জামায়াতের নেতৃবৃন্দের দায়িত্বশীলতা আর আমাদের ভবিষ্যত
লিখেছেন লিখেছেন মাহমুদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৫২:১৬ রাত
দেশ আজ একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের উন্নতির পিছনে স্বাধীনতা বিরোধি ইস্যূটা অনেক বড় বাধা। দেশের মধ্যে একতা না থাকলে দেশ আগাতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশকে একত্রিত করার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সেই সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। বরং, আবার দীর্ঘমেয়াদি নতুন এক সংকটের সুচনা হতে যাচ্ছে। জামায়াতের বয়স্কদের উপর থেকে দায়ভার এখন তরুণদের উপর ফেলানোর চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টা সফল হলে আরও চল্লিশ বছর তারা কিছু করে খেতে পারবে।
এই বিপজ্জনক অবস্থায় জামায়াত কি ৭১ সালের মত আবার কোন ভুল করে বসবে? চিন্তার বিষয়। সেই সময়ের সাথে এখনকার সময়ের একটা বড় পার্থক্য হচ্ছে, পৃথিবীটা তথ্য প্রবাহের দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। জামায়াতের জন্য এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, বাংলাদেশ কতটুকু আগাতে পেরেছে? সাম্প্রতিক কালে জামাত-শিবিরের ১২/১৫জন মারা গেছে। প্রচুরজন কে বর্ণনাতীত নির্যাতন করেছে। কিন্তু সেটার ফসল কতটুকু জামায়াত পেয়েছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বরং, জামায়াত পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। পিটিয়েছে সেই ম্যাসেজও কম যায় নাই।
জামায়াতের পক্ষের মিডিয়া বলতে নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, আমার দেশ এই তো! এগুলির ব্যাপারে অলরেডি একটা অবস্থান করে ফেলা হয়েছে। ফেসবুক গ্রামে-গঞ্জে এখনও পৌঁছায়নি। আর টুইটার তো এদেশে এখনও সেরকম জনপ্রিয় কিছু নয়। আপনি যা-ই করুন না কেন- সেখান থেকে প্রপাগান্ডা মেশিন একটা ম্যাসেজ বের করে নিয়ে আসবে। আপনি বিশাল সমাবেশ করবেন, নিউজ হবে যানজটে ঢাকা শহর নাকাল। অথবা উস্কে দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করিয়ে তার দায় আপনার উপরই চাপানো হবে। মানুষকে মোটিভেশনের চেষ্টা থাকবে। সিন্ডিকেটেড চেষ্টা, ভাঙা এত সহজ না।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী অনেকটা কোয়ারেন্টাইন হয়ে আছে। সবকিছু বুঝলেও নিজেকে জামায়াত পরিচয় দিতে পারে না। যার কারণে অনিচ্ছাসত্তেও অনেক জায়গায় অনেককে (সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে) বিপক্ষের প্ল্যাকার্ড বহন করছে। এই যদি অবস্থা হয় আপনারা জিতবেন কিভাবে?
সম্ভাব্য বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে যদি জামায়াত ভুল করে। ধরুন, শাহবাগের আন্দোলন চলছে। তাদের দাবী কি? কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই (দাবীর বহর আরও বাড়বে, অলরেডি বেড়ে গেছে).। কিন্তু সমস্যা একটা জায়গায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন দেশ, জাতিসংঘের সদস্য। তাকে সভ্যসমাজের রীতি-নীতি মেনে চলতেই হবে। ইচ্ছামত আইন করলেই হবে না। কেউ কেউ হয়ত বলতে পারেন, ওরা (আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি) হয়ত এগুলি ইগনোর করে যাবে। তখন? হ্যাঁ, তখন ভয়ের ব্যাপার আছে বৈকি।
তাহলে উপায়টা কি? উপায় নিশ্চয়ই আছে। আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। কোন অবস্থাতেই উস্কানিতে পা দেয়া যাবে না। বিচার করতে গিয়ে এটা আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে। গেলা এবং উগলে ফেলা দুইটাই কঠিন। লেজিটিমেট প্রশ্নের দিকে জনগণকে নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই যুদ্ধের মত পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভবিষ্যত আমরা কেউ জানি না। কিন্তু ঈমানদারদের একটা সুবিধা আছে। সে সঠিক অবস্থানটা দ্বিধাহীনভাবে নিতে পারে। কারণ ভয় করি বা না করি মৃত্যু সবাইকেই আলিঙ্গন করবে। ঈমানদারদের চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্য জান্নাত। এই বিশ্বাস এই দৃঢ়তা মানুষকে অন্যরকম এক জীবন দান করে। এর সুফোল ন্যায়বানদেরকে অবশ্যই নিতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান। সত্য-সঠিক কথা বলে জনমত গঠনের চেষ্টা করুন। জেল-জুলুম সহ্য করে যান। কোন রকমের উস্কানিতে রক্ত গরম করবেন না। মিছিল-মিটিং অব্যাহত রাখুন। সেখানে কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে তাকে ট্রেস করুন, মুখোশ খুলে দেয়ার চেষ্টা করুন। প্রপাগান্ডার কারণে বহু মানুষ মুদ্রার ওপিঠ দেখে নাই। কিন্তু সে সুযোগ আল্লাহ করে দিয়েছেন। তাদের সেই প্রশ্নগুলির জবাব দিন। কিছু মানুষ ক্ষেপে যাবে, কিছু মানুষ মেনে নেবে।
মাস পিপল সাধারণত চুপ থাকে। কোন সাতে-পাঁচে যায় না। কিন্তু এদেরকে ব্যবহার করা হয়। সেই প্রচেষ্টা নস্যাত করে দিতে হবে।
আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে সব মত-পথের লোকেরা শান্তিতে বাস করবে। সবাই ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করবে। হিংসা-ক্রোধ থাকবে না। কোন ধরনের মিথ্যা প্রপাগান্ডা থাকবে না। সে সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদেরকে সফল হতেই হবে। আল্লাহ সহায় হোন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন