এইমাত্র শাপলা চত্তরে থাকা হেফাজত কর্মীর কাছ থেকে যা শুনলাম.....
লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ০৮ মে, ২০১৩, ১২:২৭:৪৩ রাত
এরা কি সত্যি বাংলাদেশ পুলিশ বা বিজিবি'র সদস্য?
নাম দিলাম আদী। ছেলেটা খুবই গো-বেচারা টাইপের। হাফেজ হল এবার। আদীর বাবা-মা'সহ বাড়ীর সবাই তাবলীগ জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এক ভাগ্নে শিবির করায় সারা জীবন তাকে শাসিয়েছে।বলত, এত মারামারির মধ্যে তোমরা কেন যে যাও, ইত্যাদি।
এবার ব্লগে প্রিয় নবীর শানে নাস্তিকদের কটুক্তি নিজে পড়ে আদী স্থির থাকতে পারেনি। বাবা-মা'র বাধাও মানেনি। চলে গেছে আল্লামা শফীর ডাকে মতিঝিলে।
ওর এক হুজুরের ছিল পাজামা-পান্জাবী ও টুপির দোকান। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে। ৫ই মে'র সপ্তাহ দুয়েক আগে চল্লিশ হাজার পাজামা-পান্জাবী ও টুপির অর্ডার পান হুজুর। হুজুর কষ্ট মষ্ট করে ডেলিভারীও দেয় ৪ই মে। ৫ই মে'র আগে বুঝতেই পারেন নাই এইগুলো যে ছিল ছাত্রলীগ, যুবলীগ বাহিনীর অর্ডার!
স্টেজের একদম সামনে ছিল প্রায় দশ হাজার অচেনা নব্য স্বেচ্ছাসেবক। মিটিং শুরুর আগে কিছু চালাক ছেলে-পেলেরা হেজাজতের নেতাদেরকে বলেছিল ওদেরকে তারা চেনেন কিনা। তখন ওত গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কেউই ভাবেনি আওয়ামী লীগ তাদের এরকম সর্বনাশ করবে। যখন পুলিশ-বিজিবি'র মোড়কে রাতের ডাকু বাহিনী পেছন থেকে হামলা চালায় তখনি পায়জামা পান্জাবী পড়া অচেনা দানবেরাও একসাথে হামলে পড়ে হেফাজতের উপর। ভিকটিমেরা বুঝতেও পারেনি কে তাদের শত্রু, কে তাদের মিত্র।
একসাথে ৫০ জন গিয়েছিল মিছিলে, ফিরেছে আদী একা। কাছের বন্ধু-বান্ধবেরা আজ শহীদী ইদগাহে। দুইদিন ধরে ওর নাওয়া খাওয়া বন্ধ। কথা বলতে পারছে না। আদীর মা আমাকে বলল, কেমন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে ছেলেটা। আদী বলে, যারা ঢাকায় থাকে তারা কোনমতে পার হতে পেরেছে, কিন্তু যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে, তারা পালাবে কিভাবে? রাস্তা চেনে না, সব অলিগলি বন্ধ। সবই তাদের অচেনা। মাত্র একদিকে খোলা রেখে সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল রাতের বাহিনী।
পুলিশের সাথে নিরীহ ছেলে-পুলেরা কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাতের ডাকু বাহিনী যে বাংলা বোঝে না। ইংরেজীও না। পুলিশ, বিজিবি'র পোশাক পড়া। নিজেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হিন্দী ভাষায় কথা বলে। শুরু হয় স্টেজের দিকে তাক করে মূহুর্মুহু গুলি। তখনো কমপক্ষে এক লক্ষ লোক স্টেজ ও মতিঝিল স্কোয়ার মিলিয়ে। কেউ ঘুমে, কেউবা জিকিরে। রাসুলের শানে গান গাচ্ছিল কিছু শিল্পী। সব সাবাড় করতে ওদের ঠিকই ১০ মিনিট লেগেছিল। টানা গুলি। একদিকে ট্রাক উঠিয়ে দিচ্ছিল ঘুমন্ত এবং জীবিত মানুষদের উপর আর অন্যদিকে ট্রাকে করে উঠাচ্ছিল লাশগুলো। আদীর ভাষায়, কমপক্ষে দশ হাজার শহীদ হয়েছে। এমনকি স্টেজে যারা ছিল তাদের কারো বাঁচার কথা না।
আদী প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু এ যেন বোঝা ঠেকছে তার কাছে। যেন অসাড় দেহ টেনে বেড়ানো। আদীর চাচা আযম আলী সাহেব স্থির থাকতে পারলেন না। পিলখানায় তার এক আত্মীয় থাকেন।বিজিবি'র এক বড় কর্মকর্তা। পরদিন ৬ই মে রাতে চলে যান তার কাছে। জানতে চান কেন এমন হল? উত্তর শুনে চাচার চোখ আরো ছানাবড়া। বিজিবি'র ওই কর্মকর্তা আযম সাহেবকে নিয়ে যান গ্যারেজে পার্কিং করা কিছু ট্রাকের কাছে। ট্রাক ভর্তি লাশ! তখনো ডাম্প করা হয়নি।
আযম সাহেব আর বিজিবি'র কর্মকর্তা উভয়ই নীরব। শুধু দু'গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
নীচের ছবিগুলো যোগ করছি আর কাঁদছি। ছবিগুলো যোগ করার আগে বাড়ীতে ফোন দিলাম। আম্মার সাথে কথা বল্লাম। আমাদের অনেক আত্মীয় পুলিশ, বিজিবি'তে কর্মরত। আম্মা বললেন, আমার ছোট খালু যিনি কিনা পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন, তিনি বললেন উনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আছেন। আজকে হরতালে ডিউটি দিচ্ছেন। উনি বলছেন, লাশ ভর্তি ট্রাক রাজারবাগ পুলিশ লাইনেও আছে! উনার শরীর কাঁপছে।
এখানে ক্লিক করুন আরো পড়ার জন্য
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন