ইসলামী খেলাফতের স্বৈরতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক রুপঃ বর্তমান বাস্তবতার আলোকে কিছু জরুরী পর্যালোচন...

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ১৩ জুন, ২০১৩, ০১:৩৮:৫৮ দুপুর

(এই লেখাটি আরিফ ভাইয়ের)

খেলাফত আর গনতন্ত্রের বিতর্কে কিছু মানুষ এই আয়াতটি বলে অধিকাংশ মানুষের ভোটের ভিত্তিতে কাজ করার গনতান্ত্রিক পদ্ধতিকে হারাম করে দেয়। আয়াতটী হলঃ

6|116|আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।

বেশী কথা না বাড়িয়ে কেবল একটি পয়েন্ট বলি। এই আয়াতটি মুলত ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আদর্শের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (স) এর আদর্শের সঠিকতার একটি কারন হিসেবে এসেছে। এই আয়াতটিসহ পুরো সুরা আনয়াম মক্কায় অবর্তীর্ন। রাসুল (স) অবশ্যই এই আয়াতের উপর আমল করতেন। এখন কথা হলো এই আয়াতের উপর আমল করার পরেও রাসুল (স) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ কেন করতেন। কেন তিনি এই আয়াত নাজিলের পরে মাদানী যুগে এসে অধিকাংশ সাহাবীর মতের উপর গুরুত্ব দিয়ে নিজের অমত থাকার পরও মদিনায় থেকে যুদ্ধ না করে ওহুদের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি কি জানতেন না অধিকাংশের মত তাকে বিপদগামী করে দিতে পারে? তিনি জানতেন। মুল বিষয় হল, আয়াতটির আন্ডারস্ট্যান্ডিং। রাসুল (স) ও তার সাহাবীরা আয়াতটিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে মানুষের উপর স্বৈরতন্ত্র চাপিয়ে দেননি। বরং তারা জানতেন, আয়াতটি মৌলিক আদর্শকে বিশ্বাস করার ব্যাপারে, পিপলস ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে নয়। পিপলস ম্যানেজমেন্টের উপর কারো স্বৈরতন্ত্র চাপিয়ে দেয়ার জন্যে নয়।

----------------------

১। এই স্ট্যাটাসটির বিষয়ে একজন ভাইয়ের প্রশ্ন ছিলঃ হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়তো রাসুল (স) সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে গ্রহন করেননি বরং তার বিপরীতে কাজ করেছেন। একইভাবে আবু বকর (রা) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারেও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের বিপরীতে কাজ করেছিলেন।

উত্তরঃ এতোক্ষনে লাইনে কথা আসল। কেবল হুদাইবিয়াই নয়, বরং বদরের যুদ্ধও সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রাথমিক মতামতের বিপরীতে হয়েছিল। আবার ওহুদের যুদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে রাসুল (স) এর পছন্দের বিপরীতে হয়েছিল। দুই ধরনের উদাহরনই আছে। তাইলে এই আয়াতের শিক্ষাটা এবার আপনিই সামারাইজ করেন। আমিতো জানিই শিক্ষাটা কি। যারা এই আয়াত নিয়ে লাফায় তাদের বুঝটা এবার জানা দরকার।

২। তারপর প্রশ্ন আসলঃ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যদি শরীয়ার বিপরীতে হয় তা মেনে নেয়া একজন মুসলিমের জন্যে হালাল হতে পারে কিনা?

উত্তরঃ উপরের আয়াতটির সাথে শরীয়ার বিরুদ্ধে মতামত আর শরীয়ার পক্ষে মতামতের সম্পর্ক আসে না, এটিই পোষ্টের আলোচ্য বিষয়। বরং সংখ্যাগরিষ্টের মতামতের ব্যবহারও হালাল হারামের পর্যায়ের বিষয় নয়। এটি কেবলি ম্যানেজমেন্টের বিষয়। প্রথম উত্তরেও তা প্রমান করা হয়েছে। এখন আপনি যদি শরীয়ার ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের কথা বলেন তাহলে আমি বলব, এই ব্যাপারে কেউ কারো উপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ যদি মিসগাইডেড থাকে আর তারাই যদি নেতা হয়, তাহলে তারাই আইন সেট করবে, আইনের ব্যখ্যা দিবে এবং শরীয়ার বিপরীতে চলে যাবে। যেভাবে ইসলামী খেলাফতের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ৩০-৩৫ বছরের মাথায়। আমি আপনি সেটির ব্যাপারে কিছুই করতে পারবো না। আপনি যদি বলেন আজকে খেলাফত প্রতিষ্টা হল। তাহলেও আপনার একটী শুরা থাকবে। সেই শুরায় জনগনের মতের প্রতিফলন থাকবে। অর্থাৎ তাদের প্রতিনিধিরা থাকবে। এই প্রতিনিধিরা শরীয়ার আলোকে আইন প্রনয়ন করবে। এবার চিন্তা করুন। এই প্রতিনিধিরাই যদি এখন শরীয়ার আলোকে কাজ না করে, জনগনকে ভুল বুঝিয়ে বা জনগনের সমর্থন নিয়েই শরীয়ার বাইরের কোন আইন করে, কে কি করবে এখানে? বেড়া যখন খেত খায় তখন আর বাগান রক্ষা করা যায় না। যেমনটি ইসলামের ইতিহাসে হয়েছিল। খারাপের দিকে পরিবর্তন একদিন হঠাত করে আসে না। অনেক কেমোফ্লেজ করে আসে। মুলত আপনি যেমন ইমানদার থাকবেন কি থাকবেন না তা আপনার বিবেকের রায়ের উপর আল্লাহ সাধীন করে দিয়েছেন, তেমনি একটী রাষ্ট্রও ইসলামী থাকবে কি থাকবে না তা তার জনগনের রায়ের উপর সাধীন। কারন জনগন না চাইলে আপনি কয়দিন চেপে বসে থাকবেন। ইতিহাসে মুসলিমরা পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। মুলত কাজ যা, তা হল এই জনগন ও তাদের প্রতিনিধিদেরকে চাওয়াতে হবে যে, ইসলামই তাদের সমাধান। তারা যতদিন চাইবে ততদিনই রাষ্ট্রে ইসলাম থাকবে এর বেশীদিন থাকবে না। তাই টিচিং ও প্রিচিং য়ের মাধ্যমে জনমত তৈরি করে বেশীরভাগ মানূষের সমর্থনেই তাদের উপরে তাদের জীবন বিধান দিতে হবে। যারা কুফরী জীবন বিধান চায়, তাদেরকে আপনি ইসলামী জীবন বিধান চাপিয়ে দিতে পারেন না।

উপসংহার হল, সংখ্যাগরিষ্ঠের মত যদি ইসলামের বিপরীত হয় তাহলে দুটী অবস্থা হতে পারে। ১) ইসলামের বিপরীতেই কাজ হবে। ২) ঐ সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তির চাইতেও বৃহত্তর কোন বস্তুবাদী শক্তি তাদের উপর থাকলে, সেই শক্তির ইচ্ছায় কাজ হবে। আপনি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের মত না মানেন তাহলে আপনাকে ২য় মতটিই মানতে হবে। কিন্তু তাতে ঐযে শর্ত, বৃহত্তর শক্তি, সেটী থাকতে হবে। এখন যদি, এই বৃহত্তর শক্তিই মিসগাইডেড হয়, নিজেই শরীয়ার বাইরে চলতে চায় তাহলে কিভাবে ঠেকাবেন। মুল কথা হল, আপনার আমার কিছুই করার নেই এখানে। শরীয়া চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটি মানুষ গ্রহন করলেই আসবে, আবার মানুষ গ্রহন করতে না চাইলে থাকবে না।

কিভাবে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের চাওয়ায় শরীয়া আসবে তা নিয়ে মতবিরোধ হতে পারে। এখানে আগে থেকে হালাল হারাম ধরে নেয়ার কিছু নাই। কেউ গনতান্ত্রিক ভোটিংয়ের মাধ্যমে চাইতে পারেন, কেউ সারাদেশ কলাপস করে বা সামরিক অভ্যুথান করে বা গেরিলা যুদ্ধ করে আনার চেষ্টা করতে পারে। আপনার কাছে কোনটি ভাল মনে হয়?

কোন জায়গায় যে প্রথম মুসলিম, সে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের বিপরীতেই মুসলিম হয়। মত মেনে নিয়ে হয় না। তবে, কিভাবে সে ইসলাম মানবে, তা নির্ভর করছে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর। আমাদের যেসব কথা নিয়ে বিতর্ক হয় তা এই কিভাবে ইসলাম মানবে এইটা নিয়ে। কিন্তু বিতর্কের ভাষায় অনেকে মত মানা না মানার পর্যায়ে টেনে নিয়ে যায়।

৩। এবার জিজ্ঞেস করা হলঃ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের উপরে ভিত্তি করে শরীয়ার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহন হলে তা মেনে নেয়া হালাল হবে নাকি হারাম, তার পরিস্কার উত্তর।

উত্তরঃ এই ব্যাপারে আমি যতদুর বুঝি, ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ার কোন জ্ঞান কারো কাছে সঠিকভাবে আসলে এই ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহনের সুযোগ নেই। এটি ব্যক্তিগত ব্যাপারে এবং তা তাকে মেনে নিতে হবে। যদি তা আনুষ্ঠানিক ইবাদতের ব্যাপারে হয় এবং ব্যক্তিগত জীবনেই এপ্লাই হয়, তাহলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিবেচনার সুযোগ নেই। কারন, আমি একজন ব্যক্তি এবং এখানে আমার চাওয়াটাই মুল কথা। একাধিক ভোটের কিছু নেই। এই হল প্রথম কথা। তবে এইব্যক্তিগত আমলের ক্ষেত্রেও কতটূকু বিদ্রোহী হওয়া যাবে তা ডিপেন্ড করছে, সমাজের লেভেল অফ পারসোনাল ফ্রিডম এর উপরে।

দ্বিতীয় কথা হল, সামষ্টীক বা সামাজিক ব্যাপারে। এটি নির্ভর করছে কোন সিদ্ধান্তটি নেয়া হচ্ছে তার উপরে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফোরামের উপরে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে সিদ্ধান্তটি শরীয়ার আলোকে হওয়ার জন্যে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা যদি চায় যে এটী শরীয়ার আলোকে হবে না, সে ক্ষেত্রে আপনার বা আমার কিছু করার নেই। কেবল আমার মতামতটী বিপরীতে হতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্তটি পরিবর্তনের সুযোগ আমার নেই। তা ফাইনালি মেনে নিতে হবে, এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আমল যতটা সম্ভব একটি বিরুপ পরিবেশে শরীয়া মানার স্টাইলে করতে হবে। অনুকুল পরিস্থিতিতে আমলের সহজতা ও বিরুপ পরিস্থিতিতে আমলের কঠিনতা ও বাহ্যিক পদ্ধতিগত পার্থক্য আরেকটী বড় চ্যাপ্টার, তাই আপাতত আলোচনায় আনছি না। পাশাপাশি, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যেন ধীরে ধীরে শরীয়ার দিকে ধাবিত হতে পারে তার জন্যে টিচিং ও প্রিচিং চালিয়ে যেতে হবে। এটি একটি বাধ্যতামুলক দায়িত্ব। সফলতা আল্লাহর ইচ্ছা।

ফোরামে সিদ্ধান্ত যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে শরীয়ার বিপরীতে হয়, তা হ্যান্ডল করার পদ্ধতি অনেকটা একটা স্ট্রাটেজিক গেম খেলার মত। রাসুল (স) চাইলে মক্কাতেই অনেক বিষয়ের অলআউট প্রতিবাদ করতে পারতেন। এটি কেবল আল্লাহর নির্দেশ বা সওয়াব কামানোর বিষয় ছিল না যে, মুসলিমরা এখন ধৈর্য ধরবে। বরং এটী স্ট্র্যাটেজিরও বিষয় ছিল, যে তারা এখন ধৈর্য ধরবে। কারন তখন তারা যদি তাদের সুমাইয়া (রা) কে হত্যা, বা কাবা ঘরে মুর্তি সরানোর জনে শক্তিপ্রয়োগে যেত, তাহলে কাফিররা এই অযুহাতে যে গুটিকয়েক মুসলিম পৃথিবীতে আছে তাদেরকে হত্যা করে নির্মুল করে দিতে পারত। (এই ব্যাপারে আপনি যদি বলেন, আল্লাহ তাদের রক্ষা করতেন, তাহলে আমি আপনাকে বদর যুদ্ধের আগে রাসুল (স) এর আল্লাহর কাছে করা দোয়াটির ভাষা আরেকবার পড়তে বলব, যেখানে সীকৃতি আছে যা তারা ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি আপনি, আল্লাহর যেসব নবীকে পৃথিবীতে হত্যা করা হয়েছিল তার উদাহরনও দেখতে পারেন।) পৃথিবীতে আর ইসলামের নিশানা থাকার দরকার হত না। এটি রাসুল (স) ও নেতৃস্থানীয় সাহাবীরা পুরোপুরিই বুঝতেন। এটি যতটা না বিশ্বাস বা সওয়াবের বিষয়, তারচেয়েও বেশী ম্যানেজম্যান্ট ও স্ট্র্যাটেজির বিষয়। তারা এটি জানতেন, আর তাই নিজেদের থেকে নিজেদের কম সামর্থ্যের অবস্থায় তারা কখনোই সামষ্টিকভাবে বিবাদে জড়াননি। বরং সময় সুযোগ মত সন্ধিচুক্তি বা আপোষচুক্তি করেছেন বেশী বেশী।

সুতরাং এককথায় বললে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের উপর একমত হওয়া না হওয়ার বিভিন্নরুপ ও ক্ষেত্র আছে। তাই এটিকে এককথায় হালাল বা হারাম বানিয়ে দেয়া এক্সট্রিমিজম ছাড়া আর কিছু না। আমার এই কথা আপনার কাছে কুরআন হাদীসের আলোকে হয়েছে কি হয়নি এই বিবেচনা আসতে পারে এবং আসা উচিত। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, আপনি আমাকে বলতে হবে কোন আয়াত বা হাদীসের সাথে এটি সাংঘর্ষিক হয়। কারন, আমার ধারনাটি একটী আয়াত বা হাদীসের সাথে সম্পর্কিত না যে, আপনি বলে বসবেন দলীল কি। বরং এটি ইসলামের পুরো আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের সাথে জড়ীত। এটি নিয়ে দলীল দিতে হলে পুরো একটি বই লিখতে হবে।

তবে আমার কথাগুলোর সাপোর্টে যদি ছোট খাট রেফারেন্স চান তা হয়তো এখানেই দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি স্পেসিফিক্যালি আমাকে বলতে হবে, কোন পয়েন্টের বা বাক্যটির জণ্যে রেফারেন্স চাচ্ছেন।

--------------------------------------------------------

শেষ করার আগে একটি বেসিক বিষয়ের ধারনা নিয়ে নিনঃ

বর্তমান পৃথিবীতে গনতন্ত্র যে ফরম্যাটে চালু আছে তাতে রাষ্ট্রপতি শাসিত ও প্রধানমন্ত্রী শাসিত, এই দুটি ফরম্যাট বহুল প্রচলিত। রাষ্ট্রপতি শাসিত ফরম্যাটে, সংসদ বা শুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের বিপরীতে রাষ্ট্রপতি চাইলে ভেটো দিয়ে নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে পারেন। আবার শুরা বা সংসদও চুড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রপতির বিপরীতে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনতে পারে। অন্যদিকে, প্রধানমমন্ত্রী শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রী কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। মুলত রাষ্ট্রপতি শাসিত ফরম্যাটটি ইসলামী খিলাফতের পরিচালনা পদ্ধতির একটি বড় অংশের সাথে মিলে। কারন ইসলামের ইতিহাসে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মানা ও না মানার উদাহরন রয়েছে। এই বেসিক আইডিয়াটি মাথায় রেখে পরবর্তী অংশটি পড়ুন।

যারা পারস্পরিক পরামর্শ ভিত্তিক গনতান্ত্রিক পদ্ধতিটিকে হারাম বলেছেন তারা বলেন তারা নিচের আয়াত পেশ করেন-

আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে -Al-An'aam: 116

আর যারা গণতন্ত্র(শর্তসাপেক্ষে) হালাল বলেছেন তারা বলেন-

যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে, নামায কায়েম করে; পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে” -Ash-Shura: 38

আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। -Aal-imraan: 159

“পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে”, “কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন” এখানের কাজে কি নেতা নির্বাচন আসেনা?

এখানে যে ৩টি আয়াত দেয়া হয়েছে সেগুলো দেখলে বুঝা যায়-

১ম. আল্লাহ সকলের পরামর্শ(মত/ভোট) নিতে নিষেধ করেছেন।

২য়. যারা আল্লাহর আদেশ মান্য করে, নামায কায়েম করে অর্থাৎ মুমিন তারা ভোট/মত দিতে(পরামর্শ করতে) পারবে।

৩য়. নবীজি আল্লাহর বানী পাওয়া সত্তেও মুমিনদের সাথে পরামর্শ করেছেন/আল্লাহ করতে বলেছেন।

মুল বিষয় হল, ইসলামী সমাজ কায়েমে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী বিধানের বাস্তবায়নে উপরের আয়াতগুলোর কোন একটি নিয়ে ফতোয়াবাজী করলে হবেনা। বরং সবগুলো আয়াতকে বিবেচনা করেই ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্যে "হালাল এবং সবচেয়ে সহজ ও কম ধ্বংসাত্বক" পদ্ধতিটি গ্রহন করতে হবে, "হালাল এবং কঠিন বা বেশী ধংসাত্বক" পদ্ধতি নয়।

----------------------

সর্বোপরি এই লেখাটি উদ্দেশ্য এটি নয় হালালকে হারাম করা বা হারামকে হালাল করা। বরং হালাল হারামের গন্ডি, হারামের কতটুকু পরিবর্তন তাকে হালালের গন্ডিতে নিয়ে যায়, বা হালালের কতটুকু পরিবর্তন তাকে হারামের গন্ডিতে নিয়ে যায়, হালাল হারামের সামাজিক দৃষ্টীকোন ও প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদির সুস্পষ্ট ধারনা তৈরি করা এই নোটের উদ্দেশ্য।

অনেক ধন্যবাদ, আজকে এই পর্যন্তই। ভাল থাকুন আল্লাহর রহমতে। আসসালামু আলাইকুম।

(সুত্রঃ

https://www.facebook.com/notes/mohammad-ahsanul-haque-arif/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%93-%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A6%83-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%9C/521699257890581)

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File