বেলেল্লাপনায় শহীদ মিনারের ইজ্জত যায় না! দেশ গড়ার কারিগরদের শান্তিপূর্ণ অনশনে আন্দোলন সংগ্রামের প্রতীকটির সতিত্ব চলে যেত!
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১২:৫৫ বিকাল
পতিতাবৃত্তি কিংবা বেলেল্লাপনায় শহীদ মিনারের ইজ্জত যায় না, দেশ গড়ার কারিগরদের শান্তিপূর্ণ অনশনে আন্দোলন সংগ্রামের প্রতীক শহীদ মিনারের সতিত্ব চলে যেত!!!! শিক্ষকদের ওপর মরিচের গুড়া ছিটিয়ে শহীদ মিনারেও অনশন পণ্ড করে দিল পুলিশ
বিষয়টি নিয়ে দু'কলম লিখতে গিয়ে কলম এগোচ্ছিল না। মনের গভীর থেকে ভেসে আসছিল কিশোর বেলার সেই প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতি। বারবার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ অনুভব হচ্ছিল শ্রদ্ধেয় সেই শিক্ষাগুরুদেরকে রাজপথে পদদলিত হতে দেখে।
দু'চোখ বেয়ে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল অজান্তেই। এভাবে কয়েক ঘন্টা কেটে গেলেও লেখা শুরু করতে পারছিলাম না। নিজেকে এত বেশি অপরাধী জীবনে খুব কমই মনে হয়েছে। চোখের সামনে পুরো জাতিকে সাক্ষী রেখে আমাদের অভুক্ত শিক্ষাগুরুদের ওপর পুলিশ দিয়ে জলকামান চালিয়ে- পদদলিত করে মেরে ফেলা হলো।
এ দেশে ফাঁসির আসামীরা ছাড় পায়, কালোটাকাওয়ালাদের জেলে না ভরে সেই টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতারাও বিপুল সমাদর পান। দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তগিরি যেখানে ছাড় পায়। অথচ বুক ভরা আসা নিয়ে প্রতিবারের মত জাতীয় বাজেটের আগে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের মানবিক ও ন্যায়সংগত দাবিটুকু করতে গিয়ে লাশ হলেন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের উত্তর চর ভাটিয়ানী রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান।
এই অভাবী মানুষগুলোর ঢাকায় এসে থাকার মত কোনো জায়গা বা সামর্থ্য আছে বলে জানা নেই। কতটা অসহায়ত্ব ও অভাবের তাড়ণায় কষ্ট করে হলেও তারা ঢাকায় ছুটে এসেছে। তাদের দাবিগুলো সরকার জানাতে চেয়েছে। কিন্তু রাজপথে পুলীশ দিয়ে তাদের পিটিয়ে শহীদ করা হলো, তাড়িয়ে দেওয়া হলো। পুলিশের দ্বারা পদদলিত হয়ে ও তাড়া খেয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে শহীদ মিনারে। তাদের অবস্থা ভয়াবহ করুণ না হলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁদের দুরবস্থার প্রতিবাদে আমরণ অনশন কিংবা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতির কথা বলতেন না।’
এর আগের আন্দোলনে প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হলো একজন বৃদ্ধ শিক্ষককে তার ছেলের বয়েসী দু’জন পুলিশ জামার কলার ধরে টানতে টানতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের পিটুনি খেয়ে পরে মারা যান। শিক্ষক মো: আজিজুর রহমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে আজিজুর রহমানদের ত্যাগ এবং বীরত্বে গড়া দেশের বুকে দাঁড়িয়ে, স্বাধীনতার ফলভোগকারী নতুন প্রজন্মের তারই সন্তানতুল্য কোনো পুলিশ সদস্যের পিটুনিতে অসুস্থ্ হয়ে পরে মারা গেলেন। রবীন্দ্রনাথের কাদম্বিনী ``মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই”।
আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন প্রবীণ লোকমান হোসেন। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না সর্বস্তরের মানুষ লোকমান স্যারকে কতটা ভালোবাসত ও সম্মান করত। স্যার অবসরে গরু চরাতেন, চাষাবাদ করতেন। কিন্তু অসম্ভব সময়ানুবর্তী ছিলেন। কখনো দেরি করে ক্লাসে আসতে দেখিনি। লুঙ্গি পড়েই স্কুলে আসতেন। স্যারের জন্য আপাদমস্তক কেবল শ্রদ্ধাই অনুভব করতাম। স্যার একদিন কাজ সেরে সকালে গরম ভাত খেতে বসে খেয়াল করলেন ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি খাবার গ্রহণ বন্ধ করে ভাতের প্লেট ঢেকে রেখে এই বলে স্কুলে রওয়ানা হলেন, "লোকমানের স্কুলের সময় হইয়াছে- ভাত তুমি ঠান্ডা হও, লোকমান তোমাকে স্কুল থেকে আসিয়া খাইবে।"
কুঁড়ো ঘরে বসবাসকারী এই লোকমান স্যারেরাই আমাদের স্বপ্ন গড়ার মূল কারিগর তথা হিরো। আজ আমাদের চোখের সামনেই ঢাকার রাজপথে লাঠিপেটা করা হচ্ছে পিতৃতুল্য অসহায় শিক্ষকদের, কিশোরবেলার নায়কদের। জলকামানের গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের শরীর। রহমানের দরবারে দাঁড়িয়ে আজিজুর রহমান স্যারদের জন্য কি জবাব থাকবে আমাদের? স্বার্থের জুয়াখেলায় মত্ত বিচিত্র জীবন সংসারে আমরা এই মজলুম গুরুজনদের জন্য জালিমের মোকাবেলায় কি ভূমিকা আমরা রেখেছি?
যেখানে ১ লাউয়ের মূল্য ৮০ টাকা, ১ লিটার কেরোসিনের মূল্য ৬৮ টাকা- সেই দুর্মূল্যের বাজারে মাত্র ২/৩ হাজার টাকায় একটি পরিবার কিভাবে চলতে পারে? জাতি গড়ার এই কারিগরদের অভুক্ত রেখে কিভাবে আমরা শান্তিতে থাকতে পারি? একজন প্রাথমিক শিক্ষকের আক্ষেপ: ‘দারুণ কষ্টের নির্বাক কারিগর এই বঞ্চিত শিক্ষক সমাজের দুঃখ ও দাবির কথা’ শোনার কি কেউ নেই?
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন