খালেদা জিয়ার দেশবান্ধব লেখাটি নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালাচ্ছে দেশবিরোধী প্রচারনার বরপুত্ররা!

লিখেছেন লিখেছেন হাসান ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:০৮:৫৮ রাত



দেশ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এবং দুর্নীতি, এক ব্যক্তির শাসন থেকে বাংলাদেশ রক্ষা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়ে খালেদার জিয়ার অনবদ্য লেখাটি নিয়ে আ.লীগের সমালোচনা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। দেশ ও ইসলাম বিরোধী প্রচারনা আ.লীগই করে থাকে। সরকার ও বিরোধীদল উভয় অবস্থাতে আ.লীগের দেশ বিরোধী প্রচারনা জাতি ভুলেনি। বিশেষ করে হাসিনা তনয় জয়ের সেই থিসিস। আ.লীগ যত সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে, অন্যেরা তত সুন্দর করে সত্যটাও বলতে পারে না!


জাতি আজও ভুলে যায়নি, সরকারে থাকা অবস্থায় বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশে সফরের সময় বাংলাদেশ বিরোধী বই তার হাতে কারা তুলে দিয়েছিল। বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী সুশীলরাই সব সময়ে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রচার করে আসছে।

খালেদার বক্তব্যের যেসব অংশ নিয়ে মিথ্যাচার ও ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে:


"সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম দেশ, যারা আমাদের আত্মনির্ধারণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।"

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সাময়িকভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিলেও তা দেশটির অধিকাংশ মানুষের অবস্থান ছিল না। স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী অন্যতম দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ৪ এপ্রিল, ১৯৭২ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

খালেদা জিয়া তার লেখাটিতে ক্ষমতাসীন আ.লীগ সরকারের -

নজিরবিহীন দুর্নীতি,

ড. ইউনূসের মত গুণী ব্যক্তিত্বের অবমাননা,

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তন,

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে প্রহসনের মানবতাবিরোধী বিচারের স্বচ্ছতা,

বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন,

হত্যা, খুন ও গুম প্রভৃতি


ঘটনার ব্যাপারে হাসিনা সরকারের অগণতান্ত্রিক ও হটকারী অবস্থানের বিষয়ে বিরোধীদলগুলোর দেশের গণতন্ত্র ও অগ্রগতির স্বার্থে যৌক্তিক দাবীসমূহের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন। যা মোটেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়, বরং খালেদার জিয়ার বরাবরের মতই রাষ্ট্রবান্ধব তথা দেশপ্রেমের স্বাক্ষর বহন করছে।

ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নিবন্ধ : ZIA: The thankless role in saving democracy in Bangladesh, Corruption and stealing threaten a once-vibrant nation

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমস অনলাইনে এক নিবন্ধে লিখেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষার এখনই সময়। আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বের কাছে এখনই সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানো। আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘জিয়া : দ্য থ্যাঙ্কলেস রোল ইন সেভিং ডেমক্রেসি ইন বাংলাদেশ, করাপশন এন্ড স্টিলিং থ্রেটেন এ ওয়ান্স-ভাইব্রেন্ট নেশন’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি আরও লিখেছেন,“গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে।”

তিনি বলেছেন, “যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে যায়, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া।”

খালেদা জিয়া আরো বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আসলে ভোটারদের সম্মানীত করা হবে- এই কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র বৃটেনের জন্য। এটি নিশ্চিত করতে তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়।”

তিনি বলেন, “দারিদ্র দূরীকরণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য মার্কিন কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।”



খালেদার পুরো মতামত

২০১৩ সাল কি মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য সন্ধিক্ষণ হতে যাচ্ছে? ১৫ কোটি মানুষের আমার এই দেশ ভারত আর মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থিত। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম দেশ, যারা আমাদের আত্মনির্ধারণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অথচ গত কয়েকটি বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অবশ্য আঙুল তোলা যায়। কারণ ক্রমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে এবং অন্যান্য বিশ্ব শক্তির দিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঝুকে পড়ছে, অথচ তারা তেমন কিছু করছে না।

তার অর্থ এই নয় যে, মার্কিন সরকার, কংগ্রেস এবং তাদের সংস্থাগুলো কোনোকিছুই করেনি। ছয় মাস আগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। চার মাইল দীর্ঘ এই সেতু ছিল ৪০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিশ্বব্যাংক এই অর্থ প্রত্যাহারের সময় মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্তের দাবি করেছে।

একই সময় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার কারণে মার্কিন কংগ্রেশনাল ককাস বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার কারণ কী? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, “এই নোবেল পুরস্কার ভুল লোকের হাতে পড়েছে। যদি বাংলাদেশে কেউ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

বেশিরভাগ বাংলাদেশী অবশ্য হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবির ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে। শুধু জিজ্ঞেস করুন ওই প্রায় ৩০০ নিখোঁজ মানুষের পরিবারকে, যারা র্যা বের হাতে নিখোঁজ হয়ে গেছে। অথবা চিন্তা করে দেখুন খুন হয়ে যাওয়া শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের পরিবারের কথা। ওই আমিনুলের পক্ষ হয়ে এখন এএফএল সিআইও সংগঠন প্রচারণা চালাচ্ছে যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যখাতে বাংলাদেশকে তার অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৃশংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে যেসব রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থকরাও হাসিনার নোবেল পুরস্কারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কেবল রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচারের জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতও হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। গত ডিসেম্বর মাসে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত ইমেইল এবং ফোনালাপও প্রমাণ করে, এই বিচারকাজ নিয়ে হাসিনা প্রশাসন কী ধরনের কুকর্ম করছে এবং তারা কীভাবে হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পাঁয়তারা করছে।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে। এই অবস্থায় সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধাযক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। অথচ এই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান আনার জন্য তিনি নিজেই একসময় সহায়তা করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচনের গ্যারান্টি দিয়ে আসছে। যদি ভোটাররা নতুন কোনো সরকারের জন্য ভোট দেয় তাহলে ক্ষমতার হাতবদল অবশ্যই হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেও হাসিনা তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। তার ধারণা মানুষের সমর্থন না থাকলেও এইভাবে তিনি ক্ষমতায় আবারো আসতে পারবেন।

পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের প্রতিবেশী বার্মায় সফর করেছেন যা দেশটিকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হিসেবে তার উত্থান অব্যাহত রেখেছে। যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে যায়, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া নিয়ে এখন আশা বাড়ছে। কারণ অ্যামেরিকা এই অঞ্চলে স্বাধীনতাকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধাযক সরকার থাকলে মানুষের সুযোগ হবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মতকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আসলে ভোটারদের সম্মানিত করা হবে, এই কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র বৃটেনের জন্য। এটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়। দারিদ্র দূরীকরণে মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য মার্কিন কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। Deshnews

http://www.washingtontimes.com/news/2013/jan/30/the-thankless-role-in-saving-democracy-in-banglade/



হাসিনা তনয় জয়ের সেই থিসিস : মোকাররম হোসেন- জার্মানি

Stemming the rise of islamic extremism in bangladesh শীর্ষক এই থিসিস প্রকাশিত হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর ২০০৮ জার্নালটির অনলাইন ভার্সনে। এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গায় তার ভাষায় ইসলামপন্থী বা মৌলবাদীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। থিসিসটির উপর কোন মন্তব্য করার আগে এতে উপস্থাপিত তথ্যগুলোর সারাংশ করতে পারি এভাবে,

ক. কোন একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেল প্রথমে লেখকদের পরিচিতি তুলে ধরা একটা সাধারন নিয়ম। যা সাধারনত লেখক নিজেই সরবরাহ করে থাকেন। সজিব ওয়াজেদ জয় এখানে নিজেকে পরিচিত করিয়েছেন এভাবে, Sajeeb A. Wazed is an adviser to Sheikh Hasina, the former Prime Minister of Bangladesh and President of the Awami League, the largest and oldest political party in Bangladesh. He has been a key negotiator for the Awami League on several occasions, most recently in the negotiations for the restoration of democracy in Bangladesh with the present military government.

এখানে জয়ের দেওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি সামরিক সরকার ( military government ) এবং এই সরকারের সাথে তিনি বা তার দল আওয়ামী লীগের সাথে একটি সমঝোতা ( negotiation )

হয়েছে .

খ. জয়ের থিসিসের সহযোগী লেখক কার্ল যে কিওভাক্কো একজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা, যিনি ইরাক ও সৌদী আরবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ধরনের গবেষনামূলক আর্টিকেলে সহযোগী লেখক মূলত প্রধান লেখকের পরামর্শক হিসেবেই থাকেন।

গ. বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা পাকিস্তানের সাথে একীভূত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে , The Islamists tend to support reunification with the Islamic Republic of Pakistan.

ঘ. বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিস্তার বাড়ছে আর এটা হচ্ছে সেনাবাহিনীতে দিন দিন ইসলামপন্থী সদস্যের সংখ্যা বাড়ার কারনে। Before this madrassa Entrance Exam campaign, only 5 percent of military recruits came from madrasses in 2001. By 2006, at the end of the BNP’s reign, madrassas supplied nearly 35 percent of the Army recruits (গত ২০০১ সালের শেষে মাদ্রাসা থেকে মাত্র ৫ শতাংশ ছাত্র সেনাবাহিনীতে চান্স পেত সেখানে ২০০৬ সালে এটা বেড়ে হয়েছে ৩৫%)। সেনাবাহিনীতে ইসলামপন্থীদের বৃদ্ধির এই হার তার মতে অত্যন্ত্ উদ্দেগজনক।

ঙ. গত পাচ বছরে বাংলাদেশে রোরখার ব্যবহার বা বিক্রি বেড়েছে ৫০০ শতাংশ, Can the Awami League stop the growing tide of Islamism in a country that has seen the sale of burkas rise nearly 500 percent in the last five years?

চ. ২০০১ সালের আগে যেকোন নির্বাচনের প্রধান মৌলবাদী দল জামায়াত সর্বোচ্চ ৩ টি আসন পেয়েছে, The greatest number of seats that JI had ever garnered in any election prior to 2001 was three.

ছ. লেখক বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উপরোক্ত প্রভাব সম্পর্কে তথ্য দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তা মোকাবেলার একটি সেকুলার পন্থাও পেশ করেছেন। এর মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন, সেকুলার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মান উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সেকুলার ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে সেকুলার মনোভাবাপন্ন সদস্য বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

একজন ছাত্র গবেষক হিসেবে যতটুকু জানি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ/নিবন্ধে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের বিপরীতে সূত্র (reference) উল্লেখ থাকে। জয়ের থিসিসের উপরোল্লিখিত গুরুত্বপূর্ন তথ্যের সমর্থনে কোন সূত্র নেই। প্রধান মৌলবাদী দলটির সংসদিয় আসন সম্পর্কে দেওয়া তথ্যটিও সঠিক নয়। তথ্যসূত্র উল্লেখ ছাড়াই আন্তর্জাতিক কোন জার্নালে এ ধরনের থিসিস প্রকাশ হার্ভাড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ এর গ্রহন যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে,সন্দেহ নেই।

২.

জয়ের থিসিসের মাহাত্ম্য বুঝতে হলে আরেকটু গভীরে যেতে হবে। যেখানে তিনি বাল্যকাল থেকে গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত থেকেছেন সেই দেশটির মিডিয়া ও অন্যান্য প্রপাগান্ডা মেশিনগুলো কিভাবে বাংলাদেশ বিশেষ করে এর সেনাবাহিনীকে নিয়ে কি ধরনের গোয়েবলসীয় প্রচার চালাচ্ছে তার কিছু ছিটে ফোটা নমুনা তুলে ধরতে পারি এভাবে,

ক. হিরন্ময় কার্লেকার। ভারতের দি পাইওনিয়ার পত্রিকার বাংলাদেশ বিশয়ক নিয়মিত কলামিষ্ট। বাংলাদেশ কি পরবর্তী আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে (Bangladesh, The Next Afganistan?) বইয়ের লেখক। তার মতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ডিজিএফ পাকিস্তানের আইএসআই এর কোলন বা কার্বন কপি। গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ দি পাইওনিয়ার পত্রিকায় লিখেছেন, The caretaker Government has removed some of the pathologically anti-Indian elements from Bangladesh's Directorate-General of Force's Intelligence, which is a clone of Pakistan's ISI.

খ. ১৯ জানুয়ারী ২০০৮ টাইমস অব ইন্ডিয়া Bangladesh spy agency DGFI spreading roots in east india শীর্ষক সংবাদে লিখেছে, DGFI is trying to turn its plan of establishing a sovereign Islamic state in the North-East into reality. The agency is receiving support from ISI (বাংলাদেশের ডিজিএফআই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এতে তারা আই এস আই মদত পাচ্ছে)

গ. ভারতীয় গবেষক শ্রী জয়দীপ সাইকিয়া ২০০৪ প্রকাশিত Terror sans frontiers. Islamic terrorism in north-east india গ্রন্থে লিখেছেন, ইসলামী মৌলবাদীরা বাংলাদেশ ও আসামের কিছু মুসলিম অধ্যূসিত অঞ্চল নিয়ে একটি বৃহত বাংলা বা মুঘলীস্তান যা কিনা হবে একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছে। সেটার পেছনে পাকিস্তানের আইএসআই ও বাংলাদেশের ডিজিএফআই কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

ঘ. গত ১ লা নভেম্বর ২০০৮ ভারতীয় টেলিভিশন আবিএন এর সিনিয়র সাংবাদিক সুমন চক্রবর্তি লিখেন,

ULFA, Bangladesh DGFI join hands to wreak havoc. এতে মি. চক্রবর্তি লিখেন, সম্প্রতি আসামের সিরিজ বোমা হামলার পেছনে আইএসআই ও ডিজিএফআই এর হাত রয়েছে। উল্লেখ্য, সুমন চক্রবর্তি বাংলাদেশর অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের ভারতীয় ব্যুরো প্রধান এবং তিনি প্রায়শই এই নিউজ নেটওয়ার্ক সংবাদ শিরোনাম করেন.

ঙ.ভারতের সামরিক জার্নাল Frontier India Strategic and Defence এ গত ১ নভেম্বর ২০০৮ এ The Fulcrum of Easter Evil. DFGI directs terrorism and Jihad against India শীর্ষক প্রবন্ধে মলয় কৃষ্ণ ধর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পরিচয় করিয়ে দেন এভাবে,

It also controls the political destiny of Bangladesh and interferes in Indian’s security concerns. In fact, it is the cousin of the ISI.

ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, গবেষক, রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র গত পাচ-সাত বছর ধরে অবিরাম প্রচারনা চালাচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। তাদের এই প্রচারনা শুধুমাত্র সাধারন লেভেলেই নেই বরং ২০০১ সালের পর থেকে বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি এসবের সাথে জড়িত। আগে উলফাসহ অন্যান্য জাতিয়তাবাদি সেকুলার বিদ্রোহী গ্রুপ গুলোকে সহযোগীতা দানের কথা বলা হলেও এখন আরো একধাপ এগিয়ে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি ভারতের মাটিতে কথিত ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পিছনেও মদদ দিচ্ছে।

৩.

বাংলার আনাচে কানাচে মূর্খ শিক্ষিত সবার মুখে নিমক হারামীর প্রতিক হিসেবে যেমন উচ্চারিত হয় মীর জাফর,ঠিক ইরাকী জনগনের মাঝেও বহুল উচ্চারিত একটি নাম আহমেদ সালাবী।ইরাকী ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও সহযোগীরা যেসব অভিযোগের কারনে ইরাক দখল করে রক্তের হোলি খেলছে তার একটি অভিযোগ হচ্ছে ইরাক বা সাদ্দামের হাতে ছিল ব্যপক মানব বিদ্বংসী মারনাস্ত্র, জীবানু অস্ত্র এমনকি পরমানু অস্ত্রও। আর এসব তথ্যের মূল সরবরাহকারী ছিল আহমেদ সালাবী ও তার সহযোগীরা। সাংবাদিক এডাম রষ্টেনের মতে, আহমেদ সালাবীর তথ্যই আমেরিকা, বৃটেন ও অন্যদের ইরাক দখল করার পিছনে মূল কারন হিসেবে কাজ করে। এক সময়ের দানশীল শক্তিশালী ইরাকী জাতি আজ পথের ভিখারী হলেও সালাবীরা কথিত গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী ভাষ্যমতে, During the period from March 2000 through September 2003, the U.S. State Department paid nearly $33 million to the Iraqi National Congress, according to a General Accounting report released in 2004. Subsequently, Chalabi's Iraqi National Congress was paid about $335,000 per month by the Defense Intelligence Agency until May 18, 2004.

ইরাক দখল শেষ, একতরফা যুদ্ধও শেষ। তন্য তন্য করে খুজেও পাওয়া গেলনা সালাবীদের দেওয়া সেই গোপন জীবানু অস্ত্র বা মারনাস্ত্রের সন্ধান। সালাবীর তথ্য সঠিক হবার দরকার ছিল না। গত ২০০৪ ফেব্রুয়ারীর লন্ডনের দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, We are heroes in error. As far as we're concerned, we've been entirely successful. That tyrant Saddam is gone and the Americans are in Baghdad. What was said before is not important. The Bush administration is looking for a scapegoat

সজিব ওয়াজেদ জয় তার থিসিসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি মৌলবাদী বাহিনী হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ও কথিত গবেষক আনন্দ কুমার,ভাস্কর রায়, সুমন চক্রবর্তী, হিরন্ময় কার্লেকার,বিভূতি ভূষন নন্দী, জয়দীপ সায়কিয়া, বি রামন, কে পি এস গিল, সুভাষ কাপিলা, আর উপাধারন প্রমূখ যেভাবে গত পাচ-সাত বছর বিরামহীন প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে তার একটি বর্ধিত সংস্করন বলা যায় জয়ের কথিত থিসিসকে। এক্ষেত্রে তাদের টার্গেট বাংলাদেশের স্বাধীন স্বকীয়তার অন্যতম উপাদান ইসলাম,ইসলামী শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশ প্রেমীক সেনাবাহিনী। তাদের থিসিসে কোন উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্র উল্লেখ থাকে না। নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যই গবেষনামূলক প্রবন্ধ হিসেবে চালিয়ে দেন।

আহমেদ সালাবীরা হাজারো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বুশ ব্লেয়ারদের ডেকে এনে নিজের জন্ম ভুমিকে মহাশ্মশানে পরিনত করেছে। এক্ষেত্রে অজুহাত ছিল কথিত weapons of mass destruction. জয় বা তার সহযোগীরা সেনাবাহিনীতে ইসলামী জুজুর ভয় দেখিয়ে সোনার বাংলাদেশকে কি ইরাক বা আফগানিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছেন? এখানে একটা কথা না বললেই নয়, মার্কিন দখলদারদের নিরাপত্তা ও মদদে আহমেদ সালাবী উপপ্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্ত সেই দখলদার মার্কিন বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কথিত ২০০৫ এর নির্বাচনে ইরাকী জনগন যতটুকু সুযোগ পেয়েছিল তাতে সালাবীর দল ইরাকী ন্যাশনাল কংগ্রেসকে কোন আসনই দেয়নি, ভোট পেয়েছিল মাত্র ০.৫% শতাংশ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File