যে কারণে ডেনমার্কে এত সুখ
লিখেছেন লিখেছেন তোমার হৃদয় জুড়ে আমি ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:৪৯:৩৩ সন্ধ্যা
এমন একটা পরিবারের কথা কল্পনা করুন, যেখানে পারিবারিক কূটনীতি নেই, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ নেই। এমন একটা সমাজের কথা কল্পনা করুন যেখানে রাজনীতি নিয়ে মানুষের হাপিত্যেশ নেই, রাজনৈতিক গুম-খুন-হয়রানি নেই, কারো বিরুদ্ধে কারো অভাব অভিযোগ নেই, কেউ কারো সমালোচনা করছে না, কোনো নেতিবাচক দিক নেই। যেখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজে সাহায্য করে, কোনো আত্নঅহংকার নেই, কেউ কাউকে আক্রমন করছে না, শারীরীকভাবে হোক বা মানসিকভাবেই হোক, কেউ কারো সাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে না, বরং কীভাবে সময়ের আরো সদ্ব্যবহার করে জীবনটাকে আরো ভালোভাবে উপভোগ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছে সবাই..। অনেকের কাছে বিষয়টি নিছক কল্পনা মনে হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের সত্যিকার চেহারাটা এমনই। ডেনমার্ক সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, বাইরে থেকে ডেনমার্ককে যতই সুন্দর মনে হোক না কেন, ডেনমার্ক আসলে তারচেয়েও বেশি সুন্দর। গত ৪০ বছর ধরে একটানা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় উপরের দিকে অবস্থান করছে ডেনমার্ক। ডেনমার্কের এ ধারাবহিক সাফল্য বিশ্বকে রীতিমত ইর্ষান্বিত করেছে। এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের এক বিতর্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ডেনমার্ককে অনুসরণ করা’। বার্নি স্যান্ডার্সের এ উক্তি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ডেনমার্কের অবস্থান কোথায়! আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও আদর্শ দেশ হিসেবে মনে করে থাকি, তাহলে স্যান্ডার্সের এ উক্তি নিঃসন্দেহে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করবে। লেখক জেসিকা আলেক্সেন্ডার ও আইবেন সানডাল যৌথভাবে একটি বই লিখেছেন, নাম,The Danish Way of Parenting: A Guide to Raising the Happiest Children in the World. ড্যানিশ সাইকোথেরাপিষ্ট আইবেন সানডালের সাথে ডেনমার্কের এরকম অভাবনীয় সাফল্যের রহস্য কি, তা উন্মোচন করেছেন জেসিকা। ডেনমার্কের সাফল্য মোটামুটি একটি শব্দে বোঝানো হয়। শব্দটি হচ্ছে “hygge”। কিন্তু এর উচ্চারণটা হচ্ছে ’হু-গাহ’। শব্দটির সরাসরি কোনো অর্থ না থাকলেও এর অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাপক। প্রতিদিনের সাধারণ জীবনকে অসাধারণ করার নামই হচ্ছে এক কথায় “hygge”। সেটা প্রতিদিনের নাস্তা হোক, কিংবা বন্ধুদের সাথে অড্ডা কিংবা খাওয়া দাওয়া হোক, জীবন হতে হবে উপভোগ্য। শব্দটির মূলনীতি হচ্ছে, ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’ ভাবতে শেখা। অনেকের মতে, এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের সাথে নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করা। একই সাথে, নিরাপত্তা, আস্থাশীল হওয়া, সুস্থ ও আদর্শ জীবনের সমার্থক শব্দও এটি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা এতটাই প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে পড়েছি যে, প্রতিদিনকার কাজ এখন আমরা আর নিজেরা করি না। আমরা মনে করি, এসব কাজ আমাদের করার কিছু নেই, প্রযুক্তি থাকতে হাতে কেন করতে যাবো? এটা সময়ের অপচয়। এ প্রযুক্তি আমাদের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। Hygge এমন একটা শব্দ যেটা দিয়ে অধিকমাত্রায় প্রযুক্তিবান্ধবতা থেকে দূরে থেকে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে বোঝানো হয়। এ শব্দটি ডেনমার্কে এতই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রভাবশালী শব্দ যে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে আলাদা কোর্স চালু রয়েছে। এ একটি শব্দই ডেনমার্কের সুখী হওয়ার মূল কারণ। দেশটিতে বহু লিখিত আইন প্রচলিত আছে। কিন্তু দেশটির মানুষ অলিখিত “hygge” মেনে চলে বলেই দেশটি সব সময় শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অনন্য। “hygge” শব্দের পাঁচটি অলিখিত আইন মেনে চলতে পারেন আপনিও। ১. তুমি আসলে যা, তাই প্রকাশ করো, বাড়িয়ে বা কমিয়ে প্রকাশ করার দরকার নেই। আপনার কোনো নিরাপত্তারক্ষীর দরকার নেই। আপনাকে কেউ আক্রমণ করবে না। আপনিও কাউকে আক্রমণ করবেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হিংসা, ভন্ডামি এসব কখনো সম্পর্কন্নায়ন করে না। বিভেদ সৃস্টি করে। ২. বিতর্ক হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনার কোনো কিছু তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয় কিংবা সমাজে বিভদ সৃষ্টি করে, তাহলে সেটি hyggeligt হলো না। হু-গাহ হচ্ছে সেটাই যেটা সবার সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতিদিনকার জীবনে আমরা হয়তো প্রচুর সময় পাব বিতর্ক, হানাহানি এসব করার জন্য। কিন্তু হু-গাহ হচ্ছে এসব বিতর্ক বাদ দিয়ে জীবন, বন্ধুবান্ধব, সমাজ, পরিবারের সাহচর্য উপভোগ করা। ৩. নিজেকে একা না ভেবে সমাজ বা দলের অপরিহার্য অংশ ভাবুন। সমাজের জন্য কিছু করাকে নিজের জন্য করা ভাবুন। সমাজের জন্য যেটা ভালো মনে করবেন, সাথে সাথে করে ফেলুন। কারো জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সবাই যদি এটা করে, তাইলে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য অনেক কাজ জমে থাকবে না। আর একই সাথে সমাজের উন্নয়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে। ৪. সমাজকে এমন একটা জায়গা ভাবুন, যেখানে আপনি নিঃসন্দেহে আপনার সময় কাটাতে পারেন। কোনো ভয় থাকবে না। কোনো পিছুটান থাকবে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটা যখন আপনি ভাবতে শিখবেন, তখন সে সমাজের উন্নতির কথাও ভাববেন আপনি। ৫. এমনভাবে চলুন যাতে আপনার দ্বারা অন্য কারো ক্ষতি না হয়, আপনার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে না পারে, আপনার সম্পর্কে কারো মনে খারাপ ধারণার জন্ম না হয়। সমাজের প্রত্যেকেই যদি এভাবে চলতে পাপরে, তাইলে সেখানে শান্তির কোনো বিকল্প নেই।
বিষয়: বিবিধ
২২৭২ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা কি এদের হু-গাহ এর মধ্যে পড়ে ?
নিজেরা সুখে আছে বলেই কি অন্যের বিষয় নিয়ে ভূতের কিল খাবে ?
বেমক্কা কমেন্ট পাইয়া কি তালগোল পাকাইয়া ফেলছেন ?
এসব শীর্ষ সুখী দেশ এবং দূর্নীতি মুক্ত দেশই অন্যদেশে অশান্তির সৃষ্টি করে এবং দূর্নীতির প্রসার ঘটাতে ভূমিকা রাখে ।
নুন খাই যার গুন গাই তার
গোটা ইউরোপে যখন শরণার্থীদের নিয়ে উদারতা প্রদর্শন করে আসছে, জার্মান সীমানা উম্মুক্ত ঘোষণা করা, ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেই শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে আপন ঘরটি উম্মুক্ত করার কথা ঘোষণা দেন, ঠিক তখন ডেনমার্কে আগত শরণার্থীদের কিভাবে পায়ে হেঁটে সুইডেন পার করিয়ে দেয়া যায়, সে চেষ্টায় ব্যস্ত ডেনিশ সরকার।
বিদেশে যখন ডেনমার্কের ভাবমূর্তি শূন্যের কোটায় সে সময় জানা গেল, ডেনিশ সরকার লেবাননের বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শরণার্থীদের ডেনমার্কে না আসার আহবান জানাচ্ছে!এদিকে, সুইডিশ রাজনীতিবিদরা ডেনিশ সরকারের নেয়া শরণার্থী সহ অভিবাসীদের প্রতি নেয়া সিদ্ধান্তের প্রচণ্ড সমালোচনা করেন। কিন্তু চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনী! ডেনিশ রাজনীতিবিদরা কিছুতেই কোন কিছু শুনতে নারাজ।ডেনিশ রীতিনীতি ও ডেনিশ সভ্যতা নিয়ে অনেকেই সন্ধিহান- ওরা কি আসলেই সভ্য জাতি? ডেনিশদের এ নেতিবাচক মনোভাবকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
লিখাটা প্যারা আকারে লিখলে আরোও সুন্দর হতো। অনেক ভাল লাগেছে, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন