নারী পুরুষের অবাধে মেলামেশা : হেফাজতে ইসলামের দাবী ও সেকুলার প্রতিক্রিয়া...
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২৯:২৬ দুপুর
ইসলাম কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার সমাজকে পরিবর্তিত করেছিল। পিতার মৃত্যুর পর মা'কে ছেলেরা ভোগের জন্য ভাগ করে নিত সে অবস্থা থেকে ইসলাম নারীদের মুক্তি দিয়েছে। বিধবা বিয়ে করে রাসুল সাঃ প্রথার গায়ে লাথি মেরে নারীর জয়গান গেয়েছিলেন। বিয়েতে কামিন সিস্টেম করে , পিতৃ ও স্বামী সম্পদে নারীদের অধিকার দিয়ে ইসলাম নারীকে করেছে অর্থনৈতিকভাবে সিকিউরড। পুরুষের জন্য ৪ নারী পর্যন্ত বিয়ে সীমাবদ্ধ করে লিভটুগেদারকে ও অবাধে যৌনাচারকে নিয়ন্ত্রন করে নারীর মর্যাদা সংরক্ষন করেছে। "মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত " ঘোষনা দিয়ে নারীকে মহীয়ান করেছে। জীবিকা নির্বাহের প্রেসার থেকে নারীকে মুক্তি দিয়ে রিলাক্সে রেখেছে। রাসুল সা: বলেছেন "তোমাদের মধ্যে সে ব্যাক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট ভাল" এখানে স্ত্রীর সন্তুষ্টির বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে।
তবুও বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের নিয়ে নারীরা আতংকিত। ইসলাম নিয়ে নারীদের আতংকিত মনে হয়নি কারন এখনো কোন বিপদ মুসীবতের সময় সাদাকাহর মানত মেয়েরা বেশী করে। পর্দা প্র্যাকটিস কম করলেও ইসলাম মানার ক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। হতে পারে ইসলামে টোটালিটি নিয়ে মেয়েদের চিন্তা ভাবনা কম। কিন্তু ইসলামের ব্যাপারে ভালবাসার অভাব মেয়েদের মধ্যে নেই।
আল্লামা , মাওলানা আর হুজুরদের বক্তব্য হল তারা নারীদের কল্যান চান কিন্তু তাদের নিয়ে বেশীরভাগ নারী মারাত্বক আতংকিত। ব্যতিক্রম বাদে বিয়ে উপযুক্ত তরুনী "হুজুর ও মাওলানাদের" জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহন করতে চাননা কেন? এই উত্তর কি মাওলানারা ভেবেছেন? যদিও আমার জানা হলনা কেন মাদরাসা গ্র্যজুয়েটকে মাওলানা বলতে হবে।
মনে রাখতে হবে ইসলামের ফ্ল্যাক্সিবিলিটির সৌন্দর্য এর কথা।
১. যেমন ধরুন নামাজের কথা। দাড়িয়ে পড়তে হবে। দাড়িয়ে পড়তে না পারলে বসে পড়বে ।তা না পারলে শুয়ে পড়বে। তা ও না পারলে ইশারায় পড়বে। আর অজ্ঞানদের জন্য তো নামাজই ফরজ না। সফরে নামাজ কসর করা যায়। রোযাও সফরে ভাঙ্গা যায়। মৃত্যুর ঝুকিঁ থাকলে ও মেডিকেল পারপাসে রমজানের রোযা ভাঙ্গা যায়।
২.ওজু করতে হবে পবিত্রতা ও নামাজের জন্য । পানি না পেলে তায়াম্মুম করবে। আর তায়াম্মুম করে তো নিয়াত করে মাটির সাথে হাত মেরে মুখ ও হাত মাসেহ করার মাধ্যমে।
৩.জীবন বাচানোর জন্য শুকরের মাংস (হারাম) খাওয়া ছাড়া উপায় না থাকলে তা খাওয়াও জায়েজ।
৪. উইথ কন্ডিশান মিথ্যা বলাও জায়েজ।
৫. উইথ কন্ডিশান সমালোচনাও জায়েজ।
৬.মূলনীতির সাথে কন্ড্রাডিকট না করে ইজমা, কিয়াস ,ইজতিহাদের মাধ্যমে নতুন আইন করা জায়েজ।
৭.যা হারামের সাথে ম্যাচিং হয়না তাও সব জায়েজ।
এইভাবে দেখলে ইসলামকে আপনি খুবই সহনশীল পাবেন। তবুও ইসলামপন্থীদের নিয়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নারীরা আতংকিত।
কেন?
এই মেয়েদেরকেই অনেক মাওলানা ও হুজুররা
প্রথমে পর্দা করতে বলবেন।
তারপর লং বোরকা পড়তে।
তারপর নেকাব পড়তে।
তারপর ঘরের বাইরে না যেতে ।
তারপর সাউন্ড শুনা যায়না এমন ভাবে চলতে ।
তারপর জানালার পর্দা বন্ধ করে বদ্ধ ঘরে নিস্তেজ হয়ে থাকতে। কারন পর্দার সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড বলে একটা কথা আছেনা?
অনেক মাওলানারা বলেন হে নারী জব তোমার জন্য নয়।
সারাদিন সন্তান উৎপাদন করায় তোমার কাজ।
তুমি অনার্স পাশ করলেও তোমার উপর কর্তৃত্ব করবে রিকসাওয়ালা।নারীর আকল পুরুষের অর্ধেক বলবেন আর নারীরা আপনাকে মন থেকে সমর্থন দিবে তা কি করে হয়!
একটা অসহনীয় , একঘেয়ে , মনছোট করা পরিবেশের মধ্যে থাকার একটা ধ্যান ধারনা এদেশের অনেক আলিম সমাজ নারীদেরকে দিয়েছেন। তাই নারীরা আতংকিত। এই আতংক যৌক্তিক।
এই দেশের আলিম সমাজ সামাজিক প্রথাকে ভয় করে নারীদের পড়তে দেননি অনেক কাল। যে ইসলামের (কুরআনের )প্রথম বাণী "পড়" আর রাসুলের (সাঃ) হাদীস হল "প্রত্যেক নরনারীর উপর দ্বীনের জ্ঞান তলব করা ফরজ"। সেখানে মাদরাসার আলিমরা মেয়েদের পড়তে দেননি। দাখিল ,আলিম ,ফাজিল, কামিলের ক্লাসে মেয়েদের জায়গা দেননি যুগের পর যুগ। ছেলেদের মাওলানা বললেও কামিল পাশ মেয়েদের কি বলা হবে তা নিয়ে আল্লামারা চিন্তিত নন। কওমী মাদরাসার দাওরা পাশ করার সুযোগ মেয়েদের নেই বললেই চলে। তাবলীগ জামায়াতের চিল্লাতে মেয়েদের জন্য কোন জায়গা নেই। মাদরাসাগুলোর ৩০% শিক্ষক নেয়া হয়েছে সরকারের চাপে। ইসলামী ব্যাংকে মেয়ে নেয়া হয়েছে সরকারের চাপে। আলেম ওলামাদের সংগঠন ও রাজনীতিতে মেয়েরা অস্পৃশ্য তুল্য। মসজিদের ত্রি সীমানায় নারী আজ অনুপস্থিত। একসাথে নামাজের জামায়াতের অনুমতি থাকলেও কোন ইসলামপন্থীদের বাড়ীতেও প্র্যাকটিস আছে বলে শুনিনি। নারী অস্তিত্বের ক্ষেত্রে উনারা মনের অজান্তে খড়গ হস্ত। যেন নারী না থাকলেই পর্দা ভাল করে পালন হবে। এক্ষেত্রে দিগন্ত টিভির ম্যানেজম্যান্ট ও সংবাদ উপস্থাপিকারা অনেক সাবলীল। মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে মাওলানাদের ভূমিকা নেই। গর্ভবতী মা'দের নিয়ে মাওলানারা চিন্তিত নয়। বাল্যবিবাহ উত্তর তরুনীদের স্বাস্থ্য নিয়ে মাওলানাদের ভূমিকা অদৃশ্য। বহু গর্ভধারন নিয়ে মাওলানারা নির্বিকার। নারীদের মনোরঞ্জন নিয়ে ও তরুনীদের মনের কোনের রোমাঞ্চ নিয়ে মাওলানারা বধির বা বুঝেও না বুঝার ভান করেন।তরুনীদেরকে কাউকে না দেখাইয়া ঘরের কোনে আবদ্ধ রাখার ব্যাপারে সচেতন হলেও কিভাবে তরুনীদের ভাল জীবনসঙ্গী পাইয়ে দেয়া যায় তার ব্যাপারে উদাসীন।
"দিনের পর দিন পুরুষেরা কামিনের টাকা পরিশোধ করেনা এবং পিতার মৃত্যুর পর কন্যারা মীরাসী সম্পত্তি পায়না " এই ব্যাপারে মাওলানাদের উদ্যোগ ও ভূমিকা চোখে পড়ার মত নয়। যৌতুক ও নারী নির্যাতনের জন্য মাওলানাদের সংগঠনের কোন হরতাল নেই । মানব বন্ধন নেই। সেমিনার নেই ।
বসন্তের কোকিলের মত ইসলামের দোহাই দিয়ে প্রস্তাবে "নারী পুরুষের অবাধে মেলামেশা" আর কুরআন বিরোধী নারী নীতি বাতিলের কথা থাকলেও সাধারন নারীরা এই দাবীর ব্যাপারে উৎসাহী নয়।
তাই সেকুলারদের আস্ফালন আমাদের হজম করতেই হবে। এটাই আমাদের যোগ্য প্রাপ্তি।
সাধারন নারীদের ইসলামপন্থীভীতি দুর করতে হলে মিনিমাম তাদের নিয়ে ১০বছর কাজ করে আস্থায় নিয়ে আসতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
২৩১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন