বোর্ডের প্রশ্নপত্রে চরম উস্কানী: মুসলমানরা সন্ত্রাসী, হিন্দুরা মহানুভব

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:০১:৫৪ রাত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকের বই তৈরি ও বিতরণ করে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পাল

.........

বোর্ডের প্রশ্নপত্রে চরম উস্কানী >> মুসলমানরা সন্ত্রাসী এবং হিন্দুরা মহানুভব

ঢাকা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে কৌশলে ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা এবং সুচতুরভাবে পীর মাশায়েখদের চরিত্রহননের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশ্ন প্রণেতারা ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন। দ্বীন, ইসলামী রীতিনীতি, ঐতিহ্য, ঈমান ও আমল নিয়ে আজগুবি মিথ্যা গল্পের অজুহাতে ইসলাম ও পীর মাশায়েখদের খারাপ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অবমাননা করা হয়েছে দরগা, দাঁড়ি ও টুপিকে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশ্নপত্রে সম্প্রদায়িতা উস্কে দেয়া হয়েছে। মুসলমানকে সন্ত্রাসী এবং হিন্দুদের মহানুভব হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কেন এই উস্কানী? পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে আঘাত করে উস্কে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের। জাতীয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইসলামপ্রিয় মানুষকে উস্কে দেয়ার রহস্য কি? বোর্ড পরীক্ষায় এধরণের উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্র তৈরির মাধ্যমে কি ম্যাসেজ দিচ্ছেন শিক্ষায় বিভাগের সংশ্লিষ্টরা? দেশের আলেম, ওলামা শিক্ষাবিদরা মনে করেন এ পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরণের প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ স্বাভাবিক নয়। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং নাস্তিক্যবাদ উস্কে দিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই একটি মহল এই কাজ করেছে বলে মনে করেন তারা। ইসলামের ও পীরদের সাথে ভ-, ল্যাংটা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে তা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পরিচিত করার মাজেজা কি? এসব শব্দের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেন পীর-আউলিয়া সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পান এবং ইসলাম ধর্মচর্চা থেকে দূরে সরে আসে সেই চেষ্টারই অংশ। গত ৩ এপ্রিল চলতি বছর এসএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নে ইসলাম, ইসলামী রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও পীরদের নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী তিনটি গল্প (উদ্দীপক) তুলে ধরা হয়। বাংলা আবশ্যিক প্রশ্নে ৮নং উদ্দীপকে বলা হয়, “আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক এমদাদ। ধর্ম-খোদা-রসুল কিছুই বিশ্বাস করে না। খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়ে একেবারে বদলে গেল। পীরের মুরিদ হয়েছে এবং নিয়মিত নামাজ পড়ছে। পীরের ভ-ামি ও লোলুপ দৃষ্টি এমদাদের কাছে ধরা পড়ল। মুরিদের সুন্দরী বউ কলিমনকে জোরপূর্বক তালাক পড়িয়ে নিজে বিয়ে করেছে। এমদাদ এতে ক্রুদ্ধ হয়ে পীরের মেহেদি রঞ্জিত দাঁড়ি ধরে হেঁচকা টানে মাটিতে ফেলে দিল।” একই প্রশ্নের ৭ নং উদ্দীপকে বলা হয়েছে, “মহাসড়কের পাশে পুরাতন একটি কবরকে মাজার বানিয়ে জমজমাট ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে মোখলেছ। কবরটিকে মাজারে রূপান্তরিত করার ঘটনাটি ছিল বেশ নাটকীয়। একদিন একটি যাত্রীবাহী বাস কবরটির পাশে সামান্য ধাক্কা লেগে থেমে যায়। ঠিক তখনই কবরের পাশে দাঁড়ানো মোখলেছ ড্রাইভারকে ধমকে বলে, ল্যাংটা বাবার সাথে বেয়াদবি। সামনে তোর জন্য মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। বাঁচতে চাইলে বাবার দরবারে যা আছে ফেলে যা। মুহূর্তের মধ্যে বাসের জানালা দিয়ে কবরের পাশে বৃষ্টির মতো পড়তে লাগলো দশ টাকা, বিশ টাকা এবং একশ টাকার নোট।” ৫নং উদ্দীপকে বলা হয়েছে, “মানুষ ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য কোনো হিংসার দুশমনীয় ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজেকে ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।” এই উদ্দীপকের খ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।- পংক্তিটি বুঝিয়ে লেখ। গল্পের ছলে ছলে এসব প্রশ্নে দেখা যায় ইসলাম ও মুসলমানকে খাটো করা হয়েছে। পীর, দাঁড়ি, টুপি, নামাজ-রোযাকে নেতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে ভ- ও ল্যাংটার মতো শব্দ। আলেম, ওলামা ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই প্রশ্ন পুরোটাই উদ্দেশ্যমূলক এন্টি ইসলামিকদের কাজ। যদিও মুসলমানরা সেটা বুঝতে পারবে না, কারণ এখানে উদ্দেশ্যমূলক দ্বিধাবিভক্তি করে দেওয়া হয়েছে। ৫নং প্রশ্নে বলা হয়েছে, মানুষ ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এখানে হিন্দু-মুসলিম এক হতে বলা হচ্ছে। ৮নং প্রশ্নে অনর্থক গল্প বানিয়ে আপেক্ষিক বিষয় দিয়ে বিভেদ উস্কে দেওয়া হচ্ছে। গল্পের অজুহাত দিয়ে নামধারী খারাপ বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসে মুসলমানদের হীন করা হচ্ছে, ইসলামকে অপমান করা হচ্ছে। এ প্রশ্ন পুরোটাই উদ্দেশ্যমূলক, একটি জাতীয় পরীক্ষার প্রশ্নে এ ধরনের উস্কানিমূলক প্রশ্ন করা কখনই স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ন্যাংটা ও ভ-দেরকে ইসলামের নামে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিত করা হবে কেন? এর দ্বারা অবশ্যই একজন ছাত্র-ছাত্রী ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রশ্ন প্রণয়নের বিষয়ে বলেন, ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন ঢাকা বোর্ড তৈরি করে না। আটটি সাধারণ বোর্ড পৃথকভাবে প্রশ্ন প্রশ্নয়ন করে এবং মডারেটর হয়ে তা লটারির মাধ্যমে বিভিন্ন বোর্ডে বিতরণ করা হয়। তবে কারা ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়ন করেছে তা খুঁজে পাওয়া যাবে। পাবলিক পরীক্ষা প্রশ্ন প্রণয়ন করে থাকে বোর্ডের মাধ্যমে বেছে নেয়া সরকারি-বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা। তাদের প্রশ্নপত্র মডারেটর কমিটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করে। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকের বই তৈরি ও বিতরণ করে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পাল। প্রশ্নের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রশ্ন তৈরির কাজ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দেয়া হয়। গোপনীয়তার মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ করা হয় বলে তা চেক করার সুযোগ থাকে না। তবে কেউ ইচ্ছা করে এধরণের কাজ করেছে কিনা তা দেখা হবে বলে তিনি জানান।

বিষয়: বিবিধ

১১৮০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364778
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৫:৪৪
শেখের পোলা লিখেছেন : স্বাধীনতার এত সুফল আর সইতে পারিনা৷ এবার ক্ষ্যান্ত দাও৷
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৪৮
302663
নয়ন খান লিখেছেন : খুব বেশী সূফল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন!
364785
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৬:৪৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : নাহিদ সাহেবতো এমনটাই চান. এমন ভাবে বলেন, যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা. নাহিদের মত লোক যতদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবে, ততদিন এমন সর্বনাশা কম্ম কান্ড চলতেই থাকবে
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৫০
302664
নয়ন খান লিখেছেন : সব নাটের গুরু তো এই নাহিদ কাম বাম-রাম।
364787
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৭:১৩
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : সুক্ষ্ম এক গভির ষড়যন্ত্র চলছে সর্বত্র
যারা হোতা, তারা ই ভান করে আছে অজ্ঞতার
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৫০
302665
নয়ন খান লিখেছেন : একমত।
364819
০৬ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৫০
302666
নয়ন খান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File