নিজামীকে যেমন দেখেছি
লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ২৪ জুন, ২০১৪, ১২:২২:৪০ রাত
প্রথমেই বলে রাখি আমি নিজামীর পার্টিতে নাম জীবনেও লেখাইনি। তার দলের ভক্ত-অনুরক্তও আমি নই। একই এলাকার মানুষ। তাই খুব কাছ থেকে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে দেখেছি। তাই পাঠকদের সাথে এই সময়ে কয়েকটি ঘটনা শেয়ার না করলে তাঁকে খাটো করা হবে।
তখন আমি সবে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।ক্লাশ শুর হয়নি। রাজনীতি টাজরীতি বুঝি না। ৮৬ সালে ইলেকশনে উনি আমাদের এলাকায় প্রার্থী হন। এর আগে উনার নামও আমরা শুনিনি। অথচ উনার গ্রাম আমাদের গ্রাম থেকে মাত্র দুই কিমি হবে। শুধুমাত্র মোহনীয় ভাষণ আর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে এই অচেনা মানুষকে যে কি পরিমান আমজনতা ভোট দিয়েছিল, তা বিশ্বাস করা কঠিন। তবুও জিতলেন না। বেহায়া মিলিটারী লিডারের সুযোগ্য অনুসারী মেজর (অব মন্জুর কাদেরকে নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করল।
নিজামী জিতলেন না ঠিকই, তখন থেকেই তিনি কিন্তু মানুষের মণিকোঠায় ঠিকই স্হান করে নিলেন।
শ্রমিকদের সাথে নিজামী:
প্রথম নির্বাচনে পরাজয়ের পরও প্রতিমাসে অন্তত: একবার এলাকায় আসতেন। এলাকার মানুষের সাথে যেভাবে হাত মিলাতেন (একদিন দেখলাম রাস্তার মাটিকাটা শ্রমিকদের কাছে গাড়ী থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গিয়ে কোলাকুলি করছেন আর শ্রমিকরা, 'হুজুর হুজুর আমাদের হাত নোংরা', 'গায়ে মাটি' ইত্যাদি বলছে), গভীর পলকে তাকিয়ে তাদের পরখ করতেন, সবার সুখ-দু:খের কথা বিরামহীনভাবে শুনতেন তা সত্যি অনুকরণীয়। পথের ফকিরদেরকেও উনি বন্চিত করতেন না। ৫০০ টাকা, ১০০ টাকার নোট পকেট থেকে বের করে বিলি করতেন। শুধু ইলেকশনের সিজনে কিন্তু না!
উনার নাম মনে রাখার গুণটিও কিন্তু চমতকার! একবার কারো নাম শুনলেই বেশ মনে রাখতে পারতেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নিজামী:
একদিন আমাদের গ্রামে উনি এলেন। আমাদের পুরো গ্রামই মুক্তিযোদ্ধাদের। আমার নানার দূর সম্পর্কের দিক থেকে উনি আত্মীয়। নানা উনাকে মামা ডাকতেন। নানার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিলেন। গ্রামে এসে উনি নানাকে একদিন বুকের সাথে বুক মেলালেন। ভোট নিয়ে কথা বলতেন না। শুধু কুশল বিনিময় আর ছোটবেলাকার কথা স্মরণ করলেন। তাতেই নানা কূপোকাত। জীবিত থাকতে সারা জীবন উনার কথা মনে করেছেন আমার নানা।
আমার এক দূর সম্পর্কের মামা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ছিলেন। উনি তার খোজ নিলেন। দেখতে গেলেন। বড্ড অভাবী মুক্তিযোদ্ধাকে অর্থ সাহায্য দিলেন। একটা ঘরও করে দিয়েছিলেন। এই চুনো মামা কোনদিনও বলেননি নিজামী কোন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন।
ছাত্রদের সাথে নিজামী:
উনি তখন অনেক বড় নেতা। জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল। আমাদের এলাকার এমপিও। মাঝে মাঝে দেখা করতাম। ঢাকায় থাকতাম বলে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে, রাস্তাঘাট ইত্যাদির কথা উনাকে বলতাম। একদিন আমার বন্ধুরা বলল, চল উনার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দে। ডাইরেক্ট ফোন দিলাম উনাকে। বললেন চলে এসো। কোন প্রটোকল নেই। ছেলেপেলেদেরকে কোক, কলা, বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ণ করলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে সবার সাথে কথা বললেন। একজন একজন করে নাম শুনলেন, বাড়ি কোথায়, কি পড়াশুনা করি সব শুনলেন।
বিনয়ী নিজামী:
আমি বলব, এটা তাঁর চরিত্রের এক অহংকার! কিভাবে সম্ভব হল তার উত্তর খোজার চেষ্টা করি।কখনো রাগ নেই, ঠান্ডা মাথায় সর্বক্ষণ!
জোরে বা ধমকের সুরে কথা বলতেন না। মনে কষ্ট পাবে বা আদেশ হয়ে যাবে এইভাবে কথা বলতেন না।
চোখে ঔষধ লাগাবেন, হাতে নিয়ে বসে আছেন। আমি কাছেই। বললাম, কি কিছু করতে হবে? উনি বললেন, এটা লাগায়ে দিতা পারবা?
আরেকদিন পানি চাইলেন। পানি এনে দিলাম। দেখি গ্লাস হাতে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর বললাম, পানি খান। বললেন, পানি বেশী ঠান্ডা। পাল্টে ওয়ার্ম ওয়াটার দিলাম।
বাসায় গেলে উনার বড় ছেলের নাম ধরে বলতেন, তারেক, মেহমান এসেছে। তারেক রুটি, পেঁপে ভাজি নিয়ে আসত। সাধারণের ছাপ তার মধ্যে সবসময় দেখেছি।
ইবাদতে একাগ্র নিজামী:
ভাষণে তিনি যেমন ছিলেন বজ্রকঠিন, প্রার্থনায় ঠিক তার উল্টো, অন্য এক নিজামী। রমজানের শেষ দশদিন নিয়মিত ই'তেকাফ করতেন।
একবার আমাদের এলাকার এক মসজিদে ইতেকাফ করলেন। একরাতে সারারাত ধরে ইবাদত করছেন। কখনো নামাজ, কখনোবা কোরআন অধ্যয়ন, আবার কখনোবা লেখালেখি। একজন জানতে চাইলেন, এভাবে করেন কিভাবে?
উনি তখন বাইরে একদল ছেলেদের দেখালেন। ওরা ঘেমে ঘেটে অস্থির, কেবলই সিনেমা হলে ছবি দেখা শেষ করে বেরিয়েছে। বললেন, এরা কেমন করে পারে? পারে এজন্যই যে এরা সিনেমাকে খুব পছন্দ করে যার জন্য ওদের এত কষ্টও আঁচড় দিতে পারেনা। ইবাদতও এমনি।
চরিত্রের অনেক অসাধারণ গুণ উনার ভিতরে আছে যা আমি খুব কাছ থেকে নিরপেক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। কয়টা উল্লেখ করব?
আমাদের পাশের গ্রামের এক গোঁয়াড় রিটায়ার্ড আমলীগ (আমার আব্বার আবার বন্ধুও) উনার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়েছিলেন। সাক্ষী দিতে ঢাকাও গিয়েছিলেন কিন্তু বাড়ী ফিরলেন বোবা হয়ে। এখন কমপ্লিট্টলি বেডে, প্যারালাইজড। আল্লাহর শাস্তি বা কাকতালীয় যেটাই হোক নিজামীর মত মানুষের হাত দিয়ে যে অপকর্ম হতে পারে না সেটা এলাকার মানুষ হলফ করে বলতে পারবে।
ততকালীন বাকশাল ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাংগীর সাত্তার টিংকু ঢাকা ভার্সিটিতে উনাকে অপমান করার
অন্যতম একজন। কয়েকমাস পরে ওর বউ আত্মহত্যা করে মারা যায়। টিংকু এক গভীর রাতে নিজামীকে ফোন করে মাফও চায়।জাগতিক শাস্তিও হয়তো আল্লাহ দেখায়। জানিনা, বিষয়টি বড়ই দূর্ভেদ্য!
ছাত্রলীগের প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবালুর রহীমের ভাই ইনায়েতুর রহীম কালকে আদালত প্রাঙ্গন ব্যবহার করে হাসিনীয় আরেক রায় দিবে। কি দিবে তা সবাই জানে। হাসিনা এজন্যই কট্টর আমলীগ ও নাস্তিক পরিবারের একজনকে বসিয়েছে। রংপুরের লোকেরা এই পরিবার সম্পর্কে ভাল করেই জানে।
কিন্তু রোজ হাশরে যখন আদালতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা কাহ্হার সেজে বিচারকের আসনে বসে রায় দিবেন, তখন এই জালেমরা কি উত্তর দিবে? তাদের প্রসিকিউটরই বা কারা হবে?
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩৮ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার কথার সত্য অংশটুকুকে আপনার আখেরাতের পাথেয় হিসাবে কবুল করুক এবং আপনাকে আপনার জানা আরো গল্পগুলো গণমানুষের সাথে শেয়ার করার সময়, সুযোগ করে দিক। এটাই প্রত্যাশা।
আল্লাহ আপনার কথার সত্য অংশটুকুকে আপনার আখেরাতের পাথেয় হিসাবে কবুল করুক এবং আপনাকে আপনার জানা আরো গল্পগুলো গণমানুষের সাথে শেয়ার করার সময়, সুযোগ করে দিক। এটাই প্রত্যাশা।
আল্লাহ মজলুমকে সাজ্জ করুন ,,আমীন।
কিন্তু,
অপরাধ করল জাহাংগীর সাত্তার টিংকু আর আত্নহ্ত্যা করল ওর বউ বেচারী ,কেমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা ?
এতদিন পীর নামক ভন্ডদের এই ধরনের কারামতি শুনতাম,আফসুস মডারেট মুসলিমরাও এখন একই ধরনের কারামতি বর্ননা করে
কিন্তু,
অপরাধ করল জাহাংগীর সাত্তার টিংকু আর আত্নহ্ত্যা করল ওর বউ বেচারী ,কেমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা ?
এতদিন পীর নামক ভন্ডদের এই ধরনের কারামতি শুনতাম,আফসুস মডারেট মুসলিমরাও এখন একই ধরনের কারামতি বর্ননা করে
রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন