মাওলানারা নন বরং ঐ সোহেল রানারাই আমার র্গামেন্টস শ্রমিক বোনদের দীর্ঘদিনের অভিভাবক...
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪৩:১২ দুপুর
১২ ফেব্রুয়ারী-২০১০ গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন না মনজুর হওয়াতে আমাকে জেলবাসী হতে হয়।জেলজীবনের অনেক আশ্চর্যের বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল "অনেকেই জেলে খেটে খুশি ও জেল থেকে বের হতে অনাগ্রহী"। আপনি আশ্চর্য হতে পারেন কিন্তু আমি হইনা। জেলখানার খাবার থেকে যদি মুক্তজীবনের খাবার ২০০০ গুন নিম্নমানের হয় তবে কেউ জেলখানা ছেড়ে বের হতে আগ্রহী হওয়ার কথা না।
"লিমা তাকুলুনা মা লা তাফআলুন"। আপনি মাওলানা শুধু ওয়াজ করেই দায়িত্ব শেষ আপনার। আপনার জীবন হল শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠবেন তাহাজ্জুদ পড়ে যিকির করবেন আর ফজরের জামায়াত শেষে একটি হালকা ঘুমে মজবেন। তারপর মাদরাসায় পড়াবেন অনেক সওয়াবের নিয়ত নিয়ে । পানজেগানা জামাতের ইমামতী ,জুমাবারের খতিবের দায়িত্ব আর হাদীয়া নিয়ে দোয়া ও মুনাজাত আর খতমের টাকা ও সুস্বাধু খাদ্য গ্রহনের দাওয়াত। সম্মানী নিয়ে ওয়াজ । এই তো আপনার জীবন। আপনি হাটছেন গ্রামের কোন মেঠো পথ দিয়ে। পাশে ঝগড়া হচ্ছে , প্রচন্ড মারামারিও সাথে। আপনি মাওলানা আপনি কি মারামারি থামাতে যান? আপনার সম্মান চলে যাবে তাই আপনি সামাজিক সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নন। আপনার হুজরা খানা ভাল লাগে। পাগড়ী ভাল লাগে , ঢিলা কুলুক ভাল লাগে , গাছের ঢাল দিয়ে মেসওয়াকে আপনি আগ্রহী । দাড়ির সাইজ নিয়ে আপনি ডিবেট করেন, বাহাস করেন আর আমার গার্মেন্টস শ্রমিক বোনেরা না খেতে পেরে হাড্ডিসার । গার্মেন্টস শ্রমিকবোনটির প্রতিবেশী যখন পেটের দায়ে বেটার লাইফ পাওয়ার জন্য পতিতালয়ে যায় ঠিক সেই সময়ে আমাদের চোখে ঘৃনিত সোহেল রানারাই লক্ষ গামের্ন্টস শ্রমিক বোনকে পতিতালয়ে গমন থেকে বাচিয়ে ও ক্ষুধার রাজ্য থেকে মুক্তি দিয়ে প্রকৃত অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছে অনেকদিন।
ইয়া আল্লাহ! গামের্ন্টস! ছি! ছি! বলে নাক সিটকাইছেন অনেক মাওলানা। বরবাদ বরবাদ বলে কোরাস করেছেন অনেক মাওলানা। জীর্ন পোষাকে ও ময়লা পোষাকের র্গামেন্টস শ্রমিকবোনদের দেখে অভিজাত ধর্মবেত্তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন পর্দা লংঘন হবে বলে। খেয়েছ কিনা ? তুমি অসুস্থ? চাকরীর স্থলে তোমার জন্য কোন নিপীড়ন আছে কি? বেতন ঠিকমত পাও? তোমার বাসা ভাড়া , থাকা খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে আর কয়টাকা বাচে ? তোমার কি বিয়ে হয়েছে? বিয়েতে কত যৌতুক চায় পাত্র পক্ষ? যৌতুক এর টাকা যোগাড়ের জন্য তোমার যে সঞ্চয় সেটি এখন কত হয়েছে? ওভারটাইম করতে করতে তোমার স্বাস্থ্য ঠিক কাজ করছে তো? হে আমার গার্মেন্টস শ্রমিক মা , তোমার মন ভাল রাখার জন্য কি কর? বিনোদন স্পটগুলোতে মা তোমার বসার জায়গা পেতে কোন সমস্যা হয়? হে গার্মেন্টস শ্রমিক বোন , তোমার সাজু গোজুর জন্য তৈজস কিছু আছে তো? তোমার ভাল কাপড় চোপড় আছে তো? কারখাসায় যাওয়া আসার পথে ও কারখানায় তোমার নিরাপত্তায় কোন সমস্যা আছে কি?
কোন মাওলানায় কোনদিন এমন মানবিক প্রশ্নটি কোন গার্মেন্টস শ্রমিক বোনটিকে করেছিলেন? আপনার ওয়াজে মৃত্যুর ঝুকিঁ থাকলে মিথ্যা বলতে বলেন , শুকরের মাংস খেতে বলেন কিন্তু আমার শ্রমিক বোনটি যে অনেক দিন না খেয়ে থেকেছে , অনেকদিন স্বামী , পিতা বা ভাইয়ের নির্যাতনে চোখের পানি ফেলেছিল, যৌতুকের জন্য বিয়ে না হওয়াতে সমাজের চক্ষুশুল ছিল , বাসায় বাসায় ঝিয়ের কাজ করতে গিয়ে উচ্চশ্রেনীর যৌন লালসার শিকার হয়েছিল সেই সময় কোন হৃদয়বান মাওলানার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাওলানা ! আপনার তাহাজ্জুদ , তাসবীহ তালীল, পানজেগানা জামাতে নামাজ আদায় , দোয়াও মুনাজাত , ওয়াজের সুন্দর বয়ান রুবুবিয়াতের হক আদায় করলেও হাক্কুল ইবাদের কোন দায় আপনি নেননি। তাই সমাজের কথিত নিচু শ্রেনী আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে আগ্রহী নয় এমনকি মাওলানা! আপনার কোন নেতৃত্ব মানতেও আগ্রহী নয়। আপনি জানাযা পড়াবেন , বিয়ে পড়াবেন , ফাতিহা দিবেন দিন! কিন্তু সোহেল রানারই ঐ ভোটের সময়ে তাদের অধীনস্থ মহিলা শ্রমিকদের টাকা দিয়ে সমাবেশে নিয়ে যাবেন, ভোট আদায় করবেন দলের জন্যে। আর নিমিষেই অচ্ছুৎ হবেন ইসলামপন্থীরাই। আর কত ওয়াজ করবেন? এবার আমার দেশের জনগন , মা বোন ও অমুসলিমদের জন্য কিছু করুন।
হেফাজতে ইসলাম বলেন বা অন্য কোন ইসলামী দলের নারী পুরুষে অবাধে বিচরনের কথা শুনে ইসলাম বিরোধী শক্তি নারী সমাবেশ আহবান ও করার দুঃসাহস দেখায় ও করতে সক্ষমও হয়।
আসুন মাওলানা ! আমরা বঞ্চিত নিপীড়িত মা বোনদের জন্য সোহেল রানা হব। শুধু হরতালের দিন ও পরিত্যক্ত ভবনের মধ্যে কাজ করার জন্য শ্রমিকদের বাধ্য করবনা।
ব্লগার হুরপরীর লেখা মনে করিয়ে দিয়ে যায়। (http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/4888/dilruba/13522#.UXyqp0pzaXU) লিখেছেন:
"গার্মেন্টস কর্মীদের দুপুরের খাবার বাক্স খুলে দেখেছেন কখনো? আমি দেখেছি। যাদের বাসা খুব কাছে তারা বাসায় যেয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসে, আর যাদের বাসা দূরে তারা বাক্সে করে খাবার নিয়ে আসে। আমি দেখেছি, একজন হেল্পারের দুপুরের খাবারের বাক্সে দুইখানি কাঁচামরিচের সাথে একটি পেঁয়াজ আর কিছু পান্তা ভাত। দেখেছি ওকে না জানিয়েই। সেদিন বিষয়টা এভাবে চিন্তাও করিনি। এই রক্ত সেই পান্তা ভাত আর কাচাঁ মরিচের রক্ত"।
এই রকম শত চিত্রের সাক্ষী আমি নিজেই।
বিষয়: বিবিধ
১৮১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন