উদয়ন স্কুল সমাচার: ম্যাডাম ‘ঘ্যাচাং’
লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ২৭ মে, ২০১৩, ০৭:০৪:২৪ সন্ধ্যা
নিউজটা শেয়ার না করে পারলাম না
নিজস্ব প্রতিবেদক
আরটিএনএন
ঢাকা: রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের হাতাকাটা ইউনিফর্ম নিয়েই সোমবার ক্লাস করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগ দাবিতে তারা এই পোশাক পরে এসেছে বলে জানিয়েছে।
এছাড়া আজ একই দাবিতে সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে অভিভাবকরা। তারা তাদের দাবি আদায় না হলে লাগাতার আন্দোলনে ঘোষণা দিয়েছেন।
উদয়ন অভিভাবক পরিষদের সচিব ও দপ্তর সম্পাদক মাকসুদুর রহমান আরটিএনএন- কে লাগাতার আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় বিদ্যালয়ের সামনে অভিভাবকদের মানববন্ধনের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মাকসুদুর রহমান আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের হাতাকাটার অভিযোগে মাহবুবা খানম কল্পনা এবং তাকে সহায়তা করার অভিযোগে প্রিন্সিপাল উম্মে সালেমা বেগমের অপসারণ দাবিতে ১ জুন থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাব আমরা।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন ও অভিভাবকদের গণসাক্ষর সংগ্রহ করব। এতেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব।’
এ বিষয়ে অভিভাবক পরিষদের নির্বাচিত সচিব সাজিদুল হোসেন সরকার বলেন, ‘মাহবুবা খানম কল্পনা পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের জামার হাতা কেটে গর্হিত কাজ করেছেন। তাদের অপসারণে যা করতে হবে, আমরা তারই সবই করব।’
তিনি বলেন, ‘মাহবুবা খানম একজন হঠকারী শিক্ষিকা এবং সালেমা বেগম একজন বেখেয়ালী শিক্ষিকা। এদের তত্ত্বাবধানে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ নয়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদের অপসারণ করা হোক।’
এই ঘটনায় উদয়ন সাধারণ অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘হাতাকাটার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবশ্যই আমরা এর বিচার চাই। তবে, তা তদন্তেরসাপেক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে মাহবুবা খানম ছাড়াও আরো কারা জড়িত তা খতিয়ে তদন্ত করতে হবে। এছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে বিদ্যালয়ের ভেতর ও বাইরের কারো হাত রয়েছে কিনা তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখতে হবে।’
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থীদের জামার হাতা কেটে দেওয়া হয়েছিল, তারা আজ কাটা হাতা পরেই বিদ্যালয়ে এসেছে এবং ক্লাস করেছে।
তারা কেন কাটা হাতা জামা পরে বিদ্যালয়ে এসেছে এমন প্রশ্নে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমত আরা জানায়, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই কাটা হাতা জামা পরেই বিদ্যালয়ে আসব। যতদিন প্রিন্সিপাল সালেমা বেগম ও শিক্ষিকা মাহবুবা খানম ম্যাডামকে অপসারণ করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই জামা পরেই ক্লাস করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার ঘটনার পর থেকে মাহবুবা খানম কল্পনা বিদ্যালয়ে আসেননি। তাছাড়া তার মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে দায়িত্ব থেকে তাকে স্থগিত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল উম্মে সালেমা বেগম নিজেকে হাতাকাটার ঘটনায় নির্দোষ দাবি করেছেন।
সোমবার তিনি আরটিএনএন- কে বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমি বিন্দু পরিমাণেও জড়িত নই। ওইদিন মাহবুবা খানম ক্লাসে যাওয়ার আগে শুধু আমাকে বলেন, ‘ম্যাডাম শিক্ষার্থীদের ঘ্যাচাং করতে যাচ্ছি’। রবির বিজ্ঞাপনের কথা ভেবে তার ওই কথাকে আমি মজা ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যে শিক্ষার্থীদের জামার হাতা কাটতে যাচ্ছেন, তা আমি বুঝতে পারিনি।’
সালেমা বেগম আরো বলেন, ‘আমি কল্পনা ম্যাডামের ওই উদ্দেশ্য বুঝতে পারলে এই ধরনের কাজ কিছুতেই হতে দিতাম না।’
এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করার কথা বলে প্রিন্সিপাল জানান, ‘ওইদিন যে সকল শিক্ষার্থীদের জামার হাতা কাটা হয়েছে, তাদের তালিকা নেওয়া হচ্ছে। আজই (সোমবার) টিফিনের পর সেসব শিক্ষার্থীদের কাছে সরি বলব।’
আরো ৩ শিক্ষক জড়িত, মাহবুবার দুঃখপ্রকাশ
ওই ঘটনায় মাহবুবা খানমকে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এই বিষয়ে চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল উম্মে সালেমা বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ২৩ মে মাহবুবা খানমকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছি। ২৫ মে তিনি কারণ দেখিয়ে চিঠির উত্তর দিয়েছেন।’
চিঠিতে মাহবুবার উত্তরে কি ছিল এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘চিঠির উত্তরে মাহবুবা খানম জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ড্রেস কোড মানতে বাধ্য করা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই আমি এই কাজ করেছি। এই কাজে আমাকে বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক কেজি মোস্তফা, মেহেজাবিন আলম চৌধুরী এবং সুফিয়া খাতুন সহায়তা করেছেন।’
‘শিক্ষার্থীদের হাতাকাটার সময় কেজি মোস্তফা, মেহেজাবিন আলম চৌধুরী এবং বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির সদস্য ও অভিভাবক প্রতিনিধি রুহুল আমিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হাতাকাটার জন্য কাঁচি পেতে মেহেজাবিন আলম মাহবুবা খানমকে সাহায্য করেছিলেন। এবং হাতা কাটাতে যাওয়ার সময় প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে জানিয়ে গিয়েছিলাম।’- চিঠিতে উল্লেখ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রীর স্ত্রী মাহবুবা খানম কল্পনা।
তিনি টিঠিতে আরো উল্লেখ করেছেন, ‘এই ঘটনা এইভাবে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে তা আমি ভাবিনি। তারপরেও এই ঘটনার জন্য আমি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।’
বিষয়: রাজনীতি
১৮১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন