প্রদর্শনেচ্ছা,৪ প্রকার ভাল থাকা ও দায়িত্বশীলদের সন্তুষ্টির উপরে নির্ভর করে আপনার আগামী দিনের বড় ময়দানের দায়ী হওয়া।(প্রদর্শনেচ্ছা-২)
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৭ মে, ২০১৩, ০২:০১:২৯ দুপুর
ভাল থাকাকে আমি চারভাগে ভাগ করেছি।
১.নিজের কাছে ভাল থাকা।
২. স্রষ্টার কাছে ভাল থাকা।
৩. সমাজের কাছে ভাল থাকা।
৪. দলের নেতাদের কাছে ভাল থাকা।
এক এবং দুইঃ
১ নং পয়েন্ট এবং ২নং পয়েন্ট প্রায় কাছাকাছি এই জন্যে যে আপনি নিজ থেকে নিজের অপরাধ গোপন করতে পারেননা। আবার যারা মহান রাব্বুল আলামিনের উপর বিশ্বাস রাখেন তারাও আল্লাহর কাছে কৃত অপরাধ গোপন থাকেনা বলে বিশ্বাস করেন। নিজের কাছে ভাল না থাকলে আপনি মানসিক প্রশান্তি পাবেননা আবার আল্লাহর কাছে ভাল না থাকলে আপনি পরকালে মুক্তি পাবেননা। বলা যায় আপনি নিজের কাছে ভাল আছেন মানে আল্লাহর কাছে ভাল আছেন যদি আপনার "ভাল" সংজ্ঞাটি ওহীর ধারনা থেকে পেয়ে থাকেন। আবার আল্লাহর কাছে ভাল আছেন মানে তো আপনি আসলেই ভাল।" নিজের কাছে ভাল আছেন" থেকে আপনি আল্লাহর কাছে ভাল আছেন কিনা এর একটা আনুমানিক ধারনা পাবেন। ফাইনালি হাশরের ময়দানে আপনার ভাল থাকার রেজাল্টটি পাবেন। আবার পরকালে মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ন ভাল থাকার পরও স্রষ্টার করুনার উপর নির্ভর করে। আপনার নিজের কাছে ভাল থাকার মধ্যে দিয়ে আল্লাহর কাছে পাশ করার বিষয়টি নিয়ে আশাবাদি হতে পারেন।
৩. সমাজের কাজে ভাল থাকার বিষয়টিতে অনেক পয়েন্ট আলোকপাত করতে হবে।
মেশকাত শরীফে পড়েছিলাম অপরাধ গোপন করার প্রতি উৎসাহ দেয়া বিষয়ে। পড়ে তখন অনেক চিন্তা করে সমাধান করতে পারিনি কেন অপরাধ গোপনের জন্যে উৎসাহ। পরে বুঝেছি যে অপরাধ গোপন না করে প্রকাশ করে বেড়ালে সেটা সংস্কৃতিতে রুপান্তরিত হয়ে ব্যাপক রুপ পরিগ্রহ করে । সমাজে অপরাধটিই নিয়মে পরিনত হয়। সমাজ দাড়িয়ে থাকে অপরাধ নামক ফাউন্ডেশনের উপর। নিজ অপরাধ গোপন করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আর গোপন করে সমাজের সামগ্রিক পরিবেশে নিজেকে ভাল উপস্থাপন করতে হবে। নিজেকে ভাল জাহির করার মধ্যেও নিজের মধ্যে ভাল থাকার ও রাখার প্রবনতা উৎসাহিত হয়। নিজেকে সবসময় ভাল বলে প্রকাশ করার চেষ্ঠার মধ্যেও মনের গহীনে ভাল এর প্রতি দরদ ভালবাসা বাসাঁ বাধেঁ। নিজ অপরাধের জন্যে মানুষ ভিতরে ভিতরে মর্মে মরে। ভাল রাখা ও থাকার প্রদর্শনেচ্ছার কারনে মানুষ বাইরে ভাল বলে নিজেকে জাহির করে আবার রাতের আধাঁরে রবের কাছে কৃতকর্মের জন্যে কাদেঁ।তওবা করে। আবার গোনাহ করে । সমাজের মানুষ যখন বলে আপনি কত্ত ভাল! তখন ভিতরের আত্বাটি বলে উঠে "তুমি তো ঐই রকম ভালনা ! তাই তোমাকে ভাল হতে হবে।" আপনি হয়ত মান সম্পন্ন ভালনা কিন্তু আপনার কিছু অপরাধ গোপন থাকা ও রাখার কারনে আপনাকে মানুষ ভাল জানে ও আপনার কাছ থেকে প্রেরনা পেয়ে মানুষ নিজেকে ভাল করার ও রাখার চেষ্ঠা করে। মানুষ ভাবে ঐ মানুষটি কত্ত ভাল তাই আমাকে ভাল হতে হবে। এভাবে সামগ্রিকভাবে ভাল পরিবেশের চারাগাছটি বেড়ে উঠে। সমাজ সুন্দর হয়। তাই অপরাধ গোপন ইসলাম উৎসাহ দেয়। তাই ভাল থাকার প্রদর্শনেচ্ছা ভাল।
মানুষের উপকার বা জনসেবা করে আপনি মানুষের কাছে ভাল থাকতে পারেন। পরোপকারী হওয়া , নিঃস্বার্থ হওয়া , অন্যায়কারীর সাথে আপোষহীন থাকা , জনস্বার্থে ডেসপারেট থাকা , সমাজের কাজে সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা , পরিস্থিতি হ্যান্ডলিং করার যোগ্যতা , সমাজের সবাইকে আপনভাবার মধ্যে দিয়ে আপনি সবার কাছে ভাল হয়ে উঠতে পারেন।
৪. দলের নেতাদের কাছে ভাল থাকা
দায়িত্বশীলদের কাছে ভাল থাকতে হলে আপনাকে তোষামোদী গুন সম্পন্ন হতে হবে। মানুষ কিছু না কিছু ভূল করে। সেই ভুল আপনি যখনই দায়িত্বশীলকে বলতে যাবেন আপনি নিশ্চিত ভাবে দায়িত্বশীলের মানবিক দুর্বলতার শিকার হবেন। যে কোন মানুষই তার দুর্বলতার দিকটি অন্যের কর্তৃক সমালোচনার ব্যাপারে অনুদার। ইসলামী আন্দোলন থেকে অনেক যোগ্য কর্মী ঝড়ে পড়ে দায়িত্বশীলদের সমালোচনা সইবার কম যোগ্যতা থাকার কারনে। একজন দায়িত্বশীল যখন নির্বাহী ক্ষমতা , নির্বাচনী ক্ষমতা , বিচারিক ক্ষমতা ভোগ করেন সেখানে অধঃস্তনরা সমালোচনা করতে ভয় পাবে এবং সমালোচনা আলোচনার পরিবেশ চলে যাবে। একটি "জী হুজুর" সর্বস্ব সাংগঠনিক পরিবেশ ও কাঠামো গড়ে উঠবে। ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তিরা সামগ্রিকভাবে সমালোচনা শুনার যোগ্যতা এই মূহুর্তে কম রাখছেন। ইসলামী কাজ বড় ময়দানে করার জন্য দায়িত্বশীলদের কাছে ভাল থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ন। আপনি যদি বড় ময়দানের দায়িত্বশীল না হতে পারেন তবে আপনি আপনার মেধার সবটুকু ইসলামী আন্দোলননের জন্য ব্যায় করতে পারবেননা। ময়দানই পেলেননা তার আগেই দায়িত্বহারা হলে কিভাবে আপনি ইসলামী আন্দোলনের বড় সেবা করবেন। দায়িত্ব ছাড়া মানুষ বড় কাজ আনজাম দিতে পারেনা। তোষামোদী জ্ঞানের অভাবে হাজার হাজার বিপ্লবের কর্মী অকালে ঝড়ে পড়েছেন ইতিমধ্যে। শুনতে খারাপ হলেও এই তোষামোদী জ্ঞান অর্জন খুবই জরুরী। দায়িত্বশীলদের সন্তুষ্টির উপরে নির্ভর করে আপনার আগামী দিনের বড় ময়দানের দায়ী হওয়া। আপনার বৃদ্ধিমূলক তৎপরতা , আপনার ক্রিয়েটিভিটি , সিচুয়েশন হ্যান্ডলিং ক্যাপাবিলিটি , দায়িত্বশীলের সব সঠিক ও ভূল সব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মত মানসিকতা প্রদর্শনেচ্ছার উপরে আপনাকে ও আপনার মেধাকে ইউটিলাইজ করার সুযোগ এনে দিবে ।
তবে সঠিক কথা হল আপনি দায়িত্বশীলের মনের উপর কত সুন্দর রেখাপাত করার মধ্যে দিয়ে এহতেসাব করতে পারেন তার উপর সংগঠন ও দায়িত্বশীলের কল্যান নির্ভর করে। দায়িত্বশীলকে না রাগিয়ে সর্বোচ্চ কত নান্দনিক উপস্থাপনায় আপনি ভিন্নমত পোষন করতে পারেন বা পরামর্শ রাখতে পারেন তার উপর নির্ভর করে সংগঠনের উন্নতি ও সঠিক কক্ষপথে থাকা।
জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই প্রদর্শনেচ্ছা জরুরী। পরীক্ষার খাতায় , ভাইভা বোর্ডে , বিয়ের ইন্টারভিউ , বক্তৃতায়, জনসেবায় , ভাল থাকতে চাওয়ায় , বউয়ের কাছে , ভালবাসার মানুষের কাছে , রিলেটিভদের কাছে প্রদর্শনেচ্ছা জরুরী । সমাজের গতি ঠিক রাখে প্রদর্শনেচ্ছা। বেশিরভাগ সময় প্রদর্শনেচ্ছা ভালবাসাকে বাচিয়ে রাখে।
বিষয়: বিবিধ
১৯১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন