একজন আরব জল্লাদের সাক্ষাৎকার

লিখেছেন লিখেছেন আবু আফনান ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৫৭:৪০ দুপুর



পবিত্র ভুমি সৌদি আরব। এখানে কোরআনের আইন চালু আছে পুরোপুরি। কিসাসের ভিত্তিতে এখানকার সকল বিচার ফয়সালা হয়ে থাকে। চুরি করলে হাত কাটা, খুনের বদলে শিরচ্ছেদ ইত্যাদি। যেকোনো শাস্তি প্রদানের আগে করা হয় চুল ছেড়া বিশ্লেষন। আর শাস্তি কার্যকরের আগে নেয়া হয় বাদি বিবাদি পক্ষের মধ্যে মিমাংসার উদ্যোগ। অনেক সময় বাদি পক্ষের সহানুভুতির কারনে মাফ পেয়ে যান দন্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা।বিচারের রায়ের পর শাস্তি মওকুফের একমাত্র অধিকার থাকে বাদী পক্ষের।

একজন জিবীত ব্যক্তির দেহ থেকে মাথা আলাদা করার কথা চিন্তা করলেই ঘা শিউরে উঠে। অথচ এই কাজটি হাজার হাজার দর্শনার্থির সামনে কার্যকর করেন একজন জল্লাদ। এই জল্লাদের ব্যপারে অনেকে অনেক ধরনের ধারনা পোষন করে থাকেন। কেউ বলেন যিনি শিরচ্ছেদ করেন তিনি সাজা প্রাপ্ত আসামী কারো ধারনা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

প্রকৃত ঘটনা হলো এই, এই জল্লাদরা বংশপরম্পরায় এই কাজটি করে আসছেন। পিতার মৃত্যু হলে ছেলে এই পেশায় নিয়োজিত হয়ে থাকেন। আবার একই সময় বাপ-ছেলে ভিন্ন এলাকায় এই কাজটি করে থাকেন।

সম্প্রতি লেবানন ব্রডকাষ্টিং কর্পোরেশন (এলবিসি)র একটি সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগদিয়ে জানিয়েছেন ছিরচ্ছেদ এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের অজানা কাহিনী।

সাক্ষাৎকারটি টুডে ব্লগের ব্লগারদের জন্য হুবহু অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।



নাম আব্দুল্লাহ আল বিশি। বড় ছেলের নাম বদর। তাই এখানে তাকে মাঝে মধ্যে আবু বদর হিসাবেও সম্বোধন করা হয়েছে।

এলবিসিঃ আপনি কি শুধু মাথাই কাটেন,নাকি হাতও কাটেন?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ হ্যাঁ আমি চোরদের হাত কাটি। বিপরিত দিকের হাত ও পাও কাটি। যেভাবে কোরআনুল কারিমে লেখা আছে।

এলবিসিঃ আপনি যখন হাত-পা কাটার শাস্তি কার্যকর করেন তখন কি এনেস্থেশিয়া দেয়া হয় নাকী শিরোচ্ছেদের মত অবশ না করেই কাটা হয়?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ হাত কাটা বা হাত-পা কাটা উভয়ই কাটার সময় কেবল লোকাল এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়।

এলবিসিঃ কিন্তু শিরচ্ছেদ যার হয় তাকে তো এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়না তাইনা?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ না তাকে কোনো এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়না।

এলবিসিঃ আবু বদর, প্রথমবার শাস্তি কার্যকর করার কথা কি আপনার মনে আছে?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আমার আজ মনে আছে, হ্যাঁ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যখন আমাকে আল্লাহর শাস্তি কার্যকর করার জন্য তলব করেন তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। আমি যাওয়ার পর বলা হয় শাস্তিটা মৃত্যুদন্ড। আমি বলেছিলাম সমস্যা নাই। আমি আমার মরহুম পিতার তরবারিটা নিয়েছিলাম।

এলবিসিঃ তখন আপনার বয়স কত ছিল?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আমি তখন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ।

এলবিসিঃ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের বয়ষ যে কোন কিছুই হতে পারে, কিন্তু তখন আপনার বয়ষ কত ছিল?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আমার ঠিক মনে নাই। তবে ৩২-৩৫হবে। আমি কাজ শুরু করি ১৪১২ হিজরীতে বর্তমানে ১৪৩৪।

এলবিসিঃ প্রথমবারের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল আপনার? কি অনুভুতি হয়েছিলো?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ নতুন কাজ শুরু করার আগে সবারই একটু দুশ্চিন্তা থাকে। ভুল করার ভয় থাকে।

এলবিসিঃ আব্দুল্লাহ, আপনার সবচেয়ে কঠিন শিরচ্ছেদের কাজ কোনটা ছিল? আপনি কি কখনো আপনার পরিচিত কারো শিরচ্ছেদ করেছেন?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ হ্যাঁ, আমি আমার বহু বন্ধুর মাথা কেটেছি। কিন্তু যে-ই অপরাধ করে সে-ই এই শাস্তি নিজের উপর নিয়ে আসে।

এলবিসিঃ রিয়াদ থেকে একজন প্রশ্ন করেছেন, আপনি কি পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই শাস্তি কার্যকর করেন? আপনি কি মহিলাদের মাথা কাটেন, এবং মহিলা এবং পুরুষের শিরচ্ছেদের সময় কি আপনার আলাদা আলাদা অনুভুতি হয়?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ শাস্তি শাস্তিই। পার্থক্য হচ্ছে পুরুষের বেলায় সে অনেক সময় স্থির থাকতে পারেনা তাতে কাজের অসুবিধা হয়।

এলবিসিঃ মহিলাদের বেলায় কি আপনার বেশী সহানুভুতি হয়? জানি আপনি শাস্তি কার্যকর করছেন মাত্র, কিন্তু আপনার অনুভুতি কেমন হয়?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ সহানুভুতি দেখালে শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়া হবে। হৃদয় দয়াদ্র হলে হস্ত বিফল হবে।

এলবিসিঃ এক সাথে তিন-চার জনের বেশি লোকের মাথা কাটতে হলে আপনার কি প্রতিক্রিয়া হয়? আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, দুই শিরচ্ছেদের মাঝে কি আপনার বিরতির প্রয়োজন হয়? আপনার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় নাকি হয়না?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আলহামদুলিল্লাহ কিছুই হয়না। তিন,চার,পাচ,ছয়জন কোনো ব্যাপার না। একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। শাস্তি সব সময়ই শাস্তি। ব্যক্তি যদি স্থির থাকে, আমাদের কাজ সহজ হয়ে যায়।

এলবিসিঃ আব্দুল্লাহ, আমরা শুনেছি একবার কয়েক ব্যক্তির শাস্তি কার্যকর করতে গিয়ে আপনার তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। সত্যি নাকি? ঘটনাটা বলবেন আমাদেরকে?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ তরবারির ব্লেড ভাঙ্গেনি, বাটটা খুলে গিয়েছিলো কেবল।

এলবিসিঃ আপনি কি আপনার বড় ছেলে বা তার কোন ভাইকে প্রশিক্ষন দিচ্ছেন যাতে সে এই পেশায় আসতে পারে? আপনি যখন আপনার আব্বার উত্তরাধিকার হিসাবে এই পেশায় এসেছেন?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আলহামদুলিল্লাহ, বদর রিয়াদে এই পদে নিযুক্ত হতে যাচ্ছেইনশাআল্লাহ। কাজতা কঠিন কিছুনা। শুধু একতা ব্যপারেই আমি চিন্তা করি, দন্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তি যেন তার করনীয় তারাতাড়ী সেরে ফেলে।

এলবিসিঃ আবু বদর, আপনি ঘুম থেকে উঠেন ক,টায়? সকালে কি বিশেষ কোনো নাস্তা করেন? আমাদের কাশে এই বিশদ ব্যপারগুলো খুব গুরুত্বপুর্ণ।

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ আমার কাজের ব্যাপারে আমি বিস্তারিত বলতে পারবনা। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন খুব স্বাভাবিক মানুষ। সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি। আমার নাস্তা তৈরী হয়,সেটা খাই, আলহামদুলিল্লাহ। পুলিশের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করি, এলে অফিসে যাই। খুব আটপৌরে ব্যপার-স্যাপার। কাজ শেষে বাড়ী ফিরি। সবই খুব স্বাভাবিক।

এলবিসিঃ আব্দুল্লাহ, কখনো কখনো দন্ডাদেশ কার্যকর করার আগে দন্ডিত ব্যক্তি ভুক্তভোগি পরিবারের কাছে ক্ষমা চায়, ঠিক না?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ মাফ করে দেয়ার জন্য?

এলবিসিঃ আপনি কি ভুক্তভোগির পরিবারের সাথে গিয়ে কথা বলেন?

আব্দুল্লাহ আল বিশিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি মিটমাট করে ফেলার আলোচনায় অংশ নেই। অকুস্থলে অনেক ভালো মানুষ থাকে। তারা প্রাদেশিক কতৃপক্ষ বা পুলিশের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করে। আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করুক। কিন্তু জল্লাদ হিসাবে আমিই প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে মাধ্যম হিসাবে কাজ করি।



বিষয়: আন্তর্জাতিক

২৫৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File