আ.লীগ সরকারের ৪ বছরে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের হাতে ২৬ খুন : ৩৪ বছরে খুন ৬৫ ছাত্র : অশান্ত শিক্ষাঙ্গন- সফল শিক্ষামন্ত্রী!
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২২:১৬ রাত
৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচী পালনকালে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে বিশ্বজিত নামের এক পথচারিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ
শিক্ষাঙ্গনে নজিরবিহীন অরাজকতা ও সন্ত্রাস হলেও বামপন্থী মিডিয়ার বায়বীয় প্রচারনার খোলসে ক্লীণ ইমেজের (আসলে ক্লীণ সেভ) সফল শিক্ষামন্ত্রী! পত্রিকার সার্কোলেশন কমছে অন্যদিকে সম্পাদকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে!!
বর্তমান সরকার আমলের ২৬ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে তারা। তাছাড়া গত চারটি বছর ছিল শিক্ষাঙ্গনে সরকার সমর্থক সংগঠনটির সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, নৈরাজ্য-নৃশংসতা, দুর্নীতি-লুটপাট, হামলা-সংঘর্ষ ও অব্যবস্থাপনার সাম্রাজ্য। এমনকি তাদের অত্যাচার-লাঞ্চনা হতে শিক্ষক-সাংবাদিক কেউ রক্ষা পায়নি। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির স্লোগানকে পায়ে ঠেলে সংগঠনটি জংলী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলেছে অন্যায় আর অসৎ কার্যক্রমে। শুধু ২০১২ সালেই দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা আর ১ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থীকে আহত করে তারা।
৩৪ বছরে ছাত্রলীগের হাতে ৬৫ ছাত্র খুন
১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে আ’লীগের তৃতীয় ও শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ তুমুলভাবে হত্যা-সন্ত্রাসের কার্যক্রম আরম্ভ করে। এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ ৬৫ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে। গত ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরু করে এবং বিশ্বজিৎ নামের এক হিন্দু পথচারীকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১২ সাল শেষ করে। তাদের হত্যার ধারাবাহিকতা এতটাই লম্বা হয়েছে যে, তারা গত চার বছরে ২৩ জন ছাত্র এবং কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। বর্তমান সরকারের ৪ বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে ছাত্রলীগ, এর মধ্যে ৯ জনই ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের যাত্রা শুরু করে, ৮ ফেব্রুয়ারি চবিতে দুই শিবিরকর্মী মুজাহিদ ও মাসুদকে, ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ। এছাড়া ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ৮ জানুয়ারি জাবির ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহমেদকে, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ৮ ফেব্র“য়ারি (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন, ১১ ফেব্রুয়ারি রাবির মহিউদ্দিন, ২৮ মার্চ হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল আসাদুজ্জামান, ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশকে খুন করে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ২১ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিকে ফাও খেতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাইসুলকে ও ২০ অক্টোবর চমেকে আবিদুর রহমান নামের কর্মীদের নিজেরাই হত্যা করে। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারিতে শাবিপ্রবিতে জুবায়েরকে, ২১ তারিখে ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগকর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে, ২৫ তারিখে মাগুরায় আল আমীনকে, ১২ মার্চে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ। এপ্রিল ১১ তারিখে চাঁদপুরের বিল্লালকে, ২১ তারিখে ছাত্রলীগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ করে। এতে ১ জন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে হাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামের কর্মীকে হত্যা করে। ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিশ্বজিৎকে হত্যা করে ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গতকাল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু :
১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ঢাবির ১৩ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের সংগঠনের ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল রাত ১টা ২৫ মিনিটে সূর্যসেন হলের ৬৪৫ ও ৬৪৮ নম্বর কে প্রবেশ করে ৭ জন ছাত্রকে টেনে বের করে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনের করিডোরে দাঁড় করিয়ে এই ৭ জনকেই ব্রাশফায়ার করে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার সূত্রপাত ঘটায় ছাত্রলীগ। নিহত ছাত্রদের মাঝে ছিলেন নাজমুল হক কোহিনুর, মোহাম্মদ ইদ্রিস, রেজওয়ানুর রব, সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ, বশিরুদ্দিন আহমদ জিন্নাহ, আবুল হোসেন ও এবাদ খান। ১৯৯১ সালের ২০ জুনে সিট দখলসহ নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের সূত্র ধরে মুজিববাদী ছাত্রলীগ এবং জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষে মাহবুবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে মারা যান। প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ৯ জানুয়ারি, ১৯৯২ টিএসসিতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ২২ নভেম্বর ১৯৯৩ মন্টু গ্রুপের নেতা অলোক কান্তিকে বুয়েটের তিতুমীর হল গেটে হত্যা করা হয়। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ ডাসের সংঘর্ষে কামরুল ইসলাম বুলবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ২০০১ সালের ১৭ আগস্টে নিজের রিভলবারের ছোড়া অথবা বন্ধুদের গুলিতে ফিরোজ আহমদ নিহত হয়। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে খুন হন আবু বকর ।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষ :
গত চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৮৭টি সংঘর্ষ করেছে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে বিভিন্ন থানা ও জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। এতে প্রতিপক্ষের ছাত্র আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে ৫৬টি।
শুধু ২০১২ সালে ছাত্রলীগ যে সব সংঘর্ষ করেছে তা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে তেজগাঁ পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ২০ জন। ১১ তারিখে রাবিতে ছাত্রদলের উপর হামলায় আহত হয় ৩০ জন। আগস্ট মাসে ইবিতে চাকরি বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ তাণ্ডব চালায়। এতে আহত হয় ৪০ জন। ৬ তারিখে জমি দখলকে কেন্দ্র করে ৬ জনকে আহত করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ:
ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হয় প্রায় দুই শতাধিক সংঘর্ষ। আহত হয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও নিজেরা এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা হয় ৫৬টি।
শতাধিক শিক্ষক লাঞ্ছিত-নির্যাতিত :
আওয়ামী সরকারের চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে অন্তত শতাধিক শিক্ষক লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে অন্তত ২০ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদেরও লাঞ্ছিত করে চলেছে। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষককে। একই বছরের ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হামলা চালিয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিককে লাঞ্ছিত করে। তাদের হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক সাংবাদিককে আহত ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সর্বশেষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েক দফা হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক আহত হন।
শতাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত:
৪ বছরে ঢাবি, জবি, জাবি, চবি, রাবি, কুবি, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন জেলা ও শহরে ছাত্রলীগের হাতে দেড় শতাধিকের বেশি সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।
তথ্যসূত্র
বিষয়: বিবিধ
২০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন