জয় বাংলা শব্দ শুনে এখন মানুষ কেন আন্দোলিত হয়না। একথা সবাই বুঝলেও শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আরাফাতেরা বুঝেনা!!
লিখেছেন লিখেছেন বিবেক ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৭:৪১ সকাল
জিটিভর টক শো তে আরাফাত বনাম আখতরুজ্জমান এর মাঝে বাহাস হয়ে গেল একটি মন্তব্য নিয়ে। আখতারুজ্জমান সাহেব মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনা কর্মকর্তা। আরাফাত সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের কে একবার রাগিয়ে দিতে পারলে, তারা উত্তেজনায় অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য প্রয়োগ করতে পারা থেকে বঞ্চিত হন। গতকাল আরাফাত সাহেব তাই করেছেন। মেজর যত গরম হন, আরাফাত তত নরম হন। দর্শক যাতে এমনটি বুঝে নেয় যে, সেনাবাহিনী কর্মকর্তা অকাজে গরম হন আর আরাফাতের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জ্ঞানের ভাবে চেপ্টা বলেই সহজে গরম হয় না। বিগত বহুদিন ধরে দেখা গেছে আরাফাত সাহেবের প্রতিটি বক্তব্য নিয়ে শুধু কথাই বাড়ে সমাধান হয়না, জানিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যেশে ট্রপিকস্ পড়াতে গেলে সেখানেও এটা হয় কিনা।
আরাফাত সাহেব বলেছেন, 'আমি সুস্পষ্টভাবে মনে করি জয়বাংলাকে যারা আলিঙ্গন করতে পারেনা, কষ্ট হয় ভাবতে তারা মুক্তিযোদ্ধা'!
বিশ্লেষণে আসা যাক কেন অনেকেই জয় বাংলাকে আলিঙ্গন করতে পারেনা।
একদা জয় বাংলা শব্দটি বাংলার মানুষ ব্যবহার করেছে আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধে। শোষন, নির্যাতন, হত্যা, ধ্বংসের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে জয় বাংলা শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে দলীয় মোড়লীপনা ও চাটুকারীতার জন্য। বীরত্বের সহিত জয় বাংলা ব্যবহার হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, জমি দখল, বাড়ি দখল, গাড়ি ভাঙ্গা, ব্যাংক লুট, মানুষ খুন, শিক্ষক পেটানো, বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলির মহরত করার কাজে। সর্বোপরি তা ছাত্রলীগের নিজেদের দলীয় শ্লোগানে পরিনত হয়েছে।
আগে জয় বাংলা শ্লোগান দিলে পাকিস্তানিরা ভয়ে ব্যারাকে ঢুকে যেত। এখন জয় বাংলা শুনলে ছাত্রলীগের লুটপাট কারীরা আসছে মনে করে সবাই দোকান পাট বন্ধ করে তালা মেরে পালিয়ে যায়। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে জয় বাংলা উচ্চারণ শুনলে ছাত্রীরা পর্যন্ত বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামত। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে জয় বাংলা শুনলে ছাত্রীরা ছাতলীগের ভয়ে যৌন হেফাজতের লক্ষ্যে হোষ্টেলে ঢুকে পড়ে। জয় বাংলা বলে ছাত্রলীগ মসজিদ মন্দিরে হামলা সহ চুরি, ডাকাতি, খুন, খারাবী, ধর্ষন, দখল সহ কোন পবিত্র কাজটি তারা বাকি রেখেছে। এই কারণে বর্তমান যুগের মানুষ জয় বাংলাকে আলিঙ্গন তো দুরের কথা, উল্টো আলিঙ্গনের ভয়ে পালাতে থাকে।
জয় বাংলা শব্দটাকে আলিঙ্গনের প্রতি অনিহার আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ এই শব্দটি তাত্বিক দিক থেকে ভারতীয় 'জয় হিন্দ' থেকেই উৎপত্তি হবার কারণে। জয় হিন্দের প্রতিও বাংলাদেশের মানুষের অনিহার কারণ থাকত না যদি ভারত সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণ বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি রক্ষা করত। ভারত বাংলাদেশের বিসস্থ বন্ধু এই কথা বাংলাদেশের ৮০% শতাংশ নাগরিকই বিশ্বাস করেনা। সুতরাং যে বন্ধুর কাজে মানুষ বিশ্বাস করেনা, তার লক্ষ্য আদর্শ ও উদ্যেশের প্রতিও আস্থা রাখবে না। যখন তার প্রতি আস্থাহীন হবে; তখন তাদের কোন প্রবাদ, প্রলাপ কেউ অন্ধ ভাবে গ্রহন করলে মানুষ তাকে ভাল চোখে দেখবে না। এটাই স্বাভাবিক।
একদা জয় বাংলা বলে মানুষ পাক সেনাদের উৎখাত করেছিল, সে সময় জয় বাংলা শব্দটি পুরো জাতির হৃদয়ের স্পন্দন ছিল।
বর্তমানে জয় বাংলা বলে যদি ভারতীয় আধিপত্য উৎখাতের বিরুদ্ধে জাতিকে ডাক দেওয়া হয়, তাহলে পুনরায় জাতি এই জয় বাংলা শব্দটিকে সাধুবাদ জানাবে।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জয় বাংলা ব্যবহার করে আবারো নতুন মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিন, তাহলে দেখতে পাবেন দলে দলে মানুষ এই শ্লোগানকে আলিঙ্গন করবে, কোন সন্দেহ নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ আখতারুজ্জামানরা আরাফাতদের মত কথার মুক্তিযোদ্ধা না , কাজের মুক্তিযোদ্ধা ।
কথা দিয়ে তো আর যুদ্ধে জয় লাভ করা যায় না । কথা দিয়ে চিরাও ভেজে না ।
দেশ যখন ৭১ এ বিপদে পড়েছিল তখন দরকার ছিল একটি যুদ্ধের যা কাজের মাধ্যমে করতে হত ।
তখনকার প্রতিকূল পরিবেশে আখতারুজ্জামানদের মত লোকেরা ছিল বলেই রক্ষে । আরাফাতদের মত কথার রাজা সবাই হলে বাংলাদেশকে ইহজনমে আর স্বাধীন হওয়া লাগতো না ।
দেশ যখন স্বাধীন হয়ে গেছে এখনকার এই অনুকূল পরিবেশে আরাফাতদের মত কথাবাজরা খুবসে চেতনা বিক্রী করে যাচ্ছে ।
কোথায় ছিল যুদ্ধের সময় এই সব গলাবাজি ? সামর্থ্য , বয়স , সময় সব কিছু থাকার পরও তারা যুদ্ধে না গিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে না হয় পাকিস্তান সরকারের চাকরি ধরে রেখেছে । চড়ুই পাখির মতও সাহস ছিল না যে তারা আখতারুজ্জামানদের মত শত্রুর বিরুদ্ধে সন্মুখ সমরে যুদ্ধ করবে ।
বাংলাদেশের এখন সুসময়ে ( স্বাধীন বাংলাদেশে , অনুকূল পরিবেশে ) উনারা বন্ধু সেজেছেন । যখন বিপদে ছিল তখন উনাদের পাত্তাই ছিল না ।
সুসময়ের বন্ধু = দুধের মাছি = আরাফাতরা
দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু - সেটা আখতারুজ্জামানরা ।
A Friend in need is a friend in deed .
আরাফাত সাহেব এর বয়স কত আর উনি কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধার সংঙ্গা তিনি দিবেন!!
জয় বাংলা বললে সারা বাংলাকে বোঝায় ,বাংলাদেশসহ পশ্চিম বাংলা ।
কিন্তু জয় বাংলা বলার বিরাট ভুল হল এখানে পশ্চিম বাংলা এখনও পরাধীন । তাদেরকে কেন আমাদের জয়ে শরিক করবো ? বাংলা ভাষার জন্য আমাদের এই দেশ বাংলাদেশের লোকেরা প্রাণ দিয়েছে ।পশ্চিম বাংলার লোকেরা সেখানে এখন হিন্দীতে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে ।
বাংলাদেশের লোকেরা ৫২ তে যেমন বাংলা ভাষাকে একেবারে নিজেদের করে নিয়েছে সেরকম দেশটাকেও নিজেদের করেছে ৭১ এ ।
এটা হওয়া উচিত ছিল জয় বাংলাদেশ । বাংলা ভাষা এবং বাংলা ভাষার দেশ বাংলাদেশ - এ ২ টি বিজয় একেবারেই আমাদের । পরাধীন কাউকে এতে ভাগ বসাতে দেওয়া যায় না ।
@ বিবেক :
চুক্তিযোদ্ধা কথাটা ভালই লেগেছে , এটাকে এখন থেকে কোট করা হবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন