জামায়াতের ভোট আসলে কত? খালেদার আস্থা জামায়াত
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৮:২৩:২১ রাত
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ঠেকিয়ে নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হতে খালেদার ভরসা জামায়াত
আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জামায়াতের ওপর দমন-পীড়ন অতীতের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বলতে গেলে দলটির প্রথম ও দ্বিতীয় সারির অধিকাংশ নেতা কারাবন্দী। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলা ও জেল জুলুমের শিকার। তাছাড় রাজনৈতিক কারনে জীবন দিতে হয়েছে জামায়াত শিবিরের ৩শতাধিক নেতাকর্মীকে। এত কিছু সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটি এককভাবে সারা দেশে বিশাল শো-ডাউন করে চলেছে। জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে দিনের পর দিন হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি সফল করেছে। সর্বশেষ সারাদেশে পরপর ৪ দিন হরতাল পারন করে নজীর স্থাপন করেছে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে বিরোধীদল জোটগতভাবে যতগুলো সভা-সমাবেশ করেছে প্রায় সবগুলোতেই জামায়াত-শিবিরের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশের অনেক মিডিয়া ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বলতে শোনা গেছে জোটের নামে মূলত জামায়াতের সমাবেশ।
তাছাড়া জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল উল্লেখ করা মত। বিশেষ করে আল্লামা সাঈদীর রায়ের পরে সারা দেশব্যাপী সাধারণ মানুষকে নিয়ে দলটির প্রতিরোধ সর্ব মহলে ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে আইন-শুঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে প্রায় শ’খানেক মানুষকে জীবন দিতে দেখা গেছে। যা কিনা কোনো রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বে নজিরবিহীন। ক্ষমতাসনদের দমন-নিপীড়নের কারনে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সাথে দলটির সম্পৃক্ততা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নিষ্ক্রীয়তার কারনে গাম-গঞ্জে পুলিশ কিংবা ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নের সাধারণ মানুষকে নিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরাই প্রতিরোধ গড়েছে।
দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা জানান, সরকারের জুলুম নির্যাতন সত্ত্বেও সারা দেশে তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষ করে দলটির বাছা্ইকৃত শ’খানেক আসনে রয়েছে আগামী নির্বাচনের সু-পরিকল্পিত প্রস্তুতি।
কিছু কিছু মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক ও সমঝোতার খবর প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা জানান, ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে সন্দেহ তৈরির অপপ্রয়াসেই কিছু মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কাল্পনিক গুজব ছড়াচ্ছে। জুলুমবাজ ও জনবিচ্ছিন্ন সরকারের অপকর্ম আড়াল করতেই এসব প্রপাগান্ডা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় সরকারে অধীনে আগামী নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করার জন্য ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোট। এক্ষেত্রে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রসহ নানা কারনে দলীয় সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচন ঠেকিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে খালেদা জিয়ার মূল ভরসা অনেকটাই জামায়াত। তাছাড়া আওয়ামী লীগ তার কর্মকাণ্ডের কারনে যতই জনবিচ্ছিন্ন হোক না কেন রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিতি ও অনেক ক্ষেত্রেই নেতাদের সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ কম হওয়ার কারনে অল্প সময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অতটা সহজ হবে না। এক্ষেত্রে সারা দেশে গাম-গঞ্জে সাধারণ মানুষের সাথে জন সম্পৃক্ততা ও প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে জোটকে বিজয়ী করতে বিএনপির মূল নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুর্নীতি, ইসলাম বিরোধী অবস্থান, আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন, আল্লামা সাঈদীসহ ইসলামী নেতৃত্বের ওপর জুলম এবং সর্বোপরি নির্বাচনী মাঠে জামায়াত-হেফাজতের সক্রিয় অংশগ্রহণ মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন জুলুম নির্যাতন ও নানা কারনে জামায়াতের সাথে বিএনপি ও হেফাজতের সম্পর্ক খুবই সুদৃঢ়।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ভোট আসলে কত?
আজ থেকে প্রায় ২২ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২ শতাধিক আসনে জামায়াত ১২.১৩ শতাংশ ভোট পান। মনমোহনদের হিসেবে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ২৫% (অর্থাৎ ৪ কোটি)। মাহমুদুর রহমান তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন দেশে জামায়াতের ভোট ৭-৮ শতাংশ তথা ১ কোটির উর্ধ্বে।
জামায়াতের প্রকৃত ভোট ব্যাংক কত তা নিরুপন করা কঠিন। কারন সত্যিকার অর্থে কোনো নির্বাচনেই দেশের সবগুলো আসনে দলটি অংশ নেয়নি। একমাত্র ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলাম সবগুলো আসনে অংশ নিলেও কৌশলগত কারনে নৌকা ঠেকাতে তারা অধিকাংশ আসনে ধানের শীষে ভোট দেয়। আজ থেকে ২২ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২ শতাধিক আসনে ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের জনসমর্থন ছিল আরো বেশি। কারন ৯১ এর নির্বাচনে ১০০’র মত আসনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। তাছাড়া ২০০’র মত আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী থাকলেও বাছাইকৃত কিছু আসন ছাড়া অন্যান্য আসনে নৌকা ঠেকাতে তাদের ভোট যায় বিএনপির ঘরে। যে কারনে অনেক আসনে ৯১ এর নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক হলেও ভোট পায় মাত্র ২/৩ হাজার। অর্থাৎ বরাবরের মতই আওয়ামী বিরোধী সেন্টিমেন্টের কারনে নৌকা ঠেকাতে জামায়াতের লোকেরাও বিএনপিকে ভোট দিয়েছিল। মূলত জামায়াতের সমর্থন তখন আরো বেশি ছিল। আর ২২ বছরে নিশ্চয়ই তাদের সমর্থন আরো বেড়েছে। তাছাড়া অনেকেই চান জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক। কিন্তু প্রপাগান্ডার কারনে অনেকেই মনে করেন জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারবে না তাই ভোট দিয়ে লাভ কি?
বিগত নির্বাচনের তুলনায় প্রতি নির্বাচনেই প্রধান ইসলামী দল জামায়াতের মোট ভোট বেড়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিখিল পাকিস্থানে জামায়াতের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬ শতাংশ আর পূর্ব পাকিস্থানে প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ শতাংশ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ৪.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে জামায়াত আসন পায় ১০টি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৮টি, ১৯৯৬ সালে প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮.৬১ শতাংশ। ২০০১ সালে ৪.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৭টি আর ২০০৮ সালে ৩৮টি আসনে ৪.৬০ শতাংশ ভোট পেয়েও জামায়াত পেয়েছে ২টি আসন। তবে গত নির্বাচনে ৩৮ টি আসনে নির্বাচন করে প্রতি আসনে গড়ে ৮৮ হাজারের উপরে ভোট পায় যা কিনা বিগত ২০০১ এর নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অধিক।
অনেককে দেখা যায়, বিভিন্ন বক্তব্যে কিংবা লেখায় জামায়াতের সমর্থন ৪-৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করতে। যা মোটেই তথ্যনির্ভর নয়। কারন গত ২টি নির্বাচনে জামায়াত ৪০টিরও কম আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী দেয়। সারাদেশেই দলটির সাংগঠনিক ও সমর্থন থাকায় ৪০ আসনের প্রাপ্ত ভোটের বাইরে অন্যান্য আসনে তাদের অবস্থানকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিশেষ করে, দেশের সীমান্তবর্তী ৩১টি জেলার প্রায় দেড় শতাধিক আসনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আওয়ামী বরাবরই বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কারন হিসেবে যেটা দেখা যায়, সীমান্তবর্তী ৩১ টি জেলার প্রায় দেড়শ’ আসনেই জামায়াতের আছে একটা ভালো ভোট ব্যাংক। যা আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ব্যবধান বরাবরই বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃত বিচারে দেশের বিগত নির্বাচনী ফলাফলগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ২০ শতাংশের (অর্থাৎ ৩ কোটি) কম নয়।
বিষয়: রাজনীতি
২০২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন