অনুভূতির ইসলামীকরন বা অনুভুতিকে সঠিক কক্ষপথে রাখা...

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০৬ জুন, ২০১৩, ০২:১৫:২৬ দুপুর

(ভূল হলে সংশোধনী গ্রহন করা হবে। )

ধর্মীয় বিধান নয় এমন কিছু নীতি যা পালন না করলে আমাদের মনে অপরাধবোধ তৈরী করে।

১. যেমন ধরেন সকাল ১০টায় বা যথাসময়ে স্কুল কলেজের ক্লাশে উপস্থিত হওয়া ।মনে আছে ? যথাসময়ে স্কুলের ক্লাশে উপস্থিত হতে না পারলে কাচঁমাচু হয়ে স্যারের সামনে দাড়াতে হত! কলেজ ইউনির্ভানিটির রাগী স্যারদের ক্লাশে উপস্থিত হতে দেরী হয়ে গেলে মনটা দুরু দুরু করত ভয়ে।

কিন্তু ক্লাশে দেরী হয়ে গেলে কি গুনাহ হবে? অথচ ঠিক সময়ে ক্লাশে না গেলে আমাদের মনে অপরাধবোধ তৈরী করত। ঠিক সময়ে ক্লাশে উপস্থিত হতে না পারলে গুনাহ হবেনা ঠিক কিন্তু সঠিক সময়ে উপস্থিত না হতে পারলে তো জ্ঞানার্জনে ঘাটতি হবে।

২.যথাসময়ে অফিসে(চাকরীস্থলে) উপস্থিত হতে না পারলেও বস ও কলিগের কাছে নিজেকে ছোট ছোট মনে হয় অর্থাৎ নিজের ভিতরে অপরাধবোধ তৈরী করে। সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ঘন ঘন বসের কাছ থেকে ছুটি নিতেও কেমন কেমন লাগে। সমস্যার কারনে ছুটি চাওয়া তো গুনাহ না কিন্তু অপরাধবোধ তৈরী করে।

৩."সন্ধ্যার পরে পার্কে অবস্থান করা নিষেধ"

কর্তৃপক্ষ

এমন সাইনবোর্ড ওয়ালা পার্কে অবস্থান করতে অস্বস্তি লাগে । তাই নয় কি? অপরাধবোধ কেন? সামাজিক প্রথা না মানার কারনে? সন্ধ্যার পরে পার্কে অবস্থান করা কি গুনাহ! অথচ অপরাধবোধ তৈরী করছে।

৪.রাস্তার ডানপাশ ধরে গাড়ি চালাতে হয়। রাস্তায় হাটতে হয় বামপাশ ধরে। ব্যত্যয় হলে লোকের কটু কথা শুনতে হয় বা লাইফ রিস্ক কাজ করে এবং

আমাদের মনে অপরাধ বোধ তৈরী করে। অথচ নিয়মটা উল্টা করে নিলেই তো হত। কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে এই নিয়ম লংঘন বা ভিন্ন নিয়ম বানানো কি গুনাহ?

৫.বড়জনকে আগে সালাম না দিলে অপরাধ বোধ তৈরী হয় । অথচ সালাম আগে রদয়ার চেষ্টা করা বড় ছোট ২ জনেরই কর্তব্য।

গ্রামে দেখেছি মুরব্বী দেখলে বাই সাইকেল থেকে ছোটদের নেমে গিয়ে সালাম দিতে। এটা কি কুরআন হাদীসে আছে? অথচ আমাদের মনে এটা না করলে অপরাধবোধ তৈরী করে।

৬.হুন্ডি এর মাধ্যমে টাকা আনা নিয়ে ইসলাম কি বলে? মনে করেন আপনি থাকেন বিদেশে। আর আমার ছোটভাইও বিদেশে। আপনি আমার ছোটভাইকে টাকা দিলেন আর আমি দেশে বইসা আপনার আম্মা আব্বাকে টাকাটা পাঠিয়ে দিলাম। সেটা কি ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ? দেশের আইনের কারনে এটা আমার আপনার মনে অপরাধবোধ তৈরী করে।

এভাবে অনেক বিষয় কোরআনহাদীসের দৃষ্টিতে অপরাধ না হওয়ার পরও আমাদের মনে অপরাধবোধ তৈরী করে। সুতরাং বুঝা যায় অনুভূতির ইসলামীকরন বা অনুভুতিকে সঠিক কক্ষপথে রাখা জরুরী।

মাজারে সিজদাহ দেয়া ইসলাম সম্মত নয়। তাবিজে নির্ভরতা ইসলামে নেই। দরগাতে সন্তানের জন্যে মান্নত করাতে ইসলামে দৃষ্টিতে কোন উপকার নেই। লম্বা পানজাবী পড়া না পড়াতে বা নিকাব পড়া না পড়াতে ইসলামের ফরজ লংঘন করেনা। দাড়ি নিয়ে বিতর্ক বা টাকনুর নীচে কাপড় যাওয়া , মাইকে আযান দেয়া না দেয়া , ঢিলা কুলুক না টিস্যু পেপার , মেওয়াক না ব্রাশ ইত্যাদি ইসলামের কোর বা মুল বিষয় নয়।

ইসলামী মদ , ইসলামী সুদ জায়েজ নেই । হক কথা । তেমনি ইসলামী গনতন্ত্র জায়েজ নেই বলা কতটুকু বিধি সম্মত? গনতন্ত্র কোন ধর্মের অংশ নয় এবং স্বতন্ত্র মতবাদ বা ইডিওলজিও নয়। এটা একটা সরকার পরিবর্তন পদ্ধতি। এভাবে ইসলামী ব্যাংক পদ্ধতি , ইসলামী অর্থনীতি মানতে না চাওয়া , ইসলামী সংস্কৃতি , ইসলামী শিক্ষানীতি মানতে না চাওয়া গোড়ামী। অন্যে ধর্মে বিয়ে আছে বলে কি ইসলামী বিয়ে বলতে মানা? ইসলামের প্রিন্সিপ্যালের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন সব কিছু করাতে ইসলাম নিষেধ করেনি।

কিছু মৌলিক কথা না বললেই নয়।

১.বিদাত হচ্ছে সেই নতুন বিষয় যা সওয়াবের উদ্দেশ্যে ধর্মের অংশ মনে করে পালন করা হয়।

২. কুরআনের সব কিছু তো ফরজ নয়। এখানে মাকাসিদে শরীয়াহ আছে। কোনটা কোনটা ফরজ চিনতে হবে জানতে হবে। ফরজকেই শুধু ও একমাত্র আকড়েঁ ধরতে হবে। হারামকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। বাকী নিয়মে হেরফের হলে সমস্যা নেই।

৩. হাদীসের মধ্যে জাল বা বানানো হাদীস আছে। মওজু হাদীস আছে।সহীহ হাদীস ই শুধু অকাট্য দলীল।

৪. নতুন পুরাতন যে কোন বিষয় যা হারামের সাথে ম্যাচ করেনা তা জায়েজ।

৫. অন্য ধর্মের বিধান ছাড়া যে কোন নতুন বিষয় গ্রহন করা যাবে যদি তা ইসলামের অংশ মনে করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে পালন করা না হয়।

৬.ইসলামের প্রিন্সিপ্যালের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন সব কিছু করা যাবে।

৭. কুরআনহাদীস নিষেধ করেনা এমন রুলস নিজে বানায়ে মেনে চললে সমস্যা দেখিনা।

৮. ইসলামের কাজের মধ্যে প্রায়োরিটি ঠিক করতে হবে। যেটা বেশী গুরুত্বপূর্ন সেটি আগে করতে হবে।

৯. ভূলগুলো জানতে হবে। না হলে ভূল থেকে বাচা যাবেনা। আপনি ভাত খেতে অভ্যস্ত তাই ভাত খাওয়াকেই একমাত্র ও অন্যতম খাদ্যশস্য মনে করা ঠিক নয়। শরীরের জন্যে উপকারী আরো খাদ্যশস্য বা খাদ্য থাকতে পারে। তাই কুরআনহাদীসের বাইরে জগতের অন্য জ্ঞান গুলো দেখে নিতে হবে। বিরোধীদের প্রশ্ন ও জ্ঞানগুলো দেখে কর্মপ্রনালী নির্ধারন করতে হবে।

১০ মাজহাব মানতেই হবে এমন কোন শর্ত নেই। কোন আলেমের মত বা নির্দেশনা মানতেই হবে এমন কোন বিষয় নেই। তবে কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতেই হবে।

১১. বিরোধীদের বা কারো কর্তৃক কুরআন ও সহীহ হাদীসের ব্যপারে যৌক্তিক প্রশ্ন উত্তাপিত হলে সেখানে গবেষনার দরকার আছে।

১২. হিউম্যান বিহেভিয়ার নিয়ে আমাদের আরো শিখতে হবে। মানুষের আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রনের কৌশল আরো সুন্দর করে শিখতে হবে।

কথা হল একটাই "অনুভুতিকে সঠিক কক্ষপথে রাখতে হলে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। " সেটা ওহীর জ্ঞান হতে পারে, হাদীসের জ্ঞান হতে পারে, মনীষীদের জীবনী অধ্যয়ন হতে পারে, জ্ঞানীদের সাহচর্য্য হতে পারে, ঠেকে ও ঠকে শিখা হতে পারে, অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শিখা হতে পারে, ভ্রমন থেকেও শিখতে পারেন। সর্বোপরি বিরোধীদের অধ্যয়ন না করে আপনি কিছুতেই পরিপূর্ন হতে পারেননা।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File