কামারুজ্জামানকে যেমন দেখেছি

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ১৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:৫৯:৫৬ রাত



উনি তখন এসেছিলেন আমেরিকার ডেট্রয়টে শহরে। তখনি বেশ কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। যেরকম দেখেছিলাম, তার দুয়েকটা কথা আপনাদের জন্য আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব:

দেশের প্রতি মমত্ববোধ:

এই লোকটি যে বাংলাদেশকে এত ভালবাসতেন তা আগে জানতাম না। যেখানেই যেতেন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতেন, গর্ব করতেন। অস্বাভাবিক রকমের আশাবাদী ছিলেন দেশ নিয়ে। কি নির্মমতা, সেই দেশই তাঁকে ফাঁসি দিল!

একদিন মিশিগানের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সভা হয়। দেশের অতীত ইতিহাস তুলে ধরলেন। নিজ দলের একটা কথাও উচ্চারণ করলেন না। প্রবাসীদের বোঝালেন বিনিয়োগের সফলতা। একটা টুপির বিজনেস করলেও আপনি সফল হবেন। আমাদের দেশে রয়েছে প্রচুর মানব সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগান। এখানে যাই কিছু করেন না কেন দেশেও কিছু একটা করেন, দেশ ভুলে যাবেন না ইত্যাদি। আমার ডেট্রোয়েটের রুমমেট যিনি কিনা আমাদের একই ইউনিভার্সিটির একটি হলের ভিপি ও জিএস ছিলেন। উনার দল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর সংগঠন থেকে আসা। তিনি বললেন এতদিন ধরে রাজনীতি করলাম কিন্তু এরকম রাজনীতিক জীবনে দেখলাম না!

এক কংগ্রেসম্যানের সাথে উনার বৈঠক হয়। কংগ্রেসম্যান ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশের সমালোচনা শুরু করলেন। আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে বললেন, "তোমাদের Poor গণতন্ত্র।" সাথে সাথে কামারুজ্জামান সাহেব বললেন, Poor democracy is better than no democracy। এর মাধ্যমে সেই কংগ্রেসম্যানকে উনি বোঝায়ে দিলেন, তোমরা মধ্যপ্রাচ্যে রাজা-বাদশাহ, একনায়ক, স্বৈরশাসকদের সমর্থন করো, আমাদের চাইল্ড ডেমোক্রেসিকে কেন আগায়ে নিতে সাহায্য করছ না? কংগ্রেসম্যান চুপ মেরে গিয়েছিলেন।

তরুনদের প্রতি ভালবাসা:

তরুনদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। পড়াশোনার খবর নিতেন। উপহার সামগ্রী পাঠাতেন। সেই ঢাকা থেকে পোস্ট করে আবার খবরও নিতেন সেটি পেয়েছো কিনা। ধন্যবাদ দিতেন উপহারটি গ্রহণ করার জন্য! কি বিনয়তা! আমাকে একটি ফতুয়া উনি উপহার দেন। যদি আগে জানতাম উনাকে আল্লাহ এরকম উচ্চ মর্যাদা দান করবেন, আমি ওটি অতি যত্নে রেখে দিতাম, ব্যবহার করতাম না।

পড়তেন প্রচুর

রাতে একসাথে ছিলাম। ফজরের নামাজ শেষে দেখলাম ব্যাগ থেকে কোরআন শরীফ বের করে এনে পড়া শুরু করে দিলেন। আমি মনে মনে ভাবি দুইদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন, তাও পড়তেই হবে! অনেক রাতও তো জাগলেন, জেটল্যাগও আছে, ফজরের পর একটু ঘুমাবেন না!

দেখতাম কোন অবসর পেলেই কিছু একটা পড়ছেন।

তেজস্বী বক্তা ছিলেন

ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারতেন, কিন্তু গলা ভাঙতো না। উনার মধ্যে কেন জানি সুস্থ ও অসুস্থতার মাঝখানে একটা সমন্বয়তা ছিল। অনেক জটিল রোগের ভিতরই উনি নির্দ্বিধায় সব কাজ স্বাভাবিকভাগে চালিয়ে যেতেন। কখনো বিরুক্তি প্রকাশ কিংবা বিশ্রামের কথাও বলতেন না।

সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি উনার জন্য কান্না করব না, উনার জন্য জান্নাতও চাইব না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করে নিয়েছেন, যাঁকে রিযিক দিচ্ছেন, যাঁকে নিহত বলতে নিষেধ করেছেন, যাঁকে নবী-রাসুলদের সাথে হাশর-নাশরের ওয়াদা করেছেন তাঁর জন্য আমি কাঁদব কেন? আমি শুধু চাইব আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের সাথী বানিয়ে দেন।

বিষয়: রাজনীতি

২১৯৮৪ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

314684
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৪
আশাবাদী যুবক লিখেছেন : ক্ষণজন্মা এক ব্যক্তিত্ব
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৬
255564
নয়ন খান লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন।
314685
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
255567
নয়ন খান লিখেছেন : ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
314686
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৫১
255572
নয়ন খান লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
314702
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:১৪
সাদাচোখে লিখেছেন : সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি উনার জন্য কান্না করব না, উনার জন্য জান্নাতও চাইব না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করে নিয়েছেন, যাঁকে রিযিক দিচ্ছেন, যাঁকে নিহত বলতে নিষেধ করেছেন, যাঁকে নবী-রাসুলদের সাথে হাশর-নাশরের ওয়াদা করেছেন তাঁর জন্য আমি কাঁদব কেন?

এ অংশটুকু যদি সাহিত্যের পার্ট হয়। কিছু বলার নেই।

কিন্তু এটা যদি আপনার বিশ্বাস হয় - তবে বলবো দয়া করে রিভার্স করুন এবং ওনার জন্য প্রার্থনা করুন এবং সাথে আপনার আমার এবং সমস্ত উম্মাহ র জন্য ই প্রার্থনা করুন।

আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।

১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:২০
255576
নয়ন খান লিখেছেন : উনার জন্য তো সারাক্ষণই কাঁদছি, আল্লাহর কাছে জান্নাতের জন্য দোয়া করছি! ওটা সাহিত্যেরই অংশ।
314705
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:১৭
আবু জারীর লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সকলকে তাদের সাথী বানান।
ধন্যবাদ।
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:২০
255577
নয়ন খান লিখেছেন : আমীন।
314709
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৫
মৃনাল হাসান লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৫০
255590
নয়ন খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
314712
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : বাগানের শ্রেষ্ট ফুলটিই মালিক পছন্দ করেই বেঁছে নেন। ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৫০
255591
নয়ন খান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকেও জান্নাতের সাথী বানান। আমীন।
314769
১৪ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:০৬
সালাম আজাদী লিখেছেন : ভাই, শোক কে শক্তিতে রূপ দেই
জাযাকাল্লাহু খায়রান
১৪ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:৪০
255692
নয়ন খান লিখেছেন : ওয়া ইয়াক ইয়া শায়খান।
"তোমরা যারা মুহাম্মদের পূজা করো তারা জেনে রাখো তিনি মারা গেছেন। আর মনে রেখো আল্লাহ অবিনশ্বর, চিরন্তন।"

আমরা তো সেই সত্বারই উপাসনা করি। ভয় কিসের? মুখে তাসবীহ, বুকে শাহাদাতের তামান্না।
314851
১৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:১৩
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১০
314873
১৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:১৭
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : সারা দেশ তথা সারা বিশ্বব্যাপী যতগুলো লোক আজ মরহুম শহীদ কামরুজ্জামান ভাইয়ের গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই মিলে যদি সাহাবাগে প্রস্রাব করে তাহলে শাহাবাগী নাস্তিক ও ইন্ডিয়ার দালালেরা ঐ প্রস্রাবেই ভেসে যাবে! অথচ দালাল মিডিয়া গায়েবানা জানাজা গুলো না দেখিয়ে গুটিকয়েক নাস্তিক ও ইন্ডিয়ার দালালদের কেই বার বার হাইলাইটস করতেছে!!!
আল্লাহ যাকে সন্মানীত করতেচান, কেউ তাকে কলংকিত করতে পারেনা, এটাই বার বার প্রমানিত হচ্ছে। হে আল্লাহ তুমি প্রিয় নেতা মরহুম কামরুজ্জামান ভাইকে তোমার জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নাও। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
১৪ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
255914
নয়ন খান লিখেছেন : প্রত্যেক সমাজই একেক সময় একেকটা স্তর পার করে। বাংলাদেশ পার করছে মুসলিম বিদ্বেষীদের পোয়াবারো সময়। রক্ত বেয়েই ইসলাম আসে। মুসলিম জিন্দা হোতা হ্যায়, হার কারবালা কি বাদ। কারবালার পরেই মুসলিম জিন্দা হয়।
১১
314882
১৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৩০
অবিনশ্বর লিখেছেন : I have no doubt at all that Allah (SWT) the Almighty has accepted him as shaheed and welcomed him as His guest of honor in his eternal journey...
১৪ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
255915
নয়ন খান লিখেছেন : Inshallah, he will be among those.....

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File