নারীদের বোরকা খুলে নেয়ার নজির অমুসলিম দেশেও নেই: সরকার কি জোর করে বোরকা খুলতে পারে?
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৬:২০ রাত
বোরকা কেড়ে ২০ নারীকে আদালতে নিয়েছে পুলিশ: জামিন দেয়নি আদালত: এটি ইসলাম ও সংবিধানের সুস্পষ্ট অবমাননা।
ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ২০ নেত্রীকে সোমবার বোরকা খুলে আদালতে হাজির করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ইসলামি দল সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পর্দানশিন নারীদের বোরকা খুলে আদালতে হাজির করার মতো ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এভাবে বোরকা খুলে নেয়ার নজির দুনিয়ার কোথাও নেই। এমনকি কোনো অমুসলিম দেশেও শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বোরকা খুলে নেয়ার নজির নেই।
"বিরোধী রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে শত্রু জ্ঞান করার ‘চিকনা বুদ্ধিটি এসেছে এই তাত্ত্বিকদের মাথা থেকেই। কুরআন-হাদিসের বইয়ের সাথে এ দেশের জনগণ অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল। বাংলার প্রতিটি ঘরেই এ-জাতীয় বইপুস্তক রয়েছে। জিহাদ সম্পর্কেও তাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সেসব বইপুস্তককে এক শিরোনামে ‘জিহাদি বই’ বলে প্রচারণা চালানোর আক্রোশটি সংক্রমিত হয়েছে এই বামদের অন্তর ও মগজ থেকেই। এসব কাজের দরুন তারা জনগণ থেকে বিতাড়িত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন দেশের সবচেয়ে পুরনো দল আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলেছে।"
জামায়াত :
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ছাত্রী সংস্থার গ্রেফতারকৃত নেত্রীগণ সবাই বোরকা পরে অভ্যস্ত। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরকা খুলে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করে সরকার তাদের ওপর চরমভাবে জুলুম করেছে। শতকরা ৯০ জন মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের ধর্মনিরপেবাদী সরকার ছাত্রী নেত্রীদের বোরকা খুলতে বাধ্য করে তাদের ফরজ পালনে বাধা দিয়েছে। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায় করা যেমন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ, তেমনি প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর জন্য হিজাব বা বোরকা পরিধান করাও ফরজ ইবাদাত। এ ফরজ পালনে কেউ বাধা দিতে পারে না। সরকার ছাত্রীদের জোর করে বোরকা খুলে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করে তাদের সংবিধান স্বীকৃত ধর্মীয় মৌলিক অধিকারে বাধা দিয়ে অমার্জনীয় অন্যায় করেছে। এ ধরনের অন্যায় কাজ কোনো অমুসলিম দেশের সরকারও করতে পারে না। তিনি সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এবং বোরকা খুলে আদালতে ছাত্রীদের হাজির করার মতো গর্হিত অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
খেলাফত মজলিস :
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, ইসলাম ও বিরোধী দল নির্মূলে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। পর্দানশিন মহিলাদের গ্রেফতার করে নির্যাতন ও বোরকা খুলে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনা কেবল ফ্যাসিবাদী ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী সরকারের দ্বারাই সম্ভব। খেলাফত মজলিসের নির্বাহী সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরো বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিক উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক এম কে জামান, শেখ গোলাম আসগর প্রমুখ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, হিজাব নারী জাতির শালীনতার প্রতীক। ইসলামে পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। অথচ সোমবার মুসলিম নারীদের পর্দাবিহীন কোর্টে উঠানো হয়েছে। কোনোভাবেই কোনো মুসলমান এটা মেনে নিতে পারে না। যারা নারীদের হিজাব পরতে দেয়নি তাদের শনাক্ত করে অতিসত্বর শাস্তি প্রদান করুন। আর না হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের কার্যকলাপ দেখলে মনে হয়, তারা মতায় এসেছে ইসলামকে নির্মূল করার জন্য। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
দশ সহস্রাধিক আলেম :
এ দিকে দশ সহস্রাধিক বিশিষ্ট আলেম এক বিবৃতিতে বলেছেন, পর্দানশিন নারীদের জোরপূর্বক বোরকা খুলে নিয়ে কোর্টে হাজির করা অমার্জনীয় অপরাধ। দুনিয়ার সভ্যতার ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। এটা মৌলিক মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকারের চরম লঙ্ঘন। জোরপূর্বক বোরকা খুলে নেয়ার শয়তান চক্রকে এখনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে শান্ত করুন। অন্যথায় কঠিন মাশুল দিতে হবে। বিশিষ্ট আলেমগণ বলেন, ইসলামের বিধান চিরস্থায়ী। পর্দা করা শরিয়তের ফরজ বিধান। এই বিধানকে যারা জোরপূর্বক নষ্ট করেছে তারা মহান আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিবৃতিতে স্বার করেন- অধ্য মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, অধ্য মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক, অধ্য মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান, অধ্য মাওলানা ইউনূস আহমদ, অধ্য মাওলানা আবদুল জব্বার, প্রফেসর ড. মুফতি মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, মুফতি ড. সিকান্দার আলী মাদানী, মুফতি ড. তরিকুল ইসলাম মাদানী, ড. মুফতি নিজামুদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মুহাম্মদ রেজানুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার, মাওলানা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ যাকির হোসাইন, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান মিঞা, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।
জাতীয় ফতোয়া বোর্ড :
জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের মুফতিগণ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, পর্দানশিন নারীদের বোরকা খুলে নেয়া ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তারা বলেন, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও অমুসলমানদের দেশেও শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বোরকা খুলে নেয়ার নজির নেই। অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন জঘন্য অমার্জনীয় অপরাধ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ধ্বংস করেছে।
আলেমসমাজের নিন্দা :
গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার মগবাজার কার্যালয় থেকে ২০ জন ও ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস কাবের সামনে থেকে পাঁচ পর্দানশিন নারীকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়া, শাবিতে মূর্তি নির্মাণের পরিকল্পনাসহ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮ নম্বর তিলপাড়া ইউনিয়ন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার পর্দানশিল নারীদের গ্রেফতার এবং বোরকা খুলে আদালতে আনার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পর্দানশিন নারীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং শাবিতে মূর্তি নির্মাণের দুঃসাহসিক পরিকল্পনা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিদানকারী নেতৃবৃন্দ হলেনÑ ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এখলাছ উদ্দিন, সহসভাপতি কারি আব্দুল জব্বার, গিয়াস উদ্দিন, সেক্রেটারি আব্দুল মালিক, সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসেন, আব্দুস ছামাদ, অর্থ সম্পাদক কবির হোসেন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাংবাদিক হাসান আহমদ, অফিস সম্পাদক রোকন উদ্দিন ও সমাজসেবা সম্পাদক আবুল হোসেন।
মালালা আজ ১ জন নয়, গোটা নারী সমাজ: নির্যাতন কারী কোন কথিত জঙ্গি নয়, শাসকগোষ্ঠী! ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে! পর্দানশীলা বোনদেরকে সেমিনারের মত শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোন কারন ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতন : মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন; রিমান্ডে নিয়ে নারী সমাজকে চরম অপমান। রিমান্ড ও নির্যাতনে শুধু মোনালিসা বোনগুলোই নয়, কাঁদছে গোটা বিশ্ববিবেক।
বিশ্ববর্বর ইসরাইল কিংবা আফ্রিকার জঙ্গলও মানুষের জন্য এতটা অনিরাপদ নয়। বাকরুদ্ধ!! অসহায় নারী ও শিশুদের ওপর যে জালিম শাসক হাত তুলে তার পতন ও ধ্বংস অনিবার্য। ধর্মপ্রান মা-বোনদের ওপরও নির্মম বর্বরতার ধিক্কার জানানেরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শেষ পর্যন্ত সরকার আসলেও পাগল হয়ে গেছে। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। খোদ ইসরাইলেও মুসলমানরা এতটা মজলুম নয়।
আলেমসমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা
নারীদের বোরকা খুলে নেয়ার নজির অমুসলিম দেশেও নেই
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন