ব্রেকিং নিউজ- বিচার বিভাগের ইতিহাসে দুঃখজনক কালো অধ্যায়ের সূচনা হলো : ব্যারিস্টার রাজ্জাক; রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৫:৩১ রাত
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১ মিনিটেরও সাজা দেয়ার মত তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি প্রসিকিউশন, রায়টি সম্পূর্ণ বিকৃত- ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া রায়টি যথার্থ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এক মিনিট সাজা দেয়ার মতো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি প্রসিকিউশন।
তিনি বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে আবেগাপ্লুতভাবে রায় দেয়া হয়েছে। এটি একটি বিকৃত রায়। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ইতিহাসের কালো দিন।
উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলেও তিনি জানান।
এখানে আসামিপক্ষের বক্তব্য তুলে ধরা হলো :
‘আজকে আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবের রায় ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক এবং কালো অধ্যায়ের সূচনা হলো। ১৮৬০ সালে ভারতবর্ষে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই রায়টির মতো ন্যক্কারজনক একটি রায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই মামলায় কাদের মোল্লা সাহেবকে দোষী প্রমাণ করার মতো সাক্ষ্য প্রমাণের ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ৬টি অভিযোগের একটিও তারা প্রমাণ করতে পারেনি।
আমরা বিস্মিত এবং হতাশ, মাত্র ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে যাদের অধিকাংশই হচ্ছে ‘শোনা সাক্ষী’ এবং মাত্র ৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করলেও ডিফেন্সপক্ষ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে সাফল্যের সাথে নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে, কিভাবে এরূপ একটি চরম দ- প্রদান করা হলো ? আমরা আরো অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছি যে, যেখানে প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী আলবদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ এর মে মাসে, সেখানে এপ্রিল মাসে সংঘটিত ঘটনার সাথে আলবদরের সদস্য হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লাকে কিভাবে জড়ানো হলো! আমরা বিস্মিত যে, এই রায়ের অনেক বক্তব্যই আবেগপ্রসুত। বিচারকের কাছ থেকে আবেগপ্রসুত বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়। আমরা এই মামলার শুনানিকালে আমেরিকান এবং ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের ৩টি নজির তুলে ধরে দেখিয়েছিলাম যে, একজন বিচারকের শুধু যুক্তি দ্বরাই পরিচালিত হওয়া উচিত, আবেগ দ্বারা নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় হাইকোর্টের মানদণ্ডের অনেক নীচে অবস্থান করছে।
ডিফেন্স পক্ষে যদিও মাত্র ছয়জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তবুও এই ৬ জনের সাক্ষ্য থেকেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছে যে, আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের সময় ঢাকা শহরেই ছিলেন না, ছিলেন তার গ্রামের বাড়ী ফরিদপুরে। কিন্তু তাদের এ বক্তব্য গ্রহণ না করে মিরপুর অঞ্চলে বিহারী সম্প্রদায়ের কৃত অপরাধের দায় আব্দুল কাদের মোল্লার উপর চাপানো হয়েছে। সংরক্ষিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল এমনকি, প্রসিকিউশনের একজন সাক্ষী কবি রোজি’র লিখিত বইয়ে বিহারীদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের বর্ণনা এবং সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার কোনোরূপ উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও এইসব সত্য গোপনকারী সাক্ষীরা নিজের লিখিত বইয়ের তথ্য অস্বীকার করে সরকারী চাপে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। এরপরও আদালত সেই সব সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই সাজা দিয়েছে। বিচারের যেকোন মানদণ্ডে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেয়া উচিত ছিল। আমরা মনে করি, এটি একটি ঢ়বৎাবৎংব লঁফমসবহঃ এবং আমার প্রত্যাশা করি যে, আপিল বিভাগে এই রায় সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়ে যাবে।
বিচারকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে মামলা করব : আব্দুল কাদের মোল্লা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পরপরই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লা বলে ওঠেন ‘আল্লাহু আকবার। এ রায় অন্যায়। যেসব অভিযোগে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাও অন্যায়, আর যে অভিযোগে খালাস দেয়া হয়েছে তাও অন্য্যায়। বিচারকরা জল্লাদের মতো এ রায় দিয়েছে। তারা তাদের বিবেককে শয়তানের কাছে বন্ধক দিয়ে অন্যায়ভাবে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ রায় দিয়েছেন।’
আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ঢাকায় ছিলাম না। আমি ফরিদপুরে ছিলাম। আল্লাহর আদালতে এই বিচারকদের বিরুদ্ধে মামলা করব তাদের অন্যায় বিচারের জন্য। সেদিন তাদের হাত, তাদের পা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
আজ রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল কক্ষে হাজির করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। রায় ঘোষনা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিনজন বিচারপতি বিচার কক্ষে প্রবেশ করে আসন গ্রহনের সাথে সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, মাননীয় আদালত আমার কিছু কথা ছিল। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি বসুন। আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, রায় ঘোষনার পর কথা বলতে দেবেন কি-না জানতে চাচ্ছি। ট্রাইব্যুনাল আবারো তাকে বসতে অনুরোধ করেন এবং রায় ঘোষণা শুরু করেন। এরপর রায় ঘোষণা শেষ হবার সাথে সাথে আব্দুল কাদের মোল্লা আল্লাহু আকবর বলে কথা বলতে শুরু করেন। অন্যদিকে রায় ঘোষণা শেষ হবার সাথে সাথে ট্রাইব্যুনাল কক্ষ থেকে বের হয়ে যান বিচারপতিরা। আব্দুল কাদের মোল্লা কিছুক্ষণ কথা বলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে থামিয়ে ট্রাইব্যুনাল কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন