তাঁর হঠাৎ করে “বাচ্চু রাজাকার” হয়ে উঠা- - এডভোকেট নয়ন খান
লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ২৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:০৩:২৪ রাত
বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ২০১১ সালের আগে এই লোকটার নাম যে “বাচ্চু রাজাকার” তা ক’জন মানুষ জানত? বাংলাদেশের মিডিয়া হঠাৎ করে তাঁর নাম দিয়ে দিল ‘বাচ্চু রাজাকার’- এক ভয়ংকর সন্ত্রাসীর নাম। ভুলেও বলছে না তাঁর আসল পরিচিতি। রাজনীতির হীন চোরাবালিতে সবাই যেন বন্দী! অথচ আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ইত্যাদির চোখে তিনি এখনো বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় ধর্মযাজক, টিভি উপস্থাপক-Televangelist, নাম মাওলানা আবুল কালাম আযাদ। অমন ন্যাক্কারজনকভাবে মিথ্যা কথা তারা বলতে পারল না।
অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আযাদ। দল-মত-নির্বিশেষে আপাদমস্তক একজন খাঁটি আলেমে দ্বীন হিসাবে মানুষ তাঁকে জানে। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রেডিও, টিভিতে সমানে প্রোগ্রাম করতেন। হত-দরিদ্র মানুষের কল্যানে এমন কোন উদ্যোগ ছিল না যেটাতে উনাকে দেখা যায়নি। হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে আন্তঃধর্ম ডায়লগ করতেন। বিধবা, এতিমদের পূনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে দিন-রাত কাজ করতেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও ছুটে যেতেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এখানে দেখুন মাত্র একটা নমুনা
সর্বশেষে তাঁর এনটিভির “আপনার জিজ্ঞাসা” এনে দেয় এক সামাজিক বিপ্লব। দরাজ কন্ঠে অত্যন্ত সুন্দর করে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ইসলাম প্রচার করলেন। মা-বোনদের মনের গভীরে লুক্কায়িত থাকা অজস্র প্রশ্নের সুন্দর করে শুদ্ধ বাংলায় উত্তর দেয়া শুরু করলেন। করলেন শিরক, বিদ’আত, মাজার পূজার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন। এই অসাধারণ জনপ্রিয়তাই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়াল।
সুতরাং বাজানো হল ১৯৭১ ড্রামা। শয়তানরা আর কিভাবে তাঁকে সহ্য করবে? ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে মাওলানা আযাদকে যুক্ত রাখার নাটক শুরু হল। যা মানুষ আগে কখনো শোনেনি। প্রমাণ হিসাবে হাজির হল, নাটক, জনকন্ঠ (যে পত্রিকা প্রকাশিতই হয়েছে স্বাধীনতার প্রায় তিন যুগ পর), শাহরিয়ার কবিরের লেখা আর্টিকেল। সাক্ষী হল চোর, বাটপার। কোন মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার এমনকি তাঁর এলাকার কোন আঞ্চলিক কমান্ডারও সাক্ষীর তালিকায় নাই। সরকার তাঁর অবর্তমানে তাঁর পক্ষে নিয়োগ দিল আজ্ঞাবহ এক আইনজীবি শুকুর খানকে। ইনি আওয়ামী লীগের এক অঞ্চলের সভাপতি। বিচারকার্য সার্বিকভাবে সম্পন্ন করতে বিচারকদের এক মাস সময়ও লাগল না। সাতটি ভয়ংকর অপরাধের (তার মধ্যে অবশ্যই ধর্ষণ, খুন, হিন্দু হত্যা আছে) কারণে গত ২১ জানুয়ারী দুই বিচারক তাঁর ফাঁসির রায় দেন। । এরই নাম আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল! হেগে দশকের পর দশক ধরে যেখানে যুদ্ধাপরাধ মামলা শেষ করতে পারে না, সেখানে এত বড় বড় অপরাধ (তাও চল্লিশ বছর আগের করা) সব প্রমাণ হয়ে গেল দুই সপ্তাহে! মাওলানা আযাদ দোষী হয়ে গেলেন!
এই সেই বিচারক, শাহীনূর রহমান যাকে নিয়ে স্কাইপি কেলেংকারীতে ব্রাসেলসের ডঃ জিয়াউদ্দিন বিচারপতি নাসিমকে বলছেন, “ঠাস কইরা আমার পায়ের উপর পইড়া গেল............” রায় দিয়ে দিল, ফাঁসি। রায়ের মধ্যে বিজ্ঞ বিচারকরা আরো বললেন, জামায়াতের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন, জামায়াত নেতা মুজাহিদের বন্ধু ছিলেন ইত্যাদি! বিচারালয়ের কি দূর্গতি! শয়তানও বুঝি আড়াল থেকে হাসছিল!
রায় ঘোষণার আগেই সব স্ক্রিণ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়া প্রস্তুত করা ছিল। পত্রিকায় এসেছে আওয়ামী লীগের ব্যানারও আগ থেকেই রেডি করা ছিল। কারণ আওয়ামী লীগের ‘বিজয়’ মিছিল রায় ঘোষণার কয়েক মিনিট আগেই শুরু হয়েছিল। নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা গেল বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসিতে উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ, কত প্রতিবেদন, কত প্রতিক্রিয়া!
২২ জানুয়ারী বাংলানিউজ২৪ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গন প্রভু জগদ্বন্ধু ব্রহ্মচারী আশ্রমের সেবায়েত হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারী বলেছেন, “"প্রভুই পাপের শাস্তি দেন, তাড়াতাড়ি যেন ফাঁসি হয়।” মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী বাহিনী জনাব হরিপ্রিয় ব্রহ্মচারীর আশ্রমে হামলা করে এবং আটজন ব্রহ্মচারী সন্যাসীকে হত্যা করে। ঐ অমানবিক ঘটনার মর্মান্তিক, দীর্ঘ, বিস্তারিত বর্ণনার পর মাওলানা আযাদ বা মুজাহিদ ওখানে ছিলেন কি না এ প্রসঙ্গে ছোট করে কেবল উল্লেখ করা হয়। এ প্রশ্নের জবাবে অনেকক্ষণ মৌন থেকে ফের মুখ খুললেন সম্প্রদায়ের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সম্পাদক হরিপ্রিয়, "নারে বাবা, কাউকে চিনতাম না। তবে যে বাঙালী-বিহারিরা এসেছিলো তাদের মেলেটারীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। উর্দু বুঝি না, তবে মনে হলো, হিন্দু, জয় বাংলার লোক বলে মেরে ফেলার কথা বলছে। অনেক পরে শুনতে পেরেছি, ওরা নাকি মেলেটারীদের সহযোগী ছিলো, শান্তি কমিটি ছিলো রাজাকার ছিলো। আর মানুষ বলেরে ভাই, ওদের মধ্যে নাকি ও দুজন মানুষও ছিলো"।
এই হলো অবস্থা! অমুকের কাছ থেকে শুনেছি, অমুক তাকে মারতে দেখেছে বলে হাটে-বাজারে আলাপ করেছে ইত্যাদি এসব অনুমানের উপর ভিত্তি করে চলছে ইতরদের রাজনীতি। আওয়ামী-বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে জাতির কলংক মোচনের রাজনীতি করছেন আজকের মাননীয় বিচারকগণও।
মাওলানা আবুল কালাম আযাদরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়মাস ধরে অপরাধ করলেন। তারপর হঠাৎ করে ভাল হয়ে গেলেন। আগেও তাঁদের চরিত্রে কলংক নেই, একাত্তরের পরেও নেই। তাঁদেরকে বাংলার মানুষরা ইসলামের সেবক ও মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবেই জানল। আর যারা ওই সময় দেবতা ছিলেন বলে দাবী করেন, তারা আজ পর্যন্ত কোন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলেন না। একেক জন এখনো লম্পট হিসাবেই পরিচিত। পুরো মন্ত্রীসভা লক্ষ্য করুন। মাথা থেকে শুরু করে একদম নীচ পর্যন্ত প্রত্যকেই মিথ্যাবাদী। আওয়ামী লীগের ৭৩ সালের সাবেক এমপি এবিএম মূসার ভাষায়, ‘চোর’। এমনকি কিছু কিছু মন্ত্রীদেরকে ইডেন কলেজের মেয়েদের সাপ্লাই পর্যন্ত দিতে হয়।
http://www.amarblog.com/abuzubaer/posts/101497 " target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">পড়ুনঃ ছাত্রলীগের যৌন শিক্ষা
দেহব্যবসা নিয়ে ইডেনে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ : আহত (আমারদেশ, মার্চ ১৩, ২০১০)
এখানেওঃ
http://www.sonarbangladesh.com/newsdetails.php?ID=3020
প্রতিদিনই এরা ধর্ষণ ও অহরহ খুন করেই যাচ্ছে। জ্বাজ্বল্য প্রমাণের ভিডিও ক্লিপ থাকার পরও তাদের বিচার হচ্ছে না। হবেও না, কারন এরা সার্বভৌমত্বের একমাত্র অধিকারী মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে নাই। সুতরাং কোন সমস্যা নাই। তারা বীর, গর্বিত বাঙালী! চল্লিশ বছর আগের কল্পিত গল্প নিয়েই এরা ‘দেশপেমিক’ হয়ে থাকবে।
জাতিকে চল্লিশ বছরে অনেক কিছু দিয়েও মাওলানা আবুল কালাম আযাদদের দুনিয়াটা ছোট হয়ে আসছে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আজ তাঁদের সাহায্যের কেউ নাই। কোটি কোটি তাঁদের ভক্ত, অনুরক্ত নীরবে চোখের পানি ফেলছে আর আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন, “আল্লাহ, জালিমদের থেকে তুমি এই জনপদকে রক্ষা করো। তোমার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া এই লোকগুলোর আর কোন অপরাধ নাই।”
জালিমরা কখনো শিক্ষা নেয়না, নিকট অতীত থেকেও না। হোসনী মোবারককে মূরসী সরকার তার অজস্র অপরাধের শাস্তিই দিতে পারছেন না। আল্লাহ তাকে যন্ত্রণার এমন সাগরে রেখেছেন যে ডাক্তারকে প্রায়শঃ বলতে হয়, “আমাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলুন। আর বাঁচতে চাইনা।” কিন্তু ডাক্তার উত্তরে বলছেন, “না, তোমাকে এমনিভাবেই বেঁচে থাকতে হবে।”
বেন আলী, গাদ্দাফী, মোহাম্মদ সালেহদের পরিণতি এদের চোখে ধরা পড়ে না। ১৯৭১ সালে যাঁদের বাঁচারই কথা ছিল না, তাঁদেরকে আজ ফাঁসি দেয়ার সমস্ত ব্যবস্থা সম্পন্ন করছে এই মূর্খরা। আর যাদের বীর দর্পে চষে বেড়ানোর কথা ছিল তারা আজ কোথায়? আজ থেকে চল্লিশ বছর পর বাংলার ইতিহাস কেমন হবে? আওয়ামী লীগ দেশ চালাবে না মাওলানা আবুল কালাম আযাদের অনুসারীরা তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন