৫৬ শতাংশ কোটা, বাকিটা প্রশ্ন ফাঁস কিংবা দুর্নীতি : মেধাবীরা যাবে কোথায়?

লিখেছেন লিখেছেন হাসান ১০ জুলাই, ২০১৩, ০৫:২৫:৪৭ বিকাল



কোটার পরিমান আরো বৃদ্ধি করা উচিত, আমি কোটার সম্পূর্ণ পক্ষে : বিবিসিকে এইচ টি ইমাম



জনপ্রশাসন: কোটার নিষ্পেষণে মেধাবীরা কোণঠাসা; প্রতিবন্ধী হওয়ার পথে দেশ



বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এর কারণ বহুবিধ এবং এটি বড় ধরনের গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। তবে সহজভাবে দেখা যায়, বিদেশে চাকরির ভালো সুযোগ, দেশে অধিকতরও সুযোগ-সুবিধায় বেসরকারি চাকরি, সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে বেতন-ভাতাদির শোচনীয় অপ্রতুলতা এবং সরকারি চাকরির যুগবাহিত মর্যাদার হ্রাস এর মূল কারণ। তা সত্ত্বেও যেসব মেধাবী তরুণ-তরুণী সরকারি চাকরিতে আসতে চাইছেন বা এসেছেন, তাঁরাও সম্মুখীন হয়েছেন বা হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার। দীর্ঘকাল এ অবস্থাটি সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে মেধাহীনদের সমাবেশ ঘটিয়েছে। তাই আজ দায়িত্বশীল মহল থেকেই প্রস্তাব আসছে, চাকরির শীর্ষ পর্যায়ে বাইরে থেকে মেধাবীদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দিয়ে নিয়ে আসার। এর জন্য কৌশলে একটি আইনি বিধান করার চেষ্টাও লক্ষণীয় হচ্ছে। কিন্তু সমস্যার গভীরে না গিয়ে এ ধরনের সমাধানের প্রয়াস বিপরীতধর্মী ফলই দেবে।

সামগ্রিক বিষয়াদি আলোচনার জন্য অনেক বড় পরিসর আবশ্যক। সেটা বর্তমান নিবন্ধে সম্ভব নয়। মেধাবীদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিতে আকর্ষণ হারানোর পরও যাঁরা আসতে চাইছেন, তাঁরা যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, তার দু-একটি প্রধান বিষয় আলোচনা করব। বলা বাহুল্য, সাংবিধানিক পদগুলো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ব্যতীত সব বেসামরিক চাকরিতে এ প্রতিবন্ধকতা বিরাজমান। প্রধান প্রতিবন্ধকতাটি হচ্ছে, একটি বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতি। বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের জন্য কোটার বিন্যাস হচ্ছে শতকরা হিসাবে—মেধা ৪৫, মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০, উপজাতি (এ নামেই কোটাটি সংরক্ষিত আছে) ৫ এবং প্রতিবন্ধী ১। যোগ করলে ১০১ হয় বিধায় অনুসন্ধানে জেনেছি, সেই ১ শতাংশ অন্য কোনো কোটা পূরণ না হলে তা থেকে দেওয়া হয়। এসব পদের মধ্যে সনাতন ক্যাডার সার্ভিস ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, কৃষিবিজ্ঞান, প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি রয়েছে অর্থাৎ আমরা শুধু প্রশাসন, পুলিশ, কূটনীতিক, হিসাব ও নিরীক্ষা, শুল্ক ও কর—এসব পদেই মেধাবীদের প্রবেশ সীমিত করিনি; সীমিত করেছি কলেজশিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিজ্ঞানী, প্রাণিসম্পদবিদসহ সব ক্ষেত্রেই। বছর দুই আগে থেকেই অধস্তন বিচার বিভাগেও এ কোটা পুনরায় চালু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পৃথক জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠনের পর প্রধানত মেধাই প্রাধান্য পেত। অব্যাহতভাবে এ ধরনের নিয়োগের পরিণতি কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। উল্লেখ করা যায়, ৩১তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ৭৭৩টি পদ শূন্য রাখা হয়েছে বলে পিএসসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন (কালের কণ্ঠ, ৯ জুলাই)। অথচ সম্মিলিত মেধাতালিকায় ওপরের দিকে অবস্থান করেও অনেকে চাকরি পেলেন না। কী নির্মম পরিহাস!

২৯তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের ৪১২ জনের মধ্যে ২১১ জন কোটায় আর ২০১ জন মেধায় নিয়োগ পান।

২৮তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পান বিভিন্ন কোটায়।

মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি রয়েছে।

৩২তম স্পেশাল বিসিএস সার্কুলারে ক্ষুব্ধ মহিলা প্রার্থীরা: দেড় হাজারে ১৩০ মহিলা ১১৫৮ মুক্তিযোদ্ধা ও ২০১টি উপজাতি কোটা।

কোটা বন্টন (ক্যাডার, ননক্যাডার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার জন্য):

মেধা তালিকা: ৪৫%

জেলাকোটা: ৫৫%

মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৩০%

নারী কোটা: ১০%

আদিবাসী কোটা : ৫%

সাধারণ কোটা: ১০%


উৎসঃ http://www.bangladesh.gov.bd/index.php?option=com_content&task=category §ionid=4&id=180&Itemid=27&lang=bn

দলীয়করণ ও আত্মীয়তার রাহুগ্রাসে পিএসসি

ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়কুলের রাহুগ্রাসে বন্দি এখন সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে ব্যাপক দলীয়করন ও আত্মীয়করণ। বড় পদ, ছোট পদ—সব ক্ষেত্রেই স্বজনদের ছড়াছড়ি। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিসহ সরকারি দলের প্রভাবশালীদের আত্মীয় এবং অনুগতরা ছাড়া এ সংস্থায় এখন অন্য কারও ঠাঁই নেই। কমিশনে বর্তমানে চেয়ারম্যানসহ ১৪ সদস্যের ১৩ জনই দলীয় অনুগত ও প্রভাবশালীদের আত্মীয়। সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ও জনতা মঞ্চের রূপকারও আছেন কয়েকজন। পিএসসির সদস্য হয়েও সর্বেসর্বার আসনে আছেন আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. এমরান কবির চৌধুরী। তত্ত্বাবধায়ক সময়ে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যানসহ সরকার সমর্থক বাদে অন্যরা প্রচণ্ড চাপ এবং কোণঠাসা হয়ে আছেন। দাবড়ে বেড়াচ্ছেন সরকার সমর্থকরা।

মেধা শেষ করছে কোটা : আমলাতন্ত্র মেধাহীন হচ্ছে দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষাও শেষ করছে মেধা

সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে অনগ্রসর ৫৬ শতাংশ কোটা (মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধী) মেধাকে শেষ করে দিচ্ছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষা পদ্ধতির অবস্থাপনাও মেধা ধ্বংসে কম দায়ী নয়। এতে সরকারের আমলাতন্ত্র এবং এমনকি নামিদামি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ক্রমেই মেধাহীন হয়ে পড়ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে বলে পূরণ হয় না প্রাধিকার কোটা। ফলে কোটায় নিয়োগ আরও উদারীকরণ করে এখন বিশেষ নিয়োগ দিচ্ছে বর্তমান সরকার। বিসিএস ও প্রথম শ্রেণীর চাকরির নিয়োগে ৫০ শতাংশ কিংবা তার কম নম্বর পেয়েও অনায়াসেই কোটায় চাকরি মিলছে। অথচ ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েও মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। এতে এখন চরম হা-পিত্যেশে মেধাবীরা।

রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রশাসনে মেধাবী ও যোগ্য আমলা নিয়োগের হর্তাকর্তা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) স্থান পাচ্ছেন না মেধাবী ও যোগ্যরা। ৫৬ শতাংশ কোটার ভারে, দলীয় ও আত্মীয়করণ, দুর্নীতি, ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতির অবস্থাপনার কারণে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) স্থান পাচ্ছেন না মেধাবীরা। সরকারের খড়্গ নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। দলীয় ও মেধাহীনদের নিয়োগে নানা কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার। এ জন্য পুরো পিএসসি দলীয় ও আত্মীয়করণ করা হয়েছে। একই অবস্থা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, অডিট, খাদ্য, কর, রাজস্ব, রেল, বিআইডব্লিউটিএ, শিক্ষা সেক্টরেও।

১৬ কোটি বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর জন্য বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের শতকরা হিসাবে মেধাভিত্তিক মাত্র ৪৪ভাগ। বাকি ৫৬ ভাগই প্রাধিকার (মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ শতাংশ)।

সরকারি চাকরিতে এই কোটা পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণ করার ২০০৬ সালের নিয়োগ বিধির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বেসরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে ওই বাধ্যবাধকতা নেই। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার আবার দেশকে বলেন, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে ২০০৬ সালের একটি বিধিমালা রয়েছে। ওই বিধি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বেসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত বা কোনো স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠান এই বিধিমালা অনুসরণে বাধ্য নয়।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে এই কোটা পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণে বিধি ও বাধ্যবাধকতার কথা বলা হলেও বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কোটায় নিয়োগে যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকেই কোটার ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে কোটায় নিয়োগ পাচ্ছে।

বেশ কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা পূরণ হচ্ছে না। সর্বশেষ ২৮তম, ২৯তম, ৩০তম ও ৩১তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা নারী ও উপজাতীয় কোটা পূরণ না হওয়ায় তা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংরক্ষিত রাখা হয়।

পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে কোটায় ২৮তমতে ৮১০টি এবং ২৯তমতে ৭৯২টি পদ খালি থাকে। ৩০তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটায় ৭৮৪টি, ৩১তমতে ৭৭৩টি পদ খালি রাখা হয়েছে। ৩০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬১৩, মহিলা ৩২ এবং উপজাতীয় ১৩৯টি পদ খালি ছিল। সর্বশেষ ৩১তম বিসিএসসে যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়ায় প্রাধিকার কোটার ৭৭৩টি পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৫৫০, মহিলা ৫৪ জন, উপজাতি ১২৯টি। এসব পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার অবস্থা

পিএসসি সূত্র জানায়, টেকনিক্যাল ক্যাডারে অপূরণকৃত পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই পরীক্ষায়ও উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় ৭০৯টি পদের বিপরীতে কমিশন মাত্র ৭৯ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করতে পেরেছিল। যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় ২৩তম বিসিএসে ৬৩০টি পদে কোনো প্রার্থী কমিশন কর্তৃক সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। ২৮তম ও ২৯তম বিসিএসও সবচেয়ে বেশিসংখ্যক খালি পদ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। ৩০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬১৩, ৩১তম বিসিএসে ৫৫০টি পদ খালি রয়েছে।

৬০ শতাংশের অধিক নম্বর পেয়েও মেধাবীরা চাকরি পান না

৬০ শতাংশের ঊর্ধ্বে নম্বর পেয়ে সব মেধাবী চাকরি পাচ্ছেন না। কিন্তু সেখানে বিএসএ-এ প্রাধিকার কোটার প্রার্থীরা প্রিলিমিনারিতে ৪০ শতাংশ এবং লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশের কম নম্বর পেয়েও চাকরি পাচ্ছেন। বিশেষ নিয়োগ ছাড়াও এখন সাধারণ নিয়োগ পরীক্ষায়ও প্রাধিকার কোটা প্রার্থীদের উত্তরপত্র আলাদা মূল্যায়ন করা হয়। সাধারণ প্রার্থীরা প্রিলিমিনারিতে ৬০ শতাংশ নম্বরে উত্তীর্ণ হচ্ছে না। অথচ সেখানে প্রাধিকার কোটায় ৪৫ থেকে ৫০ পেলেই উত্তীর্ণ হচ্ছেন। অন্যান্য সরকারি চাকরিতে প্রাধিকার কোটায় ৩৩ শতাংশ পেলেও চাকরি পাচ্ছেন।

সর্বশেষ পিএসসির প্রতিবেদনে ৩০তম বিসিএসের নিয়োগে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ ক্যাডারে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের ঊর্ধ্বে নম্বর পেয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে পিএসসি মোট ৭৪৮ জনকে চাকরির চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। পিএসসির সুপারিশে দেখা গেছে, লিখিত পরীক্ষায় ৬০ শতাংশের ঊর্ধ্বে নম্বর পেয়েছে ১ হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে ৪৩৯ জন। বাকি ৬৮৯ জন মেধা ভিত্তিতে এগিয়ে থেকেও চাকরি পাননি। সুপারিশপ্রাপ্ত ৭৪৮ জনের মধ্যে বাকি ৩০৯ জন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছেন। এদের মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি দেয়া হয়। ৩০তমের কারিগরি বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরির সুপারিশ প্রাপ্ত হন ১ হাজার ৬১৯ জন। লিখিত পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছিল ৫ হাজার ৬২২ জন। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশের ঊর্ধ্বে নম্বর পান ৮৬৯ জন। এ থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত হন মাত্র ১৬৫ জন। কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্ত বাকি ১ হাজার ৪৫৪ জন চাকরি পেয়েছেন কোটায়। কারিগরি ক্যাডারে কোটায় ৫০-৫২ শতাংশ নম্বর পাওয়া ৭৬৭ জনকে চাকরি দেয়া হয়।

পিএসসির রিপোর্টে দেখা যায়, গত বিএনপি জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৭তম বিসিএস-এ ৩ হাজার ২৩৯ জন নিয়োগ হয়। এর মধ্যে মেধায় চাকরি সুপারিশপ্রাপ্ত হন ২ হাজার ৫৮৭ জন। প্রাধিকার কোটায় ৬৫২ জন। ওই সময় প্রাধিকার কোটা সংরক্ষিত রাখার বিধান না থাকায় মেধা প্রার্থীদের দিয়ে তা পূরণ করায় মেধাবীরা বেশি সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

এরপর ২৮তম বিসিএস থেকে প্রাধিকার কোটা সংরক্ষিত রাখার বিধি হওয়ার পর মেধাবীদের কপাল পোড়ে। ২৮তমতে মোট সুপারিশপ্রাপ্ত হন ২ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্যে মেধায় সুপারিশ প্রাপ্ত হন ১ হাজার ৩৫৩ জন, প্রাধিকার কোটায় ৮৩৭ জন। যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া প্রাধিকার কোটার ৮১০টি খালি থাকে। ২৯তমতে মোট সুপাশিপ্রাপ্ত হন ১ হাজার ৭২২ জন। এর মধ্যে মেধায় ১ হাজার ৪ জন, প্রাধিকার কোটায় ৬১৭ জন। যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া প্রাধিকার কোটায় ৭৯২টি পদ খালি থাকে। প্রাধিকার কোটায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নম্বর পেলেই চূড়ান্ত সুপারিশ প্রাপ্ত হন।

আগের নিয়ম বাতিল, কোটা সংরক্ষণ রেখে বিশেষ নিয়োগ : বর্তমান আওয়ামী সরকারের আগের নিয়ম ছিল কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থী দিয়ে তা পূরণ করা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার মেধাবীদের সে সুযোগও কেড়ে নিয়েছে। এ সরকার নিয়ম করেছে, সাধারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রাধিকার কোটা পূরণ না হলে তা সংরক্ষিত রেখে বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিদ্ধোদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের দিয়ে ওই কোটা পূরণ করার বিধিমালা করে সরকার। এ বিশেষ নিয়োগে ২০০২ ও ২০০৩ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে জারি করা দুটি বিধি বাতিল করেছে এ সরকার।

বর্তমানে বিসিএস, সোনালি ব্যাংকে সরকারের বিশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন চলছে। ২৮ ও ২৯তম বিসিএসের প্রাধিকার কোটায় সংরক্ষিত ১ হাজার ৪৮৯টি পদ পূরণে বর্তমানে ৩২তম বিশেষ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এক হাজার ১৫৮ জন, মহিলা কোটায় ১৩০ জন এবং উপজাতীয় কোটায় ২০১ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণদের সর্বশেষ ধাপ মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী মাসের শেষদিকে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন উদারীকরণ করা হয়।

সম্প্রতি মেধা ও অন্যান্য কোটা বাদ দিয়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। সিনিয়র অফিসার পদে ২১৯টি, অফিসার পদে ৪৭৭টি ও অফিসার ক্যাশ পদে ৪৮৪টি—এই তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১ হাজার ১৮০টি পদে বিজ্ঞপ্তি হয়। সরকারি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ১ হাজার ১৮০টি পদের শতভাগ নিয়োগই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। আর এতে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা। এ নিয়ে সামাজিক ওয়েবসাইট ব্লগ ও ফেসবুকেও বইছে সমালোচনার ঝড়।



কোটা সমীক্ষা, সংস্কারে সুপারিশ


২০০৮ সালে পিএসসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষা পরিচালনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আকবর আলি খান ও সাবেক শিক্ষা সচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। ওই সমীক্ষায় পিএসসি শিক্ষাবিদ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, উপজাতি, নারীনেত্রী ও ছাত্রদের মতামত নেয়া হয়। এসব মতামতের ভিত্তিতে পিএসসি সরকারের কাছে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে সুপারিশ করে। পিএসসি সূত্র জানায়, ওই সুপারিশে বিদ্যমান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ এবং উপজাতি ৫ শতাংশ রাখার সুপারিশ করেছে পিএসসি। একইসঙ্গে পিএসসি জেলা কোটা তুলে দেয়া এবং বাকি ৭০ শতাংশ মেধাবীর জন্য খুলে দেয়ার সুপারিশ করেছে। ২০০৮ সালের মার্চে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের কাছে জমা দেয় কমিটি। ওই বছরই পিএসসি তাদের রিপোর্ট ও সুপারিশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এছাড়া প্রাধিকার কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেক পদ শূন্য থেকে যায় উল্লেখ করে পিএসসি প্রতিবছরই সংশোধনে উত্থাপিত তাদের প্রতিবেদনে কোটাপদ্ধতি যৌক্তিকীকরণে সরকারকে সুপারিশ করে আসছে।

চাপা পড়ে আছে রিপোর্ট, সংস্কারে উদ্যোগ নেই

পিএসসি তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট ও সুপারিশ ২০০৮ সালে জমা দেয়। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এ বিষয়ে একাধিকবার তাগাদা দেয় পিএসসি। প্রতিবছর সংসদে উত্থাপিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও কোটা যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ করে আসছে পিএসসি। কিন্তু তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। জানা গেছে, রিপোর্টের ফাইলটি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে চাপা পড়ে আছে সেই ২০০৮ সাল থেকে। এ বিষয়ে সংস্থাপন সচিব আবদুস সোবহান শিকদার আমার দেশকে বলেন, রিপোর্টটি এখনও সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই রয়েছে। কোটা সংস্কারে পিএসসি যে সুপারিশ করেছে, তাতে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি ও দাবি রয়েছে। তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনের সুপারিশে জেলা কোটা উঠিয়ে দেয়ার সুপারিশ করা হলেও এখনও অনেক অনগ্রসর জেলায় জেলা কোটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার সম্পর্কে সচিব বলেন, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এখন প্রয়োজন আছে কি-না, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে পাঁচ বছর পার হলেও এখনও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

মেধা ধ্বংসে দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি :

আমলাতন্ত্র, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, অডিট, খাদ্য, কর, রাজস্ব, রেল, বিআইডব্লিউটিএ, শিক্ষাসহ সব প্রতিষ্ঠানই সরকারের দলীয়করণ জালে আবদ্ধ। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে দলীয় বিবেচনাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমেও মেধাহীন দলীয় ক্যাডাররা চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছে। এ সরকারের সময় খাদ্য, এনবিআর, এটিইও, জনতা ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এদের ১৩ জনই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। জনতা ব্যাংকের নিয়োগে ছাত্রলীগ ৩০০ নেতাকর্মীর তালিকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, ওই তালিকার প্রায় সবাইকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। পুলিশ সেক্টরে অধিকাংশ নিয়োগই হচ্ছে দলীয় ও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। বর্তমানে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগে বিশাল বাণিজ্য চলছে।

আমলাতন্ত্রে দলীয় লোকবল বৃদ্ধিতে পিএসসিকে পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছে। মেধা কোটা কমিয়ে প্রাধিকার কোটা আরও বাড়ানো হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পিএসসি কোটা কমানোর সুপারিশ করলেও সরকার তাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না। বিসিএসে ফের ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা চালু করেছে সরকার। পরীক্ষার স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই নগ্ন দলীয়করণের মূল কারণ ক্যাডার সার্ভিসে দলীয়করণ। আর তা করে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সবাই একে ব্যবহার করে। আর এসব কারণে ক্যাডার সার্ভিসে ঠাঁই হচ্ছে না মেধাবীদের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও (টিআইবি) তাদের এক রিপোর্টে পিএসসির নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে।



২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দুর্নীতির দরজা খুলেছে


বিসিএসে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় আবারও দলীয়করণ ও দুর্নীতির দরজা খুলে দিয়েছে সরকার। আর এর ফলে মেধাবীরা স্থান পাচ্ছে না ক্যাডার সার্ভিসে। ৩০তম বিসিএস থেকে বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় ১০০-এর পরিবর্তে পুনরায় ২০০ নম্বর কার্যকর করে পিএসসি। স্বায়ত্তশাসিত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পিএসসির কোনোপ্রকার সুপারিশ কিংবা চাহিদা ছাড়াই সরকার পিএসসির ওপর এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। জানা যায়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ১৯৮২-এর সংশোধনী এনে বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০-এর বদলে ২০০ করার বিধান করে সরকার। সূত্র জানায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) বিসিএস নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়। পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণ না করায় শেষ পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় সরকার।

সরকারি ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগে দুর্নীতি ঠেকাতে বিগত চারদলীয় জোট সরকার মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের স্থলে ১০০ নম্বরের বিধান চালু করেছিল। ২৭তম বিসিএসে ১০০ নম্বরের বিধান বাস্তবায়ন করা হয়। ২৮ ও ২৯তম বিসিএসেও এ বিধান কার্যকর করা হয়েছে। এতে অনেক মেধাবীই আশা-ভরসা নিয়ে আবার ক্যাডার সার্ভিস চাকরিতে আসা শুরু করেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার পিএসসিকে বশে আনতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দলীয়, দুর্নীতি, আত্মীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিতে ফের ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় ফিরে যায়। ৩১তম বিসিএস থেকে তা কার্যকর হলে পিএসসির বিরুদ্ধে এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, ২০০ নম্বরের মধ্যে পিএসসি দলীয় সুপারিশ ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক প্রার্থীকে ১৮০ থেকে ১৯০ পর্যন্ত নম্বর দিয়েছে। অথচ সেখানে সাধারণ প্রার্থীদের ১০০ বা ১২০ নম্বরের বেশি দিচ্ছে না। এ বিষয়ে ৩১তম বিসিএসে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শামিম আহমেদ নামে এক প্রার্থী আমার দেশকে বলেন, যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়ানো নেতিবাচক। কেননা, মৌখিক পরীক্ষায় দুর্নীতি ও দলীয়করণের সুযোগ বেশি। তিনি বলেন, আমি মনে করি, মৌখিক ২০০ নম্বরই বিসিএস চাকরিতে বড় ফ্যাক্টর। ভাইভা বোর্ডে যারা থাকেন, তারা অনেকেই প্রার্থীর মেরিট, দলীয়, কোটা ও আত্মীয় কিনা বিবেচনায় রাখেন।

অব্যবস্থাপনায় অযোগ্যরা পার পাচ্ছে

পরীক্ষা কেন্দ্র ও হল ব্যবস্থাপনার সঠিক কোনো নীতিমালা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় নকলসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। এ সুযোগে অযোগ্য অনেক প্রার্থীও চাকরির পরীক্ষার বিভিন্ন স্তরে উত্তীর্ণ হচ্ছেন। বিশেষ করে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় মাঝেমধ্যে এমন প্রার্থীও উত্তীর্ণ হচ্ছেন যারা মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে সাধারণ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেন না। রাষ্ট্রপতিকে দেয়া পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়—কেবল বিসিএসই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাকরির পরীক্ষাতেও এসব ঘটনা ঘটছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণেই এসব সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দেড় মাস ধরে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণেই অনিয়ম হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিসিএসসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও পরিদফতরে নিয়োগ পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া নকল, পরীক্ষার্থীর আসন পরিবর্তন, পেশিশক্তি প্রয়োগ, মুঠোফোনের বার্তা আদান-প্রদানসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

কোটা পদ্ধতি সংস্কার সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও কেবিনেট সচিব ড. আকবর আলি খান ২০০৮ সালের রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে আমরা পিএসসিকে রিপোর্ট ও সুপারিশ দিয়েছিলাম। ওই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা গ্রহণ করেনি। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন বলেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দায়িত্ব সরকারের। বিদ্যমান জটিল কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব ২০০৮ সালে পিএসসি সরকারকে দিয়েছিলাম। সংস্কার সিদ্ধান্ত নিলে পিএসসি তার বাস্তবায়ন করতে পারত। সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ মনে করেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে ভাবার সময় এসছে। এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা দরকার। পিএসসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ওই পদে (চেয়ারম্যান) থাকাকালীন বলেছিলেন, আমরা সময় ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট ও সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিলাম। ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, পিএসসি নয়।

শুধু নিয়োগে নয় পদোন্নতিকালেও কম মেধাবীরা কোনো ফাঁকফোঁকরে টপকে যাচ্ছেন মেধাবীদের—এ বেদনাদায়ক চিত্রও দেখা যায়। এটা ঠিক, পদোন্নতি সবাই পাবে না। মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনাতেই ওপরের পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা। নিয়োগকালীন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মেধাতালিকায় ওপরের দিকে থাকলেও চাকরিজীবনে কেউ কেউ ভালো করেন না বলে পিছিয়ে যান, এটাও দেখা গেছে। তবে গণহারে মেধাবীরা তলিয়ে যান, আর সামনে আসেন কম মেধাবীরা, এমনটা দেখা যায়নি। কিন্তু এখন তা-ও ঘটছে। যেমন, প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৮৫ ব্যাচে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৩৮ কর্মকর্তার মধ্যে ২০৮ জন যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান। শতকরা হার ৩৮ দশমিক ৮। ব্যাচটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁদের প্রথম ২০০ জনের মধ্যে ৭৫ জন (শতকরা ৩৭ দশমিক ৫) এবং পরবর্তী ৩৩৬ জনের মধ্যে ১৩৩ জন (শতকরা ৩৯ দশমিক ৬) পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ শীর্ষে অবস্থানকারী ২০০ জন মেধার ভিত্তিতেই চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তেমনি একই ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের ৪৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম ৩০০ জনকে সম্প্রতি বিবেচনায় নিয়ে ৭৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। এর প্রথম ২০০ জনের মধ্যে ৫৩ জন এবং পরবর্তী ১০০ জনে ২৫ জন। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সময়ও বঞ্চনা, সরকারি চাকরিকে সচেতনভাবেই মেধাহীন করা হচ্ছে। পুলিশ, অধস্তন বিচার বিভাগ—সর্বত্র একই অবস্থা। এতে লাভবান হবে কে? মেধাতালিকার নিচের দিকে থাকা কর্মকর্তারা, বিভিন্ন কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। সম্মিলিত মেধাতালিকায় অনেক নিচের দিকেই ছিল তাঁদের অবস্থান। কোটা না থাকলে তাঁদের অনেকে এসব পদে নিয়োগই পেতেন না। কিন্তু দুর্ভাগা এ জাতি সযতনে মেধাবীদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

অপরদিকে আমরা দেখি, সামরিক বাহিনীতে অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ক্যাডেট বাছাই করতে মেধা ব্যতীত কোনো কোটাই নেই। মেধা এবং শুধু মেধাই সেখানে অফিসার পদে নিয়োগের মাপকাঠি। তবে সৈনিক পদে নিয়োগে জেলা কোটা অনুসরণ করা হয়। ক্যাডেট হিসেবে বাছাইয়ের পর কমিশন্ড লাভ করা পর্যন্ত কঠোর দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এর পরও বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁরা নেন পেশাগত প্রশিক্ষণ। ইংরেজি ভাষার চর্চা এবং তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান তাঁদের করে সমৃদ্ধ। তদুপরি নির্দ্বিধায় বলা চলে, অন্তত মাঝারি স্তর পর্যন্ত তাঁদের পদোন্নতি থাকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত। শুধু মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়েই তাঁরা অগ্রসর হতে থাকেন। এ কারণেই আজ বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী দক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তাদের নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ববোধ করে। সরকারও তাদের কোনো দায়িত্ব দিয়ে আশ্বস্ত থাকে, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি হবে বলে। তাহলে রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি কেন? সামরিক বাহিনীর মান আরও বৃদ্ধি পাক—এ কামনা সবার। তবে বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক উল্লেখযোগ্য কোনো প্রত্যাশিত পদক্ষেপ সাম্প্রতিককালে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর কোনোটিই নেয়নি; বরং ক্রমান্বয়ে এগুলো দুর্বল করার পদক্ষেপই লক্ষণীয় হচ্ছে।

উল্লেখ করা আবশ্যক, কিছু কিছু বেসামরিক চাকরির নিয়োগে কোটাব্যবস্থা নতুন নয়। এর একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ব্রিটিশ ভারতে, ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানতালে না আসতে পারায় ভারতীয়দের জন্য কিছু কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্যও আসে কিছু কোটা। আর পাকিস্তান সময়কালে পিছিয়ে পড়া তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) দাবির মুখে কেন্দ্রীয় সুপেরিয়র সার্ভিসগুলোর কয়েকটিতে প্রদেশভিত্তিক কিছু কোটা চালু ছিল। তবে এখনকার মতো সব স্তরে বাস্তবতার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে বিশাল আকারের কোটা কখনোই ছিল না। দেখা যাচ্ছে, যাদের জন্য বিশাল কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তাদের মাঝে সে সংখ্যক পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীই পাওয়া যায় না। ফলে পদ থাকে শূন্য। বঞ্চিত হচ্ছেন যোগ্য প্রার্থী।

সব চাকরিতে নিয়োগকালে বিশাল কোটা সংরক্ষণ ও যোগ্য কেউ না থাকলে পদগুলো শূন্য রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক, তা নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখেছেন কি? তেমনিভাবে জেলা কোটা উন্নত আর অনুন্নত সব জেলার জন্য আনুপাতিক হারে বণ্টনও অনাবশ্যক এবং এর মূল চেতনার পরিপন্থী। আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অনগ্রসর জেলাগুলোকে অঞ্চলভিত্তিক দু-তিনটি গুচ্ছে বিভক্ত করে সেই গুচ্ছগুলোতে জেলা কোটার অংশটি ভাগ করা যায়। সে কোটা অনুযায়ী প্রাপ্ত পদ ওই গুচ্ছের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিলেও কিছুটা মেধার মূল্যায়ন হতো। আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অগ্রসর জেলাগুলো কোটার সুবিধা পাবে কেন? তারা প্রতিযোগিতায় পারলে আসবে, না হয় আসবে না।

আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সব নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি-সংক্রান্ত অধ্যায়ের ১৯(১) অনুচ্ছেদে সব নাগরিকের জন্য সমতা নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত অধ্যায়ের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ১ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের জন্য সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে। একই অনুচ্ছেদের ৩(ক) উপ-অনুচ্ছেদে নাগরিকদের কোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে শুধু তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

এসব আলোচনা থেকে একটি সারবত্তাই বেরিয়ে আসে। বেসামরিক চাকরিতে, বিশেষ করে প্রথম শ্রেণীর পদে প্রবেশকালে প্রাধান্য দিতে হবে মেধাকেই। বিসিএস পরীক্ষায় এবং অধস্তন বিচার বিভাগের নিয়োগে মেধার কোটা ৭৫ শতাংশের কম হওয়া যথোচিত হবে না। বাকি পদগুলোয় যেসব কোটা বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মাঝে যৌক্তিক পরিমাণে পুনর্বিন্যাস করে বরাদ্দ করা যায়। তবে প্রাধিকার কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে অতি অবশ্যই তা মেধাতালিকায় স্থানান্তরিত হতে হবে। এটা বেসামরিক চাকরির মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। নিয়োগকালে সামান্য ব্যতিক্রম ব্যতীত (কোটা) শুধু মেধা আর পদোন্নতিকালে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকেই একমাত্র নির্দেশক হিসেবে বিবেচনায় নিলে সুফল পাবে সরকার তথা দেশ ও জনগণ।

মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে সত্য ইতিহাস হচ্ছে প্রায় শতভাগ লোক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেখানে ০.১২% মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করে যে বৈষম্য করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। প্রকৃত অর্থে ১৯৭১ সালে দেশের গুটিকয়েক রাজাকার ছাড়া প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা। যে দেশের/সংগ্রামের জন্য কবিতা লিখেছে, যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা মুক্তির জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করেছে, যে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার বা আশ্রয় দিয়েছে, যে শিশু শত্রুদের গোপন খবর বয়ে এনেছে, যারা মাঠে যুদ্ধ করেছে তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের (নাতি-নাতনি) জন্য সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

১. ভাণ্ডারিয়ায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও পরিচয়পত্র বিক্রি – আমার দেশ- ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১

২. বিরোধীদলীয় চীপ হুইপের ওপর হামলাকারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার এডিসি হারুন । হারুন ১৯৯৭ সালে … রাজনৈতিক বিবেচনায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কোটায় বিসিএস ক্যাডারের চাকরি নেয়। (তথ্যসূত্র আমার দেশ ও সংগ্রাম)

৩. মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২৩ শিক্ষানবীস কন্সটেবলকে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করে ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানায় আনা হয়েছে

৪. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করা এক হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৫২ জনের সনদই ভুয়া। গোয়েন্দা সংস্থা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা, জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তদন্ত, যাচাই-বাছাই শেষে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৫২ জনের সনদ সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ১৫২ জনের মধ্যে ২৯ জনের সনদ ভুয়া, ১৩ জনের উপযুক্ত সনদ নেই, ১৮ জনের সনদ যাচাইয়ের উপযুক্ত নয়, ৪১ জনের সনদ গ্রহণযোগ্য নয় এবং ৫১ জনের সনদ নিবন্ধন তালিকাভুক্ত নয়। তবে অপরিচ্ছন্ন থাকায় যে ১৮ জনের সনদ যাচাই সম্ভব হয়নি, তারা আবার কাগজপত্র দাখিল করতে পারবেন।

৫. আইন মন্ত্রণালয সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে ভুয়া সনদ দিয়ে ১৯০ জন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি বাগিয়ে দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পরপরই এদের সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ করা হয়।

কে কার আত্মীয় এবং দলীয়

পিএসসিতে পূর্ণ প্যানেলের ১৫ সদস্যের মধ্যে বর্তমানে ১৪ জন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট পিএসসি সূত্র এবং অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব সদস্যের মধ্যে ১৩ জনই আত্মীয় ও দলীয় অনুগত।

পিএসসির সাবেক সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী। কথিত আছে, তিনি ১৯৯৬ সালে সচিবালয়ের সামনে জনতার মঞ্চের অন্যতম রূপকার ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৩ জুন যোগদান করেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. সা’দত হোসাইনকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে তার নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি এজন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ‘কর্ম কমিশনে স্থবিরতা’ শীর্ষক চিঠি দিয়েছিলেন।

সদস্যের জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন অধ্যাপক রাশিদা বেগম। তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের বড় বোন। ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ তিনি পিএসসিতে যোগদান করেন। এর আগে তিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর চাচাতো ভাই। আর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল সেরনিয়াবাত পিএসসিতে যোগদান করেন। এর আগে তিনি প্রশাসনের ভুতাপেক্ষ যুগ্ম-সচিব ছিলেন। মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার আসামি ছিলেন সেরনিয়াবাত। ২০০১ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো এ মামলা করেছিল। বর্তমান সরকারের সময় তিনি সে মামলা থেকে খালাস পান।

অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী যুবলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি বিসিএস পরীক্ষা ও নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি তার বাসায় হামলাও করেছিল ছাত্রলীগ।

সৈয়দ হাসিনুর রহমান সাবেক প্রভাবশালী আমলা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আপন ভাগ্নে। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই যোগদান করেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

ইকরাম আহমেদ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ এমপি তারানা হালিমের বোনজামাই। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই তিনি যোগদান করেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. ফরিদা আদিব খানম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের আপন ভাগ্নি। তিনিও ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই যোগদান করেন।

আওয়ামী লীগের অনুগত আরেক পিএসসি সদস্য মুহম্মদ লিয়াকত আলী খান। কথিত আছে, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ এবং জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর যোগদান করেন। এর আগে তিনি কারা মহাপরিদর্শক ছিলেন।

মো. ওয়াজেদ আলী খান প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে পরিচিত। ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি যোগদান করেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

ড. ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বাকিদের ব্যাপারেও দলীয় ও আত্মীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। মো. নুরুন নবী আওয়ামী লীগের অনুগত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে পরিচিতি রয়েছে। অধ্যাপক সুরাইয়া বেগম পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হোসাইনের কাছের লোক বলে ওই প্রতিষ্ঠানে পরিচিতি আছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবিদুর রেজা খান সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের ঘনিষ্ঠ। এহসান শামীম পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা’দত হোসাইনের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয় বলে পরিচিত। এছাড়া কমিশনের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান সরকারের অনুগত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। জানা যায়, গোপালগঞ্জ কোটায় তিনি কমিশনের সচিব হন।

পিএসসিতে সর্বশেষ নিয়োগ পান আন্দোলনের কারনে জাবি থেকে সরিয়ে দেওয়া ভিসি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা শরীফ এনামুল কবির।



মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা


২০০৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তারিখের পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? রিপোর্টির কিছু অংশ হুবহু তুলে দেয়া হলো, “১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় ৮৬,০০০ ; ১৯৯৮ – ২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের খসড়া তালিকায় ১৮৬,০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাকে মুক্তিবার্তা তালিকা বলা হয়। আর ওই সময়ে পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় এক লাখ। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯। তবে জোট সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন। অর্থাৎ জোট আমলে সংখ্যাটি আবার বেড়ে যায়। আশা করা যায়, আওয়ামী সরকারের সময় এ সংখ্যা আবারো বেরে যাবে”।

উৎসঃ

http://www.prothom-alo.com/detail/news/25785

মুক্তিযোদ্বাদের তালিকা সম্পর্কে সাপ্তহিক ২০০০ এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, “মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে অব্যাহত বিতর্কের অবসানের জন্যই ’৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপক যাচাই-বাছাই, বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সর্বজনগ্রাহ্য তালিকা তৈরি করেছিল, যা রেড ফোল্ডার বুক বা লাল বই হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছিলেন, যাতে করে অদূরভবিষ্যতে আমাদের বীর সন্তানদের নিয়ে কেউ বিতর্ক কিংবা ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে না পারে। লাল বইতে যেসব মুক্তিযোদ্ধা (১ লাখ ৫৪ হাজার) তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে পরবর্তী জোট সরকারও খুব একটা আপত্তি তোলেনি। জোট সরকার লাল বইকে আদর্শ হিসাবে ধরে নিয়ে একটি সমন্বয় তালিকা (যেখানে ১ লাখ ৯৬ হাজার) করে সরকারি গেজেট প্রকাশ করেছিল”।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, এ পর্যন্ত জাতীয় তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৫৫৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচন, ২০১০-এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৫ জন, গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৫ জন, মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার, ইবিআরসি তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৮ হাজার ৯৩ জন, কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮৩৩ জন।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্বা যাই হোক বিতর্ক না বাড়িয়ে ধরে নেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্বে ২ লক্ষ মুক্তিযোদ্বা ছিলো, আজ ৪০ বছর পর তাদের প্রত্যেকের পরিবারে ৬ জন করে যদি লোকসংখ্যা থাকে তাহলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লক্ষ আবার দেশের মোট জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয়ে থাকে তাহলে দেখা যায় যে মাত্র ০.৭৫% লোকের জন্য সরকারি মোটামুটি সকল চাকুরিতে ৩০% কোটা সংরক্ষন করার বিধান, বিষয়টা চিন্তা করলে হাসি এবং দুঃখবোধ একসাথে হতে পারে।

বিসিএসে যেভাবে প্রো-ইন্ডিয়ান বাছাই করা হচ্ছে -

বলতে গেলে বর্তমান সরকারের আমলে বিসিএসে শতভাগ অনিয়ম ও দুর্ণীতি হচ্ছে। মেধাবী তরুণরা বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডে সরকারী চাকরির আশা অনেকটাই বাদ দিয়েছেন।

প্রার্থীদেরকে যেসব প্রশ্ন করা হচ্ছে………

১. ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে কি জানা আছে?

২. বাংলাদেশের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য সাল ও তারিখ কি কি?

৩. স্বাধীনতার ঘোষণা কবে, কে, কোথায়, কিভাবে, কার মাধ্যমে প্রচার করে? এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা আওয়ামী লীগের কোন নেতার মাধ্যমে মাধ্যমে কোথায়, কিভাবে প্রচারিত হয়?

৪. কেন ও কি জন্য? ১৯৪৭, ১৯৪৯, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০- ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৩ জুন,,,, কেন বিখ্যাত?

৫. ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা সাল, তারিখ, প্রথম সভাপতি ও সাধারন সম্পাকের না, দলীয় শ্লোগান……

৬. ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৬৯টি র মধ্যে কতটি আসন পায়? পরের প্রশ্ন অবশিষ্ট আসন ২টি কোন দল থেকে কারা নির্বাচিত হন? পরীক্ষার্থী অপর ২ জন নাম ও দল না বলতে পারায় জিজ্ঞাসা করা হয় এ বিষয়ে কৌতুহল নেই কেন?

৭. তোমার জেলার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কি জান?

৮. জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সময়ে তার সমপর্যায়ের আরো ২ জন আন্তর্জাতিক নেতা ছিলেন তারা কোন কোন দেশের? নাম কি কি?

৯. পঞ্চদশ সংশোধনীর ব্যাপারে মূল্যায়ন কি?

১০. নারী নীতি ব্যাপারে অবস্থান কি?

উল্লেখ্য ১০০ নম্বরের ভাইভার কথা বলা থাকলেও তা তুঘলকি কায়দায় ২০০ নম্বর করা হয়েছে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার এডিসি হারুন

বর্তমানেও আমাদের পবিত্র সংবিধান লঙ্ঘন করে কোটার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন ৫৫% নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বাকী ৪৫% এর ক্ষেত্রেও সুধাসদনের আশির্বাদ প্রয়োজন হচ্ছে। এমনকি কিছু মেধাবী নিয়োগ পেলেও তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে ঘুষ দিতে। অন্যথায় পুলিশ ভেরিফিকশের নামে তাদের কে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমান সরকারের আমলে বিসিএসে শতভাগ অনিয়ম ও দুর্ণীতি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফলাফল ঘোষণার আগেই করা হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে আওয়ামী ভেরিফিকেশন! ও মোটা অংকের বাণিজ্য। উল্লেখ্য বর্তমান সরকারের আমলে সোনালী ব্যাংকসহ অনেক ক্ষেত্রেই চাকরির পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনার আগেই দলীয় নেতাদের মাধ্যমে ভেরিফেকেশন করা হচ্ছে। আর সে আলোকেই ফলাফল দেওয়া হচ্ছে। মেধাবী তরুণরা বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডে সরকারী চাকরির আশা অনেকটাই বাদ দিয়েছেন।

যেখানে নিয়মিত বিসিএসগুলোতেই মুক্তিযোদ্ধা কোটার অধিকাংশই ফাঁকা থাকে, সেখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২তম বিসিএসের সিদ্ধান্ত নেয়া উদ্দেশ্য ভুয়া সনদের মাধ্যমে ছাত্রলীগ তথা হারুন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া। যার লক্ষ্য মূলত আগামী নির্বাচন।

কোটার নামে বৈষম্য পবিত্র সংবিধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ কি বৈষম্য বাড়ানোর জন্য হয়েছিল?

এদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ে বিশেষ বিবেচনায় একবার কোটার মাধ্যমে সুযোগ তো দেওয়াই হয়েছে, যোগ্যতায় মাধ্যমে টিকতে না পারলে আবার সুযোগ কেন??

কোটার মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া, ডাকাত দিয়ে রোগীর অপারেশনের নামান্তর মাত্র।

সমাজের যেকোনো শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার প্রয়োজনটা যেকোনো সমাজের জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেটা কখনো ৫০ শতাংশ বা ৫৫ শতাংশ হতে পারে না। আর প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তো অবশ্যই নয়। কারণ গাড়ির চালকের আসনে কোনো হেলপারকে বসানোর পরিণতি কী হতে পারে তা আমাদের প্রশাসনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কোনো সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীকে যেখানে সহযোগিতা করার অনেক উপায় রয়েছে সেখানে অসংখ্য মেধাবীকে বাদ রেখে কম মেধাবীদের সুযোগ ড্রাইভার রেখে হেলপারকে চালকের আসনে বসানোর নামান্তর মাত্র।

আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও কিছু স্বঘোষিত সুশীলরা সম্পূর্ণ আবেগ ও অযৌক্তিক কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা না কমানোর দাবি করছেন। পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশের মেয়েরাও কোটা নয় বরং তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। কোনো কোটা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী। প্রায় ২৬.২ শতাংশ নারী তাদের যোগ্যতায় শিক্ষক হতে পেরেছেন। সেখানে ১০ শতাংশ কোটা রাখা তাদের জন্য অমর্যাদাকর ও অপ্রয়োজনীয়।

এর পরও কোনো বিশেষ শ্রেণীকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির কিংবা আর্থিক সুবিধা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু জাতির নীতিনির্ধারক ও দাতারা কোন যুক্তিতে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনে ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ করেন তা মোটেই বোধগম্য নয়। এর অর্থ কি তারা আমাদের সিভিল সার্ভিসকে উন্নত দেশের তুলনায় অদক্ষ ও অযোগ্য রাখতে চায়? দেশের মেধাবীরা কোটার ব্যাপারে পিএসসি’র বর্তমান সুপারিশে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই একবিংশ শতাব্দীর অগ্রসরমান বিশ্বে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে অযৌক্তিক আবেগ পরিহার করে বাস্তবমুখী হওয়া দরকার।

বিষয়: বিবিধ

৭৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File