৩৪তম বিসিএস : পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আপসোস্ নয়, সফলতার জন্য আগেই জেনে নিন কিছু বিশেষ টিপস
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ২৩ মে, ২০১৩, ০৯:৩৪:৩৫ রাত
৩৪তম বিসিএস : সফলতার বিশেষ টিপস
এবারের ৩৪তম বিসিএসের ২ হাজার ৫২টি পদের জন্য এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। ৩৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এক লাখ ৯৪ হাজার পরীক্ষার্থী। এই সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ধাপে টিকে থাকার জন্য দরকার ভালো স্কোর। ২৪ মে পরীক্ষা হলের এক ঘন্টা সময়েই নির্ধারিত হবে আপনার সফলতা কিংবা ব্যর্থতা।
চাকরি নামক সোনার হরিণের জন্য চাই কঠোর অনুশীলন
শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা যত বেশি আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে দেশ ততই এগিয়ে যাবে। কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস ও নিষ্ঠা থাকলে আত্মকর্মসংস্থান যেমন খুব কঠিন নয়, আবার বিভিন্ন বাস্তবতার কারনে সেটি আবার খুব সহজও নয়। তাই অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণই দ্বারস্থ হন তাদের পছন্দসই কোন চাকরি প্রাপ্তির তুমুল যুদ্ধে। অসম্ভব প্রতিযোগিতার এই সময়ে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে নিজের একটি আসন করে নেওয়ার জন্য কঠোর অনুশীলন ও নিয়মানুবর্তীতার কোন বিকল্প আমার জানা নেই। বিশেষ করে কোন ব্যাংক জব বা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকে (বিশেষ করে ২৮তম বিসিএস থেকে) বাছাইয়ের পদ্ধতি না বলে ছাঁটাইয়ের পদ্ধতি বলাই সমীচীন হবে। কারণ আগে চাকরী প্রার্থী ও সুযোগের মধ্যে বর্তমানের মত আকাশ-পাতাল ব্যবধান ছিল না।
ব্যাংক জব ও বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ধরন অনেকটাই কাছাকাছি। এক্ষেত্রে ভালো করার জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, আই-কিউ ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়ের মৌলিক ধারনা নিয়মিত অনুশীলন ও দখলে রাখতে হবে। বলতে গেলে সিলেবাসটি ব্যাপক তথা অসীম। বিজ্ঞান, কলা, সমাজ-বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের প্রায় ৭০ এর অধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রেই প্রায় অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হয়। আজকে পদার্থ বিজ্ঞানের তরুণটিকেও বেছে নিতে হচ্ছে ব্যাংক। ফলে বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা চাকরি প্রার্থীদের জন্য করা হচ্ছে সাধারণ বিষয়ের প্রশ্ন। ৪-৫ বছরের সিলেবাস থেকে চাকরির পরীক্ষায় ১০% কমন পাওয়াটাই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। তাই একাডেমিক সনদটিকে বলা যেতে পারে বাণিজ্য মেলায় টিকিটের মত চাকরির বাজারের টিকিট মাত্র। ২০ টাকার টিকিটে যেমন বাণিজ্য মেলায় শুধু প্রবেশ করা যায়, কিছু শপিং করা যায় না। শপিংয়ের পরিমান নির্ভর করে অতিরিক্ত টাকার পরিমানের ওপর। তদ্রূপ একাডেমিক জ্ঞানের বাইরে চাকরির প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা। ছাত্রাবস্থায় অনেকেরই ক্লাসের বাইরে পড়াশুনার অভ্যাস থাকে না। কিন্তু নিয়মিত ছাত্রাবস্থায় বিভাগের পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ না করলে পাশ করার পরে নতুন করে প্রস্তুতি কতটা কঠিন তা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝা কঠিন। তাই ছাত্রাবস্থায়ই প্রয়োজন নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্যও ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি।
এছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রায় এক লাখের মতো পরীক্ষার্থী থাকলে সেখান থেকে ৩৫-৪৫% অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার নির্বাচন করা হতো। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভার জন্য ১৪-১৫ হাজার পরীক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হতো। তাই দেখা যেত প্রিলিমিনারির তুলনায় লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই অধিক কঠিন ছিল। কিন্তু ২৮তম বিসিএস থেকে দেখা যাচ্ছে খাতা মূল্যায়ন সহজ ও দ্রুত করার জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নির্বাচন করা হচ্ছে লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে মাত্র ১২-১৫ হাজার, অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৯৫ জনই বাদ পড়ছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়। পরবর্তী বিসিএসেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। আর ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নেবেন ২ লাখ ২১ হাজার পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষায় ভালো করতে যা মনে রাখবেন
এই সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ধাপে টিকে থাকার জন্য দরকার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করা। এ জন্য যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হলো:
বিসিএস প্রিলিমিনারির ক্ষেত্রে পরীক্ষার আগের রাতে
আপনার পরীক্ষা কেন্দ্রের নিকটবর্তী কোনো অবস্খানে থাকার চেষ্টা করুন। বেশি রাত্রি পর্যন্ত জাগবেন না। কোনো কারণে ঘুম না আসতে পারে সে ক্ষেত্রে কোনো বিষয় চোখ বন্ধ করে পড়তে থাকুন দেখবেন ঘুম চলে আসবে। আর অবশ্যই সম্ভব হলে এ সময় নিজের মোবাইল বন্ধ রাখুন। কারণ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের রাত অনেকটাই গুজবের রাতে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে বন্ধুদের ফোন পেতে পারেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র বা সাজেশনের কোনো প্রকার গুজবে কান দেবেন না। তা না হলে এটি আপনার জন্য হতে পারে নির্ঘুম একটি রাত। ফলে সারা রাত না ঘুমানোর ফলে পরীক্ষা হলে আপনার জন্য ডেকে আনতে পাড়ে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়।
পরীক্ষা হলের এক ঘন্টা
২৪ মে পরীক্ষা হলের এক ঘন্টা সময়েই নির্ধারিত হবে আপনার সফলতা কিংবা ব্যর্থতা। এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে প্রবেশপত্রসহ পরীক্ষা হলে আসন গ্রহণ করবেন। আগে থেকেই একটা পরিকল্পনা করে যাওয়া ভালো। কারণ ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অনেককেই দেখা যায় পরীক্ষার পরে আফসোস করতে। কিন্তু ততক্ষণে কোনো লাভ নেই। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। মনে রাখবেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উত্তর নতুন নিয়মে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একটা ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর বিয়োগ করা হবে। সন্দেহ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর করবেন না। কারণ এ ক্ষেত্রে আপনার ভুল হওয়ার আশঙ্কাই ৭৫%। আর একটা প্রশ্ন ভুল হলে আপনার স্কোর থেকে মাইনাস হবে ০.৫। কোনো প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে সন্দিহান হলে তা বাদ রাখুন, অন্যথায় তা নিয়ে চিন্তা করতে গেলে দেখবেন আপনার মূল্যবান কয়েকটি মিনিট পার হয়ে গেছে তা বুঝতেও পারবেন না। কারণ কোনো প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে দেখা গেল প্রায় কয়েক মিনিট সময় পার করেছেন তখন ভাববেন যেহেতু প্রশ্নটার পেছনে কিছুটা সময় পার করেছি, তাই আবার চেষ্টা করে দেখি পারি কি না? আর এ ধরনের সন্দেহযুক্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রেই অধিক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ধরুন ৬০টি প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত। তাহলে কেবল জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর করুন। কিন্তু সন্দেহযুক্ত অবশিষ্ট ৪০টিরও যদি উত্তর করেন তাহলে ১০ সঠিক হতে পারে অবশিষ্ট ৩০টি ভুল হবে। তাহলে আপনার যোগ হবে ১০টি সঠিক উত্তরের জন্য ১০ নম্বর, কিন্তু বিয়োগ হবে ৩০টি ভুল উত্তরের জন্য ১৫ নম্বর। সন্দেহযুক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর না করলে যা পেতেন কিন্তু উত্তর করলে তার চেয়ে ৫ নম্বর কম পাবেন। ৫ নম্বর কম পাওয়ার অর্থ কত হাজার পরীক্ষার্থীর পেছনে পড়া তা নির্ণয় করা কঠিন।
শেষ পরামর্শ
গণিত অংশের উত্তর সব শেষে করুন। ধরুন গণিতে ২০টি প্রশ্ন এসেছে। তাহলে অবশিষ্ট বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ৮০টির মধ্যে যেগুলো নিশ্চিত পারেন সেগুলোর উত্তর করুন। উত্তর সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে সময় নষ্ট না করে পরের প্রশ্নের উত্তর করবেন। এ ক্ষেত্রে সন্দেহযুক্ত প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা না করলে বাকি সব প্রশ্নের উত্তর করতে আপনার বড়জোর ২০ মিনিট লাগতে পারে। এবার গণিত অংশের উত্তর করুন। এরপর হাতে থাকা অবশিষ্ট সময়ে ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর না করা প্রশ্নগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত মনে হলেই কেবল সেটি পূরণ করুন।
“পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। তবে পরীক্ষার্থীদের সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসন গ্রহণ করতে হবে।”
সকাল ১০টার পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও পিএসসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষায় সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। তবে বই, ব্যাগ ও মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক যোগাযোগের যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি দেখে ভয় পাবেন না। কারন সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, অধিকাংশই আপনার আমার মত পড়াশুনা না করা কিংবা কম করা। বলতে পারেন, চাকরির বাজারটা এখনও কঠোর অনুশীলনকারীদের জন্য অনেকটাই ফাঁকা মাঠ গোল দেওয়ার মতই। মাস্টার্স পরীক্ষার পর আমরা এক সাথে ৪ জন বন্ধু ৬ মাসের মত প্রস্তুতি নিয়েছিলাম (তবে সে ৬টি মাসকে শুধু প্রস্তুতি বললে ভুল হবে- তা ছিল অন্যরকম কঠোর এক অনুশীলন)- আলহামদুলিল্লাহ কাউকেই বেকার থাকতে হয়নি। প্রথম চান্সেই বিএসসহ যে কয়টি জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম- সবাই অধিকাংশতেই সফল।
৩৪তম বিসিএস : সফলতার বিশেষ টিপস
বিষয়: Contest_mother
৩৮৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন