রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার মেডিসিন...
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪১:৪৬ সকাল
http://www.facebook.com/faham.abdus/posts/10152769638265578
আওয়ামী লীগ সম্বন্ধে, অন্তত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সম্বন্ধে আমাদের একটি প্রাথমিক ভুল ধারণা হোলো যে এটি একটি "রাজনীতিক" দল। আওয়ামী লীগ মূলত একটি স্পিরিচুয়াল প্রজেক্ট যার মঞ্জিলে মকসুদ হোলো একটা বিলিফ-সিস্টেম। রাজনীতি, ক্ষমতা, ভোট - এসব খুবই গুরুত্বপুর্ণ কিন্তু আসলে এই বিলিফ-সিস্টেমের ইনএভিটেবল এক্সটেনশান মাত্র।
যে কোনো বিলিফ সিস্টেমের জন্য একটা অতি-সরলীকৃত ন্যারেটিভ আবশ্যক। আওয়ামী বিলিফ সিস্টেমের এ ন্যারেটিভ শুরু হয় এই সিদ্ধান্ত দিয়ে যে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না কোনদিনও। লক্ষ্য করুন সিদ্ধান্তটি: এটি কিন্তু এমন নয় যে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সবচেয়ে বড় নায়ক বরং তিনি নিজেই স্বাধীনতার embodiment, তিনি নিজেই স্বাধীনতা। এই বিশ্বাস থেকে জন্ম হয় এক মিথিকাল মেসায়ানিক ক্যারেক্টারের, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি না হলে আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না, তাই আমাদের অস্তিত্ব তার ত্যাগ ও অবদানের উপর নির্ভরশীল। তিনি সকল "অপরাধের" উর্ধ্বে - কিছু ভুল-ভ্রান্তি হয়েছিলো হয়তো কিন্তু সেগুলো অনিবার্য ছিলো, fatalism যার একমাত্র ব্যাখ্যা। এই ভুলের সাথে সবের সংযোগ আছে-বিশ্বপ্রেক্ষাপটের সংযোগ আছে (কোল্ড-ওয়ার সময়ের নেতা তিনি)- নিজের দলের সংযোগ আছে (সবাই পায় সোনার খনি কিন্তু আমি পাইছি চোরের খনি) - দলের বাইরের সংযোগ আছে (স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির কার্যকলাপ) - শুধু তার নিজের সংযোগ নাই।
আওয়ামী লীগ, তার intelligentsia, এই বিলিফ সিস্টেমের ফুট সোলজার, stalwart সবার একটাই লক্ষ্য: এই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভটাকে রক্ষা করতে হবে - এটা বোধগম্য কিন্তু সবাই যেটা অনুধাবন করেন না সেটা হোলো এই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভটাকে "ছোটো" করে রাখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। devil lies in the details - গল্পটাকে ছোটো করে রাখা আবশ্যক - এতোই ছোটো যে তাজউদ্দিন সাহেবও পার্শ্ব চরিত্রের উর্ধ্বে উঠতে পারেন না।
খেলাটা আমার কাছে ফ্যাসিনেটিং লাগে - সুর-অসুরের লড়াই, একদিকে সবাই সুর অন্যদিকে সবাই অসুর, একজনই মূল নায়ক - অন্যেরা গল্পের ফিলার মাত্র - এজন্যে কি? নাহ, এজন্যে না। বিবলিকাল স্টোরিজ, মিথলজি সব খানেই সরল ন্যারেটিভের ছড়াছড়ি - এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই - গল্প শক্তিশালী করতে হলে ছোটো রাখতে হয়, সরল রাখতে হয়। আমার আগ্রহ এই ন্যারেটিভের প্রয়োগে। কী সে চায় তার অডিয়েন্সের কাছে?
আওয়ামী লীগ আপনার কাছে ভোট চায় না, এতো বড় একটা স্পিরিচুয়াল প্রজেক্টের জন্য একটা ভোট কোনো ভাবেই যথেষ্ট না। লীগ চায় আপনি এই বিলিফ সিস্টেমের মুরিদ হন, ভোট এমনিই আসবে, লীগ মানেন কিংবা বাম।
একটা রাজনৈতিক দল তাকে ভোট না দিলে ওই ভোটারকে গাধা ভাবে, কিন্তু আওয়ামী লীগ আপনার মাঝে গিল্ট কনশাস তৈরী করে। আমারে ভোট দিয়েন না অসুবিধা নাই, কিন্তু আমার ন্যারেটিভরে আপনি যদি না নেন তাহলে আপনি মুক্তিযুদ্ধের সাথে, বাঙালিত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। লীগ আপনার আত্মারে শুদ্ধি দিতে চায়। আমাদের জাতীয় জীবনে শ্রদ্ধার ও প্রয়োজনের আবেগ ও সিম্বলগুলোর তাই "পবিত্রকরণ" করে, ধর্মের মতোন। ভাষা-শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোই যথেষ্ট না, এই শ্রদ্ধা যদি আপনার মধ্যে পবিত্রতার অনুভুতি না জাগায় আপনি সিদ্ধি পাবেন না। শ্রদ্ধার সাথে পবিত্রতার ডিভোর্স নাই, থাকতে পারে না। গালভরা নাম দেয়া হয় এই স্পিরিচুয়াল প্রজেক্টের: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
এই বিলিফ সিস্টেমের আসল মর্তবাটা কোথায় তাহলে? ক্যাপটিভিটির মধ্যে। কারণ রাজনীতির প্রসঙ্গ, উন্নয়নের প্রসঙ্গ, বিপদের আসন্নতা সবকিছুই গৌণ হয়ে যায়, মুখ্য হয়ে ওঠে চেতনা, যা ছাড়া নিজের পরিচয়, নিজের অথেনটিসিটি সবকিছুই এলেবেলে। Zombie হওয়া ছাড়া আপনার কোনো উপায় থাকে না, আপনি হয়ে ওঠেন happy slave - একটা বিলিফ সিস্টেমের। পার্থ আন্দালিব ব্লগারদের কান ধরে ওঠা বসা করতে বলেছেন এজন্যে রাগে ফেটে পড়েন কিন্তু যে তাদের জেলে ভরেছে তার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলার প্রয়োজন থাকে না। আপনার জীবনের বলতে গেলে একমাত্র জাতীয় স্বপ্ন হয়ে ওঠে ইতিহাসের দায়মুক্তি।
গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হোলো রাজনীতি দিয়ে কি একটা বিলিফ সিস্টেমকে মোকাবেলা করা সম্ভব? আমার উত্তর - সম্ভব। রাজনীতি না করার যে কী চড়া মাশুল সেটা আওয়ামী লীগকে কড়ায় গণ্ডায় দিতে হবে। রাষ্ট্রের নির্বাহী শক্তি আর রাজনৈতিক দলের রাজনীতির শক্তি যে এক জিনিস না এটা বুঝতে না পারার কাফফারা লীগকে একবার দিতে হয়েছে, এবারও দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন