"দুই মহিলার মিলনে কিছুই হয়না"
লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৮:১৩ সকাল
আনেক দিন পর শিরোনামের কথাটি মনে পড়ল। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, পরে আওয়ামী লীগের নেতা, এর পরে এরশাদের যাত্রা পার্টির নেতা এবং মন্ত্রী এবং বর্তমানে বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জন হোসেন এই কথাটি বলেছিলেন। ১৯৯০ এর আন্দোলনের সময় এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া একসাথে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সম্মত হন এবং একদিন এক মঞ্চেও উঠেন। উভয় নেতৃর নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে বাম দলগুলো এবং জামায়াত একসাথে কর্মসুচী দিতে থাকলো। দুই নেত্রী যখন এক হয়েছিলেন তখন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জম হোসেন বলেছিলেন ""দুই মহিলার মিলনে কিছুই হয়না"। তার ঐ অশ্লীল কথাটি নিয়ে রাজনীতির মাঠ বেশ কিছুদিন গরম ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এরশাদকে পদত্যাগ করতেই হয়েছিল। কিন্তু তা এই দুই মহিলার মিলনের কারণে হয়েছিল কিনা তা অবশ্য আজ পর্যন্ত কেউ গবেষণা করে বের করতে পেরেছেন কিনা জানিনা।
গতকাল যখন আমাদের হাইকোর্ট একটা রুল ইস্যু করে আবারও ঐ দুই মহিলাকে কেনো মিলিত হবার নির্দের দেয়া হবেনা তা জানতে চেয়েছেন, শুনে কথাটি আমার মনে পড়লো। রুলটি কিন্তু যেই সেই বিচারপতি দেন নি। রুল দাতা হচ্ছেন সেই বিশ্বখ্যাত বিচারপতি স্কাইপ নাসিমের বেঞ্চ। সুতরাং ঠেলাটা বুঝতে হবে।
এই খবরটি যখন প্রচার হলো, আমাদের পাড়ার বখাটে মাস্তান ছেলেটা তা শুনে আগামী কালই আরেকটা রিট করার জন্য তৈরী। সে একটি মেয়েকে অনেক দিন ধরে প্রেম নিবেদন করে আসছিল কিন্তু মেয়েটি তাকে পাত্তা দেয়নি, তার সাথে কথাও বলেনি। সে মনস্ত করেছে আগামী কালই এর বিরোদ্ধে একটা রিট করে তিন ঘন্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর রুল ইস্যু করাবে, কেনো মেয়েটা তার প্রেম নিবেদনে সাড়া দেয়না। মানবাধীকারের চরম লঙ্ঘন।আলাপ আলোচনা করতে হবে, কেনো করবেনা?
এই কথাটা শুনে আমাদের কাজের বুয়া আমার গিন্নির কাছে তিন মাসের আগাম বেতন দাবী করে বসলো। বিষয়টা কি, এতো টাকা দিয়ে কি করবে জিজ্ঞাসা করতেই সে হাউ মাউ করে দেড়শো গ্রাম পানি চোখ থেকে বের করে দিলো। বললো, আমার 'উনি' আজ তিন মাস থেইকা আমার লগে কথা কয়না। সারাটা দিন কাম কইরা ঘরে ফিরি, দেহি হে নাই। আহে অনেক রাইত কইরা। কোনো কথা বার্তা নাই। কনতো, এই ভাবে কি করে একটা সংসার চলে?
গিন্নি বলেনঃ না চলেনা।
বুয়াঃ কতো তাবিজ কবজ, পানি পড়া, পান পড়া আর মুল্লা মুন্সি ধরলাম। কিছুই হয়না।
তো রিট করলে কি হবে? তুমি কি জানো, রিট কি?
আমি কেম্বায় জানবাম? তয় হুনছি কোর্ট নাকি কি একটা পাছায় লাগাই দেয়, বাপ বাপ ডাকি এক হইয়া যায়।
তাই?
তো আর কি ? দেখেন না, এইবার হাসিনা খালেদারে লাগাই দিছে। এখন আর আনদুলন ফানদুলন করবার পারবোনা। এক হইতেই হইবো।
আমি কাইলই বিচারপতি স্কাইপ নাসিমের আদালতে রিট লাগামু। চান্দু কৈ যায় দেখি।
মনে মনে রিটের আচানক উপকারিতা নিয়ে ভাবছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটা কুঁত কুঁত করতে লাগলো। এই সময়ে কে আবার? বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মনুর গলা ভেসে এলো। মনু আমার ছোটবালার বন্ধু। একসাথে দীর্ঘদিন চলাফেরা করেছি। একে অপরের ভিতর বাহির সবই জানি। তবে তার বড়ো দুঃখ তার কোনো সন্তান নাই। সন্তান না হবার কারণও জানা নেই। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনটা এখন টেনে বেড়ানো খুবই কঠিন। সবকিছু খালি খালি লাগে। সবকিছু থেকেও যেনো কিছুই নেই। এজন্য আমার বন্ধুটি সব সময় মনমরা থাকে। এসব নিয়ে অবশ্য আমার কোনো সমস্যা নাই। ওকে ওভাবে দেখে দেখে আমার গা সওয়া হয়ে গেছে।
যা হোক, ফোনটা ধরতেই মনু কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো একবার আসতে পারো? বললাম কেনো? আর তোমার কি হয়েছে এমন করছো কেনো? সে বললো। একবার চলে এসো, কথা আছে। বললাম এখন তো আসা কঠিন, হরতাল চলছে। ফোনেই বলো। বললো ফোনে বলতে চাইনা, সামনা সামনি বলবো। সমস্যা আছে। আমি বললাম ভাবি শুনলে যদি অসুবিধা হয় তবে ছাদে উঠে যাও। সে বললো, ঠিকআছে আমি ছাদে যাচ্ছি।
ছাদে গিয়ে বললো, আজকের পত্রিকা পড়েছো? বললাম পড়েছি তো, কি হয়েছে? সে বলো দেখোনি আজকে একটা রিটের রুল জারী হয়েছে? বললাম দেখেছি, কিন্তু তাতে তোমার কি? আরে সেটাই তো সমস্যা। তোমার ভাবি এবার ঐ আদালতে রিট করতে যাচ্ছে। বললাম, বিষয়টা কি খুলে বলো। বললো, আমাদের বিশ বছরের বিবাহিত জীবনে একটা সন্তান হলো না, এনিয়ে তো আমাদের চিন্তার শেষ নাই তা তুমি জানো। আমরা কোনো ডাক্তার কবিরাজ, দেওয়ান বাগী, আটরসি, পাট রসি কিছুই বাকি রাখিনাই। কিন্তু একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারলাম না। এমন সমস্যার সমাধান কি করে করি তা তো আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই সবসময় ভাবি। ঠিক আমাদের মতো সমস্যা ছিল হাসিনা এবং খালেদার। তারাও পরষ্পর দেখা দেখি, কথা বলা ইত্যাদি করতেন না। সারা জাতি চেষ্টা করেছে, দেশী বিদেশী কতো কবিরাজ আনা হয়েছে কিন্তু সবাই ফেল করেছে। অথচ, আমাদের হাইকোর্টে নাকি ঐ স্কাইপ নাসিম এই অসম্ভব কাজটি করে দুজনকে একসাথে করে দিচ্ছেন। একথা জেনে তোমার ভাবি বলছে কালই সে ঐ আদালতে একটা রিট করবে যাতে আমাদের ঘরে সন্তান আসতই হবে। কেনো আসবে না তার কারণ দর্শাতে হবে আমাকে। শুনে আমার হার্টের পালপিটিশন খুবই বেড়ে গেছে। একেতো মান সম্মানের ব্যাপার, তার উপর যদি আমাকে কারণ দর্শাতে হয় তবে আমি কি করবো?
শুনে আমি বললাম, এতো চিন্তার কি? যদি তোমাকে কারণ দর্শাতে বলা হয় তবে বলবে তুমি সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। সে আমার কথা মানতে চাইলো না উল্টো আমাকে প্রশ্ন করলো সেটা তো সত্য না। বললাম সত্য মিথ্যার কি আছে এখানে? এই স্কাইপ নাসিমের হাত অনেক লম্বা। লন্ডনের ইকোনমিস্ট পর্যন্ত তার হাত চলে গেছে। মাওলানা সাঈদীর মতো বিশ্বখ্যাত একজন আলেমে দ্বীনকে তিনি কুখ্যাত দেইল্লা রাজাকার বানিয়ে দিতে পেরেছেন আর তোমাকে হিজড়া বানাতে পারবেন না? তোমার কি মনে হয় তার হাত তোমার দু্ই ঠ্যঙের মাঝখানে পৌঁছাতে পারবে না?
বন্ধুটি এবার বললো, তা ঠিক। তিনি পারেন না এমন কিছুই নাই। এমনকি তিনি 'দুই মহিলার মিলন' ঘটাতেও পারেন।
বললাম, এখন বুঝো স্কাইপ নাসিম কি জিনিস। বলেই ফোন রেখে দিলাম।
বিষয়: রাজনীতি
৪৬৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন