মুখোশ-২: বাংলা ভাষায় নাস্তিকতার উত্থান: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ই হচ্ছে এদেশে নাস্তিকতার সুতিকাগার (পর্ব-২)

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:১০:৩৭ রাত

পর্ব-১ এখানে: মুখোশ-১: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ই হচ্ছে এদেশে নাস্তিকতার সুতিকাগার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ই হচ্ছে এদেশে নাস্তিকতার সুতিকাগার:

ইমরানের সাথে আপনারা সব সময় যে লোকটাকে দেখেন সে হল ইটিভি'র সিনিয়র সাংবাদিক অন্জন রায়। স্বঘোষিত নাস্তিক পার্টি সিপিবি'র লিডার। আওয়ামী লীগ নেতা নূহ আলম লেনিনের বন্ধু। ইমরানকে সামনে আনার মূল মন্ত্রদাতাই হল অন্জন। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মূখার্জী, পররাস্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ, কোলকাতার গায়ক সুমন কবির, ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের শাহবাগ ভ্রমণ সবকিছুরই দেখভাল করত এই সুশীলের আড়ালে সাংবাদিক।

ইমরানের সাথে অন্জন রায় (ওর ডান দিক থেকে ৩ নম্বরে)



সিপিবি'র পতাকা হাতে ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২ হরতাল ক্যাম্পেইনে ঢাকার রাজপথে অন্জন রায়।



মুরুব্বীরা যারা কিনা আওয়ামী লীগকে ভালো করে জানে, তারা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ’ ও ‘ইসলাম’ দুইটা শব্দ এক সাথে চলেনা। আইনমন্ত্রী মন্ত্রীত্ব লাভের পরদিন থেকেই বলে আসছেন “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিলুপ্ত করে ১৯৭২’’র সংবিধানে ফিরে যেতেই এ সরকারের আগমন। দেশের কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গিদের ‘প্রজনন কেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে! এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয় তা নাকি কুপমন্ডুকতার সৃষ্টি করছে।” তিনি ‘দু:খের সঙ্গে’ বলেছেন, মসজিদের ইমাম সাহেবরা নাকি কেবল বেহেশতে যাওয়ার শিক্ষা দেন। কত তাড়াতাড়ি বেহেশতে যাওয়া যায়, মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সেসব শিক্ষাই দেয়া হচ্ছে।

মুজিবামলে পুরা সময় ধরে ইসলামের উপর রক্ত চক্ষু বর্ষিত হয়েছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ‘মুসলিম’ ও ‘ইসলাম’ শব্দদ্বয় উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন আমাদের তথাকথিত এই কিংবদন্তী নেতা। এমনকি বিশেষ্য বচন থেকেও। যেমন, কবি নজরুল ইসলামের নাম থেকে ‘ইসলাম’ শব্দ তুলে ঢাকার একটি কলেজের নাম ‘কবি নজরুল কলেজ’ রাখা, ‘জাহাংগীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হল’ ইত্যাদি থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ তুলে নেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে ওহীর প্রথম শব্দ ‘ইক্বরা’ উঠানো ইত্যাদি। আজানও বেতার এবং টিভিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তূর্কী নেতা কামালের পর মুসলমান নাম নিয়ে এরকম মুসলমানদের সর্বনাশ করার লোক আর বোধ হয় পাওয়া যাবে না। অথচ হিন্দু নামের কোন শব্দেই হাত দেননি আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।

বলা হয় হাসিনা একজন পাক্কা ধার্মিক মহিলা। বলা হয় তাহাজ্জুদ গোজারী। কিন্তু মা দূর্গার উপর তার প্রচন্ড বিশ্বাস। ধানের ফলন বাড়ায় মা দূর্গার হাত রয়েছে বলে তিনি ব্যাপক নিন্দিত হয়েছিলেন আলেম সমাজে। একজন মুসলিম কখনো পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করতে পারেন না।

তাঁর উপদেষ্টামন্ডলী ও মন্ত্রী বাহাদুররাও কম না।

আওয়ামী লীগকে দেশের একমাত্র ইসলামি দল বলে মশকরা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। জনাব এইচ টি ইমাম খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভার শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি বলেছেন, দেশে ইসলামি পরিবার থাকলে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পরিবারই আছে। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী ওলামা লীগ আয়োজিত “ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এইচ টি ইমাম আরো বলেন, দেশে ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এই ইসলামের প্রবর্তক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ তাকে উদ্দেশ করে বলা হয়, তার পরিবার নাকি হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিল। তিনি বলেন, জামায়াত নেতারা রোজা রাখে ঠিকই, কিন্তু ইফতার করে হুইস্কি দিয়ে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ায় উপস্থিত দর্শকরা বারবার প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তিনি বক্তৃতা দিয়েই যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় অধিকাংশ লোক দাঁড়িয়ে গেলে তিনি বক্তৃতা সংক্ষেপ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু তার পরও তিনি বক্তৃতা দিয়েই যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেয়া অবস্থায় সবাই চলে যেতে থাকে। ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও কেউ কথা না শুনে নামাজের জন্য চলে যান। পরে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ওলামা লীগ সভাপতি মাওলানা ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাজাহান মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামানসহ আরো অনেকে। (আমারদেশ, নয়াদিগন্ত, এপ্রিল৩, ২০১০)

আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আল্লাহকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন। বলেছেন, " লাখ লাখ কোটি কোটি বছর পর আল্লাহ যদি আমাদের বিচার করতে পারেন তবে আমরা এখন এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে পারব না কেন?" নয়াদিগন্ত, আমারদেশ, মার্চ২১, ২০১০)। কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি!

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কৃষি মন্ত্রী, ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী মুখে যা আসে তাই বলেই। ইসলামের শব্দাবলীর অপব্যবহারে এই খান্নাসকে কেউ টপকাতে পারবে না। তিনি হালে নতুন উম্মতের সন্ধান দিয়েছেন। বিএনপি জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, তারা রাসূলে পাক (সা.)-এর ইসলামে বিশ্বাস করে না। বিএনপি হচ্ছে জিয়াউর রহমানের উম্মত, তাদের দোসর জামায়াত হচ্ছে নিজামীর উম্মত, আর আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা মহানবীর (সা.) উম্মত। (আমারদেশ, ২১ মার্চ, ২০১০)

শেখ মুজিবের ইসলাম বিদ্বেসী ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকেও বর্তমান আওয়ামী লীগ উল্টাভাবে প্রচার করতে একদল মোনাফিককে সামনে আনছে। ‘পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে খলিফাতুল মোসলেমীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন খলিফাতুল মুসলিমিনদের একজন। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বশূন্য অসহায় দরিদ্র মুসলমান তথা সারা বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর আপসহীন লড়াইয়ের কারণে বঙ্গবন্ধুই সারা বিশ্বের মুসলমানদের একমাত্র অভিভাবক ছিলেন। তারা বলেন, আমাদের ঈমানই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেন তারা কুরআনকে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ-জিন্দাবাদে’ কোনো ফজিলত নেই কিন্তু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে বরকত ও ফজিলত আছে। হায়দার আলী চৌধুরী তার বই সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার গবেষণায় পেয়েছি, পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে ঈমানের প্রধান শর্তই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষ না হলে ঈমানদার দাবি করা যাবে না। আর যাদের ঈমান নেই তারা মুসলমান নয়। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা ঈমানের অঙ্গ। এটি পবিত্র কুরআনের শাশ্বত বিধান। তাই খলিফাতুল মুসলিমিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করে ঈমানি দায়িত্ব পালন করেছেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বার্তাঙ্গনের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ভোরের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক নাসির উদ্দিন চৌধুরী। আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলেও সাড়ে ১০টার অনুষ্ঠান সাড়ে ১১টায়ও শুরু না হওয়ায় তিনি চলে যান। অন্যান্যের মধ্যে সুর্প্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শ ম রেজাউল করিম, বইটির লেখক হায়দার আলী চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আফাজ উদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ আখতার ইউসুফ, বিএফইউজে মহাসচিব আলতাফ মাহমুদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহা ও সাংবাদিক শাহীন ইসলাম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য না রাখলেও বার্তাঙ্গনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। আইন প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর বের হয়ে যান। এ সময় আয়োজকরা অনুরোধ করলে অ্যাডভোকেট তিনি বলেন, ২০ মিনিট পর আমি আসছি। তবে তিনি আর ফিরে আসেননি।

(নভেম্বর২৬, ২০০৯, নয়াদিগন্ত)

বাংলাদেশ জাতীয় মুফতি ঐক্য পরিষদ (বামুপ) থেকে ফতোয়াও এসেছে। বামুপ’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় মুফতীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। সভাপতি মুফতি আহম্মেদইয়ার নায়েমীর তার বত্ত্নৃতায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করার অর্থ দাঁড়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। আর হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যত্ত্নি (কোনো মহৎ কাজের বিনিময়ে) বান্দাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল না। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা কুফরি। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধিতা করা তথা আওয়ামী লীগের সমর্থন না করাও কুফরি। অতএব, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, সে যত বড় আলেমই হোক না কেন। (নয়াদিগন্ত, নভেম্বর৩১, ২০০৯)

এই হলো বর্তমান আওয়ামী লীগের ইসলাম প্রীতির কিছু উদাহরণ।

আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিককীর ধর্ম সম্পর্কে আরো একটি উক্তি পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছেন, ধর্ম একটি নেশা। তামাক-মদ যেমন নেশার সৃষ্টি করে ধর্ম তেমনি এক ধরনের নেশার সৃষ্টি করে। তামাক ও মদের ব্যবসা করে এক শ্রেণীর মানুষ যেমন জীবিকা নির্বাহ করে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা তেমনি ধর্মের ব্যবসা করে নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে। তিনি শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে ছাত্রলীগ জয়পুরহাট জেলা শাখা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। এ সময় কেন্দ্রীয় মসজিদে জোহর নামাজের আজান শুরু হলে বক্তব্য বন্ধ করে তিনি ডায়াসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। আজানের পর বক্তৃতা শুরু করলে সম্মেলনস্থলের পাশে অবস্থিত পাঁচুর মসজিদ থেকে আজান শুরু হয়। আজান শেষে

আবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী আজান সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, এখন বললে কাঠ মোল্লারা ক্ষেপে গিয়ে

ছুটে আসবে। এক মসজিদের আজান যত দূর যাবে তার মধ্যে আর কোনোমসজিদ বানানো জায়েজ নেই। এখন ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেখানে সেখানে মসজিদ তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছে।
মসজিদে জোহর নামাজের জামাত চলাকালে মন্ত্রীর বক্তব্য চলতে থাকায় নামাজে বিঘ্ন ঘটে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা ক্ষোভের সাথে জানান, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের তিনি মন্ত্রী। নামাজের সময় তিনি বক্তব্য বন্ধ রাখতে পারতেন। (নয়াদিগন্ত, ডিসেম্বর১৪, ২০০৯)

চলবে.....

বিষয়: বিবিধ

৩১৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File