পাগলা কুকুরের ‘পিপার স্প্রে’ শিক্ষকদের ওপর
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ১৩ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:২৭:৫০ রাত
পিপার স্প্রে। যার বাংলা ‘মরিচ পানি’। সাধারণত পাগলা কুকুর ও ভয়ঙ্কর জীবজন্তুকে পরাস্ত করতে বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বিরোধীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠেকাতে সম্প্রতি বিদেশ থেকে এ স্প্রে আনা হলেও এখন তা ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো রায়ট কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে আগে এই পিপার স্প্রে ব্যবহার করত। তবে চোখের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর হওয়ায় ওই দেশগুলোতে বর্তমানে পিপার স্প্রে ব্যবহার করা হয় না। গত বুধবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষদের ছত্রভঙ্গ করতে এই প্রথম দেশে এ স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।
আর্থিক কারণে এমপিওভুক্তি সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কথাটি অযৌক্তিক। যে দেশে এক হলমার্কের ৪০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়, সে মাসে মাত্র ২০ কোটি টাকা খরচ বাড়ানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রের হবে না- এটি হাস্যকর। আন্দোলনকারী ১ লক্ষ শিক্ষকের দাবী অনুয়ায়ী ২০% বেতন হারে প্রতি শিক্ষককে ২০০০ টাকা করে বেতন দিলে সরকারের মাসে খরচ বাড়বে মাত্র ২০ কোটি টাকা।
ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, জননিরাপত্তা এবং রায়ট কন্ট্রোলের জন্যই কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। পিপার স্প্রে কাঁদানে গ্যাসেরও আধুনিক রূপ। এটি টিয়ার সেলের নতুন সংস্করণ। এটিতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।
চিকিৎসকরা বলছেন, এতে চোখের কর্নিয়ার টিস্যুগুলো নষ্ট করে ফেলে। এই স্প্রে দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন। মানবদেহের অন্য অংশের কোনো টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ওষুধের মাধ্যমে ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চোখের কর্নিয়ার ক্ষতি হলে বেশিরভাগক্ষেত্রেই তা ঠিক হয় না।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেছে, ‘পেনাসাইল ক্লোরাইড’ নামক রাসায়নিক পদার্থ থেকেই তৈরি করা হয় এই ‘পিপার স্প্রে’। এই স্প্রে চোখে লাগলে মুহূর্তের মধ্যেই চোখ দিয়ে পানি ঝরবে, চোখে জ্বালাপোড়া হবে। এমনকি কিছু সময়ের জন্য চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। পিপার স্প্রের গায়ের নির্দেশিকা অনুয়ায়ী পাগলা কুকুর ও ভয়ঙ্কর জীবজন্তু থেকে আত্মরক্ষার জন্যই ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
নন-এমপিও শিক্ষকদের রাজধানীর কোথাও দাঁড়াতেই দিচ্ছে না পুলিশ। তারা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ধাওয়া করছে পুলিশ। গতকাল জড়ো হওয়া শিক্ষকদের ওপর পুলিশ আবারো স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পিপার গ্যাস স্প্রে করেছে। এ সময় ‘বাবা ওরে বাবা মোর চোখ জ্বলি গেল। হায় আল্লাহ মুই তো কানা হয়া গেনু। মুই কি দোষ করছিনু।’ এমন আর্তনাদ করতে করতে মাটিয়ে গড়াগড়ি করছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। শুধু তিনিই নন, অসংখ্য শিক্ষক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন আর কেঁদে কেঁদে অভিশাপ দিচ্ছিলেন স্প্রে ছোড়া পুলিশকে।
অসহায় শিক্ষকরা তাদের দাবি নিয়ে যখন রাজপথে লাঞ্ছিত ও হয়রানি হচ্ছেন, তখন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজ জেলা সিলেটের নিজ সংসদীয় আসনে জনসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। ৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন তিনি। ১৬ জানুয়ারির আগে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা ফিরছেন না। অপর দিকে, শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী মালয়েশিয়া সফরে গেছেন কারিগরি শিক্ষাসংক্রান্ত একটি আঞ্চলিক সেমিনারে যোগ দিতে। তিনিও ১৭ জানুয়ারির আগে ঢাকামুখী হচ্ছেন না। এ অবস্থায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা তাদের দাবি নিয়ে। নিরুপায় শিক্ষকরা গতকাল রোববার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে তাদের দাবি-দাওয়াসংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান আন্দোলনরত শিক-কর্মচারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও তরল গ্যাস বিশেষ করে পিপার গ্যাস স্প্রে করাকে ‘অতি উৎসাহী’ কিছু পুলিশের কাজ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিন্দনীয়’ কাজ করেছে।
গত ৭ জানুয়ারি থেকে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা দেশের সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ৯ জানুয়ারি থেকে পুলিশ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পিপার স্প্রে শিক্ষকদের ওপর ব্যবহার করে আসছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য চেষ্টা করলে সবখানেই পুলিশ তাদের ধাওয়া করেছে, টিয়ার গ্যাস ও পিপার গ্যাস স্প্রে করেছে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাতে তারা কোথাও দাঁড়াতে পারেননি।
নন-এমপিও শিক্ষকদের কোথাও দাঁড়াতেই দিচ্ছে না পুলিশ আবারো পিপার গ্যাস স্প্রে
বিষয়: বিবিধ
১৪৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন