‘শহীদ’ নিয়ে হিন্দু-ওলামা লীগে বিরোধ, গণশ্রাদ্ধ কর্মসূচি বন্ধ

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৪৮:২৪ রাত



আরেকটা আওয়ামী মশকরা পড়তে এখানে টুকা মারুন অথবা নীচে যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরটিএনএন

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দু শহীদদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান প্রশাসনের বাধায় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রমনা কালি মন্দিরে শুক্রবার সকাল ছয়টায় এই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই গণশ্রাদ্ধ আয়োজন করা হয়েছিল। তবে ক্ষমতাসীন ওলামা লীগের দাবি, ‘শহীদ’ শব্দটি কেবল ইসলাম ধর্মের। হিন্দুরা এটা করতে পারে না।

অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি না করার কথা জানানো হয়। তবে এর আগেই আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ অনুষ্ঠানটি বন্ধে আদালতে মামলা করে।

আয়োজকদের একজন অরুন চন্দ্র রায় আরটিএনএন- কে গণশ্রাদ্ধ বাতিলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিজেকে গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের কর্মী দাবি করে অরুন চন্দ্র বলেন, ‘গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না করার জন্য প্রশাসন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, সরকার শুক্রবার এখানে কোনো অনুষ্ঠান করতে দেবে না।’

তাদের মধ্যকার কিছু হিন্দু নেতা এ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়ায় প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান অরুন চন্দ্র।

আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ ও গণশ্রাদ্ধ ’৭১’র আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শাহবাগ থানার পুলিশ মৌখিকভাবে আয়োজনটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেছেন, অনুষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন এ সিদ্ধান্ত, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

এর আগে অনুষ্ঠানটি বন্ধে আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান চিশতী আয়োজকদের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন হলেন- জয়ন্ত সেন, সঞ্জীব চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, অরুন মজুমদার, রিপন দে ও দয়াময় বিশ্বাস।

মুজিবুর রহমান চিশতী মামলার আর্জিতে বলেছেন, ‘শহীদ’ শব্দটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবহার হতে পারে। এছাড়া সব ধর্মের শহীদদের জন্য ‘গণপ্রার্থনা’ কর্মসূচিরও বিরোধিতা করেছেন তিনি।

এর আগে গণশ্রাদ্ধ ’৭১’র আয়োজক কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার সেন জানিয়েছিলেন, ‘একাত্তরে তো বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের শহীদ না বললে কী বলব? ভগত সিং, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন কি শহীদ নন? বাংলা অভিধানে শহীদ শব্দটি আছে। আরবি-ফারসি-হিন্দি-বাংলা সব ভাষার সম্পদ ‘শহীদ’ শব্দটি।’

তিনি ওই সময় আরো বলেন, ‘গণশ্রাদ্ধের পর সব ধর্মের শহীদদের জন্য রমনা কালী মন্দিরে প্রার্থনা করার কথা। আমরা অনুষ্ঠান করব। আপনারা আসবেন।’

তবে অনুষ্ঠান বন্ধের পর জয়ন্ত কুমার সেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অনুষ্ঠানের দাওয়াতী কার্ডের নম্বরে কল দিলে অরুন চন্দ্র পরিচয়ের এক কর্মী আরটিএনএন- কে বলেন, ‘এক অনুষ্ঠান নিয়ে নানামুখী চাপে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে কারও ফোন তিনি রিসিভ করছেন না।’

তবে জয়ন্ত কুমার কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তা অরুন বলতে রাজি হননি।

এদিকে, আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান চিশতীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে তার অংশের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসান শেখ বলেছেন, ‘আয়োজক হিন্দুরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ। স্বাধীনতার চার দশক পর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এই শ্রাদ্ধ করার উদ্দেশ্য কী?’

তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনকে ঘিরে মৌলবাদী বিভিন্ন শক্তি সরকার সম্পর্কে মানুষকে ভুল বোঝাবে। দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোনো মুসলমান রমনা কালী মন্দিরে প্রার্থনায় অংশ নিতে পারে না।’

আওয়ামী ওলামা লীগের অপর অংশের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেন, ‘তারা গণশ্রাদ্ধ আয়োজনের বিরোধী নন।’

তিনি বলেছেন, ‘ধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল্লাহ ‘রাব্বুল আল আমীন’ অর্থাৎ আল্লাহ সবার। যে কেউ যেকোনো উপায়ে আল্লাহকে ডাকতে পারে। এতে অসুবিধার কিছু তিনি দেখেন না।’

বিষয়: বিবিধ

২১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File