সন্তান ও শুভাকাংখীদের উদ্দেশ্যে গ্রেফতারের পুর্ব মুহুর্তে শায়খুল হাদীস মাওলানা একেএম ইউসুফ সাহেবের অছিয়ত

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ১৩ মে, ২০১৩, ০৫:৩২:০২ বিকাল



আমার বয়স এখন ৮৭ বছরে উপনীত হয়েছে। আমার সমবয়সী সাথী ও বন্ধুদের অধিকাংশই এখন দুনিয়া ত্যাগ করে পরপারের যাত্রী। বর্তমানে বয়সের ভার ও নানা রকমের জটিল রোগে রোগাক্রান্ত সত্বেও আল্লাহ এখনও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার আট সন্তান ও চব্বিশ জন নাতি-নাতনীদের অধিকাংশই এখন বিদেশে। আমেরিকা, কানাডা ও আরব আমিরাতে বসবাস করছে।

যেহেতু আমার বয়স অধিক; উপরন্ত আমি নানা রকম জটিল রোগে রোগাক্রান্ত, যেকোনো সময় আল্লাহর পক্ষ থেকেপরপারের আহবান আসতে পারে, যথাসম্ভব এই আশংকার প্রেক্ষিতে আমার সন্তান ও নাতি-নাতনীরা আমার জীবন-চরিতের উপর একখানা পুস্তিকা প্রকাশের আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে তাদের ও আমার অগনিত শুভাকাংখীদের উদ্দেশ্যে নিম্নে লিখিত কথাগুলি পেশ করছি। আশা করি এরা সকলেই আমার অন্তর নিংড়ানো এ কথাগুলিকে উপদেশ (অছিয়ত) হিসেবে গ্রহণ করবে।

আমি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন ক্ষুদ্র বান্দাহ ও দাস। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমার ও আমার সন্তান-সন্ততি ওনাতি-নাতনীদের উপরে করুনার যে ধারা প্রবাহিত রেখেছেন, আমার কামনার চেয়ে তা অনেক অধিক, যার শুকরিয়া আদায় করা আমার সাধ্যের অতীত। আল্লাহর প্রিয় ও মকবুল বান্দাহদের নেক আমলসমূহের ধারে কাছেও আমি পৌছতে পারিনি। তবে আল্লাহর উপর গভীর ঈমান নিয়তই আমাকে তাঁর মহান রসুলের (সাঃ) পথ অনুসরণ করে চলার তাকীদ করেছে। ফলে আমি জীবনভর ঐ পথ অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করেছি। যদিও চলার পথে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভুল-ভ্রান্তিও হয়েছে। যার জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী ও তার করুণার ভিখারী। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেনঃ

অর্থাৎ তোমরা আমার রহমত হতে নিরাশ হবে না। আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (আয-যুমার, ৫৩)

আমি আমার সন্তান ও শুভাকাংখীদের উদ্দেশ্যে বলতে ছাই যে, আমি মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সাঃ) নির্দেশের আলোকে পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের হক আদায়ের ব্যাপারে যেমন সজাগ ও সতর্ক ছিলাম, তেমনি সতর্ক ছিলাম সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণের ব্যাপারে। দেশ ও দেশের বাহিরে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য যারা কাজ করেছেন, আমার ক্ষূদ্র প্রচেষ্টা নিয়ে তাদের কাতারেও শামিল ছিলাম।

আমার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য আমার অছিয়ত, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনদের অধিকারের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকবে। তেমনি সতর্ক থাকবে প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের অধিকারের ব্যাপারেও। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের কথাটাও যেনো তোমাদের চিন্তায় থাকে।

পরম করুণাময় আল্লাহর আমার উপর অনুগ্রহ ছিলো, ফলে আমি দেশ-বিদেশের কতিপয় নেক বান্দাহ ও দাতা সংস্থার সাহায্যে আমার মাতৃভূমির সব এলাকায় বেশ কিছু জনকল্যানমূলক (সদকায়ে জারিয়াহর) কাজ করেছি। সাধ্যের মধ্যে থেকেতোমরাও কিছু সদকায়ে জারিয়াহর কাজ করবে। কেননা সদকায়ে জারিয়াহর সওয়াব মৃত্যুর পরেও আমলনামায় জমা হতে থাকে।

আমার প্রাণাধিক সন্তান-সন্ততির জন্য আমার উপদেশ (অছিয়ত) হলো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার নির্দেশিত ফরয ইবাদত সমূহ যেমন নামায, রোযা, যাকাত ওহজ্জ্ব নিয়মিত আদায়ের ব্যাপারে আদৌ গাফলতি করবেনা। গুনাহের (অপরাধমূলক) কাজের ধারে কাছেও যাবে না। আর নিয়তই নৈতিক চরিত্রের উঁচুমানে পৌছার জন্য সচেষ্ট থাকবে।

উপরে যে অছিয়ত আমি আমার সন্তান-সন্ততিদের উদ্দেশ্যে করলাম, ঐ একই অছিয়ত আমার আন্দোলনের সাথী প্রবীণ ওতরুণদের জন্যেও রইল।

আবুল কালাম ইউসুফ

জমাদিউস্‌ সানী ১৪৩৪ হিজরী

৪ মে ২০১৩ ঈসায়ী

বিষয়: বিবিধ

২৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File