জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতার দৃষ্টিতে মানসম্পন্ন আর মানহীন লোক...

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৩০:৪৩ দুপুর

(জামায়াতে ইসলামীর জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি দিন ছিল কন্টকাকীর্ন আর ত্যাগের ইতিহাসে ভরা। বিদাতী ,মুশরিক আর ইসলাম বিরোধীদের সাথে লড়াই করতে করতে এই দলটির একনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা সমালোচনার ব্যাপারে খিটখিটে ও রুক্ষ মেজাজের। সমালোচনাকে মানহীনতা ও ষড়যন্ত্র মনে করে আতঁকে উঠেন। তাদেরই বা দোষ কি! এই দলটিকে নিয়ে এই পর্যন্ত বস্তুনিষ্ট সমালোচনা হয়নি। আবেগের উর্ধ্বে উঠে একান্তই ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে ভালবেসে আমার এই ক্ষুদ্র সাহসী প্রয়াস। আশা করি কারোই ভালবাসা হারাবনা। )

আগে আমি মানসম্পন্ন,মানকম, মানহীন, মানের অবনমন এভাবে মানুষকে ক্লারিফাই করতাম সংগঠনের দৃষ্টিকোন নিয়ে। এখন এভাবে বলতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য ফিল করিনা। আমি মানের সার্টিফিকেট দেয়ার কে? আরো খোলাসা করে বলতে গেলে বলা যায় "তাকওয়ার মানের সার্টিফিকেট দেয়ার জামায়াতে ইসলামী কে?"

আমার মনে কেন এই প্রশ্ন জাগল ?

(ক)

কোন জনশক্তি যদি রিপোর্টিংয়ের পুলিশী ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে নামাজ পড়ে আর সে নামাজ যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হয় তবে "আল্লাজি নাহুম ইউরাউন" এর মধ্যে পড়ে। বস্তুত আল্লাহর উপরই নির্ভর করে জান্নাত জাহান্নাম ও পরকালের মুক্তি। মোটিভেশন যখন শুধু রিপোর্টিংয়ের হয় তখন সেখানে রিয়া এসে উপস্থিত হয়। রিপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যা শুরু হয় কল্যানজনক ভাবে যার আপাত সফলতাও চমৎকার কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী রিপোর্টিং ব্যবস্থা প্রদর্শনেচ্ছা তৈরী করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির বদলে দায়িত্বশীলের বকাঝকা , কথা ও পর্যালোচনা থেকে বাচার জন্য আকুতির প্রতিফলন রিপোর্টিংয়ে স্পষ্ট থাকে এটার সাক্ষী শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও আল্লাহ তায়ালা। যেটা আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেননি সেটা যুগের পর যুগ চলতে দিয়ে রিয়া উৎসাহিত করা , সংগঠনের অভ্যন্তরীন পরিবেশ নিরানন্দ ও তিক্ত করে ফেলা কোন মতেই সায়েন্টিফিক হতে পারেনা। বস্তুত কিন্ডারগার্টেনের শিশুকে লাইনে আনার জন্যে রিপোর্ট দরকার সারাজীবনের জন্য নয়। ২/৪ টি কোরআন হাদীস অধ্যয়ন র্সবস্ব রিপোর্ট দিয়ে সাংগঠনিক শৃংখলাকে টাইট করা যায় কোন বিপ্লব সম্ভব বলে মনে করিনা। বিপ্লবের জন্য রির্পোটিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্বশীল খুশি করার চেয়েও আল্লাহকে রাজী করানো বেশী জরুরী। রিপোর্ট বড় স্কলার তৈরীতে সহায়ক নয়। এটি সংখার বৃত্তে বিপ্লবীকে আটঁকে ফেলে। রিপোর্টয়ে যা থাকে তা একনজর দেখে নিই।

১.কোরআন হাদীস ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন

২. জামায়াতে নামাজ কয় ওয়াক্ত

৩. একাডেমিক অধ্যয়ন

৪. সাংগঠনিক যোগাযোগ

৫.সাংগঠনিক সময়

৬.পত্রিকা পড়া

৭.শরীরচর্চা

৮. আত্বসমালোচনা।

মুরব্বীসংগঠনের রিপোর্ট ফরমেটও কাছাকাছি।

এটা ছাত্রজীবনের জন্য দরকার হতে পারে প্রফেশনালদের ব্যস্তজীবনের মানউন্নয়নের প্রথম ধাপে দরকার হতে পারে কোনভাবেই পুরোজীবনের জন্য নয়। যা আল্লাহ ফরজ করেননি তা আপনি সাংগঠনিক ভাবে আজীবনের জন্যে ফরজ করে দিতে পারেননা।

আর এই রিপোর্টিং ব্যবস্থা মেনে নেয়াটাকে সাংগঠনিক মান বলে বিবেচিত হয়ে আসছে অনেক দিন ধরে।

যদি রিপোর্ট একান্তই করতে হয় "৪. সাংগঠনিক যোগাযোগ ৫.সাংগঠনিক সময়"

এই দুটি পয়েন্টকে করতে পারেন।

"১.কোরআন হাদীস ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন"

এই পয়েন্টটিকে পুরোপুরি পরীক্ষা বেইসড করতে হবে। এনালাইটিকেল করতে হবে।

২. জামায়াতে নামাজ কয় ওয়াক্ত "

এই পয়েন্টটিই বেশী রিয়া তৈরী করছে। এটি রুকন হওয়ার ৫ বছর পর রিপোর্ট থেকে তুলে দেয়া উচিত। একমাত্র আল্লাহর উপর এই নামাজের পর্যালোচনা ছেড়ে দেয়া উচিত। আত্বসমালোচনাটা আল্লাহর সাথে করে দিয়ে তওবা এসতেগফারকে ও আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়াটাকে বেশী উৎসাহিত করতে হবে।

মুল কথা হল যেগুলোর পুরুষ্কার আল্লাহ দিবেন সেগুলোর পর্যালোচনা আল্লাহমুখী হওয়া উচিত।

(খ)

"অন্ধ আনুগত্য না করার কথা " চরিত্রগঠনের মৌলিক উপাদান বইতে থাকলেও এটি রুপান্তরিত হয়ে এখন হয়ে গেছে "বাধ্যতামূলক আনুগত্যে"।

যতদিন পর্যন্ত আমীরের হাতে বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচনী ক্ষমতা থাকবে ততদিন বাধ্যতামূলক আনুগত্যের বাইরে জনশক্তি যেতে পারবেনা।

আর এই বাধ্যতামূলক আনুগত্য না করাটাই হয়ে উঠেছে "সাংগঠনিক মানকম সম্পন্ন লোক " আখ্যা পাওয়ার গুন । যোগ্যতা সম্পন্ন লোকেরা আনুগত্য কম করে আর কাজ করে বেশী। মনে রাখতে হবে যোগ্য লোকেরা আগে বুঝে রাসকেলরা একটু পরে বুঝে মাত্র।

(গ)

দীর্ঘদিনের টিসি টিএস আর সাংগঠনিক একই বই পড়ার কারনে পরিভাষাগুলো একই হয়ে গেছে শপথবদ্ধ সব জনশক্তির । আর যখনই কোন জনশক্তি অরগেনাইজেশানাল টার্মিনোলজিতে কথা বলতে পারেন তখনই বলা হয় মানসম্পন্ন বা মানের লোক। এই পরিভাষা শুধু সাংগঠনিক অভ্যন্তরে বুঝে। অসাংগঠনিক লোকদের এই টার্মিনোলজিতে কথা না বললে তাকে কি আল্লাহর বা ইসলামের দৃষ্টিকোনে মানের বলা যাবে না? কিন্তু আমরা মানের কোন সংজ্ঞা আকড়েঁ আছি আজ ?

(ঘ)

দৃষ্টিভঙ্গীর একই হওয়াটাও মানের সংজ্ঞার আওতাভূক্ত। দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষন প্রোগ্রামের আওতায় আর ইউনি পরিবেশে থেকে জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তিরা দৃষ্টিভঙ্গীর সমতা লালন করে। এই দৃষ্টিভঙ্গীর বাইরের লোক মানসম্পন্ন নয় এটা ভাবা কোনভাবেই উচিত না।

(ঙ)

"চেহারা ও পোষাক সর্বস্ব ইসলাম " ইসলামের মুল স্পিরিট নয়। কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে যদি বলা হয় ২০০০ মানুষ দিলাম এখান থেকে শিবির জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আলাদা করে বের করে দাও তবে উনারা সাফল্যের সাথে তা পারেন। কেন? এখানে কি পোষাক চেহারায় মান ধারন করা হয়?

বস্তুত সাবেক বর্তমান কার্যকরী পরিষদের বয়স , ওজন, উচ্চতা , গায়ের রং , দাড়ির কাটিং(ফ্রেন্সকার্ট) ও কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্ট্যাটিসটিকেলি কাজ করলে মানের একটা উপসংহারে পৌছা জামায়াত শিবিরের গবেষকদের কাছে সম্ভব। বস্তুত জ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের চেয়েও বড় হয়েছে আবেগ ও নিজের নিউরনে যে চিন্তাটা বংশপরম্পরায় লালন করা হয়েছে তার ব্যবহারিক বিন্যাস ও প্রতিফলন। আর সমালোচনাকে শুধু নিজের স্টেটাসের সাথে না মিললে বা নিজের চিন্তাধারা দিয়ে ধরতে না পারলে একটু চিন্তা করে বাদ করে দেয়ার প্রবনতার মধ্যে দিয়েও সমালোচনাকারীকে সাংগঠনিক মানকম সার্টিফাই করার প্রবনতাতে থাকেন অনেকে।

(চ)

লিখিত কর্মপদ্ধতি ও সংবিধানের পাশাপাশি আলো আধারির মত জেগে থাকে অলিখিত কর্মপদ্ধতি ও সংবিধান । এখানে মানের প্রকৃত ও পরিপূর্ন সংজ্ঞা একজনও দিতে পারে কিনা সন্দেহ। যেমন ধরুন একজন সাথী বিদায় নেয়ার পরে সদস্যের দৃষ্টিতে আর কোন দিনই মানের হয়ে উঠতে না পারা। একজন সদস্য বিদায় নেয়ার পর আর কোনদিনই কার্যকরী পরিষদ সদস্যের দৃষ্টিতে মানের হয়ে উঠতে না পারা। আর কাপ সদস্যরা বলা বাহুল্য সাবেক বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতিদের কাছে কখনোই মান সম্পন্ন হয়ে না উঠা।

এই জন্যে আমি আগের এক লেখায় বলেছি সব ধরনের জনশক্তির জন্যে "ইসলামিক নলেজ এন্ড প্র্যাকটিস সিস্টেম (আইকেপিটিএস)" পরীক্ষা আয়োজনের জন্য। যা দিয়ে সর্বপ্রকার জনশক্তি ও ইসলামিক পারসনের জ্ঞানগত যোগ্যতা নিশ্চিত হতে পারে।

(ছ)

ফোরামে পরামর্শ না দিয়ে বা বাইরে সমালোচনা করা নিয়ে সংজ্ঞায়িত হয় "মানসম্পন্ন আর মানহীনের"। বস্তুত এই ফোরাম কেন্দ্রীক পরামর্শ সিস্টেম দিয়ে টোটাল শুভাকাংখী মহলকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে যারা দিনের পর দিন শুধু কালেকশানই দিয়ে যান। একজন কর্মীর অনুপস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে বৈঠক শেষ করার অবস্থার মধ্যে দিয়ে পরামর্শ পর্যালোচনা নিতান্তই চিন্তার স্থবিরতা। এতে বরিশালের জনশক্তি কি পরামর্শ দিল চট্টগ্রামের জনশক্তি তা নিয়ে ব্রেইন স্টমিং করার সুযোগ পায়না। এভাবে চিন্তার বন্ধ্যাত্ব তৈরী হয়েছে।

চিন্তার ফুসরত পেলে এই মানের প্র্যাকটিসিং সংজ্ঞা নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছা আছে।

বিষয়: বিবিধ

৩০১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File