২৫ ফেব্রুয়ারী : জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যাকাণ্ডের শোকাবহ দিন
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:১৬:৫৫ বিকাল
ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে শোকাবহ একটি মাস। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় ঘটে সেনাকর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের এক নৃশংস ঘটনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে ‘শোক দিবস’ পালন করা হোক।
বিডিআর ট্রাজেডির ৪টি বর্ষপূর্তিতেই বিভিন্ন ইস্যুতে জনগনের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার বিষয়টি কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র তা ইতিহাসই এক সময় নির্ধারণ করবে।
হলুদ গাঁদা ফুলে ভরে আছে কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমদের কবর। পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা। আর মাকে ধরে ভেজা চোখে দাঁড়িয়ে আছে ছোট মেয়ে লামিয়া। ফাতেমার হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। গুচ্ছবদ্ধ রজনীগন্ধাকে ঘিরে আছে অকালপ্রয়াত স্বামীর প্রতি গভীর ভালোবাসা। গতবার এভাবেই শোকে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে গেল বনানীর সামরিক কবরস্থান।
স্বজনদের চোখে পানি, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানা ট্র্যাজেডির শিকার মেজর মিজানুর রহমানের কবরে অশ্রুসিক্ত মায়ের স্পর্শ
নিহত মেজর ইদ্রিস ইকবালের দুই অবুঝ শিশু
পিতার অভাব বুঝতে শিখেছে জাহারা
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের স্মরণ
পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত শহীদ সেনাসদস্যদের কবরের পাশে স্বজনরা (বামে), শিশু নাতিকে সাথে নিয়ে মেজর মিজানের মা (দ্বিতীয়), ফুলহাতে মেজর মমিনুল ইসলামের পরিবার (তৃতীয়), মেজর মোস্তফা শামসুজ্জামানের শোকাহত পরিবার (ডানে)
বাবা দেখে যাও কত কষ্টে আছি
বিডিআর বিদ্রোহে প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তারা চিরনিদ্রায় শায়িত বনানী কবরস্থানে। পেরিয়ে যাচ্ছে সেই ঘটনার ৪ বছর। হারানো স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিকটজনেরা
কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত
কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য
নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার
আজও কানে ভাসে সেই কথাগুলো
কে জানে যে হবে শেষ কথা
নিয়তির ডাকে দিলি যে সাড়া
ফেলে গেলি শুধু নীরবতা
যার চলে যায় সেই বোঝে যে হায়
বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা
যার চলে যায় সেই বোঝে যে হায়
বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন
কি দিয়ে দেব সান্ত্বনা
বিধাতা তোমারে ডাকি বারেবারে
কর তুমি মোরে মার্জনা
দুঃখ সইতে দাও গো শক্তি
তোমারি সকাশে প্রার্থনা
চাহিনা সহিতে আমার মাটিতে
মজলুমেরই আর্তনাদ
চাহিনা সহিতে আমার মাটিতে
মজলুমেরই আর্তনাদ
বিষাদ অনলে পুড়ে বারেবারে
লুণ্ঠিত হবে স্বপ্নসাধ
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার
বুট, হেলমেট ছাড়া অপারেশনে এরা কারা?
ছবিঃ ঘাতকদের সাথে নানক, আজম, সাহারা আর তাপস
সিসিটিভিতে ধারন করা বিডি আর হত্যাকান্ডের কিছু ছবি
নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিডিআরের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে। সামরিক-বেসামরিক আরো ১৭ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে তৎকালীন ডিজির স্ত্রীও রয়েছেন। কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তাদের বাড়িঘর, গাড়ি ও সম্পদে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। সেনাকর্মকর্তাদের শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা। আলামত নষ্ট করতে প্রথমে তাদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা। ব্যর্থ হয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়। কিছু লাশ ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলের মধ্যে। অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নেয় বিদ্রোহের নামে। উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জওয়ানদের তাণ্ডব আজো মনে পড়লে কেঁপে ওঠে মানুষের আত্মা।
যা ঘটেছিল সেই দিন
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা ও জওয়ানেরা এসেছিলেন ঢাকার পিলখানায়। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত সদস্যদের মধ্যে ভালো কাজের জন্য পদক প্রদানের কথা ছিল। দরবার হলের সেই অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই হাজার বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শেষে বাংলা অনুবাদ যখন শেষ হয়, ঠিক তখনই সিপাহি মইন দরবার হলের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। অতিরিক্ত ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারিসহ অন্য কর্মকর্তারা মইনকে আটক করেন। মইনকে আটকের সাথে সাথে ‘জাগো’ বলে বিডিআর জওয়ানেরা দরবার হল ত্যাগ করতে শুরু করে। ডিজি তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, তাদের দাবিদাওয়া শুনবেন তিনি। কিন্তু মুহূর্তেই দরবার হল ফাঁকা হয়ে যায়। একপর্যায়ে জওয়ানদের সবাই যখন দরবার হল ত্যাগ করে, তখন বাইরে থেকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে জওয়ানেরা হত্যা করে। বিডিআর ঢাকা সেক্টরের তৎকালীন কমান্ডার কর্নেল মজিবুল হককে ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের চারতলার এক কক্ষে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেয় নিচে। এভাবে একে একে হত্যা করা হয় সেনাকর্মকর্তাদের। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে বিডিআর জওয়ানেরা। এসবই করেছে অস্ত্রাগার থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে। শুরুতেই তারা কোত ভেঙে অস্ত্র ও ম্যাগাজিন ভেঙে গুলি তাদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আতঙ্কে আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
মৃত্যুপুরী
প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বিদ্রোহের পর পিলখানা পরিণত হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। পিলখানায় শুধু লাশ আর লাশ। রক্ত আর রক্ত। পোড়া গাড়ি, পোড়া বাড়ি, ভাঙা গ্লাস, ঘাসের ওপর তাজা গ্রেনেড, চারদিকে শুধু ধ্বংসচিহ্ন। সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলোর তছনছ অবস্থা। বিভিন্ন স্থাপনায় জ্বালাও-পোড়াওয়ের দৃশ্য। ড্রেনের ম্যানহোল থেকে আসে রক্তের উৎকট গন্ধ।
২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদিন ও রাতে পিলখানায় যে হত্যাযজ্ঞ আর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্বিচারে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর লাশ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে খোদ ঘাতকরা। তাই আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে চলতে থাকে লাশ গুমের কাজ। পিলখানার ভেতর বিশেষ মেশিন দিয়ে লাশগুলো ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা হয় বলে পরে জানা গেছে। কয়েক সেনা কর্মকর্তার লাশ ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলে। পরের দিন সেগুলো বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীরচর পয়েন্টে ভেসে উঠলে আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না কারও। বাকি লাশ গুম করতে একের পর এক গণকবর খোঁড়া হয়। পিলখানা পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। প্রথম দফায় কামরাঙ্গীরচরে একটি স্যুয়ারেজ লাইন থেকে কয়েক দফায় ৯ সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হাসপাতালের পেছনে একটি গণকবর থেকে তোলা হয় একসঙ্গে ৩৯টি লাশ। একটি গ্যারেজ মাঠের পাশের গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় আরো নয়টি লাশ। এ বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক ও দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীসহ ৬১ জন নিহত হন। সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সাত বিডিআর জওয়ান। বিভিন্ন গেট থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ায় আশপাশের আরও ৭জন পথচারী নিহত হন। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫ জনে।
গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠলেও ভেতরে কী ঘটতে যাচ্ছে তা জানা সম্ভব হয়নি ওই দিন। ক্রমেই ভয়াবহ দৃশ্য ফুটে উঠতে শুরু করে। পিলখানার সাথে কেউ যোগাযোগ করতে সক্ষম হননি। কিছু সেনাকর্মকর্তা আটকা পড়া অবস্থায় তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন। পরে তাদের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। সবাই ধারণা করছিলেন ভেতরে আসলেই বড় ঘটনা ঘটছে। যার প্রমাণ মিলল এক দিন পর। ঘটনার শুরু থেকেই থেমে থেমে গুলি করছিল উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর জওয়ানেরা। তাদের তাণ্ডবে প্রাণের ভয়ে পিলখানার আশপাশেও কেউ যেতে পারেননি। বিকেলে দূর থেকে হ্যান্ড মাইকে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। মাইকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। তিনি সবাইকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে বিডিআরের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। দুই ঘণ্টারও বেশি ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও তাদের দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস নিয়ে তারা পিলখানায় ফিরে যান। এরপরও তারা অস্ত্র সমর্পণ ও বন্দীদের মুক্তি দেননি। মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাথে বৈঠক করে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ শুরু করে। কিন্তু পরদিনও থেমে থেমে গুলির শব্দ আসতে থাকে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত, সবাই অস্ত্র সমর্পণ করেছে।
এ দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হতে শুরু করে। ওগুলো ছিল সেনাকর্মকর্তাদের লাশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার হয় ১৫টি লাশ। এভাবে উদ্ধার হয় ৫৭ সেনাকর্মকর্তা ও সামরিক-বেসামরিকসহ মোট ৭৪ জনের লাশ। যাদের মধ্যে তৎকালীন ডিজি বিডিআর মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রীর লাশও ছিল।
এই ঘটনার জন্য দায়ী বিডিআরদের বিচার করবার সময় আমরা চরম ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে অভিযুক্ত অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে সচেতন থেকে সাধারণ সৈনিকদের সুবিচারের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। এতে সেনা অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে দূরত্ব কমে নি, বরং বেড়েছে। অন্য দিকে বিডিআরের নাম ও পোশাক পরিবর্তন করে পুরা বাহিনীকে হীনমর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়েছে। নামের মধ্য দিয়ে যাদের আমরা সীমান্তে সশস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনী বলে গণ্য করতাম তারা এখন হয়েছে সীমান্তের দারোয়ান মাত্র- বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড। তারা ‘ডিফেন্স রাইফেলস’ নয়, ‘বর্ডার গার্ড’। বাংলাদেশকে পরিকল্পিত ভাবে অরক্ষিত রাখবার পরিকল্পনাই সচেতন ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরপর সীমান্তের কাঁটাতারে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলি খেয়ে ফালানীর লাশ আমরা ঝুলতে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে ল্যাংটা করে বাংলাদেশীদের পেটানো হয়। শুনেছি, কিভাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর তরফে বলা হচ্ছে সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ হবে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত পৃথিবীর যেকোন সীমান্তের চেয়েও এখন রক্তাক্ত, লাশে ছিন্নভিন্ন।
এ হত্যাকাণ্ডকে জাতীয়ভাবে উপযুক্ত মূল্যায়ন করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব, একটি আহ্বান, একটি দাবি। তা হলো- দিবসটিকে জাতীয়ভাবে শোক দিবস পালনের ঘোষণা করা হোক। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ৫৭ জন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তা জাতীয়ভাবে শোক দিবস হবে কেন? আমাদের পক্ষ থেকে বিনীত ব্যাখ্যায় বলব, সেনাবাহিনী কোনো দলের সম্পত্তি নয়, কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়। তারা সমগ্র জাতির সম্পদ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের গর্ব। সেনাবাহিনীর ওপর যে আঘাত এসেছে, তাতে সমগ্র জাতি সেদিন মর্মাহত হয়েছে। আজো হৃদয় থেকে তার রেশ কাটেনি। সে শোকের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা যেন প্রতিনিয়ত দৃঢ় থেকে সুদৃঢ় হয়, তাই দিবসটিকে জাতীয়ভাবে শোক দিবস পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি, প্রস্তাব করছি, দাবি জানাচ্ছি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এর উপযুক্ত মূল্যায়ন করবেন। যে ক্ষতি ২০০৯ সালের ২৫ তারিখ হয়েছে সে ক্ষতি তাৎক্ষণিক পূরণ হওয়ার নয়। গত তিন বছরেও তা পূরণ হয়নি। কারণটি একটু ব্যাখ্যা করলে বোঝা যাবে। যদি একজন কর্নেল শহীদ হন, যার চাকরির মেয়াদ ২৪ বছর, তার স্থলে পদোন্নতি দিয়ে একজন লে. কর্নেলকে কর্নেল বানাতে পারবেন, লে. কর্নেলের স্থলে একজন মেজরকে পদোন্নতি দিয়ে লে. কর্নেল বানাতে পারবেন, মেজরের স্থলে একজন ক্যাপ্টেনকে পদোন্নতি দেবেন, ক্যাপ্টেনের জায়গায় একজন লেফটেন্যান্টকে পদোন্নতি দেবেন এবং একজন লে.-এর জায়গায় একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্টকে পদোন্নতি দেবেন। কিন্তু সেকেন্ড লে. হতে গেলে আরো দু’বছর প্রশিক্ষণ লাগবে; তার আগে ছয় মাসের নির্বাচনপ্রক্রিয়া লাগবে। যদি হঠাৎ করে সব পাওয়া যেত, তাহলে চাকরির অভিজ্ঞতার আর কোনো মূল্য থাকত না। তাই সে অপূরণীয় ক্ষতিতে আমরা আজো শোকাহত। সে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে আমরা সহানুভূতি জানাই। কামনা করি, তারা যেন সে শোক কাটিয়ে ওঠেন। আনন্দের একটু পরশে তাদের মনটাও ভরে উঠুক। তাদের সন্তানেরা যেন বড় হয়ে সমাজে যথাযোগ্য জায়গা করে নিতে পারে।
স্ত্রী ও দুই সন্তানের সাথে লে. কর্নেল এনশাদ ইবনে আমিনের ছবিটি এখন কেবলই স্মৃতি এনশাদের মায়ের আক্ষেপ
অপরাধীরা উপযুক্ত সাজা পাচ্ছে না
হত্যাকান্ডের ঠিক আগের মুহুর্তের কিছু বিরল ছবি
হাতের মেহেদীর দাগ তখনো শুকায়নি, প্রিয়জন হারানোর বেদনা
সেই নারকীয় ঘটনার পেছনে যে ষড়যন্ত্র আছে বলে দেশবাসী বিশ্বাস করে, তা আজো জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়নি। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া এটা সম্ভব হয়নি এটা যেমন তাঁরা বিশ্বাস করে; আবার এটাও বিশ্বাস করে যে, এর সাথে কোনো না কোনো দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী যুক্ত আছে। তাই জাতীয় সংহতির স্বার্থে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবল বাড়ার স্বার্থে এসব ষড়যন্ত্রকারীর মুখ অবিলম্বে উন্মোচিত হোক, এটাই আমাদের কামনা। আমরা ওই দিনের অপেক্ষায় থাকলাম যে দিন সত্য সবার সামনে প্রকাশিত হবে।
সেদিনকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন সরকার রহস্যজনক কারনে নজীরবিহীন অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যদিও তখনকার ভারতপন্থী মিডিয়াগুলো ৫৭ জন মেধাবী অফিসারসহ ৭৫টি প্রাণের সর্বোচ্চ ক্ষতির বিনিময়ে সে সময়কার পরিস্থিতি মোকাবেলাকে সফল সমাধান হিসেবে প্রপাগান্ডা চালিয়েছিলেন। আপসোস্! এর চেয়ে ক্ষতি আর কি হতে পারত?
বিডিআর ট্রাজেডির ৪টি বর্ষপূর্তিতেই বিভিন্ন ইস্যুতে জনগনের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার বিষয়টি কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র তা ইতিহাসই এক সময় নির্ধারণ করবে। ভারতীয়দের পৃষ্ঠপোষকতা ও অংশগ্রহণের রাজধানী ঢাকাতে নাচ-গানের আয়োজন আমাদের জাতীয় শোকের মাঝে কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিটার মত। এটি চরম লজ্জাকর ও জাতির কৃতি সন্তানদের প্রতি নির্মম কৌতুক।
জানি দেশের এ অপূরণীয় ক্ষতি সহজেই পূরণ হওয়ার নয়। নিহতদের পরিবারগুলো এ শোক কোনোভাবেই ভুলতে পারবেনা। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে ধৈর্য্য ধরবার তৌফিক দেন এবং তাদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন।
তথ্যসূত্র-
- ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে ‘শোক দিবস’ পালন করা হোক- মে. জে. (অব: ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক
- ফেব্রুয়ারির পিলখানা- ভাষার মাস আর আগের মতো নাই- ফরহাদ মজহার
- ছবি- ব্লগার এক্টিভিষ্ট
- জাতীয় দৈনিক সমূহ
বিষয়: বিবিধ
৬০৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন