীনতা কনসেপ্ট আর প্রদর্শনেচ্ছা দুরীভূত করার চেষ্টায় আলো আঁধারির খেলা চলে।

আজকের লেখার বিষয় সেটা নয় ।

"ইন্নিজায়িলুন ফিল আরদি খলিফা" এবং " কুল্লুকুম রায়িন ওয়া কুল্লুকুম মাসওলিন"

অর্থঃ আমি দুনিয়াতে আমার প্রতিনিধি পাঠাতে চাই বা সৃষ্টি করতে চাই।

প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহী করতে হবে।

এই দুটি কনসেপ্ট দেখুন । এখানে মানুষ সুষ্টি হওয়ার সময়েই আটোমেটিক দায়িত্বপ্রাপ্ত। এখানে অটোমেটিক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ায় দায়িত্বপালনের লোভ করতেই হবে। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালনের লোভকরাটাই স্বাভাবিক ব্যাপার ও বৈধ। আমাকে আপনাকে আল্লাহ খিলাফাতের দায়িত্ব দিয়েই পাঠানো হয়েছে।

আমরা অটোমেটিক দায়িত্বপ্রাপ্ত। এখানে পদের প্রতি লোভহীনতা আসে কোথা হতে! আপনি বড়জোড় বলতে পারেন ইসলামী আন্দোলনের কাজ করার জন্যে আমরা ইসলামী সংগঠন করেছি। এই সংগঠন পুরো দায়িত্বকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে একটা সিস্টেম দাড় করিয়েছে। আমাদেরকে দায়িত্বগুলো নেয়ার লোভ করতে হবে এবং জিহাদী বা বিপ্লবী মনমানসিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সংগঠন বা সিস্টেমের কাজগুলো করতে হবে বা দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই পদেরপ্রতি লোভ সওয়াব ছাড়া আমি গুনাহ দেখিনা। পদের প্রতি লোভ যদি হয় দুনিয়া তখন সেটা গুনাহ হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে পদেরপ্রতি লোভ করা সওয়াব ছাড়া গুনাহ হতে পারেনা।

আল্লাহর দ্বীনের দায়িত্ব পালনের পদের প্রতি লোভহীনতার উপর কোরআনহাদীসের কোন রেফারেন্স দেয়া কি আদৌ পসিবল! যার কারনে শিবির তার সিলেবাসে পদেরপ্রতি লোভহীনতার উপর কোন বই বা রেফারেন্স নোট রাখতে পারেনি। কিন্তু একটা বেমানান অসংগতিপূর্ন কনসেপ্ট যুগের পর যুগ চলছেই।

আপনি পরিবারের বড় সন্তান বা ভাই বোনদের মধ্যে কারো বড়। আপনি একটা দায়িত্ব অনুভব করেন। প্রথা সিদ্ধ আপনার সম্মান আর প্রাপ্তির ব্যাপারে ঘাটতি হলে মনে কষ্ট পান। অথবা আপনি ১০ম শ্রেনীর ছাত্র । নিচের ক্লাসের কেহ আপনার মানের ব্যাপারে সচেতন না হলে আপনার ইগোতে লাগে। রাসুলের সাঃ হাদীস হল " যে বড়কে সম্মান ছোটকে স্ণেহ করেনা সে আমার দল ভূক্ত নয়।" এখানে বয়সে বড়জন রা পদের অধিকারী। প্রতিদিন ই একজন শিশুর বয়স বাড়ে আর পদমযার্দা বৃদ্ধি পায়। পাবলিক পরীক্ষা গুলোতে যারা ভাল রেজাল্ট করে তারা সমাজে সম্মানের পদ পায়। কেহ চাকরী পায় বিভিন্ন পদে অমনি পদমর্যাদায় সম্মানী হয়। কেহ দান করে দাতা হয়। কেহ সমাজের সার্ভিস দিয়ে মানুষের আস্থাভাজন হয়ে সমাজপতি হয়। বিয়ে করে কেহ স্বামী হয় কেহ স্ত্রী হয় পরে আল্লাহর রাহমাতে মাবাবা হয়ে মাবাবার পদ পেয়ে যায়। শিক্ষক পদে কেহ যোগদান করে একসময় সিনিয়র শিক্ষক হয় বা কেহ হয় সহকারী প্রধান বা প্রধান শিক্ষক। এখানে ব্যাত্যয় ঘটলে সংষ্লিষ্ট ব্যাক্তি কষ্ট পান। সময়ের ব্যবধানে লেকচারার হয়ে যায় সিনিয়র লেকচারার সহকারী অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক , ডক্টর , অধ্যক্ষ। এখানে ব্যত্যায় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বা কষ্ট পায়। আর্মির সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হয়ে যায় কালের ব্যবধানে প্রতিযোগীতা করে লেফটেনেন্ট জেনারেল।কালক্রমে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যায় সচিব , মূখ্যসচিব। একসময়ের ড্রাইভার হয়ে যায় ওস্তাদ ড্রাইভার। শ্রমিক হয়ে উঠে দক্ষ শ্রমিক। বস্তুত পদের প্রতি লোভহীন হলে সমাজের গতি কমে যাবে । সমাজ নিঃশ্চল হয়ে যাবে।

পদের প্রতি লোভহীনতা ইসলামের রাষ্ট্রীয় শক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। একজন ইসলামী আন্দোলনের মানের জনশক্তি বসে থাকে কখন সংগঠন গ্রীন সিগনাল দেবে নির্বাচনে দাড়ানোর জন্যে। পদের প্রতি লোভহীনতা অনেককেই সমাজের কাজে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। আবার সামাজিক কাজ করার ইচ্ছা থাকলে বা করলে পাশের জন বলে উনার সম্ভবত পদের লোভ আছে বা মনে করে নির্বাচন করার ধান্ধা খায়েশ আছে । পদের প্রতি লোভহীনতা কনসেপ্ট হাক্কুল ইবাদ বা মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনে অনেক মানের লিডারকে বাধা দিচ্ছে। অর্ন্তমুখী বা ঘরমুখী করে রেখেছে অনেক দায়িত্বশীলকে। পদের প্রতি লোভহীনতা প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরী করেনা। পদের প্রতি লোভহীন , সমাজবিমূখ , প্রচারবিমূখ ইসলামী নেতাদের দিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামের রাজনৈতিক বিজয় অর্জন মোটেই সম্ভব বলে মনে করিনা।

কোন একটা অজ্ঞ সমাজে গিয়ে আমাকে ঈমানের দাওয়াত দিয়ে একটা ইসলামী পাঠশালা করতেই হবে। একটি মসজিদ এবং মসজিদের আওতাধীন মানুষের খোজ খবর বা প্রতিবেশীর খোজ খবর নিতেই হবে। রক্তের সম্পর্কের যারা আছে বা আত্বীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব পরিচিত জনের প্রপার খোজ নিলেই মানুষ কাছের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়। এটা একটু বড় পরিসরে করাটাই বর্তমান সমাজের সমাজসেবা। মানুষকে আপন করে নিতে পারলে বা ভাবলে বা সব মানুষকে নিজের পরিবারভূক্ত মনে করতেই পারলে পকেটের টাকা খরচ করে মানুষের উপকার করা সম্ভব। পকেটের টাকা খরচ না করে সমবায় ভিত্তিক মানুষের উপকার করা যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ বা উপকারের পেরেশানী আপনাকে মানুষের অন্তরে পৌছাবে। আপনার ২০০ রাকাত নফল নামাজ রুবুবিয়াতের হক আদায় করে বা ইসলামী সাহিত্যপাঠ আপনার জ্ঞানকে শানিত করে কিন্তু জনগনের উপকার করেনা।

তাই জনগনের উপকারের নিমিত্তে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে পদের প্রতি লোভ আধুনিক সভ্যতার একটা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

আল্লাহ সে জাতির ভাগ্য ততক্ষন পরিবর্তন করেননা যতক্ষন না নিজেরা চেষ্টা করে।


----------------------------------------

(facebook)

বিষয়: বিবিধ

১৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File